৫৯ বর্ষ ৩৬ সংখ্যা / ২২ এপ্রিল, ২০২২ / ৮ বৈশাখ, ১৪২৯
উপনির্বাচনের ফলাফল
বালিগঞ্জে বামফ্রন্টের ভোট বাড়লো ২৫ শতাংশ
আসানসোলে পরাজিত বিজেপি
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বামফ্রন্ট প্রার্থীর ভোট বিপুলভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বিধানসভা নির্বাচনের পর এক বছরের ব্যবধানে তৃণমূল-বিজেপি’র মধ্যে মেরুকরণকে নস্যাৎ করে উপনির্বাচনে বামফ্রন্টের সিপিআই(এম) প্রার্থী সায়রা শাহ হালিম প্রায় ৩১ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছেন। এখানে তৃণমূল প্রার্থী, বিজেপি ফেরত বাবুল সুপ্রিয় জয়ী হলেও তাঁর ভোট কমেছে। তিনি পেয়েছেন প্রায় ৫০ শতাংশ ভোট। অপরদিকে বিজেপি প্রার্থী কেয়া ঘোষের ভোট কমে হয়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ।
অন্যদিকে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে জয়ী হয়েছেন একদা বিজেপি সাংসদ ও মন্ত্রী, তৃণমূল প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিনহা।
এই দুই উপনির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, খাতায় কলমে বালিগঞ্জ এবং আসানসোলে তৃণমূল জিতেছে। কিন্তু দুই কেন্দ্র থেকেই আসলে দুই প্রাক্তন বিজেপি প্রার্থী জিতেছেন। ভায়া তৃণমূল বিজেপি’র জয়। কিন্তু এতে প্রমাণ হয়ে গেল যে, বিধানসভা নির্বাচনের সময় মানি এবং মিডিয়া ব্যবহার করে একটা ফেক অপজিশন দাঁড় করানো হয়েছিল, বিজেপি বনাম তৃণমূলের লড়াই দেখানো হয়েছিল। বালিগঞ্জের মানুষের রায়ে এটা স্পষ্ট যে, মানুষ এই ফেক অপজিশনকে বুঝতে পারছেন। গ্যাস বেলুন তাই চুপসে গেছে।
তিনি আরও বলেছেন, ভোটে জয় পরাজয় হয়, সরকারের পরিবর্তনও হয়। কিন্তু সম্প্রীতির সংস্কৃতির পরিবর্তন হওয়া উচিত নয়। বাংলার সম্প্রীতি রক্ষায়, তেভাগা থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে বামপন্থীরা রক্ত দিয়েছে। প্রয়োজনে আরও রক্ত বামপন্থীরা দেবে। কিন্তু সাম্প্রদায়িক বিভাজনকে মাথা তুলতে দেবে না। রক্ত দিয়ে সম্প্রীতির জমিতে সেচ দিয়ে বামপন্থীরা আবার ফসল তুলবে বাংলার মাটিতে।
আসানসোলে নির্বাচনী ফলাফলে বামপন্থীরা বালিগঞ্জের মতো সাফল্য কেন পায়নি, সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের উত্তরে মহম্মদ সেলিম বলেছেন, আসানসোলের পরিস্থিতি অন্যরকম। সেখানে বেআইনি কয়লা পাচার, বন্ধ কারখানার স্ক্র্যাপ পাচার ইত্যাদি নানা কাজে মাফিয়ারা যুক্ত। অপরাধের এই সমান্তরাল অর্থনীতিতে তৃণমূল এবং বিজেপি নেতারা যুক্ত। বিস্তীর্ণ অঞ্চলে তারা বামপন্থীদের প্রচারই করতে দেয়নি। এর সঙ্গে সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়ানো হয়েছে, ভাষা ও ধর্মের নামে ভেদাভেদ উসকানো হয়েছে। এর পরেও তৃণমূলের যিনি জিতেছেন তিনি তো বাবুল সুপ্রিয়র মতোই বিজেপি’র প্রাক্তনী। বিজেপি’র উত্থানের সময় বিহারে শত্রুঘ্ন সিনহার ভূমিকা কী ছিল? দার্জিলিঙে যেভাবে বহু বছর আগে বিজেপি সাংসদ জিতিয়ে এনেছিল, এবার আসানসোলে সেই বিপজ্জনক ঘটনাই ঘটলো।
