৫৮ বর্ষ ২৩শ সংখ্যা / ২২ জানুয়ারি ২০২১ / ৮ মাঘ ১৪২৭
১২৫তম জন্মদিনে নেতাজি সুভাষচন্দ্র’র প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য
সুপ্রতীপ রায়
১৯৪৫ সালের ২২ আগস্ট দিল্লি বেতারকেন্দ্র থেকে সুভাষচন্দ্র বসুর মৃত্যু সংবাদ প্রচারিত হয়। জাপানি অফিসারদের ভাষ্য অনুযায়ী ফরমোজা থেকে যাত্রা করার পর তাইহোকুতে বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয়। যদিও এ’নিয়ে বিতর্ক চলছে। স্বাধীনতার পর সাতটি দশক অতিক্রম করলেও সুভাষচন্দ্র বসুর মৃত্যু রহস্য আজও উদ্ঘাটিত হয়নি। অবশ্য তাঁর মৃত্যু নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা এখনও চলছে। সুভাষচন্দ্র সম্পর্কে নানা বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য হীন রাজনৈতিক দৃষ্টিতে করা হয়। যার মূল লক্ষ্য ভারতের কমিউনিস্ট ও বামপন্থীদের হেয় করা।
অকৃত্রিম দেশপ্রেমিক হিসাবে নেতাজি ভারতবাসীর হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবেন। তিনি ছিলেন আদর্শবান মানুষ। আদর্শের সঙ্গে তিনি কোনোদিন আপস করেননি। ১৯২৯ সালের ২১ জুলাই হুগলি জেলার ছাত্র সম্মেলনের সভাপতির ভাষণে তিনি বলেছিলেনঃ ‘‘প্রত্যেক ব্যক্তির বা জাতির একটা ধর্ম বা আদর্শ আছে। সেই আদর্শকে সার্থক করাই তাঁর জীবনের উদ্দেশ্য ও সেই আদর্শকে বাদ দিলে এর জীবন অর্থহীন ও নিষ্প্রয়োজন হইয়া যায়।’’ আইসিএস পরীক্ষায় সুভাষচন্দ্র বসু চতুর্থ স্থান অধিকার করলেও লোভনীয় মোটা মাইনের চাকরি গ্রহণ করেননি। স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
জাতীয় কংগ্রেসের দু’বারের নির্বাচিত সভাপতি কিংবা অস্থায়ী আজাদ হিন্দ সরকারের রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে ভারতবর্ষকে বিদেশি শাসনমুক্ত করার চেষ্টা করে গিয়েছেন। দেশকে স্বাধীন করাই লড়াইয়ে তিনি বারংবার রক্তাক্ত হয়েছেন, নির্বাসিত হয়েছেন, কারারুদ্ধ হয়েছেন, কিন্তু ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ক্লান্তিহীন লড়াই পরিচালনা করেছেন।
সুভাষচন্দ্র বসু কংগ্রেস রাজনীতির বিকল্প অনুসন্ধান করেছিলেন। মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন অহিংস অসহযোগ আন্দোলন গোটা ভারতবর্ষকে তরঙ্গায়িত করেছিল। কিন্তু ১৯২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে চৌরিচৌরার কৃষক অভ্যূত্থান, স্থানীয় পুলিশ চৌকি আক্রমণ এবং কিছু পুলিশের মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে মহাত্মা গান্ধী আইন অমান্য প্রত্যাহার করে নেন। অনেকেই গান্ধীর এই সিদ্ধান্তকে মন থেকে মেনে নিতে পারেননি। এই ঘটনা জাতীয় আন্দোলনের সামনে হতাশা তৈরি করেছিল। হতাশা যাঁদের মধ্যে তৈরি হয়েছিল, মূলত তাঁরা ছিলেন সাম্রাজ্যবাদী শাসনের বিরুদ্ধে।
সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আপসহীন লড়াকু নেতা। তিনি মনে করতেন ব্রিটিশের হাত থেকে মুক্তির দু’টি পথ আছে - একটি আপসহীন সংগ্রাম, অপরটি হলো আপস ও অহিংস পথে সাময়িক স্বস্তিলাভ। আপসহীন সংগ্রাম বলতে সুভাষচন্দ্র কখনই অযথা সন্ত্রাসবাদকে বোঝেননি। তিনি দৃঢ়ভাবে মনে করতেন অসহযোগ আন্দোলন ব্রিটিশকে যতটা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করেছিল তার থেকে অনেক বেশি চিন্তিত করেছিল সন্ত্রাসবাদী বৈপ্লবিক আন্দোলনের ধারা। অতএব এই ধারাকে যদি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পরিচালিত করা যায়, তবে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদকে দুর্বল করা যাবে। তিনি বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন, কৃষক সংগঠন, বামপন্থীদের অকুণ্ঠ সমর্থন পেয়েছিলেন।
