৫৯ বর্ষ ৩৬ সংখ্যা / ২২ এপ্রিল, ২০২২ / ৮ বৈশাখ, ১৪২৯
লেনিন ও একবিংশ শতাব্দীর সমাজতন্ত্র
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য
কমরেড ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন
জন্মঃ ২২শে এপ্রিল, ১৮৭০ । মৃত্যুঃ ২১শে জানুয়ারি, ১৯২৪
কমরেড ভি আই লেনিন-এর ১৪৩তম জন্মদিবস উপলক্ষে ২০১২ সালের ২২ এপ্রিল প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনের প্রেক্ষাগৃহে সিপিআই(এম) কলকাতা জেলা কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় ‘লেনিন ও একবিংশ শতাব্দীর সমাজতন্ত্র’ বিষয়ে বক্তব্য রেখেছিলেন তৎকালীন পলিট ব্যুরো সদস্য বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। দেশহিতৈষী’তে ২৭ এপ্রিল সেই বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছিল। এবছর কমরেড লেনিন-এর ১৫৩তম জন্মদিবসে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সেই বক্তব্য পুনমুর্দ্রণ করা হলো।
আজ আমরা স্মরণ করছি কমরেড লেনিনের ১৪৩তম জন্মদিবস। আমরা স্মরণ করছি সেই মহান বিপ্লবীকে, যাঁর নেতৃত্বে বিশ্বে প্রথম সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সফল হয়েছিল। আমরা স্মরণ করছি মহান নভেম্বর বিপ্লবকে। বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সৃষ্ট সোভিয়েত ইউনিয়নের নজরকাড়া সাফল্যকে এবং পৃথিবীর ইতিহাসে তার অনন্য ভূমিকাকে।
রুশ বিপ্লবের অনেক আগে থেকে ইয়োরোপের বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে জার্মানি, ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ডে মার্কসবাদী চিন্তার প্রসার ঘটে। ছোটো ছোটো মার্কসবাদী গ্রুপ গড়ে ওঠে। অর্থনীতির দিক দিয়ে পিছিয়ে-পড়া রাশিয়ার শ্রমিকশ্রেণির হাতেও মার্কসের দার্শনিক চিন্তা, কমিউনিস্ট ইস্তাহার এসে পৌঁছায়। সেই সময়ে রাশিয়ায় চলছে অত্যাচারী জারের শাসন। পুঁজিবাদের শক্তিও খুব দুর্বল। দেশের বিরাট অংশজুড়ে জমিদারতন্ত্র কায়েম রয়েছে। এর বিরুদ্ধে বিপ্লবী আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করে। ছাত্ররা বিশেষভাবে সক্রিয় ছিল এই আন্দোলনগুলিতে। এদের মধ্যে কিছু গ্রুপ ছিল, যারা শ্রমিক, কৃষকদের সংগঠিত করার কাজকে গুরুত্ব দিত না। এদের কর্মসূচি ছিল গুপ্তহত্যা। এদের নারদনিক বলা হতো। লেনিনের দাদাও এই গ্রুপে যুক্ত ছিলেন। জারের প্রাসাদে এক কর্মচারীকে খুনের অপরাধে তাঁর ফাঁসি হয়।
কোন পথে রাশিয়ায় বিপ্লবী আন্দোলন গড়ে উঠবে, সেই নিয়ে বিস্তর চিন্তাভাবনা করেন লেনিন। প্যারিসের শ্রমিকরা ক্ষমতা দখল করে প্যারি কমিউন প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু সেই ক্ষমতা তারা ধরে রাখতে পারেনি। কেন ক্ষমতা দখল করেও প্যারিসের শ্রমিকরা তা ধরে রাখতে সক্ষম হলেন না, সেই শিক্ষা লেনিনের সামনে ছিল। রাশিয়ায় যে মার্কসবাদী বিপ্লবী গোষ্ঠীগুলি তৈরি হয়েছিল, তাতে যুক্ত হলেন লেনিন। দেশে বিপ্লবকে সফল করতে মার্কসবাদের পথে একটা আদর্শ শ্রমিকশ্রেণির পার্টি গড়ে তোলার কাজে লেনিন নিজেকে নিয়োজিত করলেন।
