E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ৪৯ সংখ্যা / ২২ জুলাই, ২০২২ / ৫ শ্রাবণ, ১৪২৯

‘কেন্দ্রীয় সরকারের তৈরি এএসপি কমিটি কৃষক বিরোধী’

প্রত্যাখ্যান করল সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ সরকারের এমএসপি (ন্যূনতম সহায়ক মূল্য) সংক্রান্ত কমিটি-কে প্রত্যাখ্যান করল সংযুক্ত কিষান মোর্চা (এসকেএম)। ১৯ জুলাই প্রকাশিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানানো হয় এসকেএম’র পক্ষ থেকে। ১৮ জুলাই কেন্দ্রীয় সরকার ফসলের ন্যুনতম মুল্য সংক্রান্ত এমএসপি কমিটি গঠনের কথা ঘোষণা করে। এরপরই এই সরকারি কমিটি সম্পর্কে তাদের আপত্তির কথা জানিয়েছে কৃষকদের যৌথ মঞ্চ এসকেএম। সরকারি কমিটিকে ‘কৃষক বিরোধী’ বলে দেগে দিয়ে তাঁরা এই বিবৃতিতে আরও জানিয়েছেন এই কমিটিতে এসকেএম’র পক্ষ থেকে কোনো প্রতিনিধি পাঠানো হবে না।

তিনটি কৃষিবিল প্রত্যাহার সহ একাধিক দাবিতে চলা সংযুক্ত কিষান মোর্চার নেতৃত্বে কৃষকদের বৎসরাধিক কালব্যাপী অবস্থান আন্দোলন গত নভেম্বর মাসে প্রত্যাহার করার আবেদন জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সে সময় তিনি কৃষকদের আন্দোলনের মূল দাবি মেনে তিনটি কালা কৃষিবিল বাতিল করেন। এবং তিনি মোর্চার ন্যুনতম সহায়ক মুল্য এবং অন্যান্য দাবি দাওয়া সম্পর্কে পরে কমিটি গড়ে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা বলেন। সংযুক্ত কিষান মোর্চার পক্ষ থেকে তখন ন্যুনতম সহায়ক মুল্য সংক্রান্ত আইন তৈরির দাবি তোলা হয়েছিল।

বিবৃতির বয়ানে বলা হয়েছে, সংযুক্ত কিষান মোর্চা এমএসপি এবং অন্যান্য বিষয়ে ভারত সরকার কর্তৃক গঠিত কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং কমিটিতে অংশগ্রহণের জন্য তাদের প্রতিনিধি না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ১৯ নভেম্বর তিনটি কালো আইন বাতিলের কথা প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত হওয়ার পর থেকেই এই জাতীয় কোনও কমিটি সম্পর্কে প্রকাশ্যে এসকেএম সন্দেহ প্রকাশ করেছিল। মার্চ মাসে, যখন সরকার এই কমিটির জন্য মোর্চাকে তাঁদের প্রতিনিধিদের নাম জিজ্ঞাসা করেছিল, তখন মোর্চা সরকারের কাছে কমিটি সম্পর্কে স্পষ্টীকরণ চেয়েছিল, সরকারি তরফে যার কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

মোর্চার পক্ষ থেকে দর্শন পাল, হান্নান মোল্লা, জোগিন্দর সিং, যোগেন্দ্র যাদভ স্বাক্ষরিত ওই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সংযুক্ত কিষান মোর্চার পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, তাঁদের সব আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে। সরকারি প্রতিনিধি ও তার তাঁবেদারে পূর্ণ এই কমিটির অ্যাজেন্ডায় এমএসপি আইন নিয়ে আলোচনার সুযোগ নেই। এ ধরনের কৃষক বিরোধী কমিটির সঙ্গে মোর্চার কোনো যোগাযোগ থাকতে পারে না।

৩ জুলাই, সংযুক্ত কিষান মোর্চার জাতীয় সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, ‘‘সরকার এই কমিটির এক্তিয়ার এবং কাজের পরিধির শর্তাবলী স্পষ্ট না করা পর্যন্ত, এই কমিটিতে সংযুক্ত কিষান মোর্চার প্রতিনিধি মনোনীত করার কোনও যৌক্তিকতা নেই’’। এই কমিটি নিয়ে সংযুক্ত কিষান মোর্চার সমস্ত সংশয় সত্যি হয়েছে সরকারের জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে। স্পষ্টতই, এ ধরনের কৃষকবিরোধী ও অর্থহীন কমিটিতে সম্মিলিত কিষান মোর্চার প্রতিনিধি পাঠানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই।

সরকার যখন মোর্চাকে এই কমিটির জন্য নাম জিজ্ঞাসা করেছিল, তখন এর জবাবে, ২৪ মার্চ ২০২২-এ কৃষি সচিবকে পাঠানো একটি ইমেলে, মোর্চা সরকারকে পাল্টা জিজ্ঞাসা করেছিলঃ

