৫৮ বর্ষ ৩৬ সংখ্যা / ২৩ এপ্রিল, ২০২১ / ৯ বৈশাখ, ১৪২৮
নির্বাচকদের দরবারে - শেষ পর্ব
বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়
ঘরপোড়া গোরু যেমন সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়, ২০ এপ্রিল, মঙ্গলবার সন্ধেয় সরকারি ট্যুইট দেখে ঠিক সেভাবেই ঢোঁক গিলেছিলেন অনেকেই। অজান্তেই স্বগতোক্তি করে ফেলেছিলেন কেউ কেউ - ‘আবার’? মানুষের স্মৃতি যেমন দুর্বল তেমনই কোনো কোনো সময় স্মৃতি বড়ো ভয়ঙ্কর। তাই রাত ৮.১৫-তে জাতির উদ্দেশ্য ‘তিনি’ ভাষণ দেবেন শুনেই থমকে গেছিলেন অনেকে। ২০১৬-র ৮ নভেম্বর রাত ৮.১৫ কিংবা ২০২০-র ২৪ মার্চ রাত ৮টা - নোটবাতিল, লকডাউন - সেসব স্মৃতি তো ভারতবাসীর জন্যে আজও দগদগে। তবে কি আবারও সেরকম কিছু? না। সেরকম কিছু হয়নি অবশ্য। ১৯ মিনিটের ভাষণে ভয়ঙ্কর করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের দায় এড়িয়ে যাওয়া ছাড়া বিশেষ কিছু সেখানে ছিলো না। ইদানীং ‘মন কী বাত’ সম্প্রচারিত হলেই ইউটিউবে যেমন ডিসলাইকের বন্যা বয়ে যায়, এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ৪,৩০০ মানুষ যে অনুষ্ঠান ‘লাইক’ করেছেন সেই অনুষ্ঠান ‘ডিসলাইক’ করেছেন ৪ হাজার মানুষ। শুকনো কথায় চিঁড়ে আর ভিজছে না। মন্দির, মসজিদ, হিন্দু ,মুসলিম, আত্মনির্ভর, সোনার বঙ্গাল, দিদি ও দিদি - কোনো কিছু দিয়েই একটা বড়ো অংশের মানুষকে আর ভুল বোঝানো যাচ্ছে না।
করোনা নাকি প্রায় জয় করে ফেলেছিলো ভারত! থালা বাজিয়ে, মোমবাতি জ্বালিয়ে, ভাবিজি পাঁপড় খেয়ে, গায়ে গোবর মেখে, রামদেবের করোনিল খেয়েই নাকি করোনা দূর হয়ে যাবে! প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পারিষদবর্গ থেকে শুরু করে আট আনা, চার আনা, দশ পয়সা, পাঁচ পয়সাদের দাবি ছিলো সেরকমই। গত বছর করোনাকে সামনে ঢাল রেখে একের পর এক ‘বৈপ্লবিক’ পদক্ষেপ নিয়ে দেশকে ‘আত্মনির্ভর’ করার পথে এগিয়ে দিয়েছে দেশের সরকার। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণ, শ্রম আইনের বারোটা বাজিয়ে দেওয়া, বিতর্কিত কৃষি আইনের প্রবর্তন, ব্যাঙ্ক ব্যবস্থা তছনছ করে দেওয়া, বিমা ক্ষেত্রে বিদেশিদের জন্য দরজা হাট করে খুলে দেওয়া, আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি, পেট্রোল ডিজেলের দাম সেঞ্চুরির দোরগোড়ায় পৌঁছে যাওয়া, শিক্ষা-স্বাস্থ্য লাটে তুলে দেওয়া, পি এম কেয়ারস ফান্ডে বিপুল পরিমাণে টাকা জমা পড়া (যার কোনো হিসেব সরকার দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে) - সবই হয়েছে একতরফাভাবে। সংসদে বিরোধীদের মতামতের তোয়াক্কা না করেই।
যদিও করোনা কিন্তু যায়নি। বরং আরও শক্তি সঞ্চয় করে বিপুল বেগে ফিরে এসেছে। ২২ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার সকালে কেন্দ্রীয় সরকার প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুসারে দেশে শেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ৩ লক্ষের বেশি মানুষ। শেষ ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার মানুষের। রাজ্যে রাজ্যে অক্সিজেনের