লেনিনের মতে মার্কসবাদী তত্ত্বের তিনটি উৎস ছিল - জার্মান দর্শন, ইংল্যান্ডের অর্থনীতিবিদদের সূত্রাবলি, ফরাসি সমাজতান্ত্রিক চিন্তাভাবনা। যদিও ফরাসি সমাজতান্ত্রিক চিন্তাভাবনার বেশিরভাগই ইয়োটোপিয় ছিল, তবুও মার্কস এই চিন্তাভাবনাগুলিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। জার্মান দার্শনিক হেগেলের দ্বান্দ্বিক সূত্রগুলি এবং ইংল্যান্ডের অর্থনীতিবিদ স্মিথ, রিকার্ডোর সূত্রাবলি মার্কসকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিল। জগৎ এবং মানুষের জীবনকে ভাববাদী দর্শন দ্বারা ব্যাখ্যার পদ্ধতিকে খণ্ডন করে দার্শনিক চিন্তাকে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের ওপর দাঁড় করালেন মার্কস। এবং মানবসভ্যতার বিবর্তনের পর্যায়গুলি - দাস ব্যবস্থা, সামন্ত ব্যবস্থা, বুর্জোয়া গণতন্ত্র-এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা তিনি হাজির করলেন তাঁর ঐতিহাসিক বস্তুবাদের তত্ত্বের দ্বারা। মার্কস বললেন, এতদিন পর্যন্ত দার্শনিকেরা জগৎটাকে শুধু বিশ্লেষণই করেছেন, পরিবর্তনের কথা বলেননি। কার্ল মার্কস দ্বান্দ্বিক ও ঐতিহাসিক বস্তুবাদের তত্ত্বের দ্বারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন - মানব সভ্যতার মূল চালিকাশক্তি হলো উৎপাদন, উৎপাদনের উপকরণের মালিকানার উপর প্রতিষ্ঠিত শ্রেণিবিভাগ এবং শ্রেণিসংগ্রাম। তাই বর্তমান শোষণমূলক পুঁজিবাদের ব্যবস্থাও পূর্বের শোষণমূলক ব্যবস্থাগুলির মতোই। এর গর্ভেই জন্ম হয়েছে মানবসভ্যতার সবচেয়ে আধুনিক বিপ্লবী শ্রেণির - শ্রমিকশ্রেণির। শোষণমূলক এই ব্যবস্থার ন্যায়সঙ্গত একমাত্র সমাধান হলো শ্রমিকশ্রেণির হাতেই পুঁজিবাদের পরাজয় ঘটবে। ব্যক্তিমালিকানার অবসান ঘটবে। উৎপাদনের উপকরণের উপর সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হবে। মানবসভ্যতার সমাজতন্ত্রে উত্তরণ ঘটবে। শেষে শ্রেণিহীন সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে। এটা ঐতিহাসিকভাবে অনিবার্য।
মার্কসের চিন্তার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হলো - পুঁজিবাদ সম্বন্ধে তাঁর ব্যাখ্যা, সম্পদ-মুনাফা-উদ্বৃত্ত মূল্যের তত্ত্বের আবিষ্কার। আজ পর্যন্ত এই তত্ত্বকে বিশ্বের কোনো অর্থনীতিবিদ খণ্ডন করতে পারেননি।
মার্কসবাদের এই বিপ্লবী তত্ত্বকে রাশিয়ার মাটিতে প্রয়োগের কাজ শুরু করে লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিক পার্টি। ১৯০৫ সালে রাশিয়াতে বিপ্লবের প্রথম চেষ্টা হয়েছিল। তা ব্যর্থ হয়। মস্কো, পেত্রোগাদে শুধু অভ্যূত্থান হয়েছিল। দেশের বিরাট গ্রামাঞ্চলে এর কোনো সাড়া পড়লো না। কৃষক সমাজকে বিপ্লবে নিয়ে আসা সম্ভবপর হয়নি। বিপ্লব ব্যর্থ হওয়ার পিছনে এটা একটা বড়ো কারণ ছিল। লেনিন আবার পথ খোঁজা শুরু করলেন।
১৯০৫ সালের পরবর্তী সময়ে পার্টির অভ্যন্তরে লেনিনকে মেনশেভিকদের সাথে দীর্ঘ লড়াই পরিচালনা করতে হয়েছে। রাশিয়ার সংসদীয় ব্যবস্থা সমসাময়িক ইয়োরোপের অন্যান্য দেশগুলির তুলনায় দুর্বল ছিল। তিনি দেখালেন, যখন শ্রমিকদের অন্য কোথাও কথা বলার সুযোগ থাকে না, বিপ্লবী আন্দোলন অপেক্ষাকৃত স্তিমিত, তখন ‘ডুমা’কে কীভাবে ব্যবহার করতে হয়। আর যখন দেশে বিপ্লবের পরিস্থিতি বর্তমান, তখন ডুমা ত্যাগ করে কিভাবে সেই লড়াইতে শ্রমিকশ্রেণিকে যুক্ত হতে হবে। এই পরিস্থিতিতে লেনিন ডাক দিলেন ‘All powers to Soviet’। লেনিনের এই রণকৌশলের সাফল্য অনবদ্য।
