E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ১৯ সংখ্যা / ২৩ ডিসেম্বর, ২০২২ / ৭ পৌষ, ১৪২৯

এসএফআই সর্বভারতীয় সম্মেলন

ধনী গরিবের বিভাজন সৃ‍‌ষ্টিকারী শিক্ষানীতি এবং শিক্ষাঙ্গনে গেরুয়া আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নতুন উদ্যমে সংগঠন গড়ে তোলার ডাক

অনির্বাণ রায়চৌধুরী


এসএফআই সর্বভারতীয় সম্মেলনে প্রতিনিধি অধিবেশন।

শিক্ষা বাঁচানোর লড়াইয়ের রুট ম্যাপ তৈরির শপথ গ্রহণের আহ্বান জানানো হলো বহু লড়াইয়ের ইতিহাসে সমৃদ্ধ তেলেঙ্গানা থেকে। এসএফআই’র সর্বভারতীয় ১৭তম সম্মেলন শুরু হয় গত ১৩ ডিসেম্বর তেলেঙ্গানার হায়দরাবাদ শহরে, চলে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত । ১৩ ডিসেম্বর সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক সূচনার আগে সুসজ্জিত মিছিল হায়দরাবাদ শহর পরিক্রমা করে, হুসেইন সাগরের কিনারে প্রকাশ্য সমাবেশ হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গণআন্দোলনের নেতা মানিক সরকার, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস, সভাপতি ভি পি শানু, দীপ্সিতা ধর, রাগারাজু মূর্তি সহ এসএফআই নেতৃত্ব। এদিন সম্মেলন মঞ্চে মানিক সরকার সহ সকল নেতৃত্বের তরফ থেকে শিক্ষা বিক্রির ইস্তাহার এনইপি’র বিরোধিতা করা হয়। মানিক সরকার বলেন, এনইপি’র মাধ্যমে একদল নতুন এলিট শিক্ষার্থী তৈরি হবে, প্রান্তিক অংশের ছেলেমেয়েরা শিক্ষা থেকে ছিটকে যাবে। চাকরির ক্ষেত্রগুলোকে দখল করবে এই এলিট শিক্ষার্থীরা, বেকারত্বের হাহাকারে প্রান্তিক অংশের ছাত্রছাত্রীরা আরও পিছিয়ে পড়বে রুজিরুটির দৌড়ে। গোটা শিক্ষাব্যবস্থাকে করপোরেটদের স্বার্থে পরিচালনা করা হচ্ছে, আর তার সাথে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বোনা হচ্ছে সমাজে। কমরেড মাল্লু স্বরাজ্যম নগর (হায়দরাবাদ), শহিদ কমরেড অভিমন্যু, ধীরাজ, আনিস খান নামাঙ্কিত মঞ্চকে (ওসমানিয়া ইউনিভার্সিটি টেগোর অডিটোরিয়াম) সংগঠনের পতাকা, বীর শহিদ, স্বাধীনতার লড়াইয়ের সেনাদের ছবি দিয়ে সাজানো হয়। ডিজিটাল ডিভাইডেশনের বিরোধিতার পাশাপাশি সম্মেলনের প্রতিনিধিদের পরিচিতি পত্রের ফর্ম ফিলাপ আধুনিক কিউআর কোডের মাধ্যমে করার ব্যবস্থা বিজ্ঞানের অগ্রগতিকে সাথে নিয়ে সবাই যাতে আধুনিক বিজ্ঞান ব্যবহারের সুযোগ পায় তার বার্তা দেওয়া হয় সম্মেলন মঞ্চ থেকে।

সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রাক্তন এসএফআই নেতা ও বিচারপতি কে চান্দ্রু। চান্দ্রু সম্মেলনের প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে বলেন এনইপি, করপোরেটদের স্বার্থে পরিচালিত শিক্ষাব্যবস্থা দুটো তিনটে ভারত তৈরি করেছে, যেখানে এক ভারতের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়ার সুযোগ পাচ্ছে এক ভারতের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই সবার আগে দরকার সারা ভারতের বঞ্চিত ছাত্রছাত্রীদের ঐক্যবদ্ধ করা, বিভাজনকে ভেঙে দিয়ে এনইপি’র বিরুদ্ধে, সিলেবাসের গেরুয়াকরণ, ক্যাম্পাস বিক্রির বিরুদ্ধে দরকার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন। চান্দ্রু আরও বলেন, বর্তমানে দেশে যে জরুরি অবস্থার মতো পরিস্থিতি চলছে তা ইন্দিরা গান্ধীর সময়ে জারি করা জরুরি অবস্থার থেকেও ভয়ঙ্কর। সেই সময়ে জরুরি অবস্থায় কাগজ, সংবাদমাধ্যমের উপর সেন্সরশিপ করা হয়েছিল। এখন মোদি সরকার গণতন্ত্রের উপর সেন্সরশিপ জারি করেছে। দেশের সাংবিধানিক কাঠামো ভেঙে দিয়ে মোদি সরকার হিন্দুরাষ্ট্র গড়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে রয়েছে। এর বিরুদ্ধে এসএফআই-কে দেশজুড়ে লড়াই, আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। একসময় দেশে ‘নবরত্ন’ গর্বের ছিল। এখন সেই ‘নবরত্ন’ হয়েছে আদানি, আম্বানি। দেশে নয়া শিক্ষানীতি আনা হচ্ছে। এই শিক্ষানীতি ধনী ও গরিবের মধ্যে বিভাজন তৈরি করবে। এই শিক্ষানীতি দেশের মুষ্টিমেয় মানুষের জন্য তৈরি হয়েছে। যাদের অর্থ রয়েছে, তারাই শিক্ষার আওতায় থাকবে। বাকিরা শিক্ষার অঙ্গন থেকে ছিটকে যাবে।

জাতীয় শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ে আহ্বান জানিয়ে বিচারপতি চান্দ্রু বলেছেন, শিক্ষা নিয়ে সরকার যে নীতি আনছে তা ভয়ঙ্কর। তাহলে আমাদের কাজ কী? শুধু সমালোচনা করা নয়, আমাদের লক্ষ্য বিকল্প রাস্তা বের করা। অর্থাৎ চ্যালেঞ্জ নিতে হবে ছাত্র-ছাত্রীদের। তার জন্যই লড়াই আন্দোলন। গত কয়েক বছরে দেশে বহু মানুষ কাজ হারিয়েছেন। অথচ মোদি সরকার ২০১৪ সালের বিজ্ঞাপনে বলেছিল এবার আর চিন্তা নেই। সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কী করে হবে? দেশের লক্ষ কোটি টাকাই তো লুট হয়ে গিয়েছে করপোরেটদের হাতে। এই টাকার একটা অংশ তো শাসকদলকে ভোটে জিতিয়েছে। সাম্প্রদায়িকতা ছাড়াও এটাই এখন এক নতুন বিপদ। সমাজের চরিত্রই বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছে বিজেপি, আরএসএস। ছাত্র-ছাত্রীরাও এই আওতা থেকে বাদ যাচ্ছে না। সুতরাং এসএফআই-কে সতর্ক থাকতে হবে।

সম্মেলন মঞ্চে প্রথম দিন উপস্থিত ছিলেন শহিদ কমরেড ধীরাজ রাজেন্দ্রনের বাবা, আগামীদিনে লড়াকু মেজাজে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার বার্তা দেন তিনি। ভিন্ন ভাষায় স্লোগান দিয়ে নতুন লড়াইয়ের শপথ নেন দেশের ভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কমরেডরা, ভাষায় ভিন্ন হলেও তাদের শপথ তাদের মেজাজ এক ছিল।

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন সারভারত খেতমজুর ইউনিয়ন, সিআইটিইউ, সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি, ডিওয়াইএফআই প্রভৃতি বিভিন্ন সংগঠন থেকে আগত নেতৃত্ব সম্মেলনের সফলতা কামনা করে বক্তব্য রাখেন। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের প্রাক্তন নেতা এমএ বেবি, নীলোৎপল বসু, বিক্রম সিং প্রমুখ। ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতৃত্বের বক্তব্যের পাশাপাশি পরবর্তী দু’দিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রতিনিধিদের সম্পাদকীয় প্রতিবেদনের উপর রাজ্যভিত্তিক আলোচনার মধ্য দিয়ে সারা দেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কীভাবে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ক্যাম্পাস ও ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার অধিকারের ওপর দেশের সরকারের আগ্রাসনমূলক নীতিকে বলপূর্বক কায়েম করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হচ্ছে সেই কথা উঠে আসে। তারই পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা সহ অন্যান্য রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপি’র সরকার কীভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে ও বাইরে গণতান্ত্রিক অধিকার ও বলপূর্বক স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করছে সে কথা যেমন ফুটে ওঠে, তেমনি একইভাবে হরিয়ানা, রাজস্থান, পাঞ্জাব, গুজরাটের রাজ্য সরকার কীভাবে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে ফতোয়া কায়েম করার রূপরেখা নির্মাণ করছে সেগুলি উঠে আসে তাদের প্রতিবেদনে। শুধু সমস্যা নয়, আগামীদিনে এই সমস্যা মোকাবিলার কোলাজও ছাত্র-ছাত্রীদের রাজ্যভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে উত্থাপিত হয়। প্রতিবেদনের উপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধি বেদত্রয়ী গোস্বামী, দেবাঞ্জন দে-রা বলেন, পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী, তফশিলি, ওবিসি এলাকায় আরএসএস কাজ করলেও বাধা পাচ্ছে এসএফআই। এইসব এলাকা বিশেষ করে উত্তরবঙ্গে আরএসএস-বিজেপি-কে কাজ করতে সুবিধা করে দিচ্ছে তৃণমূল। করোনা, লকডাউনের সময়ে এইসব এলাকায় শাসকদল বা বিজেপি’কে মানুষ না পেলেও এসএফআই’র কর্মীরা ফ্রন্টলাইনার হিসেবে কাজ করেছে। অসুস্থ মানুষদের সাহায্য করা, রান্না করে খাওয়ানো, শুকনো খাবার বা সবজি বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার মতো সামাজিক দায়বদ্ধতা দেখিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা। তারা উল্লেখ করেছেন, একদিকে তারা যেমন মানুষ ও সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের কাছে কোভিড পরিস্থিতিতে সংহতির বার্তা পৌঁছে দিয়েছে, ঠিক তেমনভাবেই সংহতির পাশাপাশি সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদের ঐক্যবদ্ধ করে এই কঠিন পরিস্থিতিতে ডিজিটাল ডিভাইডেশনের বিরুদ্ধে, ভ্যাকসিনেশন ফর অল, স্কুল কলেজ খোলার দাবিতে সংগ্রামের বার্তা বহন করে নিয়ে গেছেন। ২০১১ সালের পরবর্তী সময় থেকে পশ্চিমবঙ্গে স্বৈরাচারী তৃণমূল কংগ্রেস দলের ছাত্র সংগঠন ও সরকারের পক্ষ থেকে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর সব থেকে বেশি আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। তাই আগামীদিনে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তর থেকেই প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন এসএফআই রাজ্যে মুক্ত ক্যাম্পাস গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে প্রতিরোধের বার্তা বহন করবে। সেই লক্ষ্যে আগামীদিনে রাজ্যজুড়ে ক্যাম্পাসের দেয়ালে দেয়ালে নতুন স্লোগান তৈরি হয়েছে। যে স্লোগানে লেখা হচ্ছে - আঘাত যদি নেমেই আসে পালটা আঘাত ফিরিয়ে দাও।

জম্মু-কাশ্মীরের এসএফআই প্রতিনিধি দানিশ বলেন, কাশ্মীর নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। আজও পর্যন্ত একটিও প্রতিশ্রুতি কেন্দ্র রাখেনি। করোনাকালে কাশ্মীরের মানুষের আর্থিক অবস্থা শোচনীয় হয়। বহু গরিব মানুষ তখন খাবার পাচ্ছিলেন না। কাশ্মীরের এসএফআই সীমিত ক্ষমতা নিয়েও গরিব মানুষের পাশে ছিল। প্রতিদিন না পারলেও মাসে কয়েকদিন বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে গরিব পরিবারের খাবারের ব্যবস্থা করেছে এসএফআই কর্মীরা। এখন সেইসব এলাকার অনেক ছাত্র-ছাত্রী স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্রের পতাকা কাঁধে তুলে নিয়েছে।

