৫৯ বর্ষ ১০ সংখ্যা / ২২ অক্টোবর, ২০২১ / ৮ কার্ত্তিক, ১৪২৮
বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক হিংসায় উদ্বিগ্ন পলিট ব্যুরো
বাংলাদেশে মৌলবাদী হিংসার বিরুদ্ধে কলকাতার মৌলালিতে এসএফআই, ডিওয়াইএফআই এবং এআইডব্লিউএ-র প্রতিবাদ বিক্ষোভ।
ছবিঃ তানিয়া দাস
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশে দুর্গোৎসবের সময়ে সাম্প্রদায়িক হিংসা ও সংঘর্ষের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো। গত ১৬ অক্টোবর এক বিবৃতিতে পলিট ব্যুরো বলেছে, বাংলাদেশ সরকার হিংসা মোকাবিলায় বাহিনী মোতায়েন করেছে এবং সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনার সূত্রপাত করার জন্য দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করে ন্যায়বিচারের আশ্বাস দিয়েছে। এই ঘটনায় পুলিশের গুলিতে অন্তত চারজনের মৃত্যু এবং দেশজুড়ে বহু গ্রেপ্তারির খবর পাওয়া গেছে।
পলিট ব্যুরো বলেছে, বহু শতাব্দী ধরে বাঙালিরা ধর্মীয় বিশ্বাস নির্বিশেষে সম্প্রীতির বন্ধনে পুজো উৎসব পালন করে আসছে। বাংলাদেশ বরাবরই সেই ঐতিহ্য বজায় রেখে আসছে। সিপিআই (এম) পলিট ব্যুরো আশা করে এই ঐতিহ্য রক্ষা করা হবে এবং তা শক্তিশালী করা হবে।
পলিট ব্যুরোর বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, আমাদের অঞ্চলে অনেক দেশেই ধর্মীয় মৌলবাদীদের সক্রিয়তাবৃদ্ধি একটি অভিন্ন উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ সরকারকে অবশ্যই শান্তি, স্বাভাবিকতা ও সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনতে সমস্ত রকমের উদ্যোগ নিতে হবে।
সূর্য মিশ্রের আবেদন
বাংলাদেশের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গে গুজব ও বিদ্বেষ ছড়ানোর জন্য সক্রিয় রয়েছে সাম্প্রদায়িক শক্তি। এই পরিপ্রেক্ষিতে সিপিআই (এম)-র রাজ্য সম্পাদক সূর্য মিশ্র সবাইকে সতর্ক করে এক ট্যুইট বার্তায় বলেছেন, ‘আমাদের বিনম্র ও সুদৃঢ় আবেদন - প্ররোচনা সৃষ্টি করবেন না, প্রারোচনার ফাঁদে পা দেবেন না, প্ররোচনা সৃষ্টিকারীদের চিহ্নিত করুন, বিচ্ছিন্ন করুন, বিরত করুন।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘রাজ্য সরকার ও প্রশাসনের সঙ্গে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার প্রশ্নে সবরকম সহযোগিতা করতে হবে।’
১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর সাম্প্রদায়িক বিভেদের বিরুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের রাখিবন্ধন অনুষ্ঠানের ঐতিহ্য স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘এটাই আমাদের সুমহান ঐতিহ্য এপার এবং ওপার, দুই বাংলার। এই ঐক্যকে কলঙ্কিত হতে দেবেন না।’
বামপন্থীদের প্রতিবাদ
বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনার নিন্দার পাশাপাশি ধর্মীয় মৌলবাদীদের প্ররোচনাকে ব্যর্থ করার আহ্বান জানিয়ে কলকাতা সহ রাজ্যের নানা প্রান্তে বামপন্থীরা মিছিল সহ নানা কর্মসূচি সংগঠিত করেছে। উত্তর দিনাজপুর, কোচবিহার, উত্তর ২৪ পরগনা সহ বিভিন্ন জেলায় সিপিআই (এম)-র উদ্যোগে সম্প্রীতি মিছিল হয়েছে। এছাড়া ডিওয়াইএফআই, এসএফআই’র উদ্যোগেও মিছিল সহ প্রতিবাদ কর্মসূচি হয়েছে। সম্প্রতি এসএফআই, ডিওয়াইএফআই এবং এআইডব্লিউএ-র উদ্যোগে কলকাতার মৌলালি মোড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি সংগঠিত হয়েছে।
বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের আহ্বান
বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ এবং প্ররোচনাসৃষ্টিকারী শক্তিরগুলির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশের সরকার এবং সেখানকার মানুষের কাছে আবেদন জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের প্রগতিশীল রাজনৈতিক, শিক্ষা ও সংস্কৃতিজগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। ‘বাংলাদেশের জনসাধারণ ও সরকারের কাছে একটি আবেদন’ শীর্ষক খোলা আবেদনে স্বাক্ষর করেছেন অধ্যাপক পবিত্র সরকার, অধ্যাপক বিজয়া গোস্বামী, সঙ্গীতশিল্পী মোহন সিং খাঙ্গুরা, নবকুমার বসু, সৌমিত্র মিত্র, কালীকৃষ্ণ গুহ, দেবশঙ্কর হালদার, মালবিকা মিত্র, মারুফ হোসেন, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, কৌশিক সেন, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, চন্দন সেন (অভিনেতা), অংশুমান কর, ঋদ্ধি সেন, একরাম আলি, ফাল্গুনী চট্টোপাধ্যায়, অন্তরা দেবসেন, মাকসুদা খাতুন, শোভনসুন্দর বসু, কাজি কামাল নাসের, শান্তিলাল মুখার্জি, সুমন্ত্র সেনগুপ্ত, শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার, কঙ্কণ ভট্টাচার্য, শেখ সাইদুল হক, বামপন্থী রাজনৈতিক আন্দোলনের নেতা মহম্মদ সেলিম, মনোজ ভট্টাচার্য, বিকাশ ভট্টাচার্য, দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, অভিজিৎ মজুমদার সহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
আইএসএফ-র চেয়ারম্যান এবং বিধানসভার সদস্য নওশাদ সিদ্দিকি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুরক্ষার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ, পারস্পরিক সৌহার্দ্য, সংহতি সুদৃঢ় করার পাশাপাশি মৌলবাদী শক্তিগুলির বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে এক বার্তা প্রেরণ করেছেন।