E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ১০ সংখ্যা / ২২ অক্টোবর, ২০২১ / ৮ কার্ত্তিক, ১৪২৮

সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরোর বিবৃতি


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ নয়াদিল্লিতে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরোর দু’দিনের বৈঠকের পরে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ছ’দিন ধরে পেট্রোল-ডিজেলের দাম একটানা বেড়েছে। গত দশ মাসে লিটারপ্রতি ২০ টাকা বেড়েছে। গড়ে পেট্রোলের দাম দাঁড়িয়েছে লিটারপ্রতি ১১০ টাকা, ডিজেলের ১০০ টাকার বেশি। জনগণের বিপুল অংশের জীবনজীবিকাকে তা ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

সোমবার, ১১ অক্টোবর পলিট ব্যুরোর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পেট্রোপণ্যের এই মূল্যবৃদ্ধি সামগ্রিকভাবে মূল্যবৃদ্ধির জন্ম দিয়েছে। পরিবহণের খরচ বাড়ায় সমস্ত নিত্যপণ্যের দাম ভয়ঙ্করভাবে বেড়েছে। ভোজ্য তেল, সবজি, ফল, দুধের দাম দারুণভাবে বেড়ে গেছে। ২০২১-এর প্রথম ৯ মাসে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম বেড়েছে ২০৫টাকা করে, কোনো কোনো রাজ্যে সিলিন্ডারের দাম ১ হাজার টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ভোগ্যপণ্য ক্রেতা মূল্যসূচক ক্রমাগত বৃদ্ধি হয়েই চলেছে। মহামারীতে এমনিতেই ঋণে ডুবছেন মানুষ, বাড়ছে কর্মহীনতা, কমছে আয়, তীব্র হচ্ছে দারিদ্র্য। এই মূল্যবৃদ্ধি জনগণের ওপরে আরও আক্রমণ। ২০২০ সালে কেন্দ্রীয় সরকার পেট্রোপণ্যের শুল্ক থেকে ৩.৬১ লক্ষ কোটি অতিরিক্ত রাজস্ব আয় করেছে। এদিন পার্টির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, এখন পেট্রোপণ্যের দামের ৭০ শতাংশই শুল্ক। কেন্দ্রীয় কর প্রত্যাহার করে পেট্রোপণ্যের দাম কমাতে হবে।

এয়ার ইন্ডিয়া বিক্রির বিরোধিতা করে পলিট ব্যুরো বলেছে, কেন্দ্রীয় সরকার ভারতের জাতীয় সম্পদ লুট করেই চলেছে। জাতীয় বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়াকে টাটাদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। এই বিক্রি টাটাদের বিনামূল্যে উপহার। টাটারা ১৫,৩০০ কোটি টাকার ঋণের দায় নেবে, যা আবার পুনর্বিন্যস্ত করা হবে। কেন্দ্রীয় সরকার পাবে মাত্র ২,৭০০ কোটি টাকা। সমস্ত সম্পদও যাবে টাটাদের কাছে। ৪৬,২৬২ কোটি টাকার ঋণের বোঝা বইবে কেন্দ্রীয় সরকার। অথচ এই ঋণ নিয়ে কেনা নতুন বিমান সহ সব সম্পদই ভোগ করবে টাটারা। সুতরাং, এ শুধু জাতীয় সম্পদের লুটই নয়, গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা জলের দরে টাটাদের কাছে বিক্রি করে জনগণকে তার বোঝা বইতে বাধ্য করা হচ্ছে। ইয়েচুরি এদিন বলেন, একে বিক্রি বলে না, এ হলো প্রকাশ্য দিবালোকে ডাকাতি। এভাবে জাতীয় সম্পদের লুটের বিরুদ্ধে সিপিআই(এম) আন্দোলন আরও জোরদার করবে।

পলিট ব্যুরো বলেছে, বিস্তর প্রচার সত্ত্বেও দেশের মাত্র ১৮.৯শতাংশ মানুষ পূর্ণ টিকাকরণের সুযোগ পেয়েছেন। ৪৮.৭ শতাংশ একটি ডোজ পেয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকার শীর্ষ আদালতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এ বছরের মধ্যেই প্রাপ্তবয়স্ক সকলেই ভ্যাকসিন পেয়ে যাবেন। যে গতিতে টিকাকরণ চলছে তাতে এই লক্ষ্য পূরণ হওয়া কার্যত অসম্ভব। পলিট ব্যুরো দাবি করেছে, অবিলম্বে টিকাকরণের অভিযান তীব্র করতে হবে। উৎসবের মরশুম শুরু হয়েছে, এখন কম হারে টিকাকরণ হলে মহামারীর প্রভাব আরও দীর্ঘ হবে। ইয়েচুরি বলেন, যদি প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে টিকার পরিমাণ বহুগুণ বাড়ানো যায় তাহলে অন্য দিন তা পারা যায় না কেন?

