E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ৪৯ সংখ্যা / ২২ জুলাই, ২০২২ / ৫ শ্রাবণ, ১৪২৯

বর্ণবিদ্বেষ বিরোধী আন্দোলনের কিংবদন্তি নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার জন্মদিন যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত


এআইপিএসও আয়োজিত নেলসন ম্যান্ডেলার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে বক্তা রবীন দেব।

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবিদ্বেষবাদ বিরোধী আন্দোলনের অবিসংবাদী নেতা এবং সে দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি নেলসন ম্যান্ডেলার ১০৫তম জন্মদিন ১৮ জুলাই যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে কলকাতায়। এদিন সারা ভারত শান্তি ও সংহতি সংস্থা (এআইপিএসও) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির আয়োজনে নেলসন ম্যান্ডেলা উদ্যানে বর্ণবিদ্বেষ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এআইপিএসও’র ডাকে এই দিনটি সাম্রাজ্যবাদ, বর্ণবাদ, মৌলবাদ এবং বিভেদকামী রাজনীতির বিরুদ্ধে শান্তিকামী ও গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষের শপথ গ্রহণের দিন হিসেবে পালিত হয়েছে। এদিনের সভা থেকে কলকাতায় ‘নেলসন ম্যান্ডেলা উদ্যান’-এর সংস্কার ও পুনঃসৌন্দর্যায়নের দাবি জানায় এআইপিএসও-র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি।

প্রসঙ্গত, ২০১০ সাল থেকে রাষ্ট্রসঙ্ঘের আহ্বানে নেলসন ম্যান্ডেলার জন্মদিন সমগ্র বিশ্বে ‘নেলসন ম্যান্ডেলা আন্তর্জাতিক দিবস’ হিসে‍বে পালিত হচ্ছে। নেলসন ম্যান্ডেলার জন্ম ১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই। তাঁর জীবনাবসান হয়েছে ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর। তাঁর সংগ্রামী ভূমিকা ও অবদান শুধু দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, সমগ্র বিশ্বে সমাদৃত। নেলসন ম্যান্ডেলার সাথে কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের সম্পর্ক বিশেষভাবে স্মরণীয়। দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবিদ্বেষী জমানার বিরুদ্ধে সেই দেশের মানুষের দীর্ঘ মুক্তি-সংগ্রামের প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মানুষ শুরু থেকেই সমর্থন ও সংহতি জানিয়ে এসেছে।

এই সূত্রে বিশেষভাবে স্মরণীয়, প্রায় তিন দশক বন্দি থাকার পর ১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কারামুক্তির পর ওই বছরের অক্টোবর মাসে তিনি ভারত সফরে আসেন। ভারত সরকার তাঁকে ‘ভারতরত্ন’ সম্মানে ভূষিত করে। ১৮ অক্টোবর কলকাতায় জনপ্লাবিত ইডেন উদ্যানে তাঁ‍‌কে নাগরিক সংবর্ধনা জানায় কলকাতা কর্পোরেশন। এই সংবর্ধনা সভায় উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন রাজ্যপাল নুরুল হাসান, মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু এবং কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র প্রশান্ত চট্টোপাধ্যায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে তাঁকে সাম্মানিক ডক্টরেট উপাধি প্রদান করা হয়। ম্যান্ডেলার কলকাতা সফরকালে পার্ক স্ট্রিট মোড়ের কাছে মেয়ো রোড-জওহরলাল নেহরু রোডের সংযোগস্থলে ‘নেলসন ম্যান্ডেলা উদ্যান’ উদ্বোধন করা হয়েছিল। সেই উদ্যান বর্তমানে আবর্জনার স্তূপে পরিণত। তাই অবিলম্বে এই উদ্যান সংস্কারের দাবি জানিয়েছে এআইপিএসও।

