৫৮ বর্ষ ২৩শ সংখ্যা / ২২ জানুয়ারি ২০২১ / ৮ মাঘ ১৪২৭
নয়া-বিজ্ঞানপ্রযুক্তি নীতির আড়ালে
তপন মিশ্র
গত ২০২০ ডিসেম্বর মাসের ১৪ তারিখে নয়া-বিজ্ঞান প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনী নীতি (সায়েন্স টেকনোলজি অ্যান্ড ইনোভেশন পলিসি-এসটিআইপি) সরকার প্রকাশ্যে আনে। ৬৩ পাতার এই নীতিতে অনেক মুখরোচক এবং গুরুগম্ভীর কথা আছে। পড়লে ভালো ইংরেজির শব্দচয়ন আপনার মন ভরাবে, আশার দিগন্তে গেরুয়া আলোরছটা দেখবেন কিন্তু ভারতে বিজ্ঞান গবেষণার জগতে প্রাপ্তির জায়গার শূন্যতা কতটা ভরবে তাতে সন্দেহ আছে। এই নীতির উদ্দেশ্য হিসাবে বলা আছে যে, দেশের জন্য একটি শক্তিশালী আত্মনির্ভর বিজ্ঞান প্রযুক্তি নীতি (Building a Robust Science, Technology and Innovation Ecosystem for an Atmanirrbhor Bharot) তৈরি হলো এই নীতির উদ্দেশ্য। নীতিতে উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করার পরেই দেশের বিজ্ঞান প্রযুক্তি নীতির বিবর্তন অর্থাৎ সংক্ষিপ্ত ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে। তার পর ১১টি অধ্যায়ে নতুন নীতির প্রস্তাবনা করা হয়েছে। তারপর রয়েছে এই নীতি কার্যকর করার পদ্ধতি সম্পর্কে ব্যাখ্যা এবং নজরদারি করার ব্যবস্থা ইত্যাদি। অর্থাৎ পুরোটা দেখলে বোঝা যাবে যে, সরকারের নীতি তৈরির ক্ষেত্রে কোনো ফাঁকফোঁকর নেই।
স্বল্পচর্চিত ইতিহাস
সায়েন্স নিউজ অ্যাসোসিয়েশন ১৯৩৫ সালে মেঘনাদ সাহা এবং আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৩৮ সালে এই প্রতিষ্ঠানের তৃতীয় সাধারণ বার্ষিকসভায় সভাপতি হিসাবে আমন্ত্রিত হন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। এই বক্তৃতায় তিনি অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে যে যে বিষয়গুলির উপর গুরুত্বদেন সেগুলি হলোঃ দেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গবেষণায় সরকারি নিয়ন্ত্রণ চাই, একটি জাতীয় গবেষণা পরিষদ গঠন করা চাই, শিল্পবিকাশের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিকল্পনা চাই ইত্যদি। অবশ্য ১৯৪৩ সালে ইংরেজ সরকার সিএসআইআর (কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ) গঠন করে। স্বাধীনতার পর প্রথম দশবছরে বেশ কয়েকটি কেন্দ্রীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান তৈরি হয় এবং সরকারি ব্যবস্থাপনায় বিজ্ঞানপ্রযুক্তির সমস্তক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগ প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু তাসত্ত্বেও এদেশের চাহিদাপূরণে এই প্রচেষ্টা ছিল অপ্রতুল।
সায়েন্স নিউজ অ্যাসোসিয়েশনের মুখপত্র ‘সায়েন্স অ্যান্ড কালচার’ পত্রিকার প্রথম সংখ্যায় মেঘনাদ সাহা সম্পাদকীয়তে তৎকালীন ভারত সরকারের বিজ্ঞান বিষয়ক নীতির সমালোচনা করেন। বিশেষকরে তিনি ভারতের স্বাধীনতার পর প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর বিভিন্ন উদ্যোগের সমালোচনা করেন। তিনি মনে করতেন, নেহরু বিজ্ঞান ও শিল্পপ্রতিষ্ঠার জন্য খুবই তাড়াহুড়ো করছেন এবং এটি করতে গিয়ে ভারতীয় সংস্কৃতি, ভারতের উপযোগী প্রযুক্তির উপর বেশি জোর দিচ্ছেন না। তাঁর মতে নেহরু একজন স্বপ্নদ্রষ্টা কিন্তু তাঁর বৈজ্ঞানিক দক্ষতার অভাব আছে। এসবের ফলস্বরূপ সাহার সাথে নেহরুর তিক্ততাও তৈরি হয়। সাহা ১৯৫১ সালে প্রথম লোকসভা নির্বাচনে বামপন্থী সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হন। লোকসভায় তিনি ছিলেন নেহরুর নীতির বিরোধী।
