৫৮ বর্ষ ৩৬ সংখ্যা / ২৩ এপ্রিল, ২০২১ / ৯ বৈশাখ, ১৪২৮
করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার
মানুষের স্বার্থেই রাজ্যে সংযুক্ত মোর্চার সরকার গড়তে উদ্যোগ সর্বত্র
শ্যামপুকুর কেন্দ্রে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী জীবন প্রকাশ সাহার সমর্থনে প্রচার মিছিল। রয়েছেন বিমান বসু সহ নেতৃবৃন্দ।
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ করোনা মহামারী নিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং এরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছেলেখেলা করছেন। এতে ওদের লাভ হতে পারে। কিন্তু এরাজ্যের সাধারণ মানুষের কোনো লাভ হবে না। ক্ষমতায় বসার জন্য ওরা যে রাজনীতি করছেন, তাতে মানুষের কোনো সমস্যার সমাধান হবে না। রাজ্যের মানুষের স্বার্থে সংযুক্ত মোর্চার সরকার তৈরি করতে হবে। সম্প্রতি বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু নির্বাচনী প্রচার কর্মসূচিতে এই আহ্বান জানিয়েছেন। সম্প্রতি তিনি উত্তর ২৪ পরগনায় ও কলকাতায় বিভিন্ন নির্বাচনী সভায় বক্তব্য রেখেছেন। প্রসঙ্গত, রাজ্যে বামপন্থীরাই প্রথম করোনার ভয়াবহ সংক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে উপযুক্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রচার এবং বিপন্ন মানুষের পাশে থাকার কথা ঘোষণা করেছেন। সেই সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারে বড়ো বড়ো সমাবেশ ও জমায়েতের ওপর যথাসম্ভব রাশ টানার সিদ্ধান্ত নেয় সিপিআই(এম)। সেই অনুযায়ী কোভিড বিধি মেনেই সংযুক্ত মোর্চার প্রচার চলছে। এই প্রচারে সাধারণ মানুষের সমর্থন বৃদ্ধিরও স্পষ্ট আভাস মিলছে।
বিমান বসু কলকাতায় রাসবিহারী কেন্দ্রে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থীর সমর্থনে আয়োজিত এক সভায় বলেছেন, তৃণমূল এবং বিজেপি একে অপরের পরিপূরক। আরএসএস’র পরামর্শে এবং সাহায্য নিয়েই জাতীয় কংগ্রেস ভেঙে তৃণমূল প্রতিষ্ঠা করেন মমতা ব্যানার্জি। বাংলার রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা পাবার জন্যই নিজেদের সূতিকাগারে তৃণমূলের জন্ম দেয় সঙ্ঘ পরিবার। বর্তমানে বিজেপি’র অর্ধেকের বেশি প্রার্থী তৃণমূল থেকে এসেছে। এটি কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়।
তিনি বলেছেন, বিজেপি’র সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে নরম সাম্প্রদায়িকতা ব্যবহার করছে তৃণমূল। কিন্তু ইতিহাসের শিক্ষা, মন্ত্র উচ্চারণ করে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই জেতা সম্ভব নয়। সাম্প্রদায়িকতাকে একমাত্র হারাতে পারে মানুষে মানুষের ঐক্য, সম্প্রীতির অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি। ধর্ম যার যার ব্যক্তিগত যাপনের বিষয়। সেটি কখনই দেশের রাজনীতির মূল চালিকা শক্তি হতে পারে না। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সমাজে যে পরিমাণ সাম্প্রদায়িক বিষ ঢালা হচ্ছে তা থেকে যাবে। মানুষে মানুষে যত অবিশ্বাস বাড়বে, ততই সাধারণ মানুষের মধ্যে ঐক্য বিনষ্ট হবে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে রুটিরুজির লড়াই। সঙ্ঘ পরিবার সেটাই চাইছে। এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্যই গঠিত হয়েছে সংযুক্ত মোর্চা। তিনি বলেছেন, গণতন্ত্রের স্বার্থে, সংবিধান রক্ষা করতে, সব ধর্মের, ভাষার, বর্ণের, জাতের মানুষের ঐক্য, সংহতি, সম্প্রীতি গড়ে তুলতে অবশিষ্ট পর্বগুলিতে দিকে দিকে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থীদের জয়ী করুন।
সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক সূর্য মিশ্র বলেছেন, ভোটে জেতার জন্য প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীর তরজায় কোভিড মোকাবিলার পদক্ষেপগুলি পুরোপুরি অবহেলিত হচ্ছে রাজ্য ও কেন্দ্রের সরকারের হাতে। ২০ এপ্রিল সিপিআই(এম) ওয়েস্ট বেঙ্গলকে ডিজিটাল মাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে একথা বলেছেন তিনি। কোভিড পরিস্থিতির জন্য শারীরিক দূরত্ববিধি ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে যেভাবে নির্বাচনী প্রচারের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল সেই লক্ষ্যেই ডিজিটাল মাধ্যমে এই সাক্ষাৎকার দিয়েছেন সূর্য মিশ্র। তিনি বর্তমান পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে আরও বলেছেন, মহামারীর মধ্যেও এই নির্বাচনে মানুষকে এমন একটি দায়বদ্ধ সরকার নির্বাচিত করতে হবে, যাতে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের বিপর্যয়গুলি রোধ করা যায়।
সূর্য মিশ্র বলেছেন, বিশেষজ্ঞরা আগে থেকে বারে বারে সতর্ক করেছিলেন, কিন্তু কেন্দ্র ও রাজ্যের সরকার মহামারীর এই দ্বিতীয় ঢেউ সম্পর্কে প্রস্তুত ছিলেন না। নির্বাচনের সময় প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী যে কদর্য ভাষায় অর্থহীন তরজা করে যাচ্ছেন তাতে রাজ্যের মানুষের স্বাস্থ্য সমস্যার কোনো সমাধান হবে না। প্রধানমন্ত্রী বারে বারে হেলিকপ্টারে এসে নিজের দলকে অক্সিজেন দেবার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কোভিড আক্রান্ত সারা দেশের মানুষ অক্সিজেন পাচ্ছেন না। ভ্যাকসিন, ওষুধ সব কালোবাজারিদের হাতে চলে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার হাত গুটিয়ে নিয়ে সব বাজারের হাতে ছেড়ে দিচ্ছে। দুই শাসকদল ভিত্তিহীন কিছু দাবি, কিছু অসত্য কথা প্রচার করছে, এতে রাজনৈতিক কোনো সারবস্তু নেই।
বালিগঞ্জ কেন্দ্রে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী ফুয়াদ হালিমের সমর্থনে প্রচার মিছিল।
মহামারীর মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ একটি সরকার গঠনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে সূর্য মিশ্র এই সাক্ষাৎকারে বলেছেন, মহামারী পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে এমন একটি সরকার গঠনের জন্যই নির্বাচন দরকার। মানুষকে বিচার করে রায় দেওয়ার সেই সুযোগ দিতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি বাদ দিয়ে সরকার গঠন বা সরকার গঠনকে বাদ দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি এমন হয় না। এটা নৈরাজ্যের কথা। সরকার তো চায় ব্রিটিশ আমলের আইন দেখিয়ে মানুষ গৃহবন্দি থাকুক, মুখ বুজে থাকুক। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই এই নির্বাচনে দায়বদ্ধ একটি সরকার গঠন করতে হবে। সংগ্রাম করোনার বিরুদ্ধে এবং সংগ্রাম সরকারের সেই নীতির বিরুদ্ধে, যে নীতির কারণে এই মহামারী বিপজ্জনক হয়ে দেখা দিয়েছে।
