৫৯ বর্ষ ৪৯ সংখ্যা / ২২ জুলাই, ২০২২ / ৫ শ্রাবণ, ১৪২৯
কেন্দ্রের সরকারের একের পর এক স্বৈরাচারী পদক্ষেপে প্রকট হচ্ছে
গণতন্ত্রবিনাশী সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিস্টধর্মী মনোভাব
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ উগ্র জাতীয়তাবাদী কট্টর ও হিংস্র সাম্প্রদায়িক হিন্দুত্ববাদী আরএসএস-বিজেপি দেশের শাসন ক্ষমতা দখল করে সংবিধান প্রদত্ত গণতন্ত্রের তিন স্তম্ভ প্রশাসন, আইনসভা ও বিচারবিভাগ - সব কিছুই কুক্ষিগত করতে উদ্যত হয়েছে। নিজেদের দলীয় আদর্শ ও কপট রাজনীতির স্বার্থে এই প্রতিষ্ঠানগুলিকে নিজেদের ইচ্ছেমতো ব্যবহার করে গণতন্ত্র, সংবিধান ও ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শকে জলাঞ্জলি দিচ্ছে। সম্প্রতি নবনির্মীয়মাণ সংসদ ভবনের উপরে স্থাপনের জন্য জাতীয় প্রতীক অশোক স্তম্ভের চিরায়ত রূপ পরিবর্তন করে যে বিকৃতি ঘটিয়েছে, তার মধ্য দিয়ে ওদের উগ্র সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিস্টধর্মী হিংস্র মনোভাব আরও একবার প্রকট হয়ে উঠেছে। সরকারের এই সর্বনাশা উদ্যোগ ওদের হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র গঠনের একটি পদক্ষেপ কিনা - তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বলা বাহুল্য, দেশে এত বড়ো একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণের আগে অতীতের মতো সংসদে, সংসদের বাইরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংবিধান বিশেষজ্ঞ, আইনজ্ঞ, ইতিহাসবিদ - কারও সঙ্গেই বিন্দুমাত্র আলোচনার ধার ধারেনি প্রধানমন্ত্রী মোদি ও তাঁর সরকারের প্রতিনিধিরা।
উল্লেখ্য, রাজধানীর বুকে প্রাথমিকভাবে নির্দিষ্ট ১৩,৪৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মীয়মাণ সেন্ট্রাল ভিস্তার মাঝখানে গড়ে উঠতে চলেছে নতুন জাঁকজমকপূর্ব সংসদ ভবন। এই নতুন সংসদ ভবনের উপরে নরেন্দ্র মোদি সরকার বসাতে চলেছে ৯৫০০ কিলোগ্রাম ওজন বিশিষ্ট, ৬.৫ মিটার দীর্ঘ ব্রোঞ্জের অশোক স্তম্ভ। এই স্তম্ভ বসানোর আগে প্রধানমন্ত্রীর ধর্মীয় উপাচার ও অশোক স্তম্ভটির কদর্য বিকৃতি নিয়ে তুমুল প্রতিক্রিয়া, প্রতিবাদসহ আইন ও সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগে গোটা দেশ আলোড়িত হচ্ছে।
সরকারের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে যখন দেশের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া-প্রতিবাদ ধ্বনিত হচ্ছে - ঠিক তখনই সংসদ প্রাঙ্গণে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করা যাবে না বলে ফতোয়া জারি হয়েছে। সরকারের অপদার্থতা, ব্যর্থতা, জনবিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে বিরোধী কণ্ঠস্বরকে এভাবে অবদমিত করার অপচেষ্টা গণতন্ত্রের ওপর আঘাত বলেই অভিমত প্রকাশ করেছেন বিরোধীরা। একই সঙ্গে সরকারের এই পদক্ষেপ প্রকারান্তরে ফ্যাসিস্টধর্মী মনোভাবেরই প্রকাশ বলেও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ অনেকেরই ধারণা।
নতুন করে জাতীয় প্রতীক অশোক স্তম্ভ বসানোকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং যে আকৃতিতে স্তম্ভটি তৈরি করা হয়েছে - তা যে সব দিক থেকে ভারতের সংবিধান ও আইনের পরিপন্থী - সে বিষয়ে প্রথমে আলোকপাত করা যেতে পারে। গত ১১ জুলাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজে হিন্দু ধর্মের নানা উপাচারে তিলক কেটে, যজ্ঞ করে, মন্ত্র পড়ে রাষ্ট্রের প্রতীককে পুজো করেন। তারপর এটির আবরণ উন্মোচন হয়। অন্যান্য অনুষ্ঠানের মতো এভাবে প্রধানমন্ত্রী সংসদ ভবনের মাথায় জাতীয় প্রতীক বসাতে পারেন কিনা, সেই সঙ্গে সংবিধানে লিপিবদ্ধ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে রাষ্ট্রকে ধর্মীয় আচার থেকে দূরে রাখার যে সাংবিধানিক বিধি রয়েছে, তা লঙ্ঘন করতে পারেন কিনা - সে সব গুরুতর প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