এছাড়াও সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে দলিত, আদিবাসী, সংখ্যালঘু সহ ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর বিজেপি এবং আরএসএস’র বিভিন্ন আক্রমণ প্রতিহত করার নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন প্রতিনিধিরা। তাঁদের গলায় উঠে এসেছে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ, অস্বাভাবিক ফি বৃদ্ধি, ক্যাম্পাসে সন্ত্রাস, মহিলাদের ওপর নির্যাতন, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় শাসকের নিয়ন্ত্রণ এবং এই অপচেষ্টার এসএফআই কীভাবে মোকাবিলা করবে সেই প্রস্তুতির কথাও। ছত্তিশগড়ের এসএফআই প্রতিনিধি অর্চনা দ্রুপ এবং ত্রিপুরা ট্রাইবাল স্টুডেন্ট ইউনিয়নের পক্ষে সুজিত দেববর্মার কথায় উঠে এসেছে আদিবাসী প্রান্তিক স্তরের ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার উপর কেন্দ্র ও রাজ্যের সরকারের যৌথ আক্রমণের ভয়াবহ চিত্র।

সম্মেলনের তৃতীয় দিন সম্মেলন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন হাওড়ার ছাত্র শহিদ আনিস খানের পরিবারের সদস্য আনিস খানের দাদা সাবির খান। তিনি সম্মেলন মঞ্চ থেকে দৃপ্ত কণ্ঠে বলেন “আনিসকে পুলিশ খুন করেছে। গভীর রাতে ওকে খুন করা হয়েছে। আনিস আমার ভাই ছিল। খুন হওয়া সুদীপ্ত, ধীরাজ, অভিমন্যু আমার ভাই। আনিসের মতো এখানে আমার হাজার হাজার ভাই রয়েছে। এই ভাইদের লড়াই আমাকে প্রেরণা দেয় আনিসের ইনসাফ ছিনিয়ে আনতে। এসএফআই’র এই শত শত ভাই আমার পাশে থাকলে রাষ্ট্রের দ্বারা খুন হওয়া আনিসের ইনসাফ পাবই।” তিনি আরও বলেছেন, ‘‘এখনও প্রতিদিন আমাদের বাড়ির উপর নজর রাখা হচ্ছে। প্রতিদিনই হুমকি দিচ্ছে পুলিশ ও তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। প্রথম দিন থেকে বামপন্থীরা, এসএফআই কর্মীরা আমাদের পাশে ছিলেন। এসএফআই পাশে থাকলে আমরা এর শেষ দেখে ছাড়ব। আনিসের খুনের ইনসাফ নেবই নেব।”

বেকারি-বেরোজগারির বিরুদ্ধে দেশজুড়ে আন্দোলন গড়ে তোলার প্রস্তাব পাশ হয়েছে সম্মেলনে। তারই পাশাপশি ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা, ছাত্র-ছাত্রীদের স্বার্থে জিএস ক্যাস সেল গঠন, জীব বৈচিত্র্য রক্ষা সহ দেশ জুড়ে ক্যাম্পাসে ছাত্র-ছাত্রীদের গণতন্ত্রের উপর আক্রমণের বিরুদ্ধে “ক্যাম্পাসে গণতন্ত্র চাই ” শীর্ষক এক প্রস্তাব পাশ করা হয়। তার পাশাপাশি কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে সংহতি জানিয়ে সম্মেলন মঞ্চে পাস হয় প্রস্তাব। সম্মেলনের সাফল্য কামনা করে সম্মেলনের তৃতীয় দিন সম্মেলন মঞ্চে কিউবা, ইজরায়েল, বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রেখেছেন। সম্মেলনের তৃতীয় দিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রতিনিধিদের মধ্যে থেকে মোট ৮৯ জন আলোচক সর্বমোট ৮ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট আলোচনা করেন।