কাশ্মীর উপত্যকায় সম্প্রতি নির্দোষ ব্যক্তিদের হত্যার তীব্র নিন্দা করেছে সিপিআই(এম)। বিবৃতিতে পিপলস অ্যালায়েন্স ফর গুপকার ডিক্লারেশনকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, এই হত্যাকাণ্ড এমন ভীতির সঞ্চার করেছে যা ১৯৯০-র দশকের প্রথম দিকের পরে কাশ্মীরে দেখা যায়নি। ৩৭০নং ধারার বিলোপ, ৩৫এ ধারার বিলোপ, জম্মু কাশ্মীরকে ভেঙে দিয়ে কেন্দ্রের শাসনে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি করার মতো পদক্ষেপকে প্রচার করা হয়েছিল জম্মু-কাশ্মীরের সঙ্গে ভারতের ‘প্রকৃত’ সংহতি বলে। বলা হয়েছিল উগ্রপন্থা ও বিচ্ছিন্নতার অবসান হবে। বাস্তবে দিল্লি থেকে চালানো কেন্দ্রের শাসনে জম্মু কাশ্মীরে হিংসা বেড়ে গেছে এবং জনগণের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা আরও বাড়ছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপরে বেছে বেছে আক্রমণ করা হচ্ছে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ তীব্র করার লক্ষ্যে। এটা স্পষ্টই জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী জম্মু কাশ্মীরের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে ‘দিল কি দূরি, দিল্লি কি দূরি’ অবসানের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা শূন্যগর্ভ বাগাড়ম্বরই থেকে গেছে। স্বেচ্ছাচারী পদ্ধতিতে আটক করা, অতিরিক্ত শক্তির ব্যবহার কখনও নিয়ম হতে পারে না। শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হলে জম্মু কাশ্মীরের জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। এদিন এ প্রসঙ্গে ইয়েচুরি বলেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপরে আক্রমণ করে যে সাম্প্রদায়িক বাতাবরণ তৈরির চেষ্টা চলছে তা বিজেপি’র পক্ষে লাভজনক। কাশ্মীরে রাজনৈতিক সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নিতেই হবে।

সিপিআই(এম)’র ২৩তম পার্টি কংগ্রেস সম্পর্কে ইয়েচুরি এদিন বলেন, পার্টিতে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সব স্তরে সম্মেলন চলছে। ইতিমধ্যে দিল্লি, হিমাচল প্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানার সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। অন্য রাজ্যগুলির সম্মেলনও নির্ধারিত রয়েছে। পার্টি কংগ্রেস হবে সামনের বছরের এপ্রিলে, কেরালার কান্নুরে। সেই কংগ্রেসের জন্য খসড়া রাজনৈতিক প্রস্তাব সামনের বছর ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হবে। সিপিআই(এম)’র রাজনৈতিক প্রস্তাব প্রকাশ করে তা নিয়ে বিশদে আলোচনা হয়। যে কোনো পার্টি সদস্য সংশোধনী দিতে পারেন, তা নিয়ে পার্টি কংগ্রেসে আলোচনা হবে। সেই খসড়া রাজনৈতিক প্রস্তাবের রূপরেখা নিয়ে পলিট ব্যুরোর বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।

দুই রাজ্যে আসন্ন নির্বাচন সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ইয়েচুরি বলেন, বিজেপি-কে পরাস্ত করাই প্রধান লক্ষ্য।

রবিবার এক সাক্ষাৎকারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে দারিদ্র্য বেড়েছে বলে মন্তব্য করেছিলেন। এদিন সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ইয়েচুরি বলেন, অমিত শাহ জানেন না বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে দ্রুত হারে দারিদ্র্য হ্রাস হয়েছিল। গুজরাট বহুকাল ধরেই সমৃদ্ধ রাজ্য, অনেক আগে থেকেই বাণিজ্যে এগিয়ে। বিজেপি-র জন্য গুজরাটের সমৃদ্ধি হয়নি। বিজেপি জানে তাদের হিন্দুত্ব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে বামপন্থীরাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাধা। তাই বামপন্থীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার তাদের কর্মসূচির অঙ্গ।