নেলসন ম্যান্ডেলা উদ্যান সংলগ্ন স্থানে ১৮ জুলাই এআইপিএসও-র আহ্বানে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় এআইপিএসও-র সর্বভারতীয় নেতা রবীন দেব বলেন, ১৯৯৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি পদে শপথ নেবার আগে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন ম্যান্ডেলা। সেই সাক্ষাৎকারে তিনি তাঁর ভারত তথা কলকাতা সফরের কথা সবিস্তারে বর্ণনা করেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, কারামুক্তির পাশাপাশি তাঁর জীবনের অন্যতম স্মরণীয় ঘটনা হলো কলকাতা সফর। ১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ২৭ বছর বন্দি থাকার পর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন নেলসন ম্যান্ডেলা। সেই বছরের ১৮ অক্টোবর কলকাতা সফরে আসেন ‘মাদিবা’। তাঁর সেই কলকাতা সফর জনগণের মধ্যে বিপুল উৎসাহ সৃষ্টি করেছিল। গোটা ইডেন গার্ডেন স্টেডিয়াম মেক্সিকান ওয়েভের মাধ্যমে ম্যান্ডেলাকে বরণ করে নিয়েছিল। ম্যান্ডেলার সেই কলকাতা সফরের ছবি ছড়িয়ে পড়ে আন্তর্জাতিক দুনিয়ায়। রবীন দেব সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, বর্তমানে সেই ঐতিহ্যকে অস্বীকার করতে চাইছে কলকাতা কর্পোরেশন। কলকাতা, রাজ্য তথা দেশের সম্মান নষ্ট হচ্ছে এতে। এই ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা ২০২১ সালেও কর্পোরেশনের কাছে এই উদ্যান পরিষ্কার করার দাবি জানিয়েছিলাম। ২০২২ সালেও উদ্যান বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ সদস্য এবং মেয়রকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তথাপি কোনো কাজ হয়নি। আমরা এই উদ্যান পরিষ্কারের পাশাপাশি নেলসন ম্যান্ডেলার প্রতিকৃতি সংবলিত ফলক বসানোর দাবিও জানাচ্ছি।

রবীন দেব আরও বলেন, নেলসন ম্যান্ডেলার মুক্তির দাবিতে কলকাতায় শহিদ মিনার ময়দানে সমাবেশ হয়েছিল। সেই সভায় জ্যোতি বসু ছাড়াও আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের নেতা মুসা মুল্লা বক্তব্য রাখেন। তিনি আরও বলেন, কারাগারে বন্দিদশার পাশাপাশি তাঁকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের বিরুদ্ধেও লড়াই চালাতে হয়েছে। তিনি সর্বদা নিজের আদর্শে অবিচল ছিলেন। আদালতে মামলার শুনানি চলাকালীন ম্যান্ডেলা বলেছিলেন, ‘‘আমি আমার জীবন আফ্রিকার মানুষের মুক্তির জন্য উৎসর্গ করছি। আমি এক ভেদাভেদহীন গণতান্ত্রিক ও মুক্ত সমাজের স্বপ্ন দেখি। সেই স্বপ্ন ও আদর্শের বাস্তবায়নের জন্যই যেমন আমি বাঁচতে চাই, তেমনই নিজের আদর্শের জন্য আমি মরতেও প্রস্তুত।’’ তাঁর এই দৃঢ়চেতা স্বভাবের জন্যই সারা বিশ্বের আপনজন হয়ে উঠেছিলেন তিনি।

এদিনের সভায় সংগঠনের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক অঞ্জন বেরা বলেন, বৈষম্যহীন ভারত গড়ার দিক্‌নির্দেশ কাছে নেলসন ম্যান্ডেলার শিক্ষা। তিনি আপসহীন সংগ্রামের প্রতীক, সারা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের অনুপ্রেরণা। মানুষে মানুষে বিভেদ ঠেকাতে সারা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন তিনি।

এছাড়াও এদিনের সভায় বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক সুস্নাত দাশ। সংগীত পরিবেশন করেন পীযূষ ধর এবং কাজি কামাল নাসের। আবৃত্তি পরিবেশন করেন সদানন্দ ভট্টাচার্য ও শ্রাবণী সেনগুপ্ত।

এদিনের অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন রবীন দেব। উপস্থিত ছিলেন বিনায়ক ভট্টাচার্য, কুণাল বাগচী, প্রদীপ দত্তগুপ্ত, পরিমল দেবনাথ, রাজীব ব্যানার্জি, অরিন্দম মুখার্জি, উৎপল দত্ত প্রমুখ।

এই অনুষ্ঠান ছাড়াও এদিন কল্যাণী, সোদপুরে নেলসন ম্যান্ডেলা দিবস উদ্‌যাপিত হয়।