আকাল। দেশের বহু হাসপাতাল অক্সিজেন শূন্য। অক্সিজেনের অভাবে মানুষের মৃত্যুও ঘটেছে একাধিক জায়গায়। ঘটা করে টিকাকরণ উৎসবের কথা ঘোষণা করলেও অধিকাংশ রাজ্যে পর্যাপ্ত টিকার হদিশ নেই। আর নেই প্রধানমন্ত্রীর ১৯ মিনিটের ভাষণে এসব নিয়ে একটা শব্দও। ২০ এপ্রিল রাতে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে জানিয়েছিলেন - “শেষ কয়েকদিনে আমরা যে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি তাতে পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়েছে।” আর বুধবার সকালে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের পরিসংখ্যানে উন্নতির ছবি ফুটে বেরিয়েছে। যেদিন সংক্রমিত হয়েছেন ২ লক্ষ ৯৫ হাজার ৪১ জন। মঙ্গলবার এই সংখ্যাটা ছিল ২.৫৯ লক্ষ। বৃহস্পতিবারের পরিসংখ্যান অনুসারে শেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ৩ লক্ষ ১৪ হাজার ৮৩৫ জন, গোটা বিশ্বের মধ্যে সর্বাধিক দৈনিক সংক্রমণ এটাই। এই নিয়ে দেশে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১ কোটি ৫৯ লক্ষ ৩০ হাজার ৯৬৫। ২৪ ঘ্ণ্টায় দেশে মারা গেছেন ২ হাজার ১০৪ জন, এই প্রথম একদিনে দেশে এতজনের মৃত্যু হলো কোভিড সংক্রমণে। গতকাল মৃত্যু হয়েছিলো ২ হাজার ২৩ জনের। এখনও পর্যন্ত দেশে কোভিডে মোট মৃত্যু ১ লক্ষ ৮৪ হাজার ৬৫৭ জনের। ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ১.৩৪ লক্ষ বেড়ে দেশে মোট সক্রিয় কেসের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২ লক্ষ ৯১ হাজার ৪২৮। পরিস্থিতির উন্নতি বোধহয় একেই বলে।
তবে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে কিছু না বললেও তার আগেই দেশবাসীকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল আগামী ১ মে থেকে ১৮ বছর বয়সীদেরও করোনা ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। সঙ্গে ফুটনোট হিসেবে বলা ছিল - এবার থেকে বাজারেও পাওয়া যাবে করোনা ভ্যাকসিন। বিষয়টা নিশ্চই কাকতালীয়। তাই ঠিক এর পরদিন ২১ তারিখ দেশের বৃহত্তম ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক সংস্থা সিরাম ইন্সটিটিউট অফ ইন্ডিয়া জানিয়ে দিয়েছে - তারা রাজ্যগুলিকে প্রতি ডোজ কোভিশিল্ড টিকা বিক্রি করবে ৪০০ টাকায়। বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে প্রতি ডোজ এই টিকা কিনতে হবে ৬০০ টাকায়। সিরামের কর্ণধার আদর পুনাওয়ালা জানিয়ে দিয়েছেন - কেন্দ্রকে আপাতত ১৫০ টাকায় ভ্যাকসিন বিক্রি করলেও ১ মে থেকে এই ভ্যাকসিন ৪০০ টাকা করেই কিনতে হবে কেন্দ্রকে। কারণ ১৫০ টাকায় ভ্যাকসিন বিক্রি করে ক্ষতির মুখে পড়ছে সংস্থা (সিএনবিসি, ২১ এপ্রিল)। সিরাম সংস্থা এটা জানাতেও ভোলেনি যে - বিদেশে কোভিশিল্ডের যা দাম তার থেকে অনেক কম দামে ভারতে তা পাওয়া যাচ্ছে। বিদেশে প্রতি ডোজ টিকার দাম ৭৫০ থেকে ১,৫০০ টাকা। ভারতবাসীর এই সৌভাগ্যে ঈর্ষা না করে পারা যায়? ভাগ্যিস এরকম একটা সরকার ছিল, এরকম একটা সংস্থা ছিলো। যারা ক্রমে ক্রমেই দেশবাসীকে আত্মনির্ভর করে তুলছে। স্বাবলম্বী হবার দিকে এগিয়ে দিচ্ছে!