এবারের বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয় পেয়েছেন ৫০,৭২২ ভোট। বামফ্রন্টের সায়রা শাহ হালিম পেয়েছেন ৩০,৮১৮ ভোট। ভোট শতাংশের হিসেবে তৃণমূল ৪৯.৬৯ শতাংশ, বামফ্রন্ট ৩০.০৬ শতাংশ। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সময় তৃণমূলের সাথে বামফ্রন্টের ভোটের ব্যবধান ছিল ৯৮,১১১। তৃণমূল পেয়েছিল ৭০.৬ শতাংশ ভোট। বামফ্রন্ট পেয়েছিল ৫.৬ শতাংশ ভোট। এবারে ভোটের ব্যবধান কমে হয়েছে ১৯,৯০৪।
এই কেন্দ্রে তৃতীয় স্থানে বিজেপি প্রার্থী কেয়া ঘোষ পেয়েছেন মাত্র ১৩,২২০ ভোট। ১২.৮৩ শতাংশ। কংগ্রেস প্রার্থী কামারুজ্জমান চৌধুরী পেয়েছেন মাত্র ৫,২১৮ ভোট, ৫ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের নির্বাচনে বিধানসভার অন্তর্গত সাতটি ওয়ার্ডের সবক’টিতেই জিতেছিল তৃণমূল। কিন্তু এবারে ৬৪ এবং ৬৫ এই দুটি ওয়ার্ডে তৃণমূলকে পিছনে ফেলে জয়ী হয়েছেন সিপিআই(এম) প্রার্থী। বিগত পৌরনির্বাচনেও এই দুই ওয়ার্ডে তৃণমূল জিতেছিল।
বিশেষভাবে উল্লেখ্য, ১২ এপ্রিল নির্বাচনের দিন এলাকায় এলাকায় ব্যাপক সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করেছিল শাসকদল। বুথে বুথে বামফ্রন্টের পোলিং এজেন্টদের বসতে দেয়নি। নির্বাচনী প্রচার কালেও তৃণমূল-বিজেপি বামফ্রন্ট প্রার্থীর বিরুদ্ধে নারী বিদ্বেষী প্রচার চালিয়েছিল। এছাড়াও বামফ্রন্ট প্রার্থীর বিরুদ্ধে হুমকি, শাসানি সমানে চলেছে। এসব সত্ত্বেও বামফ্রন্ট প্রার্থীকে সমর্থন করেছেন বালিগঞ্জ কেন্দ্রের বহু মানুষ। এজন্য বালিগঞ্জ কেন্দ্রের মানুষকে অভিনন্দন জানিয়েছেন সিপিআই(এম) কলকাতা জেলা সম্পাদক কল্লোল মজুমদার।
আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিনহা পেয়েছেন ৬,৫৬,৩৫৮ ভোট। যা মোট ভোটের ৫৬.৬ শতাংশ। বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পাল পেয়েছেন ৩,৫৩,১৪৯ ভোট, যা মোট ভোটের ৩০ শতাংশ। এখানে বামফ্রন্টের সিপিআই(এম) প্রার্থী পার্থ মুখার্জি পেয়েছেন ৯০,৪১২ ভোট, যা মোট ভোটের ৭.৮ শতাংশ। প্রসঙ্গত, এই কেন্দ্রে বাবুল সুপ্রিয় বিজেপি’র হয়ে ২০১৪ এবং ২০১৯ সালে জয়ী হয়েছিলেন। এই বাবুল সুপ্রিয়র বিরুদ্ধে আসানসোলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় উসকানি দেওয়া, সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব কেড়ে দেশ ছাড়া করার হুমকি সহ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের নানা নজির রয়ে গেছে।
উপনির্বাচনে তিন রাজ্যেই পরাজিত বিজেপি
পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি বিহার, ছত্তিশগড় এবং মহারাষ্ট্রের তিন বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে পরাজিত হয়েছে বিজেপি। বিহারের মুজফ্ফরপুর জেলার বোচাহাঁ কেন্দ্রে আরজেডি প্রার্থী অমর পাশোয়ান প্রায় ৩৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিজেপি প্রার্থী বেবি কুমারীকে পরাজিত করেছেন।
মহারাষ্ট্রের কোলাপুর (উত্তর) কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী জয়শ্রী যাদব বিজেপি প্রার্থী সত্যজিৎ কদমকে প্রায় ১৯ হাজার ভোটে পরাজিত করেছেন।
ছত্তিশগড়ের খৈরাগড় বিধানসভা কেন্দ্রে প্রায় ২০ হাজার ভোটের ব্যবধানে কংগ্রেস প্রার্থী যশোদা ভার্মা বিজেপি প্রার্থী কোমল সিংকে পরাজিত করেছেন।