বিশের দশকে জাতীয় সংগ্রামে শ্রমিক শ্রেণি বিপুল সংখ্যায় অংশ নিয়েছিল। এই সময়ে শ্রমিক আন্দোলনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছিল। শ্রমিক আন্দোলনের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে মতাদর্শ হিসাবে সমাজতন্ত্রবাদ ভারতে একটা রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে বিকাশ লাভ করে। সমাজতন্ত্রের মতাদর্শের প্রভাব ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের তরুণ ও বামপন্থীদের মধ্যে পড়েছিল। বিশের দশকে জাতীয় কংগ্রেসে বামপন্থী চিন্তাধারার উদ্ভব ঘটে। কংগ্রেসের বামপন্থী শক্তি ও চিন্তাধারার অন্যতম নেতৃত্ব ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু।
সুভাষচন্দ্রের সমাজতন্ত্রের প্রতি আকর্ষণ ছিল। যদিও তিনি শ্রমিক শ্রেণির নেতৃত্বে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের কথা বলেননি। সুভাষচন্দ্র নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে সমাজতন্ত্রের বিশ্লেষণ করেছেন। সারা দেশে সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রচলন, অভিন্ন ভূমি ব্যবস্থার প্রবর্তন, শিল্প ও কৃষির সামগ্রিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় পরিকল্পনার প্রণয়নের উপর বলেছিলেন।
সুভাষচন্দ্র বসু রাশিয়ার বিপ্লববাদের আদর্শে প্রভাবিত হয়েছিলেন। কংগ্রেসের সভাপতি হিসাবে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো দ্রুততার সঙ্গে শিল্প বিপ্লব গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। সুভাষচন্দ্র পরিকল্পনা প্রণয়নে সোভিয়েত ইউনিয়নের মডেল ব্যবহারের সমর্থক ছিলেন। তিনি স্বাধীন ভারতের শাসন ব্যবস্থাকে সমাজতন্ত্রবাদ ও গণতান্ত্রিক নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন।
১৯২৭ সালে জেলখানা থেকে ছাড়া পাওয়ার পর থেকেই সুভাষচন্দ্র নানা ভাষণে প্রকাশ্যে সমাজতন্ত্রের কথা বলতে থাকেন। ১৯২৯ সালের ৩০ মার্চ রংপুরে রাজনৈতিক সম্মেলনে তিনি বলেছিলেনঃ ‘‘আমরা এখন আমাদের রাজনৈতিক সংগ্রামের তৃতীয় পর্বে উপনীত হয়েছি। প্রথম পর্ব ছিল স্বদেশি যুগ, দ্বিতীয় পর্ব বিপ্লবীদের যুগ এবং তৃতীয় পর্ব অসহযোগ এবং সমাজতন্ত্রের।’’
মাদ্রাজ কংগ্রেসের পর থেকে বামপন্থী শক্তির প্রভাব বৃদ্ধি পায়। কংগ্রেসের দক্ষিণপন্থী অংশ পূর্ণ স্বাধীনতার বদলে ‘ডেমিনিয়ন স্ট্যাটাসকেই’ জাতীয় আন্দোলনের রাজনৈতিক লক্ষ্য হিসাবে গ্রহণ করায় উদ্যোগী হন। যদিও শেষ পর্যন্ত ১৯২৯-র লাহোর অধিবেশনে বামপন্থী শক্তির চাপে পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যকে জাতীয় কংগ্রেসের রাজনৈতিক লক্ষ্য হিসাবে গ্রহণ করে। লাহোর অধিবেশনে সুভাষচন্দ্র সহ বামপন্থী দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন কংগ্রেস নেতৃত্বের জয় হয়।
জাতীয় বিপ্লবীদের সঙ্গে সুভাষচন্দ্রের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। ‘অনুশীলন সমিতি’ এবং ‘যুগান্তর’ দলের জাতীয় বিপ্লবীদের অনেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। ১৯৩১ সালের ২৭ মার্চ তিনি পরিষ্কারভাবে ঘোষণা করেছিলেনঃ ‘‘আমি চাই ভারতবর্ষে সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র’’ প্রতিষ্ঠা করতে। সুভাষচন্দ্রের কাছে সমাজতন্ত্র ছিল ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাগত কর্মসূচি। সেই কারণে স্বাধীনতা-পরবর্তী ভারতের সমাজতান্ত্রিক পুনর্গঠনের কর্মসূচির উপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন।