করোনা যখন পেঁয়াজের খোসা ছাড়ানোর মতো একটা একটা করে খোসা ছাড়িয়ে সরকারের উদাসীনতাকে ক্রমশ উলঙ্গ করে দিচ্ছে, দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভয়াবহ দশা মানুষের সামনে এনে দিচ্ছে, তখনই সামনে এসেছে আরও এক তথ্য। যা প্রমাণ করে দিয়েছে যে, বর্তমান সরকার আদৌ করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় কোনো পরিকল্পনা করেনি। অথবা বলা যেতে পারে তিলে তিলে দেশ বেচার তালে, ‘সোনার বঙ্গাল’ গড়ার তালে বিপর্যয়ের মুখে দেশের আম জনতার কী হাল হতে পারে তাতে গুরুত্ব দেবার সময় পায়নি।
অক্সিজেন বিষয়টা নিয়ে আমরা সাধারণভাবে খুব একটা মাথা ঘামাইনা। আসলে চিকিৎসা সংক্রান্ত ক্ষেত্রে বাড়ির কেউ খুব একটা অসুস্থ না হলে আমাদের অক্সিজেনের প্রয়োজন পড়ে না। অক্সিজেনের কোন্টা শিল্প উৎপাদনে কাজে লাগে আর কোন্টা চিকিৎসায় - আমরা অধিকাংশই জানিনা। জানার সেভাবে প্রয়োজন পড়েনা বলেই হয়তো। ঠিক যেভাবে অক্সিজেনের আমদানি রপ্তানি নিয়েও আমরা মাথা ঘামাই না। কিন্তু অক্সিজেন রফতানি নিয়ে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের যে পরিসংখ্যান সামনে এসেছে তাতে এই সরকারের অকর্মণ্যতা আরও স্পষ্ট হয়েছে। পরিসংখ্যান অনুসারে এপ্রিল ২০২০ থেকে জানুয়ারি ২০২১-এর মধ্যে ভারত বিভিন্ন দেশে ৯,৩০১ মেট্রিক টন অক্সিজেন রপ্তানি করেছে। ২০১৯-২০ আর্থিক বছরে এই পরিমাণ ছিলো ৪,৫০২ মেট্রিক টন। জানুয়ারি ২০২০ -তে ভারত অক্সিজেন রপ্তানি করেছিলো ৩৫২ মেট্রিক টন। যেখানে ২০২১-এর জানুয়ারিতে অক্সিজেন রপ্তানি বেড়েছে ৭৩৪ শতাংশ। একইভাবে ডিসেম্বর ২০২০-তে ভারত অক্সিজেন রপ্তানি করেছে ২,১৯৩ মেট্রিক টন। যেখানে ডিসেম্বর ২০১৯-এ ভারত রপ্তানি করেছিলো ৫৩৮ মেট্রিক টন। এই ঘটনা সরকারের উদাসীনতা, পরিকল্পনাহীনতা নাকি অন্যকিছু তা বিশ্লেষণ করার জন্য বিশেষজ্ঞরা আছেন। তবে হ্যাঁ। এই সময় সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন মানুষের হেঁশেলে কীসের মাংস আছে তাই দেখতে উঁকি দেওয়া মানুষজনের পছন্দের সরকারের মাননীয় মন্ত্রী। যিনি বলে ফেলেছেন - রাজ্যগুলিকে অক্সিজেনের চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। রাজ্য সরকারকেই তা নজরদারি করতে হবে। যে মন্তব্য নিয়ে ঝড় বয়ে গেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। নেটিজেনদের প্রশ্ন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কি তবে শ্বাস কম নিতে বলছেন? কারও প্রশ্ন, রোগী কতটা অক্সিজেন নেবেন, সেটাও কি মন্ত্রীজি ঠিক করবেন? আর কংগ্রেসের দিগ্বিজয় সিং সরাসরি আক্রমণের পথে গিয়ে বলেছেন, ‘হাউ স্টুপিড পীযূষজি! প্রয়োজনের উপরে নির্ভর করে অক্সিজেনের চাহিদা। সেটা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ হবে? কেন্দ্র জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার কোনও পরিকল্পনাই করে উঠতে পারেনি।’ হ্যাঁ। এই সময়েই রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে, অক্সিজেন সঙ্কট নিয়ে জরুরি আলোচনা করতে চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে চেয়েছিলেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে তাঁকে জানানো হয়, তিনি পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত আছেন। পরে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেশের ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতি অথবা পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে ক্ষমতা দখল - কোনটা বেশি জরুরি তা আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়।
সীতারাম ইয়েচুরি সরাসরি আক্রমণে সবটাই বলে দিয়েছেন। গত ১৮ এপ্রিল তিনি বলেন - উনি প্রধানমন্ত্রী কোথায়? উনি তো কেবলই দলের প্রচারক। দেশে করোনা পরিস্থিতি মহামারীর আকার ধারণ করেছে। মহারাষ্ট্রে প্রয়োজনীয় ওষুধ, অক্সিজেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে দরবার করেও ব্যবস্থা করা যায়নি। তিনি ব্যস্ত বাংলার ভোট প্রচারে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছেন করোনায়। আর তিনি জনসমাবেশে ভিড় বাড়িয়ে সংক্রমণ বাড়াতে সাহায্য করছেন। নরেন্দ্র মোদী একজন সংকীর্ণমনা দলীয় প্রচারক। কোনোভাবেই তিনি প্রধানমন্ত্রী নন।