আইন সভার অধিকার অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় প্রতীক বসানোর অনুষ্ঠান করতে পারেন লোকসভার অধ্যক্ষ। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এই কাজের অধিকার নেই। আরও লক্ষণীয় বিষয় হলো, সংসদ শুধুমাত্র শাসকদলের নয়, তবুও সেদিনের অনুষ্ঠানে বিরোধীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। সেদিনের অনুষ্ঠান এমনভাবে হয়েছে যেন মনে হবে সেটা ছিল প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানে লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লা, রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ, সংসদীয় দপ্তরের মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী, জ্বালানি মন্ত্রী হরদীপ সিং প্রমুখ উপস্থিত থাকলেও তাঁরা শুধুমাত্র দর্শকের ভূমিকাই পালন করেছেন।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো বলেছে, প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় প্রতীক বসানোর এই অনুষ্ঠান ভারতের সংবিধানকে স্পষ্টই লঙ্ঘন করেছে। সংবিধানে গণতন্ত্রের তিন শাখার স্পষ্ট বিভাজন রয়েছে। প্রশাসন (সরকার), আইন সভা (সংসদ এবং রাজ্য বিধানসভা), বিচারবিভাগ। রাষ্ট্রপতি সংসদ অধিবেশন ডাকেন। প্রধানমন্ত্রী প্রশাসনের শীর্ষে। আইনসভার স্বাধীন নিজস্ব ভূমিকা আছে - যার মধ্যে আইন প্রণয়ন করা, সরকারকে সংসদের কাছে দায়বদ্ধ রাখার দায়িত্বও আছে। তিন শাখার ক্ষমতা বিভাজনের এই সাংবিধানিক বিধিতে অন্তর্ঘাত ঘটাচ্ছেন প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তি।
পলিট ব্যুরো বিবৃতিতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে বলেছে, ভারতের সংবিধানে প্রত্যেক ভারতীয়র নিজস্ব ধর্মবিশ্বাস পালন ও প্রচারের অধিকার ও সুরক্ষা রয়েছে। এই অধিকার অলঙ্ঘনীয়। একই সঙ্গে সংবিধান স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে, রাষ্ট্র কোনো ধর্ম বিশ্বাসের অনুশীলন বা প্রচার করবে না। এই অবস্থায় সিপিআই(এম) সঙ্গতভাবেই প্রশ্ন তুলেছে, শুধু একটি ধর্মের অনুষ্ঠান করা হলো কেন? রাষ্ট্র ও সংসদ কি অন্য ধর্মের মানুষের জন্য নয়? রাষ্ট্রের অনুষ্ঠান থেকে ধর্মকে পৃথক রাখা কঠোরভাবে মান্য করা উচিত।
পলিট ব্যুরো আরও বলেছে, পদ গ্রহণের সময়ে প্রধানমন্ত্রী এবং সরকারের মন্ত্রীরা সংবিধানকে ঊর্ধ্বে তুলে রাখার শপথ নিয়েছেন। সংবিধানকে যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে।
উল্লেখ্য, এর আগেও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদি প্রকাশ্যে হিন্দু ধর্মীয় আচারের জাঁকজমকপূর্ণ প্রদর্শন করেছেন। তাঁর এই কার্যকলাপ দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছেন দেশের বুকে করোনার ভয়াবহ সংক্রমণকালে অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের সূচনায় এবং কাশীতে বিশ্বনাথ করিডোরের উদ্বোধনে। অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মনে করেন মোদির এই সমস্ত উদ্যোগ পরিকল্পিত। ভারতে তাঁর নেতৃত্বে আরএসএস-বিজেপি’র শাসনে হিন্দুত্বের আধিপত্য থাকবে এবং রাষ্ট্র তা প্রকাশ্যে অনুমোদন করবে - এই রাজনৈতিক বার্তাই তাদের মতাদর্শগত অবস্থানের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।
জাতীয় প্রতীক অশোক স্তম্ভ বসানোর অনুষ্ঠানকে হিন্দু ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে পরিণত করার প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগ সংবিধান উল্লিখিত ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শকে আঘাত করা এবং এই কাজ সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও অধিকার বহির্ভূত বলে দেশজুড়ে প্রতিক্রিয়া, প্রশ্ন ইত্যাদি দেখা দিয়েছে। কিন্তু কেবলমাত্র এই বিষয়গুলিই নয়, আরও গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে প্রধানমন্ত্রীর বসানো নতুন প্রতীকটি নিয়ে। লক্ষ করা গেছে, ভারতের জাতীয় প্রতীক অশোক স্তম্ভের সাথে নতুন প্রতীকের মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। অশোক স্তম্ভে রয়েছে চারটি সিংহ, একদিক থেকে দেখলে যার তিনটি সিংহ দেখা যায়। মৌর্য যুগে অশোকের তৈরি স্তম্ভের উপরে এই প্রতীক বসানো ছিল। সারনাথে পাওয়া এই স্তম্ভের আদলেই ১৯৫০-এর ২৬ জানুয়ারি ভারতের জাতীয় প্রতীক তৈরি হয়। সেই স্তম্ভের সিংহরা ছিল রাজকীয়, শান্ত, সৌম্য। কিন্তু নরেন্দ্র মোদি যে স্তম্ভ বসিয়েছেন তাতে দেখা যাচ্ছে ধারালো দন্ত প্রসারিত হিংস্র সিংহ কামড় দিতে উদ্যত। এছাড়া মূর্তির নিচে খচিত উপনিষদের বাণী ‘সত্যমেব জয়তে’ উধাও হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ভারতের জাতীয় প্রতীকের সঙ্গে নবনির্মিত প্রতীকের কোনো মিল নেই। এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে - হিন্দুত্ববাদী উগ্র রাজনীতির আচরণগত মনস্তত্ত্বের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই নতুন করে সিংহ মূর্তি তৈরি হয়েছে। তাছাড়া সম্ভবত হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির উগ্রতা ও হিংস্রতার সঙ্গে সত্যের সহাবস্থান মোদিরা চান না বলেই উপনিষদের বাণী ‘সত্যমেব জয়তে’ তুলে দেওয়া হয়েছে। মোদির তৈরি এই ক্রুদ্ধ, হিংস্র পেশিবহুল, গর্জনরত সিংহ রূপে যে নতুন প্রতীক তাতে হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসী চিহ্ন প্রকট হয়ে উঠেছে। নির্মীয়মাণ সংসদ ভবনে বসানো মোদির নতুন প্রতীক এই বিপদের বার্তা দিচ্ছে।
এছাড়াও আরেকটি প্রশ্ন উঠেছে, জাতীয় প্রতীক ইচ্ছেমতো পরিবর্তন করা যায় কিনা। এতকাল ধরে ব্যবহার করে আসা জাতীয় প্রতীকের এমন পরিবর্তন করার অধিকার সরকারের আছে কিনা। প্রধানমন্ত্রীর এই নতুন প্রতীক বসানো এবং প্রতীক বিকৃতি ঘটানো গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের সংবিধানের অবমাননা ছাড়া আর কিছুই নয়। তাছাড়া জাতীয় প্রতীককে বিকৃতি করে এই সাম্প্রদায়িক হিন্দুত্ববাদী শক্তি আসলে হিন্দু রাষ্ট্রের যাত্রাপথে সংবিধানকেই অস্বীকার করতে চেয়েছে।
কেন্দ্রের সরকার ও শাসকদল কেবল সংবিধানকেই অস্বীকার করছে না, এরা সংসদ ও গণতন্ত্রকেও নস্যাৎ করতে চাইছে। সম্প্রতি নতুন ফতোয়া জারি হয়েছে, সংসদ প্রাঙ্গণে কোনো ধরনের বিক্ষোভ, অবস্থান, অনশন ইত্যাদি প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা যাবে না। ১৫ জুলাই এবিষয়ে সংসদের কক্ষের সচিবালয় থেকে সংসদের বাদল অধিবেশনে এই ফরমান জারি হয়েছে। এর আগে ১৪ জুলাই লোকসভার সচিবালয় থেকে অসাংবিধানিক শব্দের নতুন তালিকা প্রকাশ করে বিরোধীদের মুখ বন্ধ করতে চাওয়া হয়েছে। বিরোধীরা অভিযোগ করেছেন, প্রধানমন্ত্রীকে যে সব শব্দে নিশানা করা হচ্ছিল, বিশেষ করে সেই শব্দগুলিকেই অসংসদীয় শব্দের তালিকায় ফেলে দেওয়া হয়েছে। এই নতুন তালিকা অনুযায়ী সরকারকে ‘অদক্ষ’, ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ বলা যাবে না। সরকারের অপদার্থতার প্রশ্নে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’, ‘লজ্জাজনক’, ‘বিভ্রান্ত’, ‘ভণ্ডামি’ এইসব শব্দ বাদ দিয়ে বলতে হবে। ‘অহঙ্কার’, ‘নৈরাজ্যবাদী’, ‘অপমান’, ‘অসত্য’, ‘শিশুসুলভ বুদ্ধি’, ‘বধির সরকার’, ‘তাঁবেদার’, ‘অভিনয় করা’, ‘বোকা’, ‘নাটক’, ‘বিনাশ পুরুষ’ ইত্যাদি প্রায় ৬৫টি শব্দ নতুন অসংসদীয় তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিরোধীরা বলেছেন, যেন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মোদি সরকার এই নিষিদ্ধ শব্দের তালিকা তৈরি করে দিয়েছে। যে যে অভিযোগে সরকারকে বিদ্ধ করতে পারে বিরোধীরা তার একটা আগাম তালিকা নিজেরাই তৈরি করে দিয়েছে। লক্ষ করা গেছে, বিরোধীরা মোদি সরকার সম্পর্কে যে সমস্ত শব্দ প্রয়োগ করে থাকেন, তার প্রায় সবগুলিই সংসদে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এটা বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করতে চাওয়া স্বৈরাচারী পদক্ষেপ ছাড়া আর কিছুই নয়।
এরপর সংসদ প্রাঙ্গণে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করার মধ্য দিয়ে মোদি সরকারের স্বৈরাচারী মনোভাবকেই প্রকট করেছে। সংসদ প্রাঙ্গণে সাংসদদের প্রতিবাদ-বিক্ষোভের অধিকার কেড়ে নেবার অগণতান্ত্রিক ফতোয়ার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো বলেছে, দেশ তথা দেশবাসীর পক্ষে উদ্বেগজনক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সাংসদরা প্রায়শই প্রতিবাদ জানিয়ে থাকেন সংসদ চত্বরে। ভারতীয় সংসদ যখন থেকে শুরু হয়েছে তখন থেকেই একে গণতান্ত্রিক অধিকার হিসাবেই গণ্য করা হয়ে থাকে। এমনিতেই ‘অসংসদীয়’ শব্দের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। যে তালিকায় সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে হামেশাই যে শব্দ ব্যবহার করা হয়ে থাকে সেই ‘অযোগ্য’ কথাটিও আছে। এরই সঙ্গে প্রতিবাদ জানানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি সংসদ, তার স্বাধীন কাজকর্ম এবং সাংসদদের অবিচ্ছেদ্য অধিকারের ওপর এক নির্লজ্জ কর্তৃত্ববাদী আক্রমণ।
পলিট ব্যুরো মনে করে, সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই এই একতরফা সিদ্ধান্ত নির্লজ্জভাবে অগণতান্ত্রিক। সংসদের অধিবেশন শুরুর প্রাক্কালে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ অত্যন্ত জঘন্য। কেন্দ্রীয় সরকারকে অবিলম্বে এই অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে পলিট ব্যুরো।
বর্তমানে একদিকে তীব্র বেকারি, আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি, টাকার অবমূল্যায়ন ইত্যাদিতে বিপর্যস্ত দেশের অর্থনীতি। অন্যদিকে সরকার ও শাসকদলের উগ্র সাম্প্রদায়িক হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্ট কার্যকলাপ ও অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ জনমানসে তীব্র অসন্তোষ তৈরি করছে। সংসদের অভ্যন্তরে যাতে এর কোনো রেশ পড়তে না পারে সেজন্য সরকারের এমন স্বৈরাচারী ও অগণতান্ত্রিক ফরমান। কিন্তু এসব করেও নরেন্দ্র মোদি তাঁর নিজের ও সরকারের বিরুদ্ধে জনরোষ চাপা দিতে পারবেন না।