৬০ বর্ষ ১০ সংখ্যা / ২১ অক্টোবর, ২০২২ / ৩ কার্ত্তিক, ১৪২৯
রাজনৈতিক দলের অধিকারে নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপের প্রস্তাবের বিরোধিতা ও প্রস্তাব প্রত্যাহারের দাবি সিপিআই(এম)’র
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ রাজনৈতিক দলগুলি নির্বাচনী ইস্তাহারে কোনো প্রতিশ্রুতি দিলে তার সঙ্গে ওই প্রতিশ্রুতি রূপায়ণের আর্থিক পদ্ধতি কী হবে, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের আর্থিক পরিস্থিতি কীভাবে প্রভাবিত হবে তার ব্যাখ্যা দিতে হবে বলে নির্বাচন কমিশন সম্প্রতি এক প্রস্তাব পেশ করেছে। নির্বাচনী আচরণবিধিতে সেই মতো সংশোধনী আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলিকে চিঠি লিখে এমন প্রস্তাব দেবার পর তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। সিপিআই(এম) নির্বাচন কমিশনের এই উদ্যোগের তীব্র বিরোধিতা করার পাশাপাশি এই উদ্যোগ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে।
সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো বলেছে, কমিশনের এই প্রস্তাব সম্পূর্ণ অবাঞ্ছিত। সংবিধানে কমিশনকে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলি জনগণের কাছে কোনো জনকল্যাণমূলক বক্তৃতার প্রতিশ্রুতি দেবে বা কী নীতিগত অবস্থান জানাবে তা নিয়ন্ত্রণ করা নির্বাচন কমিশনের কাজ নয়। গণতন্ত্রে এটি একমাত্র রাজনৈতিক দলগুলিরই অধিকার।
পলিট ব্যুরো বলেছে, এপ্রিল মাসে সুপ্রিম কোর্টের কাছে হলফনামা দিয়ে নির্বাচন কমিশন বলেছে, রাজনৈতিক দলের নীতিগত সিদ্ধান্ত তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তা করতে যাওয়া পরিধির বাইরে গিয়ে ক্ষমতা প্রয়োগ হয়ে যাবে। বিস্ময়কর হলো, এখন নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান নিয়েছে।
সিপিআই(এম) মনে করে রাজনৈতিক দলগুলি জনগণের সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেবে, সেই লক্ষ্যে নীতিগত ঘোষণা করবে। এই অধিকার নিয়ন্ত্রণের তীব্র বিরোধিতা করছে সিপিআই(এম)।
গত ১৪ অক্টোবর এই নির্দেশিকা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমারকে চিঠি দিয়েছেন সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘সংবিধানের ৩২৪নং ধারা অনুসারে নির্বাচনে নজরদারি, নির্দেশিকা জারি এবং নিয়ন্ত্রণের অধিকার দিয়েছে কমিশনকে। কিন্তু কোথাও নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক দলগুলি যে নীতি ঘোষণা করে কিংবা জনগণের কল্যাণ সাধনে যে সমস্ত প্রতিশ্রুতি দেয় তা নিয়ন্ত্রণ বা পরিবর্তনের অধিকার মোটেও দেয়নি।’ কমিশন এক্তিয়ার বহির্ভূত কাজ করেছে বলে বোঝাতে গিয়ে তিনি চিঠিতে লিখেছেন, ‘আচরণবিধি বদলে প্রস্তাবে বলা হয়েছে যে, কী কী নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে এবং তার অর্থকরী তাৎপর্য কতটা তা রাজনৈতিক দলগুলিকে আগেই বিস্তারিতভাবে প্রোফর্মায় জানাতে হবে। কিন্তু এর ফলে কমিশন রাজনৈতিক ও নীতিগত বিষয়ে জড়িয়ে পড়েছে। সংবিধানে ন্যস্ত দায়িত্ব অনুযায়ী যা কমিশনের এক্তিয়ারভুক্ত নয়।’
তিনি লিখেছেন, ‘প্রতিশ্রুতিগুলির অর্থকরী তাৎপর্য বা প্রভাব এবং আর্থিক স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলার বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক ও নীতিগত দিক। যা সংবিধানে বর্ণিত আর্থিক স্থায়িত্বের ভাবনা থেকে পুরোপুরি ভিন্ন।’ উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের পার্টি আর্থিক দায়দায়িত্ব ও বাজেট পরিচালন নীতি অনুযায়ী জিডিপি’র ৩ শতাংশ আর্থিক ঘাটতি বেঁধে দেওয়ার ঘোর সমালোচক। এখন যে আর্থিক রক্ষণশীলতার ভাবনা নিয়ে চলা হচ্ছে তার বিকল্পও রয়েছে।’
সীতারাম ইয়েচুরি স্পষ্টতই অভিযোগ করেছেন, ‘যেভাবে নির্বাচনী আচরণবিধি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে কমিশন তা জনগণের পক্ষে কল্যাণকর এবং তাঁদের সম্পর্কে নীতি ঘোষণার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলির অধিকারে হস্তক্ষেপ ছাড়া কিছুই নয়।’
গোটা বিষয়টি অবাঞ্ছিত বলে উল্লেখ করে কমিশনের এই প্রস্তাব প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন সীতারাম ইয়েচুরি।