E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬১ বর্ষ ৭ সংখ্যা / ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ / ৪ আশ্বিন, ১৪৩০

মুখ্যমন্ত্রীর পারিবারিক সংস্থাই দুর্নীতির ভরকেন্দ্র!

সুদীপ্ত বসু


রাজ্যে তখন বামফ্রন্ট সরকার। নন্দীগ্রামে নৈরাজ্যের আন্দোলনে ততক্ষণে হাত পাকিয়ে ফেলেছে তৃণমূল, বিজেপি সহ নানান রঙের সব দল। রাজ্যে যে কোনো ঘটনায় তখন তৃণমূলের হিংস্রাশ্রয়ী চেহারা।

সেই সময়তেই ঘটলো বেদিক ভিলেজ কাণ্ড। ২০০৯ সালের আগস্ট মাসে। ভাঙড় লাগোয়া রাজারহাট শিখরপুরে সামান্য ফুটবল খেলা থেকে বচসা এবং তার পরিণতিতে গুলি, মৃত্যুর ঘটনায় রীতিমতো হইচই শুরু হয়েছিল রাজনৈতিক মহলে। তৃণমূলের দুষ্কৃতীবাহিনী গুলি চালায়, মারা যায় এক সাধারণ দর্শক। উত্তেজিত মানুষজন বেদিক ভিলেজে আগুন ধরিয়ে দেয়। ঘটনার পিছনে আরাবুলের ভাই খুদে, মাটি মাফিয়া গফরের নাম সামনে আসে। বেদিক ভিলেজেই সেদিন আশ্রয় নেয় তৃণমূলী দুষ্কৃতীরা। সেখান থেকে উদ্ধার হয় আগ্নেয়াস্ত্র।

যদিও এরপরেই ময়দানে নেমে গোটা ঘটনার দায় স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে সিপিআই(এম)’র ওপর চাপিয়ে দেন মমতা ব্যানার্জি। বেদিক ভিলেজ কাণ্ডে তখন পথে নেমেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। বেদিক ভিলেজের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রাজকিশোর মোদির গ্রেপ্তারির দাবি জানিয়েছিলেন খোদ মমতা ব্যানার্জি। জমি লুট, বেদিক ভিলেজে অস্ত্র রাখা, হামলা চালানো সহ একাধিক অভিযোগে সে সময় এমনকী রাজকিশোর মোদির বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সংস্থা এনআইএ তদন্তেরও দাবি জানিয়েছিলেন মমতা। তখন কথায় কথায় সিবিআই, এনআইএ তদন্তের দাবি তুলতেন মমতা ব্যানার্জি।

পুলিশ রিয়েল এস্টেটের কারবারি রাজকিশোর মোদিকে গ্রেপ্তার করে, তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিটও দাখিল করা হয়, পরে জামিনও পান।

দু’বছর পরে সরকারে এলো তৃণমূল। বদলে গেল ছবি।

কেমন সেই বদল?

●  ●  ●

‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস’ নিছক একটি পারিবারিক সংস্থা নয়। শাসক তৃণমূলের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক দখলদারি, আধুনিক তোলাবাজির গুরুত্বপূর্ণ একটি ক্ষেত্র।

২০০৯ সালে যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামলেন মমতা ব্যানার্জি, মাত্র তিন বছর পরেই জামিনে মুক্ত সেই রাজকিশোর মোদির রিয়েল এস্টেট সংস্থা থেকে ‘বিনিয়োগের’ নামে বেমালুম কমিশন হিসাবে ১ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা ঢুকে গিয়েছিল অভিষেক ব্যানার্জির পারিবারিক সংস্থা লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসে!

তখন অভিষেক ব্যানার্জি নিজেই ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস’-র বোর্ড অফ ডিরেক্টরসের অন্যতম সদস্য। তখনও ভাইপো দলের মাথা হয়ে ওঠেনি! খোদ কোম্পানি বিশেষজ্ঞদের আরও বিস্ময়, আরওসি-র তালিকা অনুযায়ী যে সংস্থা ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে ইনকরপোরেটেড হয়েছে সেই সংস্থাই ওই একই আর্থিক বছরেই সওয়া এক কোটি টাকা কমিশন পেয়ে গেল!

