৫৮ বর্ষ ৩৬ সংখ্যা / ২৩ এপ্রিল, ২০২১ / ৯ বৈশাখ, ১৪২৮
কুম্ভ মেলাঃ ধর্ম ও ধর্মীয় উন্মাদনা
পর্যবেক্ষক
ধর্ম ব্যক্তিগত বিশ্বাসের অংশ বিশেষ। ধর্মীয় উন্মাদনা এক ঘৃণ্য রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের হাতিয়ার। এখানে বিনা মন্তব্যে ১ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া কুম্ভ মেলার কিছু ঘটনা তুলে ধরা হলো। তার আগে দেশের প্রধানমন্ত্রীর আখড়া মহামণ্ডলেশ্বরের কাছে আবেদনের কী হাল তা দেখা দরকার। প্রধানমন্ত্রীর আবেদনে জুনা আখড়ার আওয়াধেশানন্দ গিরি শেষ শাহি স্নানকে বন্ধ না করে প্রতিনিধিত্বমূলক করতে বললেন। ইতিমধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে নিরওয়ানি আখড়ার মহামণ্ডলেশ্বর কপিলদেব দাসের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু নিরঞ্জনি আখড়া সহ আরও কয়েকটি আখড়া এই আবেদন অস্বীকার করে। মোট ১৩টি আখড়া এই শাহি স্নানে অংশগ্রহণ করে। আসলে ধর্মান্ধতার ব্যবহার রাষ্ট্রীয় মদতে হলে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। অসংখ্য উদাহরণের মধ্যে মাত্র কয়েকটি এখানে তুলে ধরা হলো।
১। উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী তিরথসিং রাওয়াত বলেন, ‘কোভিড -১৯-এর কারণে কাউকে কুম্ভ মেলায় যোগদান করা থেকে থামানো হবে না।’ এখন কর্মকর্তারা বলছেন যে, মহামারীর নির্দেশিকাগুলি কার্যকর করা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। কেবল ১০ থেকে ১৪ এপ্রিলের মধ্যে, হরিদ্বার কুম্ভ মেলার ১৭০১ জন সংক্রমিত হয়েছেন। যারা গঙ্গায় ডুব দিয়ে ঘরে ফিরে গেছে তাদের এই হিসাবের মধ্যে ধরা যায়নি। মেলা ১ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছিল এবং ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত চলার কথা।
২। এক বছর আগের কথা (৮ এপ্রিল, ২০২০) কর্ণাটকে ভারতীয় জনতা পার্টির বিধায়ক এমপি রেণুকাচার্য বুধবার তাবলিগি জামায়াতের সদস্যদের আক্রমণ করে বলেন, দেশে কোভিড-১৯ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ওই ধর্মের অংশগ্রহণকারীদের গুলি করে হত্যা করা উচিত। গত মার্চ ২০২০-তে দিল্লিতে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছিল এবং পরে এটি সংক্রমণের হটস্পট হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। এই ধর্মীয় সমাবেশে কয়েক হাজার ভারতীয় এবং শতাধিক বিদেশি নাগরিক অংশগ্রহণ করে। স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছিল যে, ধর্মীয় সমাবেশটি ভারতে সংক্রমণের হার ৪.১ থেকে ৭.৪-এ নিয়ে যায়। একারণে কয়েকজন দেশি-বিদেশি নাগরিককে জেলবন্দি হতে হয়।
৩। কুম্ভ মেলার জন্য বিপুল জনসমাগমের বিষয়ে জানতে চাইলে বিজেপি নেতা এবং বিধায়ক সুনীল ভারালা বলেন যে, বিশাল উদ্যাপনটি কোভিডকে বাধা দেওয়ার জন্য এবং ‘‘গঙ্গা মা’’ ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন।তিনি কুম্ভমেলায় যান এবং পরে তিনি করোনায় আক্রান্তও হন। তাঁর বক্তব্য ছিল, “কুম্ভ কি আস্থা করোনা ভাইরাস সে বহুত ভারি হ্যায়” - এনডিটিভি’কে দেওয়া সাক্ষাৎকার।
৪। পশ্চিমবঙ্গের ৪৮ বছর বয়সী বাবা প্রকাশ পুরী মহারাজ সদ্য শাহি স্নান শেষ করে ভেজা অবস্থায় বলেন যে, “আমি ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর শুনলাম, যিনি বলেন কিছুই হবে না। ঈশ্বর আমাদের কিছুই হতে দেবেন না। আমার পূর্ণ বিশ্বাস আছে।’’ কয়েক মুহূর্ত আগে, তাঁর মতো হাজার হাজার মানুষ নদীর তীরে একত্রে জড়ো হয়ে সবেমাত্র স্নান শেষ করে উঠেছেন। তখন ওদের নিজেদের মধ্যে এক ইঞ্চি দূরত্বও ছিল না। শাহি স্নানের সময় মাইকে সরকারি ঘোষণায় বার বার দূরত্ব বজায় রাখা এবং মাস্ক পরা ইত্যাদির ঘোষণা চলছিল। সেদিন ছিল তৃতীয় শাহি স্নান এবং সরকারি তথ্য বলছে কেবল সেদিন ১৩,৫১,৬৩১ জন অংশগ্রহণ করেন।
ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়ানোর কৌশল পুরোপুরি পরিকল্পিত। বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদকে উপেক্ষা করে দেশজুড়ে মানুষকে মহামারীর করালগ্রাসের মধ্যে কীভাবে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে তা পাঠকই ঠিক করবেন। আমাদের ধর্মীয় আচরণ ও ধর্মীয় উন্মাদনা তৈরির মধ্যে পার্থক্যও বুঝে নিতে হবে।