৬১ বর্ষ ৭ সংখ্যা / ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ / ৪ আশ্বিন, ১৪৩০
‘ইন্ডিয়া’-তে থেকেই বিজেপি-তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই
শুদ্ধসত্ত্ব বসু
সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো স্পষ্ট করে ফের জানিয়েছে যে, বিজেপি’র পাশাপাশি তৃণমূলের সঙ্গেও লড়াই হচ্ছে বাংলায়। সেই সঙ্গে, ঠিক আগের অবস্থান বজায় রেখে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সিপিআই(এম) নেতৃত্বাধীন বাম গণতান্ত্রিক জোট বরাবরের মতো কেরালায় লড়বে কংগ্রেস জোট ইউডিএফ’র বিরুদ্ধে। কেরালায় প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তি কংগ্রেস এবং বামপন্থীরা। বিজেপি তেড়েফুঁড়ে নামলেও বিধানসভায় কোনো আসন পায়নি।
সিপিআই(এম) এবং এ রাজ্যে বামপন্থীরা কিন্তু অবস্থান বদলাননি। ১৬ এবং ১৭ সেপ্টেম্বর পলিট ব্যুরোর বিবৃতিতে আগের অবস্থানই ফের জানানো হয়েছে। বিরোধী মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’-র বৈঠকের সময়ই, একবার বেঙ্গালুরুতে পরের বার সেপ্টেম্বরের গোড়ায় মুম্বাইয়ে সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, কেরালা এবং পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান একই রয়েছে।
প্রশ্নটা তবু তোলা হচ্ছে, তুলে যাওয়াই হবে - মমতার সঙ্গে বামপন্থীরা, বিশেষ করে, সিপিআই(এম) কেন? তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেওয়াও যায় যে, সিপিআই(এম) রেগেমেগে বিরোধী সমন্বয় ছেড়ে বেরিয়ে এলো, এই বাহিনীই ঠিক উলটো সুরে আক্রমণ করবে সংবাদমাধ্যমে, সোশ্যাল মিডিয়ায়। তখন বলা হবে, দেখ কেমন ঔদ্ধত্য, কেমন একলা হয়ে পড়ল সিপিআই(এম), কেমন ভুলভাল সব নীতি!
এ ভাষ্য মোটেই কল্পিত নয়। গত বারো বছরের কিছু বেশি সময়ে বারবার এমন প্রশ্নই তো ব্যবহার করা হয়েছে সিপিআই(এম)’কে বিচ্ছিন্ন করার জন্য। সিপিআই(এম)’কে বিচ্ছিন্ন দেখানোর জন্য। জুনের তৃতীয় সপ্তাহে পাটনায় নীতীশ কুমারের আহ্বানে হয়েছিল নতুন চেহারায় বিরোধী মঞ্চের প্রথম বৈঠক। তার দিন পনেরোর মাথায় ছিল এ রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন। পাটনা বৈঠকে ভাইপো এবং সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জিকে নিয়ে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূল প্রধান মমতা ব্যানার্জি। পঞ্চায়েতে বামপন্থীদের, সিপিআই(এম)’র লড়াইয়ে খামতির অভিযোগ তুলতে পারা গিয়েছে কি? বরং পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল এবং বিজেপি বিরোধী শিবিরের এককাট্টা লড়াই দেখার পর থেকে জাতীয় স্তরের বোঝাপড়া ঘিরে সিপিআই(এম)’র ‘সমস্যা’ দেখানোর চেষ্টায় ব্যস্ততা বেড়ে গিয়েছে বিভিন্ন অংশের।
‘ইন্ডিয়া’, বিরোধী সমন্বয় এবং তৃণমূল
এমনভাবে বলা হচ্ছে যেন বিরোধী মঞ্চের উদ্যোগে অগ্রণী মমতা ব্যানার্জিই। যেন বামপন্থীরা, বিশেষ করে এ রাজ্যে লোকসভায় কোনো আসন পায়নি যেহেতু, জাতীয় স্তরে দূর প্রান্তেই পড়ে থেকেছে। বাস্তবের সঙ্গে মেলাতে গেলে এই তত্ত্ব বারবার হোঁচট খাবে।
বামপন্থীদের অবস্থান বরাবরই স্পষ্ট ছিল যে, জাতীয় স্তরে নির্বাচনী জোট হওয়া কঠিন। কিন্তু রাজ্যে রাজ্যে পরিস্থিতির বিচারে বিজেপি বিরোধী শক্তির সমন্বয় জরুরি। রাজ্যের পরিস্থিতি অনুযায়ীই হবে। সংসদে সমন্বয়ের ওপরও জোর দেয় বামপন্থীরা।