১) এই কমিটির টার্মস অফ রেফারেন্স কি হবে?
২) সংযুক্ত কিষান মোর্চা ছাড়াও অন্য কোন সংগঠন, ব্যক্তি ও পদাধিকারীরা এই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হবেন?
৩) কমিটির চেয়ারম্যান কে হবেন এবং এর কার্যকারিতা কি হবে?
৪) কমিটি তার রিপোর্ট জমা দিতে কত সময় পাবে?
৫) কমিটির সুপারিশ কি সরকারের জন্য বাধ্যতামূলক হবে?
সরকার এসব প্রশ্নের জবাব দেয়নি। তবুও কৃষিমন্ত্রী তখন বিবৃতি দিতে থাকেন যে সংযুক্ত কিষান মোর্চার প্রতিনিধিদের নাম না পাওয়া কমিটি গঠন থমকে গেছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সংসদের অধিবেশনের আগে এই কমিটি ঘোষণা করে সরকার কাগজপত্র সংক্রান্ত প্রস্তুতি সেরে ফেলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু কমিটি সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে এই কমিটি গঠনের পেছনে সরকারের অসৎ উদ্দেশ্য এবং কমিটির অপ্রাসঙ্গিকতা স্পষ্ট হয়েছেঃ

১) কমিটির চেয়ারম্যান হলেন প্রাক্তন কৃষি সচিব সঞ্জয় আগরওয়াল, যিনি তিনটি কৃষক বিরোধী আইনের খসড়া তৈরি করেছিলেন৷ তার সঙ্গে রয়েছেন নীতি আয়োগের সদস্য রমেশ চাঁদ, যিনি এই তিনটি আইনের পক্ষে মূলত ওকালতি করেছেন৷ বিশেষজ্ঞ হিসাবে, এই অর্থনীতিবিদ এমএসপিকে আইনি মর্যাদা দেওয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন আগেই।

২) কেন্দ্রীয় সরকারের কমিটিতে সংযুক্ত কিষান মোর্চা ৩ জন প্রতিনিধির জন্য জায়গা রাখা হয়েছে। কিন্তু অন্যান্য জায়গায়, কৃষক নেতাদের নামে, সরকার তার ৫ জন অনুগতকে রেখেছে যারা প্রকাশ্যে তিনটি কৃষক বিরোধী আইনের পক্ষে প্রচার করেছে। এই সমস্ত ব্যক্তিরা হয় সরাসরি বিজেপি-আরএসএসের সাথে যুক্ত বা তাদের নীতি সমর্থন করে। কৃষ্ণ বীর চৌধুরী ভারতীয় কৃষক সমাজের সাথে যুক্ত এবং বিজেপির একজন নেতা। সৈয়দ পাশা প্যাটেল মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন বিজেপি এমএলসি। প্রমোদ কুমার চৌধুরী আরএসএস-এর সহযোগী ভারতীয় কিষাণ সংঘের জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। গুণবন্ত পাতিল, শেতকারি সংগঠনের সাথে যুক্ত, একজন ডব্লিউটিওর উকিল এবং স্বতন্ত্র ভারত পক্ষ পার্টির সাধারণ সম্পাদক। গুণী প্রকাশ কৃষক আন্দোলনের বিরোধিতায় মুখর এক প্রথমসারির ব্যক্তিত্ব। এই পাঁচজন লোক তিনটি কৃষক বিরোধী আইনের পক্ষে খোলাখুলি কথা বলেছেন এবং তাদের বেশিরভাগই কৃষক আন্দোলনের বিরুদ্ধে বিষ ছড়িয়েছেন।

৩) সরকারি কমিটির আলোচ্যসূচিতে এমএসপি নিয়ে আইন করার কথা নেই। অর্থাৎ কমিটির সামনে এ সংক্রান্ত প্রশ্ন রাখা হবে না। এজেন্ডায় কিছু বিষয় রাখা হয়েছে যেগুলির সরকারী কমিটি ইতিমধ্যেই প্রতিষ্ঠিত। কৃষি বিপণনে সংস্কারের নামে একটি বিষয় রাখা হয়েছে যার মাধ্যমে সরকার তিনটি কালো আইন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে পারে এই কমিটি।

এসব তথ্যের আলোকে এই কমিটিতে প্রতিনিধি পাঠানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই বলেই মনে করছে সংযুক্ত কিষান মোর্চা। বিবৃতিতে দৃঢ়ভাবে জানানো হয়েছে, কৃষকদের ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে এমএসপি’র আইনি গ্যারান্টির লড়াই অব্যাহত থাকবে।