E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ৩৬ সংখ্যা / ২২ এপ্রিল, ২০২২ / ৮ বৈশাখ, ১৪২৯

আনিস খান হত্যাকাণ্ড

বিশেষ তদন্তকারী দলের দ্বিতীয় তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়লো হাইকোর্টে


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ আনিস হত্যাকাণ্ডে গঠিত বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) কলকাতা হাইকোর্টে তাদের দ্বিতীয় রিপোর্ট জমা দিল। ১৯ এপ্রিল বিচারপতি রাজশেখর মানথার এজলাসে মুখ বন্ধ খামে ৮২ পাতার রিপোর্টটি জমা দেওয়া হয়। সিট-এর প্রথম রিপোর্ট জমা পড়েছিল ১১ মার্চ। তার ৩৮ দিন পরে বিশেষ তদন্তকারী দল তাদের দ্বিতীয় রিপোর্ট জমা দিল। এর আগে ১৪ মার্চ হওয়া শুনানিতে বিচারপতি রাজশেখর মানথা আনিসের মোবাইল ফোনের ফরেনসিক রিপোর্ট (সিএফএসএল) জমা দিতে বলেছিলেন ১০ দিনের মধ্যে। এদিনও ওই রিপোর্ট জমা না পড়ায় বিচারপতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি আনিস খান হত্যার ঘটনা ঘটে। হাওড়ার আমতা থানার সারদা গ্রামের দক্ষিণ খান পাড়ায় ওইদিন মধ্যরাতে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা আনিস খানের বাড়িতে কয়েকজন পুলিশ এবং সিভিক ভলেন্টিয়ার চড়াও হন। অভিযোগ, ওই অভিযানের সময়ই আনিসকে হত্যা করে ওই পুলিশ বাহিনী। নিহত আনিস খানের বাবা সালেম খান ও তাঁর পরিবার এই ঘটনায় সিবিআই তদন্ত চেয়েছিলেন। পরে এই ঘটনার তদন্তের জন্য বিশেষ তদন্তকারী দল গঠিত হয়। বিশেষ তদন্তকারী দলের তদন্তে এপর্যন্ত দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২৪ ফেব্রুয়ারি এই হত্যার ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করেছিল।

প্রসঙ্গত, আগেই জানা গিয়েছিল যে, আনিসের দ্বিতীয়বারের ময়নাতদন্তের রিপোর্টের সঙ্গে প্রথমবারের ময়নাতদন্তের রিপোর্টের অনেক ফারাক রয়েছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি করা ময়নাতদন্তের দ্বিতীয় রিপোর্টে বলা হয়েছে, আনিসের শরীরের বিভিন্ন অংশের হাড় ভাঙা রয়েছে। মৃতদেহের মেরুদণ্ডের পাশাপাশি দুই নিতম্বেও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে ময়নাতদন্ত রিপোর্টে। এই হাড়ভাঙার বিষয়ে কোনো কথা প্রথমবারের ময়নাতদন্তের রিপোর্টে ছিল না। আনিস খানের মৃত্যুর পর তার বাড়ির লোকজনের উপস্থিতি এবং সম্মতি ছাড়াই পুলিশ তড়িঘড়ি করে ওই ময়নাতদন্ত শেষ করেছিল। পরে আদালতের নির্দেশে একজন বিচারকের উপস্থিতিতে দ্বিতীয়বার এই ময়নাতদন্ত হয়েছে।

এর আগে আনিস খান হত্যার পুলিশি তদন্তে কোনও হস্তক্ষেপ করা যাবে না - বলে সতর্ক করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। একই সঙ্গে সিট-কে এক মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করার নির্দেশও দিয়েছিল হাইকোর্ট। তদন্তের নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্ট আরও বলেছিল নিজেদের প্রমাণ করার এটাই সঠিক সময়। কারোর দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে স্বচ্ছ তদন্ত করুক পুলিশ। এরপর আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী টিআই প্যারেড হলেও নির্ধারিত জেলা জজের প্রতিনিধির সামনে আনিস খানের বাবা সালিম খান জানিয়েছিলেন যাদের টিআই প্যারেডে হাজির করা হয়েছে তাদের শনাক্ত করা যায়নি।

তবে সিটের প্রথম রিপোর্ট দেখে ক্ষুব্ধ বিচারপতি রাজশেখর মানথা সিট-র আইনজীবীকে একাধিক প্রশ্ন করেন রিপোর্টের অসঙ্গতি সম্পর্কে। সিট-র আইনজীবীকে তিনি বলেছিলেন, আমতা থানার ওসি দেবব্রত চক্রবর্তীকে ১৬১ নম্বর ধারায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, কিন্তু ১৬৪ নম্বর ধারায় তার জবানবন্দি গ্রহণ না করে ছুটিতে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হলো কেন? এই ঘটনা কি করে ঘটল!

এদিন আনিস খানের বাবা সালিম খান-এর পক্ষে আদালতে ছিলেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, রবিশংকর চ্যাটার্জি, শামিম আহমেদ, সব্যসাচী চ্যাটার্জি ও ইমতিয়াজ আহমেদ।

অন্যদিকে মিথ্যা মামলায় আগাম জামিন পেলেন ডিওয়াইএফআই রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষি মুখার্জি সহ ছাত্রযুব নেতৃবৃন্দ। ১৯ এপ্রিল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিসন বেঞ্চ মীনাক্ষি মুখার্জি সহ ১০ জন আন্দোলনকারীর জামিন মঞ্জুর করেছে। ছাত্রনেতা আনিস খান খুনের প্রতিবাদে রাজ্যের ছাত্র, যুবরা বিক্ষোভ প্রতিবাদে শামিল হয়েছিলেন গত ১৮ ফেব্রুয়ারি। এই হত্যাকাণ্ডের পর ছাত্র যুব সহ বহু সাধারন মানুষ হাওড়ার পাঁচলা থানায় এবং আমতা থানায় বিক্ষোভ দেখিয়েছে। আনিসের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে - এই দাবিতে বিক্ষোভ আন্দোলন চলাকালীন সময়েই পুলিশ ছাত্র যুব নেতৃত্ব সহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে। হাওড়ায় পাঁচলা থানায় বিক্ষোভ দেখানোর সময় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল মীনাক্ষি মুখার্জি, ডিওয়াইএফআই রাজ্য সভাপতি দেবজ্যোতি সাহা সহ ১৬ জনকে। ১৪ দিন জেল হাজতে থাকার পর হাওড়া আদালত তাঁদের জামিন মঞ্জুর করেছিল। এই ঘটনার সঙ্গেই পুলিশ আমতা থানায় হামলার অভিযোগে আরও একটি মামলা সাজিয়ে রেখেছে। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই মীনাক্ষি সহ অন্যান্য ছাত্র যুবনেতারা কলকাতা হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন জানিয়েছিলেন। এদিন আদালত তাঁদের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেছে।