৫৯ বর্ষ ৪৯ সংখ্যা / ২২ জুলাই, ২০২২ / ৫ শ্রাবণ, ১৪২৯
‘ভূ-ভারত আজ কসাইখানা, আসবি কখন সর্বনাশী’
বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়
“চলতে গিয়ে কেউ যদি চায়/ এদিক ওদিক ডাইনে বাঁয়,/ রাজার কাছে খবর ছোটে,/ পল্টনেরা লাফিয়ে ওঠে” - রক্কে করো রগুবীর এস্টাইলে বলতে ইচ্ছে করে রক্কে করো সুকুমার। ভাগ্যি তুমি ছিলে। নইলে কীভাবে লেখায় এত কেত মারতাম। তোমার থেকে ধার করে করে তবেই না লেখা দাঁড়ায়। নইলে আমার বাক্য রচনার শক্তি তো ওই টাকার দামের মতই। শুধুই পতন, পতন আর পতন। ধপধপাধপ শব্দ বিশ্ব বাজারে। দেশজুড়ে বিকাশের আর রাজ্যে উন্নয়ন ও অনুপ্রেরণার জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, ডালখোলা থেকে ডায়মণ্ডহারবার। এরপর মানুষের হয়তো নাক ঝাড়া কিংবা থুতু ফেলার জন্যও অনুপ্রেরণা লাগবে। একদিকে শুধুই ভাষণ, ভাষণ আর ভাষণ। আর অন্যদিকে টাকাকে যতই রোজ বলা হচ্ছে ৮০তে আসিও না সে রোজ বলছে ওরে আমি সেঞ্চুরি করবই। আমাকে কেউ আটকে রাখতে পারবে না। যাই বলি না কেন, সময়টা বেশ মজার। ‘ইত ইতৌ, ইত ইতৌ, ইত ইতৌ’...।
“আমাদের শান্তিটা বুড়ো গাছের মতো। পোকা লেগেছে ভিতরে ভিতরে, সেটা নির্জীব,...”, এটা অনেকেরই বোধে ঢুকে গেলেও এখনও পর্যন্ত “তাকে কেটে ফেলা চাই” বলা লোকজনের দলে ভিড় নেই। বরং বেশ কিছুটা কোণঠাসা। পঞ্জার মত, “শান্তিভঙ্গ করব পণ করেছি” বলা লোকজনের বড়ো অভাব। বরং উলটো দিকে ভিড় অনেক বেশি। পোকা লেগে ভেতরে ভেতরে ঘুণ ধরে যাওয়া শান্তিই সই। পেছনের দিকে হাঁটা এবং স্থবিরতা প্রায় সমার্থক। সেই গোলোকধাঁধায় ঘুরপাক খাবার বৃত্ত সম্পূর্ণ না হলে এগোনোর পথ খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা সে প্রশ্ন বহুমূল্যবান। অসম্পূর্ণ বৃত্তে কখনোই মুক্তকন্ঠে বলা যাবে না, “অনেকদিন তোমরা আমাদের ভুলিয়েছ, পণ্ডিত। আর নয়, তোমাদের শান্তিরসে হিম হয়ে জমে গেছে আমাদের রক্ত, আর ভুলিয়ো না।”
এসব কূটকচালি থাক। গলা উঠিয়ে নামিয়ে, শব্দ, বাক্যের মারপ্যাঁচে মানুষকে সাময়িক বিভ্রান্ত করার লীজ যারা নিয়েছেন সেটার সত্ব বরং তাঁরাই ভোগ করুন। এসব চর্চা না করে আমরা একটু চোখ রাখি অন্যদিকে। সে চর্চা কাজের নাকি অকাজের তা নাহয় সময় বলবে। আমরা আমাদের সুখ দুঃখের যাপনের কথা বলি। যে নির্যাস পাথেও হয়ে থাকুক আগামীর। আগামীর লড়াইয়ের। সলতে পাকানোর কাজ শুরু না হলে আগুন জ্বলবে কেমনে?
গত ২৪ জুন গুজরাটের প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ এহসান জাফরির স্ত্রী জাকিয়া জাফরির আবেদন খারিজ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ক্লিনচিট দেয় শীর্ষ আদালত। ২০০২ সালে আমেদাবাদের গুলবার্গ সোসাইটিতে হিংসার ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন তৎকালীন কংগ্রেস নেতা এহসান জাফরি। এর জেরে গুজরাট সরকারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন এহসান জাফরির স্ত্রী জাকিয়া জাফরি। যে মামলায় গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ অন্যন্যদের ক্লিনচিট দেয় সিট। ২০১৭ সালে গুজরাট হাইকোর্টও সেই ক্লিনচিট বহাল রাখে। সেই ক্লিনচিটকেই চ্যালেঞ্জ করেছিলেন জাকিয়া জাফরি। যদিও এই ঘটনা আমাদের আলোচ্য নয়।
এই মামলার শুনানির সময় সিট-এর পক্ষের আইনজীবী মুকুল রোহতগি আদালতে বলেন, ‘গুজরাট হাইকোর্টের সিদ্ধান্তকে অনুমোদন করা উচিত শীর্ষ আদালতের। না হলে এটি আজীবন চলতে থাকবে। যেভাবে এই মামলায় চাপ তৈরির জন্য দ্বিতীয় পিটিশন দাখিল করেছেন সমাজকর্মী তিস্তা শীতলবাদ।’ তিনি আরও বলেন, ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার তদন্ত নিয়ে কেউ কিন্তু আগে ‘আঙুল তোলেনি’। অর্থাৎ তিস্তা যেহেতু আঙুল তুলেছেন তিনি দোষী। যে বিষয়ের প্রতিবাদ জানিয়ে মামলাকারীর আইনজীবী কপিল সিব্বাল বলেন, ‘যেভাবে শীতলাবাদের সংগঠনের কাজ তুলে ধরে তাঁদের গুজরাট বিরোধী বোঝানোর চেষ্টা হচ্ছে তা অন্যায়।’
তুচ্ছ ঘটনা - ১: এই মামলার রায় প্রকাশের পর এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিনি কোর্টের রায় শুনেছেন। দাঙ্গার পর তিস্তা বা তাঁর এনজিওর তরফ থেকে সিটকে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছিল। সেই সমস্ত কিছু সুপ্রিম কোর্টের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে। তাই কোর্ট নরেন্দ্র মোদিকে ক্লিনচিট দিয়েছে। কোর্টের তরফ থেকে এও বলা হয় ট্রেনে আগুন লাগানোর পর তৎকালীন সরকার শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা করেছিল। ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো দাঙ্গা বাধানো হয়নি।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে অমিত শাহের এই বক্তব্যের পরেই ২৫ জুন রাতে গ্রেপ্তার হন তিস্তা শীতলবাদ। তিস্তার বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয় গুজরাট পুলিশের পক্ষ থেকে। তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৯৪ (মিথ্যা প্রমাণ দেওয়া বা জাল করা), ২১১ (ঘটনার মিথ্যা অভিযোগ), ২১৮ (জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে ভুল তথ্য প্রদান), ৪৭১ (ভুল নথি সত্য বলে চালানো) এবং ১২০বি (অপরাধী মূলক ষড়যন্ত্র) ধারায় মামলা করা হয়। প্রথম তুচ্ছ ঘটনার বিবরণ এটুকুই। এবার বরং চোখ রাখা যাক তুচ্ছ ঘটনা ২-এর দিকে।
তুচ্ছ ঘটনা - ২: তিস্তা শীতলবাদের গ্রেপ্তার হওয়ার গায়ে গায়েই ২৭ জুন রাতে গ্রেপ্তার হন অল্ট নিউজের সহ প্রতিষ্ঠাতা মহম্মদ জুবেইর। মহম্মদ সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করা বহিস্কৃত বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মা সহ বিজেপির বেশকিছু নেতানেত্রীদের ঘৃণাসূচক বক্তৃতাগুলিকে জনসমক্ষে তুলে ধরায় গত বেশ কিছুদিন ধরে খবরে ছিলেন জুবেইর। জুবেইরের গ্রেপ্তারির পর অল্ট নিউজের এর অপর এক প্রতিষ্ঠাতা প্রতীক সিনহা জানান, ২০২০ সালের একটি মামলার তদন্তের জন্য সোমবার দিল্লি পুলিশের বিশেষ সেল ডেকেছিল জুবেইরকে। পুলিশের কাছে হাজিরা দিতেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। যদিও প্রতীক সিনহা দাবি করেছেন, ২০২০ সালের ওই মামলায় জুবেইরকে গ্রেফতার করা হবে না বলে হাইকোর্টের রায় থাকা সত্ত্বেও তাঁকে গ্রেফতার করায় পুলিশকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। পুলিশ জানায় অন্য একটি এফআইআরের ভিত্তিতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জুবেইর-এর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩এ (ধর্ম, বর্ণ, জন্মস্থান, বাসস্থান, ভাষাগত বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে শত্রুতা তৈরি করা) ধারায় গ্রেফতার করা হয়। পরে তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির (আইপিসি) ধারা ১২০বি (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র) এবং ২০১ (প্রমাণ হারিয়ে যাওয়া) এবং বিদেশী অনুদান (নিয়ন্ত্রণ) আইনের ৩৫ ধারার অধীনে নতুন অভিযোগ আনা হয়েছে। যে ঘটনা প্রসঙ্গে ‘ডিজিপাব’ জানায়, "জুবেইর এই প্রথম আইনি হয়রানির শিকার হচ্ছেন না। গত দু'বছরে এই নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে ৬টি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।" যার মধ্যে একটি অভিযোগ ছিলো ২০১৮ সালে করা এক ট্যুইটের ভিত্তিতে। তিস্তা শীতলাবাদ এখনও জামিন না পেলেও মহম্মদ জুবেইর ২০ জুলাই জামিন পেয়েছেন।
এই দুই আপাত তুচ্ছ ঘটনায় আমার বা আপনার দৈনন্দিন জীবনযাপনের সুর তাল ছন্দ বিশেষ কিছু কাটেনি। কে তিস্তা, কে জুবেইর, তাঁরা গ্রেপ্তার হল অথবা জামিন পেল তাতে জগত সংসার অচল হয়ে যায়নি। স্ট্যান স্বামী, ভারভারা রাও ইত্যাদি প্রসঙ্গ এখানে টানছি না। কারণ এই ঘটনাগুলোও আমাদের একটুও বিচলিত করেনা। এঁরা কারা, দেশদ্রোহী নাকি দেশপ্রেমী তা নিয়েও আমাদের স্পষ্ট কোনও ধারণা নেই। যদিও হয়তো কিছুটা বিচলিত বোধ করেছেন দেশের প্রধান বিচারপতি এন ভি রামানা। তড়িঘড়ি ও নির্বিচারে গ্রেফতার, জামিন পেতে অসুবিধা এবং বিচারাধীন অবস্থায় দীর্ঘ সময় জেলবন্দি থাকা - এই সমস্ত কিছু নিয়েই সরব হয়েছেন দেশের প্রধান বিচারপতি এন ভি রমনা। বর্তমান দমবন্ধ পরিবেশে তাঁর বক্তব্যে ফুটে ওঠা উদ্বেগ, ইঙ্গিতটুকুই যথেষ্ট।
গত ১৬ জুলাই জয়পুরে এক অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরণ রিজিজু ও অন্যান্য বিচারকদের উপস্থিতিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, "আমাদের সামনে বিশাল চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আমাদের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায়, প্রক্রিয়াটি শাস্তি স্বরূপ। তড়িঘড়ি ও নির্বিচারে গ্রেফতার থেকে শুরু করে জামিন পেতে অসুবিধা, বিচারাধীন ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় জেলবন্দি করে রাখা - এই সমস্তকিছুর দিকে জরুরি ভিত্তিতে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।" তিনি বলেন, "ফৌজদারি বিচার প্রশাসনের দক্ষতা বাড়াতে আমাদের একটি সামগ্রিক কর্মপরিকল্পনা দরকার। পুলিশের প্রশিক্ষণ ও সংবেদনশীলতা এবং কারাব্যবস্থার আধুনিকীকরণ হলো ফৌজদারি বিচার প্রশাসনের উন্নতির একটি দিক। ‘নালসা’ (ন্যাশনাল লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটি) এবং আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষগুলিকে উপরের বিষয়গুলিতে নজর দিতে হবে।" রাজনৈতিক বিরোধিতাকে শত্রুতায় পরিণত করা এবং আইন প্রণয়নের গুণমান নিয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। তিনি বলেন, "রাজনৈতিক বিরোধিতাকে শত্রুতায় রূপান্তরিত করা উচিত নয়, দুঃখজনকভাবে যা আমরা আজকাল প্রায়ই প্রত্যক্ষ করছি। এগুলো সুস্থ গণতন্ত্রের লক্ষণ নয়। আগে সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ছিল। দুর্ভাগ্যবশত, বর্তমানে বিরোধীদের জায়গা কমে যাচ্ছে। দেশে আইন প্রণয়নের মানেরও পতন ঘটছে।"
এই প্রসঙ্গে অপ্রাসঙ্গিক আরও একটা তথ্য মগজে থাকুক। ২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি অনলাইন মিডিয়া পোর্টালগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে বেশ কিছু নির্দেশিকা জারি করে কেন্দ্র। এই নিয়মের অধীনে সমস্ত নিউজ পোর্টাল ও ওটিটি প্ল্যাটফর্মকে নিজেদের অনুষ্ঠানের বিস্তারিত জানাতে হবে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের কাছে। ৩০ দিনের মধ্যে এই বিষয়ে কি নির্দেশিকা রয়েছে, তাও জানিয়ে দেয় সংশ্লিষ্ট কমিটি। কেন্দ্রের এই নিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় বহু প্রথম শ্রেণির ডিজিটাল মিডিয়া ও সমাজকর্মীরা। যার মধ্যে ছিল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, দ্য টেলিগ্রাফ, দ্য হিন্দু, মিডিয়ানামার প্রতিষ্ঠাতা নিখিল পাওয়া এবং ইন্টারনেট ফ্রিডম ফাউন্ডেশন।
এবার ২০২২। সংসদের বর্তমান বর্ষাকালীন অধিবেশনেই আসতে চলেছে ডিজিটাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণকারী নতুন আইন। এর আগে ডিজিটাল মিডিয়া সরকারি বিধির আওতায় ছিল না। এবার তা মিডিয়া নিয়ন্ত্রণের সংশোধিত আইনে এই প্রথম অন্তর্ভুক্ত হবে ভারতে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বিল সংসদে পাশ হলেই ডিজিটাল নিউজ সাইট নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর হবে কেন্দ্র। সূত্র অনুসারে, ১৮৬৭ সালের 'প্রেস এন্ড রেজিস্ট্রেশন অফ বুক অ্যাক্ট' এর বদলে 'প্রেস অ্যান্ড পিরিওডিক্যালস বিল'-এর সংশোধনী প্রক্রিয়া শুরু করেছে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক। যাতে 'যে কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে ডিজিটাল মিডিয়ার খবর'-এর পরিধিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাক স্বাধীনতা অথবা মত প্রকাশের অধিকারের পরিসর ক্রমশ ছোটো হচ্ছে কিনা সে ভাবনা কবে কখন কীভাবে ভাবা শুরু করা হবে আপাতত তা নিয়ে বোধহয় একটু ভাবার সময় বের করা দরকার।
লেখাটা শুরু করেছিলাম ‘একুশে আইন’ দিয়ে। না না। কোনও রাজনৈতিক দলের কোনো বিশেষ দিনের সমাবেশ নিয়ে আমার কোনও বক্তব্য নেই। তা সে শহিদ স্মরণ অনুষ্ঠান নাকি অন্যকিছু তা বলার, দেখানোর জন্য তো আদা জল খেয়ে মাঠে নেমে পড়া, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া ‘অভিজ্ঞ’ সাংবাদিকরাই যথেষ্ট। আমার দৌড় সুকুমার রায় পর্যন্ত। একুশে আইন পর্যন্তই। যে ছড়া ১৯২২-এ তিনি লিখেছিলেন। আর ওই ১৯২২-এই নিজের সম্পাদিত পাক্ষিক পত্রিকা ‘ধূমকেতু’র শারদীয় সংখ্যায় ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ বলে একটি কবিতা লিখেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। যে কবিতা প্রকাশের জন্য ধূমকেতুর ওই সংখ্যা নিষিদ্ধ হয়ে যায়। এমনকি ২৩ নভেম্বর কবি গ্রেপ্তার হন কুমিল্লা থেকে। ‘রাজদ্রোহী’ কবির ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ তো আমরা সকলেই জানি। যাক সে প্রসঙ্গ। ওই কবিতায় নজরুল বলছেন, “আর কতকাল থাকবি বেটী/ মাটির ঢেলার মূর্তি আড়াল?/ স্বর্গ যে আজ জয় করেছে/ অত্যাচারী শক্তি চাঁড়াল।/ দেব-শিশুদের মারছে চাবুক,/ বীর যুবকদের দিচ্ছে ফাঁসি,/ ভূ-ভারত আজ কসাইখানা,/ আসবি কখন সর্বনাশী?” না, না, আমি কিছু বলছি না। সব দায় সুকুমার আর নজরুলের। আমরা বরং মজা দেখতে থাকি...।