গত লকডাউনের সময়ে বিপন্ন মানুষদের পাশে যেভাবে নানাভাবে সাহায্যের হাত প্রসারিত করেছিলেন বামপন্থীরা, সেই ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সূর্য মিশ্র বলেছেন, যেখানে ভোটগ্রহণ হয়ে গেছে, সেখানে বামপন্থী কর্মীরা ইতিমধ্যেই নেমে গেছেন, যেখানে নির্বাচনী প্রচার হচ্ছে, সেখানেও সবাই যাতে দূরত্ববিধি মেনে, মাস্ক পরে থাকেন তার জন্য প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু সব কিছু তো এভাবে বামপন্থী কর্মীরা করতে পারবেন না, সরকারকে তার কর্তব্য পালন করতে হবে। কেন্দ্র বা রাজ্যের সরকার তা করছে না।
এই পরিস্থিতিতে সংযুক্ত মোর্চার সরকার গঠিত হলে বিকল্প রূপায়ণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, জনস্বাস্থ্য থেকে শুরু করে রোজগারের ক্ষেত্রে যে বিকল্পের কথা আমরা বলেছি, সেগুলি সংযুক্ত মোর্চার সরকার রূপায়ণ করবে। টিকা বাজারের উপর ছাড়া চলবে না, কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যবস্থাপনায় সর্বজনীন করতে হবে। কাজ হারানো মানুষদের রোজগারের ব্যবস্থা করতে হবে। মানুষের প্রতি অবহেলা, নিমর্মতার বিরুদ্ধে আমরা রাস্তায় ছিলাম, সংগ্রামে ছিলাম। সংযুক্ত মোর্চার সরকার হলেও সেই সংগ্রামের কোনো বিকল্প নেই। মানুষের সংগ্রাম কারও কাছে বন্ধক রাখা হবে না। সরকারের কর্মসূচিও হবে, সংগ্রামও চলবে।
সিপিআই(এম)’র পলিট ব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম ২১ এপ্রিল এক সাংবাদিক সম্মেলনে কোভিড মোকাবিলায় কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের ব্যর্থতায় দুই সরকারকে অপদার্থ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী আর মুখ্যমন্ত্রী যত বিজ্ঞাপনী প্রচার করেছিলেন সবই যে ভুয়ো তা এখন স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। তিনি বলেছেন, লকডাউনের সময় থেকেই বামপন্থী কর্মীরা মানুষের পাশে ছিলেন। এখনও যেখানেই ভোটগ্রহণ শেষ হয়ে গেছে সেখানেই বামপন্থী কর্মীরা আবার মাস্ক, স্যানিটাইজার নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। তিনি জানান, সরকারের কাছে আমাদের দাবি - বিনামূল্যে রেশন দিতে হবে, কাজ হারানো মানুষকে আর্থিক সাহায্য দিতে হবে, রোগী পরীক্ষার ব্যবস্থা সহ চিকিৎসা ও টিকাকরণের ব্যবস্থা করতে হবে। মানুষ তো এজন্যই বলছেন - যাদের দরকারে পাই, তাদের সরকারে চাই।
সম্প্রতি কলকাতায় সংযুক্ত মোর্চার নির্বাচনী সভায় প্রবীণ কংগ্রেস নেতা ও সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেছেন, বন্যা, খরা, অতিমারী, মহামারী সহ সমস্ত দুর্যোগকে সাম্প্রদায়িক রঙে রাঙায় বিজেপি। ধর্মের নামে সারা দেশের যুব সমাজকে ভুল পথে চালিত করছে বিজেপি। একইভাবে সিন্ডিকেট বাহিনী, কাটমানি সংস্কৃতি আমদানি করে রাজ্যের যুব সমাজের সর্বনাশ করছে তৃণমূল সরকার। রাজ্যে কর্মসংস্থানের পরিবেশ ফিরিয়ে এনে এই দুই সরকারের হাত থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে পারে কেবলমাত্র সংযুক্ত মোর্চা।
উত্তর ২৪ পরগনার সাম্প্রতিক কয়েকটি জনসভায় আইএসএফ নেতা আব্বাস সিদ্দিকি বলেছেন, বিজেপি আর তৃণমূলকে আলাদা করে দেখবেন না। আজ যারা জোড়াফুলে একটু সময় গড়ালে দেখবেন তারা পদ্মফুলে। জোড়াফুলের কারখানায় পদ্মফুলের চাষ হচ্ছে। এই কারখানায় তালা মেরে দিন, দেখবেন পদ্ম ফুটছে না। তিনি বলেন, ৩৪ বছরে বামফ্রন্ট সরকার পদ্ম ফুটতে দেয়নি, আমরা শান্তিতে ছিলাম।