E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ১০ সংখ্যা / ২১ অক্টোবর, ২০২২ / ৩ কার্ত্তিক, ১৪২৯

হিন্দি চাপিয়ে দেওয়া চলবে না


মোদি সরকার নানাভাবে হিন্দিকে সরকারি ভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেবার চেষ্টা করছে। তারই সাম্প্রতিকতম উদাহরণ হলো, সরকারি ভাষা সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির রিপোর্ট, যার মাথায় আছেন কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রী অমিত শাহ। এই কমিটির ১১ খণ্ডের রিপোর্ট ভারতের রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া হয়েছে।

এই রিপোর্টের একটি সুপারিশ হলোঃ “দেশের সমস্ত কারিগরি এবং অ-কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা ও অন্যান্য কার্যক্রমের মাধ্যম করা হোক হিন্দি এবং ইংরেজির ব্যবহার হোক ঐচ্ছিক। আইআইটি, কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়গুলিকেও এর আওতায় আনা হোক।’’

এটা যদি রূপায়িত হয়, তার অর্থ হবে যে, অ-হিন্দি ভাষাভাষী ছাত্রছাত্রীদের ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে প্রবেশিকা পরীক্ষায় হিন্দিতে যোগ্যতা অর্জন করতে হবে এবং হিন্দি মাধ্যমে পড়াশোনা করাটাও আয়ত্ত করতে হবে। যাদের মাতৃভাষা হিন্দি নয়, তাদের বিরুদ্ধে এটা স্পষ্টতই বৈষম্যমূলক হবে।

যখন এই প্রস্তাব কিছু অ-হিন্দি রাজ্য সরকারগুলির কাছ থেকে শক্তিশালী বিরোধিতার মুখে পড়ল, তখন এইরকম ব্যাখ্যা করা হলো যে, হিন্দিভাষী রাজ্যগুলিতে অবস্থিত কেন্দ্রীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে পড়াশোনার মাধ্যম বাধ্যতামূলকভাবে হিন্দি থাকবে এবং অ-হিন্দিভাষী রাজ্যগুলিতে থাকা কেন্দ্রীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের আঞ্চলিক ভাষা পড়াশোনার মাধ্যম হবে।

যদিও এই ব্যাখ্যা সমস্যার সমাধান করতে পারছে না। হিন্দিভাষী রাজ্যের কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা আইআইটি’গুলিতে সেই সমস্ত ছাত্রছাত্রীই প্রবেশাধিকার পাবে যারা হিন্দি ভাষায় পড়াশোনা রপ্ত করতে পারবে। অর্থাৎ এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির যে সর্বভারতীয় চরিত্র ছিল, তা থাকবে না এবং এখন থেকে সেগুলি শুধুমাত্র হিন্দিভাষী ছাত্রছাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এই অনুযায়ী আইআইটি দিল্লি কিংবা বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো কেন্দ্রীয় সরকারের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অ-হিন্দি ভাষাভাষী ছাত্রছাত্রীদের কাছে অধরাই থেকে যাবে। অধ্যাপক ও অধ্যাপিকাদের নিয়োগেও একই ঘটনা ঘটবে।

অন্যদিকে অ-হিন্দিভাষী রাজ্যগুলিতে থাকা কেন্দ্রীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে পড়াশোনার মাধ্যম হিসেবে সংশ্লিষ্ট রাজ্য বা অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষাকে গ্রহণ করা হবে; যা শুধুমাত্র সেই রাজ্য বা অঞ্চলের ছাত্রছাত্রীদেরই সুবিধা দেবে। এর অর্থ দাঁড়ালো, ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির সর্বভারতীয় চরিত্রকেও নাকচ করা হবে।

এমন এক গণতান্ত্রিক ভাষা নীতি জরুরি যেখানে সংবিধানের অষ্টম তফশিলে তালিকাভুক্ত ২২টি জাতীয় ভাষাকেই সমভাবে বিচার করা হবে। অন্যান্য বিষয়েও সরকারি ভাষা কমিটির সুপারিশগুলি এই সমতার ধারণার বিরুদ্ধে গেছে। উদাহরণস্বরূপ, এই কমিটি সুপারিশ করেছে, সরকারি বিজ্ঞাপনের বাজেটের ৫০ শতাংশ হিন্দি ভাষায় বিজ্ঞাপনের জন্য বরাদ্দ করা হোক।

সংশ্লিষ্ট রাজ্যের প্রধান ভাষাই সেই রাজ্যে উচ্চশিক্ষায় এবং প্রশাসনের কাজকর্মের মাধ্যম হোক এই দাবি পূরণই সঠিক পদক্ষেপ। রাজ্যস্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে এই নীতি প্রয়োগ হওয়া উচিত। যেমন, উত্তর প্রদেশে হিন্দি, তামিলনাডুতে তামিল ইত্যাদি। কিন্তু এখানে কেন্দ্রীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে হিন্দিকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে অন্যান্য জাতীয় ভাষাগুলির প্রতি বৈষম্য করা হচ্ছে।

অমিত শাহ গৃহমন্ত্রী হিসেবে ‘এক দেশ, এক ভাষা’র ধারণাকে চাপানোর চেষ্টা করছেন। ২০১৯ সালে হিন্দি দিবসে প্রথম ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি বলেছিলেনঃ “ভারত বিভিন্ন ভাষাভাষীর দেশ। প্রতিটি ভাষার নিজস্ব গুরুত্ব আছে। কিন্তু এটা অবশ্যই জরুরি যে, সমগ্র দেশের একটাই ভাষা হবে যা বিশ্বের সামনে জাতির পরিচয় দেবে। এরকম যদি কোনো ভাষা থেকে থাকে যা সারা দেশকে একসূত্রে বাঁধবে তা হলো বহুল ব্যবহৃত ভাষা হিন্দি।”

আরএসএস’র স্লোগান ‘এক জাতি, এক ভাষা, এক সংস্কৃতি’র সাথেই এটা সঙ্গতিপূর্ণ। ভারতের মতো বহুভাষী, বহু সংস্কৃতি, বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশে এই হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা শুধুই অনৈক্য এবং বিরোধ ডেকে আনবে।


(পিপলস ডেমোক্রেসি, ১০-১৬ অক্টোবর, ২০২২ সংখ্যার সম্পাদকীয়।)

[অনুবাদঃ শংকর মুখার্জি]