আরওসি বা কোম্পানি নিবন্ধকের তালিকায় দেখা গেছে অভিষেক ব্যানার্জির পারিবারিক সংস্থা লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস প্রাইভেট লিমিটেড ২০১২সালের ১৯এপ্রিল নথিভুক্ত হয়েছে। করপোরেট আইডি নম্বর- ইউ ৭৪৯৯৯ ডবলিউ বি ২০১২পিটিসি ১৮০৯৭৫। এই সংস্থাটিরই চার্টার্ড অ্যাকাউন্টটেন্ট অশোক তুলসিয়ান। লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থাটি আরওসি-তে নথিভুক্ত হওয়ার মাত্র একমাস দশ দিন পরেই ওই সংস্থারই চার্টার্ড অ্যাকাউন্টটেন্ট অশোক তুলসিয়ান বেমালুম রাজকিশোর মোদির সংস্থা গ্রিনটেক আইটিসিটি-র অন্যতম ডিরেক্টর বনে গেলেন। ২০১২সালের ২৯ মে। ওই আর্থিক বছরেই গ্রিনটেক সিটি থেকে ১ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা ঢুকে গেল লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসে, যার চার্টার্ড অ্যাকাউন্টটেন্ট সেই অশোক তুলসিয়ান। ২০১২-১৩ সালে যখন এই লেনদেন হচ্ছে তখন পশ্চিমবঙ্গে শাসক তৃণমূলের মদতেই সারদা-রোজভ্যালির পনজি স্কিমের কারবারও প্রায় মধ্য গগনে।

অর্থাৎ যার বিরুদ্ধে এনআইএ তদন্তের দাবি মমতা ব্যানার্জি তুললেন বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন, সরকারে আসার পরে সেই ব্যক্তির মাধ্যমেই সওয়া এক কোটি টাকা কমিশন ঢুকে গেল তাঁরই পারিবারিক সংস্থায়। এনআইএ তদন্তের দাবিও চলে গেল শীতঘুমে।

রাজনৈতিক দাবিও বেমালুম হয়ে উঠলো করপোরেট ক্যাপিটাল!

●  ●  ●

সেই লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসই ফের চলে এলো স্বাধীনতার পরে পশ্চিমবঙ্গের বুকে সর্ববৃহৎ নিয়োগ কেলেঙ্কারির তদন্তে। অভিষেক ব্যানার্জির সেই পারিবারিক সংস্থার নিউ আলিপুরের অফিসেই রাতভর ইডি’র তল্লাশিতে যেন আগুনে ঘি পড়লো। ফুঁসে উঠলেন মুখ্যমন্ত্রী। একটি বেসরকারি সংস্থার অফিসে তল্লাশির ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী বললেন - ‘আমার পরিবারের ওপর অত্যাচার হচ্ছে’!

দলীয় সভা থেকে আবার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ‘আমার ফোনে একটা মেসেজ পাঠিয়েছে, অভিষেককে নাকি ভোটের আগে গ্রেপ্তার করে নেবে’। তার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই আবার নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি অমৃতা সিনহা ওই লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসে ইডি’র তল্লাশির পরিপ্রেক্ষিতেই প্রশ্ন তুলেছেন, কেন ওই সংস্থার আরেক কর্ণধারকে তলব, গ্রেপ্তার করা হলে অভিষেক ব্যানার্জিকে সমন পাঠানো হবে না, কেন তাঁকে তলব করা হচ্ছে না আর? অভিষেক ব্যানার্জি নিজেই দাবি করে ফেললেন লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের অফিস তাঁরই অফিস! ওদিকে ততক্ষণে আদালত লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের সম্পত্তি, সংস্থার ডিরেক্টরদের সম্পত্তির তালিকা তদন্তকারী সংস্থাকে জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে।