১৯৩৭-৩৯ পর্বে বাংলার রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অনেকগুলি ঘটনা ঘটে। জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে এবং বাইরে বামপন্থার প্রসার ঘটতে থাকে। ১৯৩৭ সালে নেতাজি’র সাময়িক কারামুক্তির পর ভারতবর্ষের রাজনীতিতে বামপন্থী প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছিল। ১৯৩৭-৪০ এই পর্বে কমিউনিস্ট পার্টি সুভাষচন্দ্রের নেতৃত্বাধীন আন্দোলনগুলিতে ছিল। ১৯৪০-এ ফরওয়ার্ড ব্লক গঠিত হওয়া পর্যন্ত কমিউনিস্টরা সুভাষচন্দ্রকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। কমিউনিস্টদের উপর নেতাজির আস্থা ছিল।
দেশের ভবিষ্যতের জন্য গঠনমূলক ভাবনা ও পরিকল্পনা ছিল নেতাজির। তাঁর প্রস্তাব অনুসারে জাতীয় পরিকল্পনা কমিটি গঠন করা হয়। ন্যাশনাল ইকনমিক ডেভেলপমেন্ট বোর্ড গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। ১৯৩৮-র জাতীয় কংগ্রেসের হরিপুরা অধিবেশনে নেতাজি ঐতিহাসিক বক্তৃতা দিয়েছিলেন। আসলে এই বক্তৃতা ছিল বামপন্থী ঘেঁষা। সুভাষচন্দ্র বসুর হরিপুরা ভাষণে - জমিদারি প্রথার বিলোপ, ভূমি ব্যবস্থার সংস্কার, সমবায় প্রথা, কৃষিঋণ মকুব, শিল্পায়নের ওপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ তথা মালিকানা স্থান পেয়েছিল। সুভাষচন্দ্রের বিভিন্ন পদক্ষেপ বৃহৎ ব্যবসায়ী ঘনশ্যাম দাস বিড়লা সহ রক্ষণশীলনের পছন্দ ছিল না।
কমিউনিস্টদের সঙ্গে সুভাষচন্দ্র বসুর ভালো সম্পর্ক ছিল। ১৯৩৮ সালের আগস্ট মাস থেকে প্রকাশিত হতে থাকে নবপর্যায়ের বাংলা মাসিক ‘গণশক্তি।’ এই পত্রিকার প্রথম সংখ্যায় তিনি অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছিলেন। হরিপুরা কংগ্রেসে মুজফ্ফর আহ্মদ যোগদান করেছিলেন। সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটিতে বঙ্কিম মুখার্জি, কমল সরকার, পাঁচুগোপাল ভাদুড়ির মতো কমিউনিস্টরা মনোনীত হয়েছিলেন।
সুভাষচন্দ্র বসু যাতে দ্বিতীয়বারের জন্য কংগ্রেস সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করেন তার জন্য সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল, রাজেন্দ্র প্রসাদ, যমুনালাল বাজাজ, জয়রামদাস দৌলতরাম, শংকররাও দেও, ভুলাভাই দেশাই এবং জে বি কৃপালনী যৌথভাবে বিবৃতি দিয়েছিলেন। তাঁরা অনুরোধ জানিয়েছিলেন, যাতে পট্টভি সীতারামাইয়া সর্বসম্মতিক্রমে কংগ্রেস সভাপতি পদে নির্বাচিত হতে পারেন।
যৌথ বিবৃতির উত্তরে সুভাষচন্দ্র বসু বলেছিলেন - আগামী বছরে কংগ্রেসের প্রভাবশালী অংশের নেতারা ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রীয় অংশটি সম্পর্কে বোঝাপড়ায় আসতে পারেন, এমন ধারণা অনেকের মনে সৃষ্টি হয়েছে। সেইজন্য কংগ্রেসের প্রভাবশালী নেতারা একজন বামপন্থী সভাপতিকে আর চাইছেন না। কারণ তিনি বোঝাপড়া ও দর-দস্তুর চালানোর পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়াবেন। তিনি এটাও জানিয়েছিলেন - আচার্য নরেন্দ্র দেবের মতো খাঁটি যুক্তরাষ্ট্রীয় অংশবিরোধী নেতাকে কংগ্রেস সভাপতি রূপে মনোনয়ন করা হলে তিনি তাঁর প্রার্থীপদ স্বেচ্ছায় প্রত্যাহার করে নেবেন।
