৫৯ বর্ষ ৩৬ সংখ্যা / ২২ এপ্রিল, ২০২২ / ৮ বৈশাখ, ১৪২৯
বগটুই গণহত্যা কাণ্ড
নাম জড়াল রাজ্যের ডেপুটি স্পিকারের
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ বীরভূম জেলার বগটুই গ্রামে ২১ মার্চ ঘটা গণহত্যার এক মাস পরেও ওই বর্বরতা এবং পরবর্তী ঘটনাক্রমে যুক্ত থাকা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল ওঠা অব্যাহত রয়েছে। গণহত্যা কাণ্ডে আবারও নাম জড়াল রামপুরহাটের তৃণমূল বিধায়ক ও বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বগটুই কাণ্ডের অন্যতম সাক্ষী মিহিলাল শেখের দাবি, আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই সব হয়েছে। মিহিলালের দাবি আনারুলকে পরিচালনা করতেন আশিসই। আনারুলকে ব্লক সভাপতি করার পেছনে আশিস ছিলেন। এই চাপান উতোরের ঘটনার মধ্যেই তদন্তের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআই’র হাতে উঠে আসছে নতুন তথ্য প্রমাণ। তবে গণহত্যার মূল চক্রীকে এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি সিবিআই।
গণহত্যায় যার পরিবারের সদস্যরা মারা গিয়েছেন সেই মিহিলালের আরও দাবি, জেলের ভেতরে বগটুই হত্যাকাণ্ডে যারা মূল অভিযুক্ত তাদের জামিনে ছাড়িয়ে আনার তোড়জোড় করছেন আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। এতদিন ভয়ে আশিসের নাম আনেননি মিহিলাল। এদিকে বগটুই কাণ্ডের পরে আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিলেন তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। ধৃত আনারুল আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ এমনটা দাবি করেছিলেন অনুব্রত।
অন্যদিকে, একটি পেট্রোল পাম্পের সিসিটিভি ফুটেজের সূত্র ধরে ১৫ এপ্রিল সিবিআই গ্রেপ্তার করেছে রিটন শেখকে। রিটন শেখকে আদালতে তোলা হলে তাকে তিন দিনের পুলিশ হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। রিটনকে নিয়ে বগটুই গণহত্যায় গ্রেপ্তারের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ালো সাতাশে। তার মধ্যে সিবিআই গ্রেপ্তার করেছে ছয় জনকে।
প্রসঙ্গত, বগটুই গণহত্যার ঠিক আগে রামপুরহাটের মনসুবা মোড়ের পেট্রোল পাম্প থেকে বাইকে দু’জন জারভর্তি পেট্রোল নিয়ে বেরিয়েছিল সিসিটিভি ফুটেজ সূত্রে এমন তথ্য সম্প্রতি হাতে আসে সিবিআই’র। জানা যায়, দুই জ্যারিকেন পেট্রোল ভরে বাইকে বগটুইয়ের পথে রওনা দিয়েছিল দুই যুবক। আর তার কিছুক্ষণের মধ্যেই বগটুই গ্রামে একের পর এক বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বগটুই গণহত্যার তদন্তে নেমে স্থানীয় বিভিন্ন পেট্রোল পাম্প থেকে সংগ্রহ করা সিসিটিভি ফুটেজের সূত্রে এমন প্রমাণ হাতে আসে সিবিআই’র। সেই সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে শুরু হয় সিবিআই’র তৎপরতা। ওই দুজনের পরিচয় জানতে সিবিআই সিসিটিভি ফুটেজ দেখায় গ্রামের একাধিক বাসিন্দাকে। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, তাতে সিবিআই নিশ্চিত হয়, গাড়ি চালাচ্ছিল গণহত্যায় মূল অভিযুক্ত ভাদু শেখের দোসর বড়ো লালন শেখের ভাগ্নে ডলার এবং পিছনে জার হাতে বসেছিল বগটুইয়ের পূর্বপাড়ার রিটন শেখ। শুধু তাই নয়, ওই দু’জনকে বাইকে বসে জার হাতে গ্রামের দিকে দ্রুত যাওয়ার প্রত্যক্ষদর্শীরও সন্ধান পায় সিবিআই। সেই সূত্র ধরেই অবশেষে সিবিআই গ্রেপ্তার করেছে রিটন শেখকে। তবে বড়ো লালন শেখের ভাগ্নে ডলারের কোনও খোঁজ এখনও মেলেনি। ঘটনার মূল চক্রী হিসাবে যার নাম কার্যত স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, সেই লালন শেখের হদিশ এখনও করতে পারেনি সিবিআই। তা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই উঠছে প্রশ্ন।
এদিকে আশিস ব্যানার্জির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে ১৯ এপ্রিল কুমাড্ডা গ্রামের বাড়ি থেকে মিহিলাল শেখ বলেছেন, আনারুলকে গাইড করছেন আশিস বাবু, তাই বলতে বাধ্য হলাম। এই আশিস বাবু আনারুলকে বলে এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন। এদের কাউকে যেন ছাড়া না হয়। আনারুল হোসেন সহ অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের সংশোধনাগারে এলাহিভাবে থাকার সমস্ত ব্যবস্থা করেছেন আশিসবাবু। এই কাজে সহযোগিতা করছে বেশ কিছু তৃণমূল নেতা। ধৃতদের মধ্যে জেলে মদ-বিয়ার পাঠানো হচ্ছে, বাড়ির খাবার বিরিয়ানি পাঠানো হচ্ছে, এর পেছনে জেলার থেকে জেল পুলিশের মদত রয়েছে। অভিযোগ এর উত্তরে আশিস ব্যানার্জি বলেছেন, অভিযোগ সর্বৈব মিথ্যা।