স্বাধীনতা-পূর্ব ভারতে বিজ্ঞান গবেষণার এই ইতিহাস অবশ্য সাম্প্রতিক প্রকাশিত সরকারি নীতিতে নেই। যা আছে তা’হলো ১৯৫৮ সালে সায়েন্স পলিসি রেজোলিউশন থেকে শুরু করে এই সময়কাল পর্যন্ত বিভিন্ন নীতির কথা। একথা স্বীকার করে নেওয়া হয় যে, ১৯৫৮ সালের প্রথম নীতি এদেশে বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান তৈরি এবং বিজ্ঞান মানসিকতা তৈরির ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছে। তারপর ১৯৮৩-র প্রযুক্তিনীতি, ২০০৩-র বিজ্ঞানপ্রযুক্তি নীতি এবং ২০১৩-র এসটিপিআই-র কথা।
ভারতের বিজ্ঞানপ্রযুক্তি নীতির বিবর্তন বলতে গিয়ে শেষ ছত্রে বলা হয়েছে যে - বিজ্ঞান প্রযুক্তি গবেষণার ক্ষেত্রে সরকারি এবং বেসরকারি অর্থের বিনিয়োগ, পূর্ণসময়ের গবেষকদের সংখ্যা বৃদ্ধি, আরও গবেষণার পরিকাঠামো বৃদ্ধি, গবেষণার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আন্তঃসম্পর্ক বৃদ্ধি ইত্যাদির চাহিদা রয়েছে। এই সমস্ত দাবি কেবল বিজ্ঞান জগতের মানুষের নয় দেশের সমস্ত মানুষের। গত কয়েক দশকে বা ২০১৪-র পরেও তা হয়নি বরং উদ্যোগের ঘাটতি দেখা গেছে। প্রতিবছর বিজ্ঞান কংগ্রেসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আগের এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী Gross Domestic Expenditure on Research and Development (GERD) অর্থাৎ বিজ্ঞান গবেষণার জন্য জিডিপি’র ২ শতাংশ খরচের প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন। কিন্তু ইউপিএ কিংবা বিজেপি এই দুই সরকারের ক্ষেত্রে ব্যয়বরাদ্দ জিডিপি’র ১ শতাংশেরও কম, ০.৯ শতাংশের মধ্যে আবদ্ধ থাকে। বাজেটে যে বরাদ্দে বৃদ্ধি চোখে পড়ে তা আসলে মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা মাত্র। এই বরাদ্দের প্রায় ৫৮শতাংশ চলে যায় পারমাণবিক শক্তি, প্রতিরক্ষা এবং মহাকাশ গবেষণার জন্য। বাকি ৪৮ শতাংশ মৌলিক বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, চিকিৎসা ইত্যাদি সমস্তক্ষেত্রের গবেষণার জন্য বরাদ্দ। বর্তমান দেশের বিজ্ঞান গবেষণার ২৫-২৯ শতাংশ আসে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে।
আত্মসমর্পণের পথ
বিজ্ঞানপ্রযুক্তির গবেষণার ক্ষেত্রে বেসরকারি বিনিয়োগের যারা বিরোধী, আমি সেই দলে নেই। কিন্তু যে বিষয়টি বারবার আসে তা হলো গবেষণার ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ন্ত্রণ এবং জনস্বার্থে জরুরি ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপের সদিচ্ছার অভাব। এই আলোকে করোনা মহামারীর টিকা গবেষণার কথা স্বাভাবিকভাবেই চলে আসে। আমাদের দেশ সরকারি ক্ষেত্রগুলিতে টিকার গবেষণা ও তৈরির ক্ষেত্রে বিশ্বে প্রথমসারিতে থাকা সত্ত্বেও টিকা তৈরিতে সরকারি হস্তক্ষেপ হয়নি। বেসরকারি এবং বহুজাতিক সংস্থার উপর আমাদের নির্ভরশীল হতে হয়। আর একটি সংবেদনশীল ক্ষেত্র প্রতিরক্ষার ৫২টি গবেষণাগার, ৫৩টি গুণমান নির্ধারণ পরীক্ষাগার এবং ৪১টি অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরি রয়েছে। সরকার এক্ষেত্রে দেশি বিদেশি ৪৯ শতাংশ বেসরকারি বিনিয়োগ আহ্বান করছে।
