E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬১ বর্ষ ৭ সংখ্যা / ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ / ৪ আশ্বিন, ১৪৩০

শিক্ষা ও কাজের দাবিতে, বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে কলকাতায় ছাত্র-যুবদের উদ্দীপ্ত সমাবেশ


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ শিক্ষা ও কাজের দাবিতে এবং দাঙ্গাবাজ ও দুর্নীতিগ্রস্তদের হটানোর আহ্বা‍‌ন জানিয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর এসএফআই এবং ডিওয়াইএফআই’র কলকাতা জেলা কমিটির ডাকে বিশাল সমাবেশ হয় ধর্মতলায়। এদিনের সমাবেশে ডিওয়াইএফআই’র প্রাক্তন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমানে সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, কেন্দ্রীয় ও রাজ্যের তদন্ত এজেন্সিগুলিকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে দুই শাসকদল। অপরাধীদের সুরক্ষা দিচ্ছে তারা। ইডি এবং সিবিআই’কে দেশজুড়ে অপব্যবহার করা হচ্ছে একথা সত্য। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এমন সমঝোতা হয়েছে যে, ইডি-সিবিআই’র পায়ে বেড়ি পরানো হয়েছে। আদালতের নির্দেশে বাধ্য হয়ে ইডি-সিবিআই তদন্ত শুরু করলেও কিছুই করছে না বলে আমরা বলেছি - চোর ধরো, জেলে ভরো। বিজেপি বলছে, চোর ধরো দলে ভরো। তিনি বলেন, নারদা ঘুষ কাণ্ডে তৃণমূল এবং বিজেপি, উভয়েই উলঙ্গ হয়ে গিয়েছে, তাই তদন্ত এগোচ্ছে না। সিবিআই বার বার সাংবাদিক ম্যাথু স্যামুয়েলকে ডেকে চলেছে। তৃণমূল এবং বিজেপি লোকসভা নির্বাচনের আগে যে স্ক্রিপটেড তামাশা করছে তা রাজ্যের মানুষ মেনে নিতে পারে না। আদালত পর্যন্ত তিরস্কার করছে প্রতিদিন। দুর্নীতির তদন্তে মূল অপরাধীদের গ্রেপ্তার না করে সিবিআই এবং ইডি যেভাবে অপরাধ ধামাচাপা দিয়ে চলে‍‌ছে, তার বিরুদ্ধে আগামী ৫ অক্টোবর, সিবিআই দপ্তর সিজিও কমপ্লেক্সে সিপিআই(এম)’র অভিযানের কথা উল্লেখ করেন তিনি।

এদিন পুলিশের আপত্তি নস্যাৎ করে ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিংয়ের দক্ষিণে জওহরলাল নেহরু রোডের ওপরেই ছাত্র-যুব সমাবেশ করা হয়েছে। সমাবেশে ডিওয়াইএফআই’র রাজ্য সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি সাহা, রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি, এসএফআই’র রাজ্য সভাপতি প্রতীক-উর-রহমান, রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য সহ ডিওয়াইএফআই কলকাতা জেলা কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক যথাক্রমে বিকাশ ঝা ও পৌলবী মজুমদার এবং এসএফআই’র কলকাতা জেলা সভাপতি ও সম্পাদক যথাক্রমে দেবাঞ্জন দে ও আতিফ নিশারও বক্তব্য রাখেন।

কেন্দ্র ও রাজ্যের সরকার যেভাবে নতুন শিক্ষানীতি রূপায়ণের নামে একইভাবে শিক্ষার সুযোগ সংকুচিত করছে এবং রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পগুলিকে বেসরকারি হাতে তুলে দিয়ে নিয়োগের সম্ভাবনা সংকুচিত করছে তার তীব্র প্রতিবাদ করেছেন তাঁরা।

মহম্মদ সেলিম তাঁর বক্তব্যে রাজ্যে বিনিয়োগ আনতে সপার্ষদ মুখ্যমন্ত্রীর স্পেন সফর সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে বলেন, স্পেন তো নিজেই অর্থনৈতিক সংকটে। ওরাই বিনিয়োগের সন্ধান করছে। পশ্চিমবঙ্গে অর্থনীতি ধ্বংস করে এ রাজ্য থেকে শুষে নেওয়া পাচারের টাকা বিদেশে রাখার বন্দোবস্ত করতে বার বার বিদেশ যেতে হচ্ছে।

