৫৯ বর্ষ ৪৯ সংখ্যা / ২২ জুলাই, ২০২২ / ৫ শ্রাবণ, ১৪২৯
রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হলেন দ্রৌপদী মুর্মু
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ প্রত্যাশিতভাবেই দেশের রাষ্ট্রপতিপদে নির্বাচিত হলেন এনডিএ প্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মু। তিনি হলেন দেশের পঞ্চদশতম রাষ্ট্রপতি। অঙ্কের বিচারে পাল্লা ভারি ছিল তাঁর দিকেই। প্রথম রাউন্ড থেকেই বড়ো ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন তিনি। সাংসদদের ভোট প্রথমে গোনা হয়। প্রাপ্ত ভোটের প্রায় ৭২ শতাংশ ভোট পেয়ে শুরুতেই এগিয়ে যান তিনি। ৩৪টি দল বিরোধী প্রার্থী যশবন্ত সিং-কে সমর্থনের কথা আগেই ঘোষণা করেছিল। অন্যদিকে দেশের ৪৪টি রাজনৈতিক দল এনডিএ প্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মু-কে সমর্থন করেছে। বিজেপি ছাড়াও বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক দলের সমর্থন আগেই আদায় করে নিতে পেরেছেন এনডিএ প্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মু। আদিবাসী অনুভূতিকে উসকে বিরোধী শিবিরের সমর্থন আদায়ে ঝাঁপিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে বিজেপি’র বড়-মাঝারি-ছোট মাপের নেতারা। সেই আহ্বানে সাড়া দেওয়ার পাশাপাশি অন্য নানা রাজনৈতিক বিন্যাসে বিজেডি, বিএসপি, শিরোমণি আকালি দল, শিবসেনা এবং পরবর্তীকালে জেএমএম’র সমর্থন পেয়েছেন দ্রৌপদী বলে ধারণা করা হচ্ছে। উঠেছে টাকার খেলার প্রশ্নও। প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হয় ১৮ জুলাই। ভোট গণনা হয় ২১ জুলাই।
অনেকেই ভোট দেওয়ার পর দলের নির্দেশ অমান্য করে এনডিএ প্রার্থীকে সমর্থন করেছেন বলে দাবিও করেন। এই তালিকায় রয়েছেন ঝাড়খণ্ড ও গুজরাটের এনসিপি বিধায়ক কিংবা হরিয়ানা এবং ওডিশার কংগ্রেস বিধায়ক। এঁদের অনেকের দাবি, বিবেকের তাড়নায় তাঁরা একজন আদিবাসী মহিলা প্রার্থীকে সমর্থন করেছেন। আবার ওডিশার কংগ্রেস বিধায়ক নিজের রাজ্যের একজনকে রাষ্ট্রপতি পদে দেখার স্বার্থে দলের নির্দেশ অমান্য করতে দ্বিধা করেননি বলে দাবি করেছেন। হুইলচেয়ারে এসে ভোট দিয়েছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ অসুস্থ। একইভাবে হুইলচেয়ারে চেপে ভোট দিলেন সমাজবাদী পার্টি নেতা মুলায়াম সিং যাদব।
এই ভোটে মূল প্রশ্ন ছিল মতাদর্শগত। ২০২২ সালে দাঁড়িয়ে ভারতে প্রয়োজন এমন একজন রাষ্ট্রপতি যিনি সংবিধান ও আইন রক্ষায় অবস্থান নিতে পারেন। তাই রাষ্ট্রপতি ভবনে এমন কারো থাকা উচিত নয় যিনি প্রধানমন্ত্রী বা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার আজ্ঞাবহ হয়ে থাকবেন। যিনি সরকারের কার্যত ইয়েস ম্যান হয়ে থাকবেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের হিন্দুরাষ্ট্র গড়ার লক্ষ্যে নরেন্দ্র মোদি সরকার যেভাবে চলছে তা নজিরবিহীন ভাবেই ভয়াবহ। দেশের সংবিধানের মৌলিক মূল্যবোধগুলিকে ধ্বংস করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সাধারণতন্ত্রের বদলে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। বিরোধী কন্ঠস্বরকে দমন করতে বহুমুখী আক্রমণ চলছে। বহু মানুষ শিল্পী সাংবাদিক বুদ্ধিজীবী সমাজকর্মী কারারুদ্ধ হয়ে আছেন। কোথাও বুলডোজার নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে প্রতিবাদীদের ওপর। শত শত ‘দেশদ্রোহিতা’র মামলা চলছে, চেষ্টা করা হচ্ছে স্বাধীন বিচারব্যবস্থাকে খর্ব করা জাতীয়তাবাদ এর একটা সংজ্ঞা স্থির করে সেই লক্ষণ রেখার মধ্যে নাগরিকদের বেঁধে রাখা। এই সময় রাষ্ট্রপতির ভূমিকা হওয়া উচিত সংবিধানরক্ষকের। সেই প্রয়োজনীয় ভূমিকা বর্তমান রাষ্ট্রপতি নিতে পারেন কিনা সেটাই এখন দেখার।
আবার আসামের আইইউডিএফ করিমুদ্দিন বারভূঁইয়া দাবি করেছেন, তাঁর রাজ্যের ২০ জনেরও বেশি কংগ্রেস বিধায়ক ভোট দিয়েছেন দ্রৌপদী মুমুর্কে। উত্তর প্রদেশের সমাজবাদী পার্টির সাংসদ হয়েও শিবপাল সিং যাদব এদিন জানিয়ে দেন, তিনি কোনোভাবেই যশবন্ত সিনহাকে সমর্থন করতে পারেন না, কারণ উনি তাঁর দাদা সমাজবাদী পার্টির কর্ণধার মুলায়াম সিং যাদবকে ‘আইএসআই’র এজেন্ট’ বলে অভিযোগ করেছিলেন। একই সঙ্গে বিরোধী শিবিরে থাকলেও তৃণমূল কংগ্রেসের ভূমিকাও আতসকাচের নিচে থাকছে। কারণ যশবন্ত সিনহা যদিও তৃণমূল কংগ্রেস থেকে ইস্তফা দিয়ে বিরোধী প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু প্রাথমিকভাবে তৃণমূল যশবন্ত সিনহাকে সমর্থনের কথা বললেও দ্রৌপদী মুর্মু এনডিএ’র প্রার্থী হওয়ার পর তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি তাৎপর্যপূর্ণভাবে জানান, আগে বিজেপি নেতারা বললে ভেবে দেখতাম। ফলে তৃণমূলের ভোট কোনদিকে পড়েছে তা নিয়ে ধন্দ থাকছেই। এইরকম আরও অনেক কথাই শোনা যাচ্ছে। তবে রাজনৈতিক মহলের অভিমত, এইসব যুক্তির ক্ষেত্রে কতটা বিবেকতাড়িত আর কতটা ‘টাকার খেলা’ তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
এরই মধ্যে পাঞ্জাবের এক আকালি বিধায়ক ভোট বয়কট করেন। তাঁর যুক্তি, কোনোভাবেই রাজ্যের বিষয়কে কখনই গুরুত্ব দেওয়া হয়নি, ফলে তিনি ভোট দেবেন না। বিরোধী প্রার্থী যশবন্ত সিনহা অবশ্য সমর্থন আদায়ে গোটা দেশ চষে বেড়ান এই সময়কালে। অঙ্কের হিসাবে তাঁর দিকে সমর্থন তেমন ভারী নয় বলেই তিনি দেশের সাংসদ, বিধায়কদের কাছে ‘বিবেক ভোট’ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তাতে চিঁড়ে কতটা ভিজেছে, সে নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। যাইহোক, সব জল্পনারই অবসান ঘটবে ২১ জুলাই। আর দেশের নতুন রাষ্ট্রপতি শপথ নেবেন ২৫ জুলাই।