আর সেই সূত্রেই সামনে এলো আরেক জালিয়াতির ছবি। তার আগে একটিবার দেখে নেওয়া যাক এই সংস্থার কাঠামোটি।

অভিষেক ব্যানার্জি লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের প্রতিষ্ঠাতা কর্ণধার। ২০১২ সালের ১৯ এপ্রিল বোর্ড অফ ডিরেক্টরসে তাঁর সঙ্গেই যোগ দিয়েছিলেন কালীঘাটের কাকুও। অভিষেক ব্যানার্জি ২০১৪ সালে পদত্যাগ করেন লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস প্রাইভেট লিমিটেড থেকে। ২০১৪ সালের আগস্ট মাসেই ডিরেক্টর হিসাবে যুক্ত হন তাঁর স্ত্রী রুজিরা নারুলা ব্যানার্জি। অভিষেকের বাবা অমিত ব্যানার্জিও ’১৪ সালেই সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর হন।বর্তমানে অভিষেক ব্যানার্জির বাবা-মা’ই এই সংস্থার অন্যতম দুই ডিরেক্টর। অভিষেকের মা লতা ব্যানার্জি ১৯ এপ্রিল ২০১২ সালে অর্থাৎ কোম্পানি তৈরির সময় থেকেই ছিলেন। সংস্থাটির প্রথম আপডেটেড রেজিস্টার্ড অফিসের ঠিকানা দেওয়া হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন চত্বরেই- ২৯/সি, হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট, কলকাতা-২৬। বর্তমানে যদিও সংস্থার ঠিকানা নিউ আলিপুর।

গত আগস্ট মাসে সেখানে তল্লাশির পরে ইডি এক নতুন তথ্য সামনে আনে। বোর্ড অফ ডিরেক্টরস থেকে পদত্যাগ করলেও সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জি-ই এই সংস্থার এখনও চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার(সিইও)! প্রশ্ন উঠছে একজন সাংসদ কীভাবে একটি বেসরকারি সংস্থার সিইও পদে রয়েছেন? যিনি আবার দলের ‘সর্বভারতীয়’ সাধারণ সম্পাদকও বটে! অভিষেক ব্যানার্জি ডায়মন্ডহারবার লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ। কিন্তু গত লোকসভা নির্বাচনে তাঁর দাখিল করা হলফনামায় যদিও তার উল্লেখ নেই। নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় পরিকল্পিতভাবেই কি লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের প্রসঙ্গ এড়িয়েছেন কালীঘাটের কাকুর এই ‘সাহেব’? ’১৯ সালের নির্বাচনী হলফনামায় অভিষেক ব্যানার্জি তাঁর পেশার কলমে উল্লেখ করেছেন- ‘স্যালারিড’ অর্থাৎ বেতনভুক! যদিও কোথা থেকে বেতন পান তার উল্লেখ নেই।

●  ●  ●

আরও তাৎপর্যের হলো কয়লা পাচার কাণ্ড ও শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে সিবিআই এবং ইডি তদন্ত চলাকালীন কালীঘাটের কাকুর প্রসঙ্গ সামনে আসতেই আচমকা ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস এলএলপি’ নামক সংস্থা গুটিয়ে ফেলা শুরু হয়েছে। আরওসি’র তথ্য বলছে এই সংস্থার বর্তমান স্ট্যাটাস - ‘আন্ডার প্রসেস অফ স্ট্রাইক অফ’! অর্থাৎ অভিষেক ব্যানার্জির এই পারিবারিক সংস্থা কার্যত পাতপাড়ি গোটানোর পথে। কোম্পানি অ্যাক্ট, ২০১৩’র ২৪৮ নম্বর ধারায় এই কোম্পানির ‘স্ট্রাইক অফ’ করা যায় যখন কোম্পানির বোর্ড অফ ডিরেক্টরস সেই সংস্থা আর জীবিত রাখতে চায়না।

আসলে দুটি সংস্থা। একটি হলো - ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস প্রাইভেট লিমিটেড’। ২০১২ সালে এটি তৈরি হয়। দ্বিতীয়টি হলো - ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ড ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস এলএলপি’। ২০১৭ সালে এটি তৈরি হয়। এটি এখন গুটিয়ে ফেলা হচ্ছে। কেন?

দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টে ইডি’র দায়ের করা প্রসেকিউশন কমপ্ল্যাইন্টে দাবি করা হয়েছে -

‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস প্রাইভেট লিমিটেড’ এবং ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ড ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস এলএলপি’ - এই সংস্থায় কয়লা পাচারের টাকা ঢুকেছে। ঢুকেছে ঘুরপথে। একটি নির্মাণকারী সংস্থার মাধ্যমে, সেই সংস্থার সঙ্গে আবার সরাসরি যোগ কয়লা মাফিয়া অনুপ মাঝি ওরফে লালার। টাকার পরিমাণ ৪ কোটি ৩৭ লক্ষ।

অর্থাৎ লালার ঘনিষ্ঠ একটি নির্মাণকারী সংস্থার অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অভিষেক ব্যানার্জির পরিবারের সংস্থায় টাকা ঢুকেছে। কয়লা পাচারেরই টাকা তা, ঘুরপথে এই সংস্থার মাধ্যমে লালার অর্থ পৌঁছেছে। সেই অর্থ ঢুকেছে ‘প্রোটেকশন মানি’ হিসাবে। অর্থাৎ কয়লা পাচারের বেআইনি কারবারের পথ মসৃণ রাখতে ‘প্রোটেকশন মানি’ ঢুকছে সংস্থায়।

তাই কী পাতাতাড়ি গোটানো হচ্ছে?

●  ●  ●

নিয়োগ দুর্নীতিতেও ভাইপোর এই পারিবারিক সংস্থা হাজির। অভিযোগ গুরুতর। ইতিমধ্যে প্রেস বিবৃতিতে ইডি’র দাবি - ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস নামের এই সংস্থা কোটি কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত।’

নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের প্রাক্তনী ‘কালীঘাটের কাকু’র বিরুদ্ধে ১৭৬ পাতার যে অতিরিক্ত চার্জশিট জমা দিয়েছিল ইডি, সেখানেই প্রথম আসে অভিষেক ব্যানার্জির নাম। অভিষেকের বার্তাবাহক হয়েই কালীঘাটের কাকু মানিক ভট্টাচার্যের দপ্তরে যেতেন, মানিক ভট্টাচার্যের কাছে ৩২৫ জনের তালিকা পাঠিয়েছিলেন ২০১৪’র টেট পাশ করিয়ে দেওয়ার সুপারিশ সহ। সেই ৩২৫ জনের কাছ থেকে তাদেরই পাস করিয়ে দেওয়া এবং পরবর্তী নিয়োগ নিশ্চিত করার জন্য কুন্তল ঘোষের মাধ্যমে ৩ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা তোলা হয়েছিল, যা পৌছেছিল অভিষেকের পারিবারিক সংস্থার একদা ডিরেক্টর কালীঘাটের কাকুর কাছেই।

সেই চার্জশিটেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি’র দাবি, টাকা ঢুকেছিল অভিষেক ব্যানার্জির পারিবারিক সংস্থা লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস প্রাইভেট লিমিটেডেও। সেই টাকার পরিমাণ ৯৫ লক্ষ টাকা। ২০২০ সালের ফেব্রয়ারি থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারির মধ্যে সেই টাকা ঢুকেছিল। মানি লন্ডারিংয়ের তদন্তে দেখা গেছে, ঘুরপথে অভিষেক ঘনিষ্ঠ কালীঘাটের কাকুর সংস্থা এসডি কনসালটেন্সির মাধ্যমেই ২০২০সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২১’র জানুয়ারি পর্যন্ত তিন দফায় মোট ৯৫ লক্ষ টাকা ঢুকেছিল লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসে। প্রথম দফায় (১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০) ৪৮ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় দফায় (২৭ মে, ২০২০) ৪৫ লক্ষ ৩৬ হাজার টাকা এবং তৃতীয় দফায় (২৯ জানুয়ারি, ২১) ১ লক্ষ ৫ হাজার টাকা ঢোকে ব্যানার্জি পরিবারের পারিবারিক সংস্থায়।