এ তো গেল করোনার কথা। রাজ্যে এই মুহূর্তে নির্বাচন চলছে। আজ ২২ এপ্রিল ষষ্ঠ দফার ভোট হয়ে যাবার পরেও আরও দু’দফার ভোট বাকি। আগামী ২৬ ও ২৯ এপ্রিল। দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে সিপিআই(এম), কংগ্রেস ইতিমধ্যেই বড়ো নির্বাচনী জনসমাবেশ বাতিল করেছে। তবে আকাশে এখনও হেলিকপ্টার উড়ছে। কমিশন যদিও অনেক কিছুই বলেছে নির্বাচনী প্রচার নিয়ে, তবে আজ নির্বাচনের দিনেও রাজ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর ৩টে, বাবুলাল মারান্ডি ও শাহনওয়াজ হুসেনের ২টো, দিলীপ ঘোষের ৪টে এবং শুভেন্দু অধিকারীর ৩টে নির্বাচনী প্রচারাভিযান আছে। সেখানে করোনা বিধি মানা হচ্ছে বা হচ্ছেনা দেখার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। আপনারাও বিজেপি’র দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেওয়া মিডিয়ার দিকে একটু চোখ রাখলেই সবটা দেখে নিতে পারবেন।
এই প্রসঙ্গে সূর্যকান্ত মিশ্র সম্প্রতি বলেছেন - করোনার এই মহামারীর সময় হেলিকপ্টারে উড়ে উড়ে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে বিজেপি। অথচ সাধারণ মানুষের পাশে থাকার সময়টুকুও তাদের নেই। হাসপাতালে করোনা রোগীর জন্য পর্যাপ্ত বেড নেই, অক্সিজেনের ব্যবস্থা নেই। সরকারি কাজ অবহেলা করে তৃণমূল এবং বিজেপি’র নেতারা বাংলায় সরকার গড়ার অপচেষ্টা করছে। সেই অপচেষ্টার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে আমজনতাকেই।
একটু পেছনে ফিরে যাওয়া যেতেই পারে। আজ থেকে প্রায় ১০১-০২ বছর আগে ১৯১৮-১৯ সালে বিশ্বজুড়ে এমনই এক মহামারী দেখা দিয়েছিল। ইনফ্লুয়েঞ্জা প্যান্ডেমিক নামক সেই অসুখ প্রচারিত হয়েছিলো ‘স্প্যানিশ ফ্লু’ নামে। যদিও তার সঙ্গে স্পেনের কোনো সম্পর্ক ছিলো না। এই মহামারীতে বিশ্বজুড়ে মৃত্যু হয়েছিল ৫০ থেকে ১০০ মিলিয়ন মানুষের। তথ্য বলে এই মহামারী ছড়িয়ে পড়ার বড়ো কারণ ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। ভারতে মৃত্যু হয়েছিল আনুমানিক দু’কোটি মানুষের। আর আজ যে মানুষটির জন্মদিন, তিনি সেদিন প্রথম এই মহামারী আটকাতে শান্তিচুক্তির কথা বলেছিলেন। যদিও ওইসময় লেনিনের সেই আবেদনে গুরুত্ব দেয়নি ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, আমেরিকার মতো শক্তিধর রাষ্ট্র, রাষ্ট্রনায়করা। বাকিটা আমরা জানি। তবে এইসময়ের পরেই তিনি যে বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছিলেন তা ছিলো জনস্বাস্থ্য। ১৯২০ সালে রাশিয়াতে প্রথম কেন্দ্রীয়ভাবে জনস্বাস্থ্য প্রকল্প শুরু হয়েছিলো লেনিনের উদ্যোগেই।
ইতিহাস যেমন ফিরে ফিরে আসে তেমনই ইতিহাস অনেক কিছুই মনে করিয়ে দেয়। তাই ১০০ বছর আগের এবং পরের ঘটনায় কী অদ্ভুত মিল। হয়তো এখন কোনো প্রত্যক্ষ বিশ্বযুদ্ধ নেই, পরোক্ষ যুদ্ধ তো হয়ে চলেছে প্রতিটি মুহূর্তে, বিশ্বের প্রতিটি কোণে। এই মুহূর্তে পৃথিবীতে এরকম বহু দেশ আছে যাদের স্বাস্থ্য বাজেটের তুলনায় প্রতিরক্ষা খাতে খরচ বেশি। আর ১০০ বছরের বেশি সময়ের ঐতিহ্য মেনে ভারতেও এই মুহূর্তে সাধারণ মানুষের দাবিতে সবথেকে বেশি সরব বামপন্থীরাই। গত একবছরের মহামারীজনিত পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের পাশে সবার আগে ছুটে গেছে বামপন্থীরাই।
নির্বাচন যেহেতু শেষ পর্বে পৌঁছেছে তাই নির্বাচকদের দরবারে পর্বের এটাই শেষ। আজকের পরেও এখনও দুটো পর্ব বাকি। বাকি আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আসনে ভোট। আরও একবার তাই বুঝে নেওয়া দরকার - মানুষের হাল ফেরাতে হলে, দেশের হাল ফেরাতে হলে - লাল ফেরাতেই হবে। সেটাই হোক একমাত্র লক্ষ্য।