১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলো। যা ১৯১৮ সাল পর্যন্ত চলেছিল। সারা ইয়োরোপ-ভূখণ্ডে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লো। ইয়োরোপের বিভিন্ন দেশের কমিউনিস্ট এবং শ্রমিকশ্রেণির পার্টিগুলির মধ্যে যুদ্ধ নিয়ে বিরাট বিতর্ক শুরু হলো। সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির শ্রমিকশ্রেণির পার্টিগুলির এই যুদ্ধে কী অবস্থান হবে, লেনিন তা তাঁর ‘উপনিবেশিক তত্ত্ব’-এ ব্যাখ্যা করলেন। তিনি বললেন, সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির শ্রমিকশ্রেণির পার্টিগুলিকে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে। উপনিবেশগুলির শ্রমিকশ্রেণির লড়াই এবং মুক্তি সংগ্রামকে সফল করতে এবং সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির শ্রমিকশ্রেণির লড়াইকে জয়যুক্ত করতে হলে এটা অবশ্যই জরুরি। তিনি আহ্বান জানালেন, সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধকে গৃহযুদ্ধে পরিণত করো। রাশিয়া ছাড়া অন্য দেশের শ্রমিকশ্রেণি লেনিনের আহ্বানকে বাস্তবে রূপায়ণ করতে পারেননি। দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটা সত্য, অন্য দেশের শ্রমিকশ্রেণি সে দেশের বুর্জোয়াদের হয়েই যুদ্ধ করেছিল। রাশিয়ার শ্রমিকশ্রেণি এই বিশেষ অবস্থাকে কাজে লাগিয়ে ১৯১৭ সালে বিপ্লব সফল করলো। রুশ বিপ্লবের মূল স্লোগান ছিল ‘জমি, রুটি, শান্তি’ - ‘কৃষকদের জমি, শ্রমিকদের রুটি, সৈন্যদের জন্য শান্তি।’ ১৯০৫ সালের বিপ্লবে শ্রমিক-কৃষক ঐক্য গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। লেনিনের নেতৃত্বে এবারে তা সম্ভব হলো এবং তাতে যোগ দিল দীর্ঘদিনের যুদ্ধে ক্লান্ত সৈন্যরা। যার ফলে জারের ক্ষমতা ধরে রাখার কোনো সুযোগই ছিল না।
সমসাময়িক পুঁজিবাদ নিয়ে বিস্তর পড়াশোনা করেছিলেন লেনিন। সেইসব জ্ঞানকে এক জায়গায় নিয়ে এসে ১৯১৬ সালে তিনি সিদ্ধান্তে এলেন সাম্রাজ্যবাদই পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ স্তর। তিনি আরও দেখলেন, কীভাবে শিল্পপুঁজি এবং ব্যাঙ্কপুঁজি একসঙ্গে মিলিত হয়ে লগ্নিপুঁজির সৃষ্টি হচ্ছে। লেনিনের সময়ের থেকে বর্তমান সময়ের লগ্নিপুঁজি ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। কিন্তু লগ্নিপুঁজির যে সংজ্ঞা লেনিন দিয়েছিলেন, তা আজ সমানভাবে গ্রহণীয়। তিনি দৃঢ়তার সাথেই বললেন, সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির শ্রমিকশ্রেণি উপনিবেশের শ্রমিকশ্রেণির লড়াইতে সাহায্য না করলে নিজ দেশেও সে পুঁজিবাদকে পরাজিত করতে পারবে না। তিনি ওই সময়কে সাম্রাজ্যবাদী যুগ এবং একইসাথে সর্বহারার বিপ্লবের যুগ বলেও চিহ্নিত করলেন। এইসব কারণেই লেনিনবাদকে সাম্রাজ্যবাদী যুগের মার্কসবাদ হিসাবে অভিহিত করা হয়।