এখানে আর একটু ইতিহাস চর্চা জরুরি। বেশি উদাহরণের মধ্যে না’গিয়ে কেবল ২টি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। আমাদের দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা প্রতিষ্ঠান বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সেস তৈরি হয় জামসেদজি টাটার নেতৃত্বে। এই প্রতিষ্ঠানের জন্য জমি দেন মহীশূরের তৎকালীন রাজা এবং এর পরামর্শদাতা ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। ১৮৯৮ থেকে উদ্যোগ শুরু হয় এবং ১৯০৯ সালে প্রতিষ্ঠা হয় এই প্রতিষ্ঠান। ১৯১১ সালে ছাত্রদের জন্য এই প্রতিষ্ঠানের দরজা খুলে দেওয়া হয়। কলকাতার যাদবপুরের ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অব সায়েন্স-এর স্থাপনের উদ্যোগ নেন মহেন্দ্রলাল সরকার ১৮৭৬ সালে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরও এই উদ্যোগে শামিল ছিলেন। এটি হলো দেশের সবথেকে পুরনো মৌলিক বিজ্ঞানের গবেষণা প্রতিষ্ঠান। এই দুটি প্রতিষ্ঠানই পরবর্তীকালে সরকার অধিগ্রহণ করে।
এই নয়া-নীতিতে এত ভালোভালো প্রস্তাব রয়েছে যা আপনার চোখ ধাঁধিয়ে দেবে। যেমন ধরুন মৌলিক গবেষণা, দেশীয় প্রযুক্তি এবং পরম্পরাগত জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে গবেষণার বিকাশ ইত্যাদি। এদেশে সর্বক্ষণের গবেষক, গবেষণাগারগুলিকে বিশ্ববিদ্যালয়স্তরে উন্নীত করা, উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেসরকারি উদ্যোগে গবেষণা ইত্যাদি নতুন কিছু নয়। অবশ্য পরম্পরাগত জ্ঞানের মধ্যে পুষ্পকরথ বা হাতির মাথা মানবদেহে প্রতিস্থাপন ইত্যাদি আছে কিনা জানা নেই।
এবারে আসি এই নয়া-নীতির কিছু কথায়।একটু লাইন ধরে ধরে পড়তে শুরু করলে ঝুলি থেকে বেড়াল বেরোবেই। তিন নম্বর অধ্যায়ের চার নম্বর ধারায় বলা হয়েছে যে, দেশে একটিই সায়েন্স টেকনোলোজি অ্যান্ড ইনোভেশন ফিনান্সিং অথরিটি থাকবে এবং এই কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা থাকবে সমস্ত গবেষণার জন্য আর্থিক বরাদ্দ করার। বর্তমানে এই ব্যবস্থা স্বাভাবিক নিয়মেই বিকেন্দ্রীকৃত। স্বাভাবিক নিয়মটা হলো গবেষণার বিষয় নয়, ধরন অনুযায়ী গবেষণায় বিনিয়োগের জন্য ব্যবস্থাপনা। এই কেন্দ্রীভূতব্যবস্থা গবেষণাগারগুলির স্বশাসনের অধিকার কতটা খর্ব করবে তা’সময় বলবে।
এই নীতির ৬.৩.২. ধারায় এক অভিনব বিষয়ের উত্থাপন করা হয়েছে। এখানে একটি তহবিলের কথা বলা হয়েছে যার নাম স্ট্র্যাটেজিক টেকনোলজি ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (এসটিডিএফ)। এই কৌশলগত প্রযুক্তি তহবিল স্ট্র্যাটেজিক টেকনোলজি ডেভেলপমেন্ট বোর্ড-এর অধীনে থাকে। বেসরকারি সংস্থা এবং উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে প্রযুক্তি গবেষণায় আর্থিক সহায়তার জন্য এই তহবিল ব্যবহৃত হবে। বেসরকারি সংস্থাকে প্রযুক্তি গবেষণার জন্য কেন আর্থিক সহায়তা দিতে হবে? মৌলিক বিজ্ঞান গবেষণায় বেসরকারি সংস্থা নেই। তারা প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদন করে মুনাফার জন্য। তাই তাদের দায়িত্ব হওয়া উচিত প্রযুক্তি বা ব্যবহারিক বিজ্ঞান গবেষণায় অর্থ বিনিয়োগ করার। এখনকার মেধাস্বত্ব সম্পর্কিত আইন এবং পেটেন্ট নীতির আবহে প্রত্যেকটি আবিষ্কারের মুনাফা বিনিয়োগকারী সংস্থার। ধরুন করোনার মতো এক মারণরোগের টিকা কোনো বেসরকারি সংস্থা আবিষ্কার করল। সেক্ষেত্রে সরকারি সাহায্য দিয়ে সেই টিকা যাতে বিনামূল্যে সর্বসাধারণের জন্য ব্যবহার করা যায় তার অঙ্গীকার এই নীতির অন্তর্ভুক্ত হওয়া জরুরি। নয়া-নীতির এই ধারা আমজনতার ট্যাক্সের অর্থ বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে দেওয়ার যে বৈধ রাস্তা তৈরি করার পরিকল্পনা করছে তা সম্পূর্ণ নীতিহীন।