তিনি বলেছেন, শিল্প বিনিয়োগ আনতে হলে শিল্প মহলের প্রতিনিধিদের নিয়ে যেতে হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি স্পেনে কাদের নিয়ে গেছেন? সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে সরকারি টাকায় স্পেনে গেছেন কলকাতার ফুটবল ক্লাবের সঙ্গে স্পেনের ফুটবল ক্লাবের খেলার বন্দোবস্ত করতে? এর আগে পেলে এসে কলকাতায় খেলেননি? তখন কি সরকারের মন্ত্রীদের ব্রাজিল ভ্রমণ করতে হয়েছিল? তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গের মানুষের টাকায় যখন স্পেনে গিয়ে জগিং প্র্যাকটিস হচ্ছে, তখন এ রাজ্যের মিড ডে মিল থেকে ডিম উঠে যাচ্ছে, স্কুল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, সরকারি কর্মীরা ডিএ পাচ্ছেন না, আর চাকরি প্রার্থীরা রাস্তায় বসে আছেন। মুখ্যমন্ত্রী সত্যিই রাজ্যে শিল্পায়ন চাইলে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার সম্প্রসারণের জন্য জোর করে উচ্ছেদ না করে সেখানে ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন দিয়ে প্রকল্প রূপায়ণের ব্যবস্থা করতেন। দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার সম্প্রসারণ রাজ্যের জন্য অনেক বেশি জরুরি ছিল।

এদিন মীনাক্ষী মুখার্জি বলেন, শিক্ষা ও কাজের যে দাবি আমরা করেছি, সেটাই তো রাজ্যের ছাত্র যুবদের মূল ইস্যু। তৃণমূল এবং বি‍‌জেপি’র সমর্থক ছাত্র-যুবদেরও জীবনের ইস্যু এটাই। কিন্তু মূল ইস্যু থেকে নজর ঘোরাতে ভুল ইস্যু তুলে ধরছে নবান্ন এবং রাজভবন। রাজ্যের মানুষ কাজ পাচ্ছেন না, আর বিধায়ক-মন্ত্রীদের বেতন বেড়ে চলেছে। আমরা ৩ নভেম্বর থেকে মানুষের দরজায় দরজায় পৌঁছানোর কর্মসূচি নিয়েছি। তারপর ৭ জানুয়ারি ব্রিগেডের ময়দানে সবাইকে শামিল করার আহ্বান জানিয়েছি। ডিওয়াইএফআই যখন কাজের দাবিতে সবাইকে একজোট করার চেষ্টা করছে, তখন তৃণমূল-বিজেপি হিন্দু-মুসলমান বিভাজন করতে চাইছে।

সৃজন ভট্টাচার্য বলেন, কিছুদিন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে বদনাম করা হলো, কিন্তু ছাত্র হত্যার ঘটনায় আসল অপরাধীদের এখনও কেন গ্রেপ্তার করা হলো না, কোন তৃণমূল নেতারা তাদের আশ্রয় দিচ্ছে তা প্রকাশ করা হলো না। তিনি বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে জিডিপি’র ৬ শতাংশ ব্যয় শিকেয় তুলে এখন রাজ্যের শিক্ষানীতিতে শিক্ষাকে বাজারে পরিণত করা হয়েছে। স্কুল-কলেজ ছাত্র শূন্য হয়ে যাচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে তৃণমূল সরকার এমন উপাচার্য বসিয়েছে যাদের কেউ এখন জেলে, কারও নিয়োগ আদালত খারিজ করে দিয়েছে। আর শিক্ষার এমন বেহাল দশার সুযোগ নিয়ে রাজ্যপাল শিক্ষা ক্ষেত্রকে তছনছ করছেন।

প্রতীক-উর-রহমান বলেন, শিক্ষা ও কাজের দাবিতে কলকাতার মিছিলে কমরেড মইদুল মিদ্যাকে পুলিশ পিটিয়ে মেরেছিল। ওরা ভেবেছিল আর কেউ রাজপথে বসার সাহস দেখাবে না। কিন্তু ছাত্র-যুবদের পথচলা এভাবে বন্ধ করা যায় না। সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াও ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ করে রেখেছে। কারণ, সঠিকভাবে নির্বাচন হলে টিএমসিপি এবং এবিভিপি জাদুঘরে চলে যাবে।