মাথা ঘুরিয়ে দেওয়া সেই কৌশল। একটি বড়ো রিয়েল এস্টেট কোম্পানির কাছে ভুয়ো বিল জমা দিয়ে, কার্যত খাতায় কলমে লেনদেন দেখিয়ে ৯৫ লক্ষ টাকা মুনাফা করেছিল সুজয় ভদ্রের সংস্থা এসডি কনসালটেন্সি। মহিষবাথানে ওই রিয়েল এস্টেট কোম্পানির এক প্রজেক্টে মাল সরবরাহের বরাত পাইয়ে দেওয়া হয় একটি সংস্থাকে। সেই সংস্থা ১ কোটি ৩৬ লক্ষ ৪৭ হাজার টাকার বিল ধরায়। বিল হয়েছিল সুজয় ভদ্রের সংস্থা এসডি কনসালটেন্সির নামে। এরপরে ওই রিয়েল এস্টেট কোম্পানির কাছে আরেকটি বর্ধিত হারে বিল জমা দেওয়া হয়। ১ কোটি ৩৬ লক্ষ হয়ে যায় ২ কোটি ৩২ লক্ষের বেশি আর ওই ৯৫ লক্ষের বেশি টাকা সরাসরি ঢোকে সুজয় ভদ্রের এসডি কনসালটেন্সি সংস্থায়। এরপর ওই টাকাটি সোজা চলে যায় লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসে। গোটা কারবারটি শুধু খাতায় কলমে দেখানো হয়েছে। যা আসলে নিছকই ‘প্রোটেকশন মানি’।

নিয়োগ দুর্নীতির টাকা খেটেছে রিয়েল এস্টেটে, সিন্ডিকেটের কারবারেও। তারপর সেখান থেকেও মুনাফার টাকা সরাসরি সুজয় ভদ্রের সংস্থার মাধ্যমে ঢুকে পড়ে অভিষেক ব্যানার্জির পারিবারিক সংস্থায়!

স্বাভাবিকভাবেই লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসে তল্লাশি যে কার্যত তাঁর বাড়িতেই তদন্তকারী সংস্থার ঢুকে পড়ার শামিল, তা মনে করছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী নিজেই।

●  ●  ●

ফলে এটি নিছকই একটি সংস্থা নয়।

কয়লা পাচার থেকে নিয়োগ দুর্নীতি, তোলাবাজির ভরকেন্দ্র এখনও লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস- ‘অত্যন্ত দ্রুত গতিতে’(!) পাল্লা দিতে পারে একমাত্র জয় শাহের সংস্থা! বিজেপি ২০১৪ সালে সরকারে আসার পরে যে সংস্থার আর্থিক লেনদেন এক লাফে ১৬ হাজার গুণ বেড়ে যায়। কোম্পানির আয় ৫০ হাজার টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৮০ কোটিতে! অমিত পুত্র জয় শাহের ৬ কোটি টাকার ফিনান্সিয়াল ফার্ম অবলীলায় ৯৫ কোটি টাকার ব্যাঙ্ক লোন পায়, যে ব্যাঙ্কের অন্যতম কর্ণধার গুজরাটের বিজেপি সরকারের মন্ত্রী নীতিনভাই প্যাটেল।

পাওয়ার পলিটিক্সে এরকম সংস্থাগুলিই শাসকদলের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে ওঠে।