৬.৩.৪ ধারায় আসল কথাটি পরিষ্কার হলো। এখান থেকেই বোঝা যাবে যে, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান আসলে ঢাল, তরোয়ালটা বেসরকারি সংস্থা। এই ধারায় বলা হয়েছে যে, সরকারের পরমাণু শক্তি বিভাগ (ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাটমিক রিসার্চ), মহাকাশ গবেষণা বিভাগ (ডিএসও) এবং প্রতিরক্ষা গবেষণা বিভাগ (ডিআরডিও) উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে অংশীদার হয়ে গবেষণা করবে। এগুলি সবই স্ট্র্যাটেজিক অর্থাৎ দেশের প্রতিরক্ষার দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। এখানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নাকগলানো সহজ করার নীতিগত বাধা দূর করতে এই উক্তি। অন্য ধারা উপধারাগুলি আপনার মন ভরিয়ে দেবে। বিজ্ঞান মানসিকতা বিকাশের কথা, মহিলা এবং তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে গবেষক হিসাবে যোগ্য করে তোলা, গ্রামীণ ভারত থেকে মেধাবীদের বিজ্ঞান গবেষণার সংগে যুক্ত করা ইত্যাদি শ্রুতিমধুর কথার অভাব নেই। কিন্তু কিভাবে, তার কোনো দিশা এখানে নেই।
নয়া-নীতিতে যা আপনি পাবেন না -
১। সরকারকে বিজ্ঞান প্রযুক্তি গবেষণার ক্ষেত্রে জিডিপি-র কত শতাংশ (অন্তত ২শতাংশ) বরাদ্দ করা উচিত তা আপনি এখানে পাবেন না। যেমনটা ধরুন কোঠারি কমিশন শিক্ষায় জাতীয় আয়ের ৬ শতাংশ ব্যয়ের সুপারিশ করে যা এখনও অধরা। নতুন শিক্ষানীতি ২০২০-ও একইকথা বলছে। কিন্তু কোথায় কী? বাস্তবে প্রতিদিন শিক্ষাক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থার প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলেছে। এর ফলে আসলে গরিবের শিক্ষার সুযোগ দ্রুত সঙ্কুচিত হচ্ছে, গবেষণায় অংশগ্রহণ তো অনেক দূরের কথা।
২। কোন্ কোন্ গবেষণাক্ষেত্রগুলি সরাসরি সব অংশের জনসাধারণের স্বার্থে সরকারি উদ্যোগে হওয়া উচিত তার কোনো রূপরেখা নেই। যেমন ধরুন মহামারী, বায়ুদূষণ এবং বিশ্ব উষ্ণায়নের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে কী কী গবেষণা জরুরি তার রূপরেখা এখানে নেই। এই গবেষণায় কোনো বেসরকারি সংস্থা বিনিয়োগ করবে না, কিন্তু এটাই সময়ের চাহিদা।
৩। কোনো বিশেষ নতুন গবেষণা প্রতিষ্ঠান তৈরির কোনো পরিকল্পনা এখানে নেই। একসময়ে দেশে মৌলিক বিজ্ঞান গবেষণা গবেষণাগারের অভাবে ব্যাঘাত পাচ্ছে বলে সরকার সমালোচিত হচ্ছিল। এমন এক সময়ে বামপন্থীদের সহায়তায় তৈরি প্রথম ইউপিএ সরকার ২০০৭ সালে দেশে অনেকগুলি ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউশন অব সায়েন্স এডুকেশন আ্যান্ড রিসার্চ তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে ৭টি এমন প্রতিষ্ঠান এখন সগৌরবে কাজ করছে। তেমন কোনো নতুন চিন্তা এই নীতিতে নেই, যদিও চাহিদার অভাব নেই।
৪। বেসরকারি সংস্থাকে স্ট্র্যাটেজিক গবেষণাক্ষেত্রে প্রবেশাধিকার দেওয়া হবে কিন্তু সেগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার কোনো পরিকল্পনা এই দলিলে নেই। নিয়ন্ত্রণহীন গবেষণার ভ্যাকসিনের দাম ১,০০০ টাকা হলে আপনার কিছু করার থাকবে না।
নতুনের আহ্বান সর্বক্ষেত্রেই গ্রহণযোগ্য। কিন্তু যা’কিছু চকচক করে তা সোনা নয়। এই নতুন নীতির উপর দাঁড়িয়ে সরকার কোন্ দিকে হাঁটবে সেটাই এখন দেখার। দেশের মেধা কর্পোরেটদের হাতে তুলে দেবার প্রয়াস হলে প্রতিবাদ স্বাভাবিক নিয়মেই আসবে।