৬০ বর্ষ ১৯ সংখ্যা / ২৩ ডিসেম্বর, ২০২২ / ৭ পৌষ, ১৪২৯
আবাস যোজনায় সামনে আসছে পরতে পরতে দুর্নীতি
আবাস যোজনায় দুর্নীতির প্রতিবাদে পুরুলিয়ার আড়শায় গ্রামবাসীদের পথ অবরোধ।
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ আবাস যোজনায় বেলাগাম দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদে বেসামাল তৃণমূল কংগ্রেস। গরিবের জন্য বরাদ্দ বাড়ি পেতে সঠিক তালিকা তৈরি মানুষের দাবি। তা সঠিক রুপায়ণের দাবিতে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় নজরদারির দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন মানুষ। স্বজন পোষণ আর তৃণমূলীদের পাইয়ে দেবার ফিকির দেখলেই প্রকৃত হকদার প্রতিবাদী গ্রামবাসী পৌঁছে যাচ্ছেন সেখানে। তাই উত্তর থেকে দক্ষিণের জেলাগুলিতে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ ঘেরাও আর জবাবদিহির চাপ সামলাতে পারছে না রাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে থাকা মমতা ব্যানার্জির দুর্নীতিতে অভ্যস্ত ভাইয়েরা। তৃণমূলের লেঠেল বাহিনীর মতো আচরণ করতে অভ্যস্ত পুলিশ প্রশাসন এই বিক্ষোভ সামাল দিতে পারছে না। পুলিশের রক্তচোখকে ভয় না পেয়ে পঞ্চায়েত দপ্তর থেকে জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে প্রতিবাদ ডেপুটেশন সংগঠিত করছেন গরিব মানুষ। ত্রুটি না শোধরালে আগামীদিনে অনির্দিষ্টকালের জন্য ঘেরাও হবে পঞ্চায়েত সহ বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তর - হুশিয়ারি দিচ্ছে ত্রুটিহীন তালিকার দাবিতে সোচ্চার গ্রাম বাংলা।
কী চলছে মমতা ব্যানার্জির রাজত্বে পঞ্চায়েতগুলিতে? গ্রামের দুর্নীতিবাজ এবং দুষ্কৃতী তৃণমূল কর্মীরা ওপরতলার দুর্নীতি দেখে লুটেপুটে নিতে এখন মরিয়া। তারা এখন আর নেতৃত্বের পরোয়া করছে না এটাও স্পষ্ট। পশ্চিমবাংলার উত্তর থেকে দক্ষিণ চুরি-দুর্নীতির স্টাইল একই। কয়েকটি ঘটনার দিকে চোখ রাখলেই তা স্পষ্ট হচ্ছে।
কী চলছে আবাস যোজনার তালিকা প্রস্তুতি নিয়ে? কাঁচা দেওয়াল, জীর্ণ টিনের বেড়া দেওয়া ঘরের মাথায় কোনরকমের টালির ছাউনিওয়ালা কুটিরের বাসিন্দা দিনমজুরের নাম আবাস যোজনার ঘরের তালিকায় নেই। অথচ পাকা বাড়ি আছে এমন তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের নাম ঢুকে গেছে পঞ্চায়েতের সার্ভের তালিকায়। কোথায় ঘটেছে এমনটা? উত্তর হলো, কোথায় নয়? উত্তর দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর থেকে অনুব্রত, লালন শেখের রামপুরহাট, উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গার নুরনগরে, হাওড়ার উলুবেড়িয়ায়, রায়গঞ্জের ইটাহারে - এক কথায় সর্বত্র। আর যেখানেই দুর্নীতি হচ্ছে সেখানেই ছুটে যাচ্ছেন বামফ্রন্ট সহ সিপিআই(এম) নেতৃত্ব। শুরু হয়ে যাচ্ছে চট জলদি তীব্র প্রতিবাদ। পঞ্চায়েত থেকে প্রশাসনিক দফতরের সামনে বৈঠকি সভা, জমায়েত থেকে বিক্ষোভ অবস্থান চলছে। ক্ষোভে ফুটতে থাকা মানুষ নিজে সংগঠিত হচ্ছেন, অন্যদের নিয়ে সংগঠিত করছেন লাল ঝান্ডার নিচে।
গত পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণমূলের নেতারা গ্রামে গ্রামে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যাদের কাঁচা বাড়ি বা ঘর করার সামর্থ্য নেই তারা কেউ বাদ যাবে না। আমফান, যশের দুর্নীতি দেখা মানুষ ওঁদের আরও একবার বিশ্বাস করে ধোকা খেয়েছিলেন। গ্রামবাসীদের অভিযোগ সম্পর্কে আরও বিষয় রয়েছে, যেমন গ্রামীণ রোজগার যোজনা, অসহায় ও অসমর্থদের ভাতা সহ বিভিন্ন প্রকল্পের দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু ২০১৮ পেরিয়ে ২০২৩ আসতে চলল, তারা কেউ ঘর সহ অন্য সরকারি প্রকল্পেরও সুবিধা পাননি। কিন্তু এবারে আবার গায়ের জোরে যে কায়দায় গ্রামসভা করা হলো বিভিন্ন গ্রামে, তা দেখে দিনমজুর থেকে দিন আনা দিন খাওয়া গরিব মানুষ রুখে দাঁড়িয়েছেন। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা খোঁজ নিয়ে দেখছেন সমীক্ষার ভারপ্রাপ্ত কর্মীদের কাছে পঞ্চায়েত থেকে তালিকাভুক্ত করার জন্য প্রকৃত প্রাপকের নাম দেয়নি পঞ্চায়েত। আবার সিপিআই(এম) করার জন্য বঞ্চিত করা হয়েছে অনেককেই। তাই লালঝান্ডাকে সঙ্গে নিয়ে স্বতঃস্ফুর্ত জমায়েত গড়ে উঠছে। আর জবাবদিহির দায় এড়াতে দপ্তর ছেড়ে পালাচ্ছেন পঞ্চায়েত প্রধান ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা - ঘটছে এমনটাও। রায়গঞ্জের ইটাহারে বঞ্চিত মানুষের বিক্ষোভ তুঙ্গে ওঠে। পুলিশের সামনে পঞ্চায়েতে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন আন্দোলনে শামিল মানুষ। আর সে সময়ই পঞ্চায়েত দপ্তরের পেছনের দরজা দিয়ে চুপিসারে পালিয়ে গেছেন পঞ্চায়েত প্রধান।
দুর্নীতির প্রতিবাদে ইতিমধ্যেই পঞ্চায়েতে নির্দিষ্ট অভিযোগ জানিয়েছেন স্থানীয় সিপিআই(এম) নেতৃত্ব। ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে বামফ্রন্টগতভাবে। গ্রামের প্রতিটি বঞ্চিত গরিব মানুষের বাড়িতে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। সরকারি ঘরের তালিকায় যোগ্যদের নাম না উঠলে সেই সব বঞ্চিতকে সঙ্গে নিয়ে আগামীদিনে অনির্দিষ্টকালের জন্য পঞ্চায়েত ঘেরাও করা হবে, বলছেন ক্ষোভে ফুটতে থাকা মানুষ। ভুক্তভোগী বঞ্চিত অসহায় মানুষ বামফ্রন্ট নেতৃত্বের সঙ্গে গলা মিলিয়ে আহ্বান জানাচ্ছেন লুটেরাদের এই রাজত্ব শেষ না করতে পারলে এই দুর্নীতি বন্ধ করা যাবে না - তাই জোট বাঁধুন।