বিপ্লব সফল হওয়ার পর ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, আমেরিকা ও জাপান সহ আরও কয়েকটি দেশ একসঙ্গে রাশিয়া আক্রমণ করে। বিদেশি শক্তির আক্রমণ এবং দেশের মধ্যে বিপ্লব-বিরোধী দক্ষিণপন্থী শক্তির ষড়যন্ত্রকে লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিক পার্টি পরাজিত করে। বিদেশি ও অভ্যন্তরীণ বিপ্লব-বিরোধী শক্তির আক্রমণ থেকে বিপ্লবকে রক্ষা করা সম্ভব হলেও, যুদ্ধবিধ্বস্ত রাশিয়ার পিছিয়ে-পড়া অর্থনীতিকে উন্নত সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিকে পরিণত করা লেনিনের সামনে এক কঠিন কাজ ছিল। এই পরিস্থিতিতে তিনি New Economy Policy’র পথ গ্রহণ করেন। এই নীতিতে বিদেশি পুঁজিকেও দেশে শিল্প গড়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়। লেনিনের এ প্রসঙ্গে বক্তব্য ছিল, দেশের শাসনক্ষমতা বলশেভিকদের হাতে, দেশের শ্রমিকশ্রেণির হাতে। ভবিষ্যতে কী হবে, তা দেশের শ্রমিকশ্রেণি ঠিক করবে। তবে এই নীতির ফলে বিরাট সংখ্যক পুঁজিপতি রাশিয়ায় শিল্প স্থাপনে এগিয়ে আসেনি। কিছু পুঁজিপতি এসেছিল। পরবর্তীকালে ইতিহাস প্রমাণ করেছে, কিছুটা হলেও এই নীতির ফলে রাশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটেছিল।
লেনিনের ৫৪ বছরের ক্ষণস্থায়ী জীবন ছিল। এক প্রতিবিপ্লবী লেনিনকে গুলি করে। লেনিন মারাত্মকভাবে আহত হন। তারপর লেনিন আর সুস্থ হননি। ১৯২৪ সালের ২১ জানুয়ারি লেনিনের মৃত্যু ঘটে। এর কিছুদিনের মধ্যেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্যের শীর্ষে এসে যায় সোভিয়েত ইউনিয়ন। দ্রুত গম উৎপাদনে আমেরিকাকে এবং ইস্পাত উৎপাদনে জার্মানি, ফ্রান্সকে ছাড়িয়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়ন। ১৯২৯-৩০ সালের আর্থিক মন্দা আমেরিকা, ইয়োরোপকে গ্রাস করলেও সোভিয়েত ইউনিয়নকে স্পর্শ করতে পারেনি। এই তীব্র আর্থিক সংকট ইয়োরোপের দেশে দেশে বেকারি, দারিদ্র্য, হাহাকারের সৃষ্টি করে। কমিউনিস্টরা একে আন্দোলন-সংগ্রামে পরিণত করতে পারেনি। যার ফলশ্রুতিতে জার্মানি, ইতালিতে ফ্যাসিবাদের জন্ম হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রথম পর্যায়ে হিটলারের জার্মান ফ্যাসিস্ত বাহিনী ঝটিকা আক্রমণে ইয়োরোপের একের পর এক দেশ দখল করে নিলো। পরাস্ত হলো ফ্রান্সও। স্তালিন জানতেন, জার্মান আক্রমণ থেকে রাশিয়াকে মুক্ত রাখা সম্ভব নয়। রাশিয়া এই যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করে দেয়। শেষে সোভিয়েত ইউনিয়নকে আক্রমণ করে হিটলার। প্রথমে জার্মান ফ্যাসিস্ত বাহিনীর ঝটিকা আক্রমণে পিছু হটে সোভিয়েত ইউনিয়ন। লেনিনগ্রাদ অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। মস্কোর ২৩ কিলোমিটারের মধ্যে চলে আসে জার্মানবাহিনী। এই আক্রমণের মুখোমুখি দাঁড়ায় গোটা সোভিয়েত ইউনিয়ন। শুরু হয় দেশপ্রেমের যুদ্ধ। অবরুদ্ধ স্থানগুলি থেকে প্রতিরোধ শুরু হয়। বিশ্বের মানুষের কাছে তখন প্রশ্ন ছিল, ফ্যাসিবাদের পরাজয় সম্ভব? বিরাট আত্মত্যাগের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন। যখন ইয়োরোপের একের পর এক দেশ জার্মানির কাছে আত্মসমর্পণ করছে, তখন বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে আমেরিকার কাছে আবেদন করা হয়েছিল, ইয়োরোপে যুদ্ধের দ্বিতীয় ফ্রন্ট খোলার জন্য। রবীন্দ্রনাথও এই আবেদন জানিয়ে তৎকালীন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি রুজভেল্টকে চিঠি দিয়েছিলেন। সেই চিঠির উত্তর রুজভেল্ট দেননি আর বিশ্ববাসীর আবেদনেও সাড়া দেননি। শেষ পর্যন্ত স্তালিনগ্রাদের লড়াই যুদ্ধের মোড় ঘোরালো। ১৯৪৫ সালের ১ মে বার্লিনের রাইখস্টাগে লাল পতাকা ওড়ালো সোভিয়তের লাল ফৌজ। যুদ্ধ শেষ হয়ে যাবার পর যখন আর কোনো প্রয়োজনই ছিল না, তখন আমেরিকা জাপানের ওপর বোমা ফেললো।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দুনিয়ার চেহারাটাই পালটে গেল। যদি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ফ্যাসিবাদ জয়যুক্ত হতো, তাহলে পৃথিবীর ইতিহাস অন্যভাবে লেখা হতো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকার দেশগুলি সাম্রাজ্যবাদের কবলমুক্ত হয়ে স্বাধীন হলো। গোটা পূর্ব ইয়োরোপ জুড়ে একটা সমাজতান্ত্রিক শিবির গড়ে উঠলো।
পরবর্তী কিছু বছরের মধ্যে চীন, কোরিয়া, ভিয়েতনাম, কিউবায় সমাজতন্ত্র গড়ে উঠলো। তখন সমাজতন্ত্র শুধু তত্ত্ব হিসেবে নয়, একটা বাস্তব সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলো।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিরাট ক্ষয়ক্ষতির পর আবার নতুন করে সোভিয়েত ইউনিয়নে নির্মাণকাজ শুরু হলো। দ্রুত তারা এ অবস্থা থেকে নিজেদের উত্তরণ ঘটালো। মহাকাশে প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ, প্রথম মানুষ যাত্রা করলো সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে। অলিম্পিক খেলায় বার বার পদক তালিকায় প্রথম স্থান দখল করলো সোভিয়েত ইউনিয়ন। মস্কো থিয়েটারে অভিনীত শেক্সপিয়রের হ্যামলেট নাটক ইংল্যান্ডের থিয়েটারের সাফল্যকেও ছাপিয়ে গেল।
এতো সাফল্য সত্ত্বেও সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিপর্যয় ঘটলো। এর পিছনে অথনৈতিক ও রাজনৈতিক কিছু কারণ ছিল। গত শতাব্দীর ৬০-৭০-এর দশক থেকেই সোভিয়েত ইউনিয়নে অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক সমস্যা শুরু হয়েছিল। দেশের উন্নয়নে সোভিয়েত ইউনিয়ন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা শুরু করে। আমাদের ভারতেও তা অনুকরণ করা হয়েছিল। এই পরিকল্পনা সোভিয়েত ইউনিয়নে অতিমাত্রায় কেন্দ্রীভূত ছিল। এতো বড়ো দেশ, এতো প্রদেশ, সেই প্রেক্ষিতে একটা অবাস্তব ঘটনা ছিল এটি। পরিকল্পনার বিকেন্দ্রীকরণের কোনো চেষ্টাই হয়নি। এই অতি কেন্দ্রিকতা অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল অভ্যন্তরীণ উৎপাদনেও।
সোভিয়েত ইউনিয়নে বাজারের ধারণাকে সম্পূর্ণ নস্যাৎ করে দেওয়া হয়েছিল। ক্ষুদ্র উৎপাদন ব্যবস্থাকে একদম ধ্বংস করে দেওয়া হয়। জনগণের চাহিদা অনুযায়ী ভোগ্যপণ্য উৎপাদনে একটা সমস্যা তৈরি হয়। উৎপাদন হ্রাস পায়। জনগণকে সমস্ত কিছুই সরকার নির্ধারিত দোকান থেকে কিনতে হতো। যা সংখ্যায় ছিল কম। মানুষের ভোগ্যপণ্য পাওয়ায় সংকট সৃষ্টি হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জনগণের চাহিদামতো ভোগ্যপণ্য দেশে উৎপন্ন হতো না। দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটা সত্য ছিল যে, সাফল্যের সঙ্গে স্পুটনিক তৈরি করতে পারত সোভিয়েত ইউনিয়ন, কিন্তু ব্লেড তৈরি করতে পারত না।