বিরোধী সমন্বয়ে বারবার ধাক্কা দিয়েছে যে দলটি তার নাম তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপি নেতা যশোবন্ত সিন্হাকে দেখা যাচ্ছিল নরেন্দ্র মোদির সমালোচনায় মুখ খুলতে। তাঁকে দলের সহসভাপতি ঘোষণা করলো তৃণমূল কংগ্রেস, সাংবাদিক সম্মেলন করে। গত বছর, ২০২২’র ২১ জুলাই হয় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। প্রায় আচমকা বিরোধী দলগুলিকে নিজের পছন্দের প্রার্থী যশোবন্ত সিন্হাকে সমর্থনের জন্য বার্তা পাঠালেন মমতা। আগাম আলোচনা ছাড়া প্রায় একতরফা ঘোষণায় আপত্তি তুললেও অ-বিজেপি শিবিরের বিভিন্ন দল সমর্থনে রাজিও হলো। সে সময় দিল্লিতে বিরোধী বৈঠকে বিজেপি’কে হারানোর জন্য একজোট হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ভাষণও দিলেন মমতা। ভোল বদল পরের মাসেই।
ওই বছরের আগস্টে ছিল উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন। বিজেপি’র প্রার্থী জগদীপ ধনকর। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল পদে আসীন ধনকরের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের বাদানুবাদ এবং তাঁকে ঘিরে অজস্র সংবাদ ভুলে যাওয়ার নয়। কিন্তু ধনকরের বিরুদ্ধে বিরোধী প্রার্থী কংগ্রেসের মার্গারেট আলভাকে সমর্থনের ধারপাশ দিয়েও গেল না তৃণমূল কংগ্রেস। সমর্থন না করার জন্য একেবারেই ছুঁতো দেখিয়েছিল তৃণমূল। প্রার্থী নির্বাচন প্রক্রিয়া যথেষ্ট অংশগ্রহণমূলক ছিল না, এককথায় এই ছিল অভিযোগ। ভোট না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল তৃণমূল। অথচ সেই সময়েও রাজভবন বনাম নবান্ন এ রাজ্যে তৃণমূল এবং বিজেপি’র রাজনৈতিক মেরুকরণে ব্যবহার করা হয়ে গিয়েছে বারবার।
মনে রাখা ভালো, ওই বছরের ১৩ জুলাই দার্জিলিঙে আসামের বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা এবং ধনকরের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন মমতা ব্যানার্জি। কেন হয়েছিল বৈঠক স্পষ্ট হয়েছিল ধনকরকে পরোক্ষে সমর্থনের সিদ্ধান্তে।
বামপন্থীদের পাশাপাশি বিরোধী দলের অনেকগুলিই বিভিন্ন বিষয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে একমত নয়। পৃথক দল, ফলে পৃথক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। কেরালায় বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট সরকারকে কড়া আক্রমণ নিয়মিতই শানিয়েছে কংগ্রেস। বামপন্থীরাও জোরালো জবাব দিয়েছেন। কিন্তু তার জন্য দেশময় হিংসার বিরোধিতায়, উন্মত্ততার বিরোধিতায় সংসদে একযোগে সরব হওয়ার প্রয়াসে বাধা দেননি। তৃণমূল কংগ্রেস দিয়েছে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার কারচুপি নিয়ে প্রকাশ হয় হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট। বিজেডি, বিআরএস, ওয়াইএসআর কংগ্রেসের মতো দলগুলি বাদে অ-বিজেপি শিবিরের সব অংশ প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতির দাবি জানায়। সঙ্গত দাবি বিরোধীদের, কিন্তু পূর্ণাঙ্গ আলোচনায় অরাজি সরকার পক্ষ বিজেপি। যেমন মণিপুরের হিংসা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে মুখ খোলাতে সংসদের আগের অধিবেশনেই অনাস্থা প্রস্তাব আনতে হয়েছে বিরোধীদের। হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট গুরুত্বপূর্ণ কারণ এলআইসি’র মতো রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে দিয়ে আদানি গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থায় শেয়ার কেনানো হয়েছে। সেই পর্বে বিরোধীদের যৌথ সক্রিয়তা থেকে দূরে সরে থাকল তৃণমূল কংগ্রেস।
পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, ১৬ মার্চ মিছিল করে ইডি দপ্তরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয় বিরোধীদের। সেই মিছিল আটকায় পুলিশ। ১৭ মার্চ প্রতিবাদে মানব বন্ধন করেন বিরোধীরা। তৃণমূল আলাদা করে ‘আদানি বিরোধিতার’ কর্মসূচি নিল। যে সময়ে এককাট্টা বিরোধীদের দেখতে চাইছে দেশ, তখনই বিরোধীদের মধ্যে ফাটলকে বড়ো করে দেখানোর চেষ্টায় কোনও খামতি রাখছিল না মমতা ব্যানার্জির দল!
মনে রাখা ভালো, এর ঠিক তিন মাস আগে ১৭ ডিসেম্বর কলকাতায় এসে মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে ‘ওয়ান টু ওয়ান’ বৈঠক করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এবং বিজেপি নেতা অমিত শাহ। নবান্নে সেই বৈঠক কেন, কী তার ফলাফল, রাজ্যের উন্নয়নে কোন কোন সিদ্ধান্ত হলো - জানানো হলো না বৈঠকের পর।
‘একাই লড়বে তৃণমূল’
একাধিক সংবাদ ওয়েবসাইটে প্রায় একই শিরোনামে প্রকাশ হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর সাংবাদিক সম্মেলনের সংবাদ প্রতিবেদন। ২ মার্চ ঘোষণা করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী, সাগরদিঘি উপনির্বাচনে বামফ্রন্ট সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থীর জয়ের পরই। উপনির্বাচনে জেতা আসন হাতছাড়া হয়েছিল তৃণমূলের। কেবল একটি উপনির্বাচন ঘিরে পুলিশ এবং প্রশাসনকে দিয়ে বিরোধী কংগ্রেস এবং বামফ্রন্টের নেতাদের হেনস্তার একাধিক ঘটনা সামনে এসেছিল। প্রতিবাদে থানা ঘেরাও করতে হয়েছিল স্থানীয় জনতাকে। তারপরও হেরে গিয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জি।
কেউ কেউ সানন্দে লিখেছিলেন ‘জোটের অঙ্কে জল ঢেলে দিলেন মমতা ব্যানার্জি।’ কারণ বিজেপি বিরোধী বৃহত্তর বোঝাপড়া করতে নারাজ তৃণমূল কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রীর সেদিনের সাংবাদিক সম্মেলনের প্রতিবেদন যে কেউ দেখে নিতে পারেন। অভিযোগ করেছিলেন যে, বাম এবং কংগ্রেস বিজেপি’র সঙ্গে হাত মিলিয়ে রয়েছে। ফলে কোনো অবস্থাতে সমঝোতা করা যাবে না। অন্তত সিপিআই(এম) যদিও স্পষ্ট করে তখনই জানিয়ে দিয়েছিল যে, এ রাজ্যে বিজেপি’র প্রধান প্রশ্রয়দাতা তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা হবে না।
সাগরদিঘি নির্বাচনে কেবল তৃণমূল কংগ্রেস হারেনি। গো-হারা হেরেছিল বিজেপি-ও। একদিকে তৃণমূল বলছে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-কে হারানোই প্রধান কর্তব্য বলে মনে করছেন দলনেত্রী। তিনিই দেশে বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ের প্রধান মুখ, এমনকী প্রধানমন্ত্রীও হতে পারেন। আর সেই তিনিই ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন বিজেপি দুই থেকে দূরের তিন নম্বরে নেমে যাওয়ায়!