অবশ্য সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে পট্টভি সীতারামাইয়ার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। ২৩০ ভোটের ব্যবধানে সীতারামাইয়া পরাজিত হন। গান্ধীজি পট্টভি সীতারামাইয়ার পরাজয়কে নিজের পরাজয় বলেছিলেন। ত্রিপুরী কংগ্রেসে বামপন্থী-কমিউনিস্ট প্রভাবিত প্রদেশগুলি থেকে সুভাষচন্দ্র অনেক ভোট পেয়েছিলেন। যেমন বাংলা প্রদেশ থেকে সুভাষচন্দ্র বসু পেয়েছিলেন ৪০৪টি ভোট আর সীতারামাইয়া পেয়েছিলেন ৭৯টি ভোট।
কিন্তু নির্বাচিত সভাপতিকে কাজ করতে দেননি কংগ্রেসের দক্ষিণপন্থী অংশ। সভাপতি নির্বাচনের পরেই বল্লভভাই প্যাটেল, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, রাজেন্দ্রপ্রসাদ, সরোজিনী নাইডু, ভুলাভাই দেশাই, পট্টভি সীতারামাইয়া, শংকররাও দেও, জে বি কৃপালনী, জয়রামদাস দৌলতরাম, যমুনালাল বাজাজ প্রমুখ ১২ জন কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন। জওহরলাল নেহরু ১২ জনের সঙ্গে যৌথভাবে পদত্যাগ না করলেও, তিনি আলাদাভাবে পদত্যাগ করেছিলেন।
১৩ জন ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য পদত্যাগের পরেই গোবিন্দবল্লভ পন্থ এবং প্রায় ১৬০ জন এআইসিসি সদস্য নব-নির্বাচিত কংগ্রেস সভাপতিকে বলেন - তাঁরা কংগ্রেস অধিবেশনে একটি প্রস্তাব আনতে চান। সেই প্রস্তাবে বলা হয়েছিল - কংগ্রেস সভাপতিকে গান্ধীজির পছন্দ অনুসারে ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করতে হবে। ১৯৩৯-এ ত্রিপুরীতে সুভাষচন্দ্রের নির্বাচনে জয়লাভের পরও ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যদের মনোনয়নের ভার সভাপতিরূপে সুভাষচন্দ্রের পরিবর্তে গান্ধীজির উপর অর্পণ করার প্রস্তাব করা হয়েছিল।
কমিউনিস্টরা পন্থ প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। কমিউনিস্টরা সুভাষচন্দ্রের পিছনে সর্বশক্তি নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। ১৯৩৮ সালের অক্টোবর মাসে কমিউনিস্ট পার্টির তৎকালীন মুখপত্র ‘ন্যাশনাল ফ্রন্ট’ সর্বপ্রথম সুভাষচন্দ্র বসুর সভাপতি পদে পুনঃনির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছিল। সুভাষচন্দ্র বসুর ‘ফরওয়ার্ড’ পত্রিকায় গোপাল হালদারের মতো কমিউনিস্টরা যুক্ত ছিলেন।
কংগ্রেসের গৃহীত পন্থ প্রস্তাব অনুযায়ী সুভাষচন্দ্র গান্ধীজিকে ওয়ার্কিং কমিটির জন্য সদস্যদের তালিকা দিতে অনুরোধ করেছিলেন। সুভাষচন্দ্রের অনুরোধ সত্ত্বেও গান্ধীজি ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যদের তালিকা দিতে অস্বীকৃত হলে সুভাষচন্দ্র তার প্রতিবাদে কংগ্রেস সভাপতি পদে ইস্তফা দেন। পরের দিন রাজেন্দ্রপ্রসাদকে কংগ্রেস সভাপতি রূপে নির্বাচিত করা হয়।
সুভাষচন্দ্র বসু ফরওয়ার্ড ব্লক নামে একটি দল গঠন করেন। তিনি বামপন্থী শক্তিগুলিকে সমবেত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। ১৯৩৯-র জুন মাসে তিনি কমিউনিস্ট ও সমাজতন্ত্রী দল, মানবেন্দ্র রায়ের অনুগামী ও অন্যান্য বামপন্থী দলের সমর্থনে বাম সংহতি কমিটি গঠন করেন। কংগ্রেস হাইকমান্ড শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে সুভাষচন্দ্রের বিরুদ্ধে তিন বছরের জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। একথা অনস্বীকার্য, সুভাষচন্দ্র বসু জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর বামপন্থী শক্তিগুলি আরও সংহত হয়েছিল। ১৯৩৯-এ সুভাষচন্দ্রের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা বামপন্থী শক্তিগুলির কাছে আঘাত ছিল।
বর্তমান সময়ে নেতাজি সম্পর্কে আরও বেশি চর্চা এবং নেতাজি সম্পর্কে বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য ঐতিহাসিক তথ্যের আলোকে খণ্ডন করা জরুরি।