বৈদেশিক বাণিজ্যেও ক্রমশ দুর্বল হতে থাকে সোভিয়েত ইউনিয়ন। শেষদিকে শুধু পূর্ব ইয়োরোপের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির সাথেই বাণিজ্য চলত। এর ফলে দেশের অর্থনীতি অনেক দুর্বল হয়ে যায়। উৎপাদন হ্রাস পায়, অর্থনীতিতে একটা অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়।
সোভিয়েত ইউনিয়নে সমস্ত কিছুই রাষ্ট্রের মালিকানায় ছিল। সেই সময়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানাকেই সামাজিক মালিকানার একমাত্র রূপ হিসেবে দেখা হতো। সমাজতন্ত্রে রাষ্ট্রীয় মালিকানা ছাড়া সম্পদ মালিকানার অন্য চেহারা থাকতে পারে কিনা তা নিয়ে বর্তমান সমাজতান্ত্রিক দেশগুলিতে ব্যাপক পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে।
সোভিয়েত ইউনিয়নে জনগণের সঙ্গে সরকারের, জনগণের সঙ্গে পার্টির বিচ্ছিন্নতা ভীষণ বেড়ে গিয়েছিল। শ্রমিকশ্রেণি, ট্রেড ইউনিয়ন, জনগণকে সমাজতান্ত্রিক সরকারের কর্মসূচি সম্পর্কে কোনো ওয়াকিবহাল করা হতো না। দেশের রাজনৈতিক কাঠামো, রাজনীতি এবং অর্থনীতি সম্বন্ধে জনগণ একদম নিস্পৃহ হয়ে পড়েছিল। যখন সংকট সৃষ্টি হলো, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়লো, মানুষের মধ্যে তার বিরুদ্ধে কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলো না।
সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপর্যয় থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের পার্টি মাদ্রাজে ১৪তম কংগ্রেসে ‘কিছু মতাদর্শগত প্রশ্নে’ এবং কোঝিকোডে শেষ পার্টি কংগ্রেসে তাকে সংশোধন করে মতাদর্শগত দলিল গ্রহণ করেছে।
সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতন্ত্রের বিপর্যয়ের পর দু’দশক অতিক্রান্ত। এখন প্রশ্ন একবিংশ শতাব্দীতে সমাজতন্ত্রের চেহারা কেমন হবে। বর্তমান বিশ্বে সমাজতন্ত্রের জন্য আন্দোলনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রয়েছে চীন। চীনে সমাজতন্ত্রের মূল চরিত্রটা কী তা আমাদের অনুধাবন করতে হবে। সোভিয়েত ইউনিয়নে যে ভুল হচ্ছে তা অনেক আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিল চীনের পার্টি। ১৯৭৮ সাল থেকে চীনে সংস্কার পর্ব শুরু হয়। সমাজতান্ত্রিক অথনীতিতে বাজারের যে ভূমিকা আছে তা চীন মেনে নিয়েছে। রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে সমাজতান্ত্রিক বাজার অথনীতির কর্মসূচি নিয়েছে চীন। চীনে এখনও সংখ্যাগরিষ্ঠ কারখানা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান যা প্রায় ৭০ শতাংশ এখনও রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে। অর্থনীতিতে রাষ্ট্রীয় মালিকানাকে মূল ভিত্তি হিসেবে ধরে রেখেও যৌথ, সমবায়, ব্যক্তি পুঁজিকে উৎসাহিত করছে চীন। এইসব ক্ষেত্রে বিদেশি পুঁজিকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে চীন। তারা ঠিক করেছে ভোগ্যপণ্য উৎপাদনে রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ দরকার নেই। রাষ্ট্র শুধু নজর রাখবে। নিঃসন্দেহে এক্ষেত্রে চীন অভূতপূর্ব সফল হয়েছে।