এই পর্বে সংসদে বক্তৃতার জন্য রাহুল গান্ধীর খর সমালোচনাও অনেকের নজর এড়াচ্ছে না। রাহুল সমালোচনার ঊর্ধ্বে, কেউ এমন দাবি করতে পারেন না নিশ্চয়। কিন্তু বিষয় কী? আদানি কাণ্ডে যোগাযোগ নিয়ে কী প্রশ্ন তুলেছিলেন লোকসভায় একেবারে প্রধানমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে। তাঁকে মুখ খুলতে বলেছিলেন। সংবিধান অনুযায়ী সরকার বা প্রধানমন্ত্রী সহ মন্ত্রীরা তো সংসদের কাছেই দায়বদ্ধ। জবাবদিহি করারই কথা তাঁদের। অথচ রাহুলকেই ক্ষমা চাইতে হবে এমন দাবি তুলে সংসদ ভণ্ডুল করতে নেমেছিল সরকারপক্ষ, যাঁদের কাজ আসলে সংসদ চালানো।
দলীয় বৈঠকে ২০ মার্চ মমতার বক্তব্য ছিল, রাহুলই নরেন্দ্র মোদির সবচেয়ে বড়ো সম্পদ। তিনি নেতৃত্ব দিলে মোদি ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবেন। বস্তুত বিজেপি’র সুরেই কথাটা এমন যে রাহুলই মোদির সবচেয়ে বড়ো সম্পদ। এখানেই শেষ নয়। কংগ্রেস, বামপন্থীদের বাইরে রেখে বিজেডি’র সঙ্গে কথা বলতে ভুবনেশ্বরে পৌঁছে গিয়েছিলেন। ২৩ মার্চ মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকের সঙ্গে বৈঠকও করে ফেললেন মমতা। ফল কী? কিছুদিনের মধ্যে বরাবরের অবস্থান বজায় রেখে নবীন জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, তিনি বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক সমন্বয়ের অংশ হতে চান না।
প্রশ্ন হলো এই মমতা ব্যানার্জি তিন মাসের মধ্যে কেন বিরোধী বিন্যাসে যোগ দিলেন?
১৩ মে কর্ণাটকের ভোট গণনার ফল বের হলো। সরকারে আসীন বিজেপি’কে ধ্বস্ত করে জয়ী হলো কংগ্রেস। কর্ণাটকের ভোট কেবল স্কোরবোর্ডের নিরিখে বিচার করলে বোধহয় সবটা বোঝা যাবে না। হিজাব নিষিদ্ধ করার আইন কেবল নয়, একদিকে তুমুল সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ, আরেকদিকে নির্বিচার দুর্নীতির বিপজ্জনক মিশেল। প্রচারে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি নিজে। মোদির নেতৃত্বে বিজেপি এর আগেও হেরেছে। কিন্তু এই নির্বাচন দেশে উগ্র হিন্দুত্ববাদ বিরোধী চিন্তার লড়াই জুগিয়েছে। এর কিছু পরে অবস্থান বদলে ২৩ জুন মমতা নীতীশ কুমারের ডাকা পাটনা বৈঠকে যোগ দিয়েছেন। কেননা তিনি যে বিজেপি’র সহযোগী নন এটা প্রমাণের চেষ্টা করতে হচ্ছে এ রাজ্যের নির্বাচনী সমীকরণে। বিধানসভায় বিজেপি-কে ঠেকাতে তাঁর হয়ে সওয়াল করেছেন এমন অংশেও ক্ষোভ বাড়ছে।
তৃণমূল থাকলে বিজেপি’র লাভ। লাভ বিজেপি’র ভিত্তি ফ্যাসিবাদী লক্ষণসম্পন্ন আরএসএস’র। ২০১১-তে আরএসএস’র শাখা ছিল ৪৮৩টি। ২০২৩-এ ১ হাজার ৯৮৩টি। মুখ্যমন্ত্রী যত পুজো আর ইমাম ভাতার রাজনীতি করছেন ততই অস্ত্র হাতে রামনবমীর মিছিলের আগ্রাসন বাড়ছে। রুটি রুজি আর নাগরিক মর্যাদা নিয়ে অধিকারের লড়াইকে দমিয়ে রাখার কৌশলে মিল দু’পক্ষের। মিল জনপ্রতিনিধি কেনাবেচায়, গোপন নির্বাচনী বন্ডে বিপুল আয়ে, মিল সংসদীয় রীতি অমান্যে, মিল বিরোধীশূন্য রাজনীতি চালানোর কায়দায়।