তবে সবচেয়ে যেটা উদ্বেগের বিষয় তাহলো, চীন সীমিত ক্ষেত্রে পুঁজিবাদেরও পরীক্ষা চালাচ্ছে। চীনের পার্টি বলেছে, সমাজতন্ত্রের প্রাথমিক স্তরে রয়েছে চীন। সমাজতন্ত্রের উন্নত স্তরে পৌঁছতে গেলে এই পরীক্ষা-নিরীক্ষা তাদের করতেই হবে। লেনিনের মতোই চীনের পার্টিও বলেছে, ভবিষ্যতে কে জিতবে তা চীনের জনগণই ঠিক করবে।
পুঁজিবাদকে আমন্ত্রণ করতে গেলে কিছু বিপদ আসবে। দুর্নীতি, স্বজনপোষণের মতো বিপদ দেখা যাচ্ছে চীনে। এটাই দেখার কতোটা দৃঢ়তার সাথে, কতোটা সাফল্যের সাথে চীন এই সমস্যাগুলিকে আগামীদিনে মোকাবিলা করে। চীনের পার্টি এ ব্যাপারে দীর্ঘস্থায়ী সংগ্রামের উপর জোর দিয়েছে। চীন একইসাথে সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রের আরও প্রসার, নির্বাচনে আন্যান্যদের অংশগ্রহণ, বিচারব্যবস্থার সংস্কার এবং আইনের শাসনকে আরও শক্তিশালী করার উপর জোর দিয়েছে। চীনের পার্টি এক অগ্নিপরীক্ষায় নিজেদের নিয়োজিত করেছে। আগামীদিনে বিশ্বে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে চীনকে এই অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
ভিয়েতনামেও চীনের ন্যায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। অর্থনীতিতে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণকে চূড়ান্ত হিসেবে রেখেই রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ নজরদারিতে সমাজতান্ত্রিক বাজার অর্থনীতির কর্মসূচিকে গ্রহণ করেছে ভিয়েতনাম। দেশের উৎপাদন ব্যবস্থাকে উন্নত করতে না পারলে বৃহৎ শক্তির বিরুদ্ধে ভিয়েতনাম মুখোমুখি দাঁড়াবে কী করে। কিউবাতেও সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। কিউবা গত পাঁচ দশকের সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মানব উন্নয়ন বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্যে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে। সারা বিশ্বের কাছে তা কিউবা মডেল হিসেবে পরিচিত। এই দুটি ক্ষেত্রে তারা আমেরিকাকেও ছাপিয়ে গেছে।
লাতিন আমেরিকার একাধিক দেশে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সরকার গড়ে উঠেছে। তারা একবিংশ শতকের সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলছে। লাতিন আমেরিকার এই অভিজ্ঞতারও কোঝিকোডে পার্টি কংগ্রেসে গৃহীত মতাদর্শগত দলিলে আলোচনা করা হয়েছে। এই দেশগুলি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ নির্দেশিত উদার অর্থনীতির তত্ত্বকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বিকল্প নীতি তুলে ধরেছে, যা তারা নাম দিয়েছে বলিভারিয়ান অল্টারনেটিভ। এর মূল দিকগুলি হলো - ব্যাপক ভূমিসংস্কার কর্মসূচির রূপায়ণ। ব্রাজিল, ভেনেজুয়েলা, বলিভিয়ায় অনেক বিদেশি কোম্পানির হাতে লক্ষ লক্ষ একর জমি ছিল। রাষ্ট্র সেই জমি বাজেয়াপ্ত করে ভূমিহীনদের মধ্যে বণ্টন করেছে। এদের বিকল্প নীতির দ্বিতীয় দিক হলো, ব্যাঙ্ক ও খনিজ সম্পদের জাতীয়করণ। আর খাদ্য নিরাপত্তা, সর্বজনীন শিক্ষা, স্বাস্থ্যের জন্য ব্যাপক কর্মসূচি নিয়েছে ওই দেশগুলি। খাদ্য নিরাপত্তার ব্যাপারে ব্রাজিলে দারুণ কাজ হয়েছে। সর্বজনীন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে ওই দেশগুলি কিউবার মডেলকে অনুসরণ করছে।