তবু, বামপন্থীদের পক্ষে লড়াইয়ে নতুন অংশ যুক্ত হচ্ছেন। তৃণমূল এবং বিজেপি একে অন্যকে সুরক্ষা দিচ্ছে, এখন ধরা পড়ছে দুর্নীতির তদন্তেও, একেবারে ভরা এজলাসে।
মমতার বিজেপি যোগ ফাঁস হচ্ছে আদালতেও
২৯ আগস্ট কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসের সওয়াল জবাবের বিবরণ দেখতে পারেন। ১৮ ও ১৯ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টেই বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলির এজলাসেও এক চিত্র। বিচারপতিরা প্রশ্ন করছেন কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ইডি বা সিবিআই আধিকারিকদের - দুর্নীতির মাথাদের বাঁচানোর চেষ্টা কেন।
২০২০’র জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রাজভবনে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের বাহাত্তর ঘণ্টার মধ্যেই সারদা-রোজভ্যালি- নারদ ঘুষ কাণ্ডের তদন্তকারী আধিকারিকদের বদল করেছিল সিবিআই।
২০১৪ সালে চিটফান্ড তদন্ত শুরু হওয়ার পর এভাবে সবকটি গুরুত্বপূর্ণ তদন্তের তদন্তকারী আধিকারিকদের একসঙ্গে রদবদলের ঘটনা ছিল প্রথম। সারদা থেকে রোজভ্যালি, নারদার মতো ঘুষ কেলেঙ্কারির তদন্তের কিনারা তো দূর, জনমনে আবছা করে দেওয়া হয়েছে।
দুর্নীতি রোধ করা বিজেপি’র লক্ষ্যও নয়। লক্ষ্য হলো দুর্নীতিকে কাজে লাগিয়ে দল ভাঙানো। নিজের রাজনৈতিক ফয়দা হলে অপরাধ আড়াল করা।
ভুলে যাওয়ার উপায় নেই যে, নিয়োগ দুর্নীতি থেকে চিট ফান্ড কেলেঙ্কারিতে আদালতকে তদন্তের নির্দেশ দিতে হয়েছে। তার আগে রাস্তায় লড়াই হয়েছে, পুলিশের লাঠি পড়েছে বামপন্থীদের ওপর।
সিপিআই(এম)’র অবস্থান
২৩তম পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক কৌশলগত লাইন নির্দিষ্ট করেছে সিপিআই(এম)। বিজেপি সরকারের সময়ে সাম্প্রদায়িক-করপোরেট আঁতাত সংহত করে স্বৈরতান্ত্রিক আক্রমণ চলছে মেহনতি জনতার ওপর। সাংবিধানিক কাঠামো ধ্বংস করছে। হিন্দুরাষ্ট্রের কর্মসূচি চলছে। গণরাজের ঘোযণাকে অগ্রাহ্য করে রাজা-প্রজা সম্পর্ক ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। সংবিধানের নতুন ভবন উদ্বোধন হচ্ছে হিন্দু-রাজ অভিষেকের রীতিতে। প্রধান কাজ বিজেপি-কে জনবিচ্ছিন্ন করা, পরাস্ত করা। হাতিয়ার বাম শক্তির স্বাধীন বিকাশ ঘটিয়ে জনতাকে সমবেত করে জঙ্গি আন্দোলন গড়ে তোলা। ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির ব্যাপকতম সমাবেশ গড়া।
এ রাজ্যে যুক্ত হয়েছে বিজেপি’র সহায়ক শক্তি তৃণমূলের বিরুদ্ধেও লড়াই গড়ে তোলার দায়িত্ব। সেই লক্ষ্যেই চলছে পার্টি।