লাতিন আমেরিকার দেশগুলি যে বিকল্প নীতি নিয়ে চলছে তা মূলত আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাঙ্ক নির্দেশিত উদারনীতির বিরুদ্ধে একটা নতুন বামপন্থা। এটা অবশ্যই একটা ইতিবাচক পদক্ষেপ। আমরা এই নীতিকে সমর্থন করেছি। কিন্তু এটা এ যুগের সমাজতন্ত্র নয়। সমাজতন্ত্রের পথে যাত্রায় এটা সাহায্য করবে। ব্যক্তিপুঁজির অবসান না হলে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে না।
লাতিন আমেরিকার দেশগুলি যৌথ সহযোগিতার ক্ষেত্রেও অনেকটা অগ্রসর হয়েছে। আগে আমেরিকা মহাদেশে মুক্ত বাণিজ্যের জন্য একটা চুক্তি ছিল। তার নাম এফটিটিএ। এখন সেই চুক্তিকে বাতিল করে লাতিন আমেরিকার ৩৩টা দেশ আমেরিকা ও কানাডাকে বাদ দিয়ে একটা সংগঠন গড়ে তুলেছে। যার নাম ‘সেলাক’। এই সংগঠন তৈরির মূল উদ্দেশ্য হলো, নিজেদের মধ্যে আলোচনা ও সহযোগিতার মধ্য দিয়ে প্রত্যেকটা দেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা।
বর্তমান সময়ে আমেরিকা, ইয়োরোপের দেশগুলি গভীর আর্থিক সংকটে নিমজ্জিত। এই সংকট শুধু শিল্পে নয়, এক সর্বগ্রাসী সংকটের চেহারা নিয়েছে। এর মূল কারণ হলো লগ্নিপুঁজির ভয়ঙ্কর আগ্রাসী মনোভাব। বর্তমানে লগ্নিপুঁজি আন্তর্জাতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। সে চায় বেপরোয়া মুনাফা। তার জন্য প্রয়োজন ফাটকাবাজি এবং সহজ শর্তে ঋণ। যখন বড়ো বড়ো কর্পোরেট সংস্থাগুলি দেউলিয়ায় পরিণত হচ্ছে, তখন সব দায় এসে পড়ছে জাতীয় সরকারগুলির উপর। এই দেনার দায় মেটাতে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে ঋণ নিচ্ছে ওই দেশগুলি। তাদের শর্তে জনগণের উপর কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকারগুলি। বর্তমানে গ্রিস, স্পেন, আয়ারল্যান্ডের অর্থনীতির দেউলিয়া অবস্থা হয়েছে।
এই সংকটে আবদ্ধ পুঁজিবাদ নিঃসন্দেহে কোণঠাসা। কিন্তু এখনও আমেরিকার ডলারের ক্ষমতা, সামরিক ক্ষমতা বিরাট। যার জোরে সে ইরাক, লিবিয়া করেছে। ইরান, সিরিয়া তার পরবর্তী লক্ষ্য। সারা দুনিয়ায় পুঁজিবাদের এই সংকটে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তার বিরুদ্ধে অক্যুপাই আন্দোলন শুরু হয়েছে। আমেরিকাতে এই আন্দোলন শুরু হলেও বর্তমানে তা পৃথিবীর ১৮৩টা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সংকটে আক্রান্ত জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করছে। এই আন্দোলন সংগ্রাম বিকল্প বাম রাজনীতির ভিত্তিতে সংগঠিত না হলে বেশি দূর অগ্রসর হওয়া যাবে না। আমরা জানি পুঁজিবাদ সংকটে পড়লেও তা নিজে থেকে পড়ে যায় না, তাকে উপড়ে ফেলতে হয়। তার জন্য বামপন্থার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তাই দেশে দেশে মার্কসের নাম স্মরণ হচ্ছে। আমরাও সেই লক্ষ্যে কমরেড লেনিনকে স্মরণ করছি।