সম্মেলনের শেষ দিনে ২০১০ সালে হাওড়া জেলার আন্দুল কলেজে তৃণমূলী দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হওয়া ছাত্রনেতা শহিদ স্বপন কোলের স্মরণে মিছিল করে পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসা এসএফআই কর্মীরা সম্মেলন মঞ্চে প্রবেশ করে। মিছিল যখন প্রবেশ করে তখন দেশের বাকি রাজ্য থেকে আসা এসএফআই কর্মীদের স্লোগানে সম্মেলন মঞ্চ মুখরিত হয়ে উঠে।

সম্মেলনের চতুর্থ দিন সম্মেলন মঞ্চে বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা প্রতিনিধিরা তাদের নিজস্ব রাজ্যের বৈচিত্র্যপূর্ণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন। এর মধ্য দিয়ে এক বৈচিত্র্যময় আঙ্গিকে সম্মেলন মঞ্চে বিভিন্ন রাজ্যের বিভিন্ন সংস্কৃতি, বিভিন্ন ভাষার মেলবন্ধনে এক বর্ণময় সংস্কৃতির কোলাজ তৈরি হয়। যে কোলাজ সম্মেলন মঞ্চে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের ভারতের ভাবনার দিক্ নির্দেশ করে।

এদিন বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস প্রতিনিধিদের আলোচনার জবাবে বলেন, ‘‘বিরোধীদের চোখে চোখ রেখে লড়াই করতে হবে। ভয় পেলে হবে না। এসএফআই যাঁরা করেন তাঁরা কখনোই ভয় পান না। স্বপ্ন কী, কীভাবে স্বপ্ন দেখতে হয় তা শেখায় এসএফআই, কোনও মোদি বা কোনো আরএসএস নয়। যাঁরা এই সর্বভারতীয় সম্মেলনে এসেছেন, তাঁরা ফিরে গিয়ে নিজের নিজের এলাকায় সম্মেলনের বার্তা পৌঁছে দেবেন। নতুন উদ্যমে সংগঠনকে বাড়িয়ে তুলতেই হবে’’।

সম্মেলনের শেষ দিনে গঠিত হয়েছে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন যথাক্রমে ভিপি সানু ও ময়ূখ বিশ্বাস। সৃজন ভট্টাচার্য যুগ্ম সম্পাদক এবং প্রতীক উর রহমান সহ সভাপতি হিসেবেও পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন। যুগ্ম সম্পাদক পদে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন দীপ্সিতা ধর। এই সম্মেলন থেকে মোট ৮১ জনের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে নির্বাচিত হয়েছেন ১১ জন সদস্য। তাঁরা হলেন সৃজন ভট্টাচার্য, প্রতীক উর রহমান, দীপ্তজিৎ দাস, অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী, দেবাঞ্জন দে, প্রণয় কার্জি, বেদত্রয়ী গোস্বামী, মধুশ্রী মজুমদার, নবনীতা চক্রবর্তী ও অনির্বাণ রায়চৌধুরী। ঐশী ঘোষ এবার কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

‘‘এডুকেট অল, এমপ্লয় অল, ইউনাইট অল’’ স্লোগানকে বাস্তবায়িত করার লড়াইয়ের রূপরেখা তৈরির সম্মেলন শেষে সাধারণ সম্পাদক হিসাবে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর ময়ূখ বিশ্বাস তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘‘এই নতুন উদারীকরণের যুগে নতুন লড়াই করতে শপথ নিয়েছি। সারা দেশে লুটপাট চলছে। শিক্ষাও লুট হচ্ছে। সতর্ক আছে এসএফআই। এসএফআই মানে পারস্পরিক সহযোগিতা। এই সহযোগিতার জোরে সংগঠন বেড়েছে। আগামীদিনে সংগঠনের পরিধি আরও বাড়িয়ে মজবুত করতে হবে। জাতপাত বা গরিব বড়োলোকের ভেদাভেদ এসএফআই-তে নেই। আর সেই জন্যেই আমরা দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছি। আমরা লড়াই করব, শহিদ হবো হয়তো তার জন্য, কিন্তু লড়াই চালিয়ে যাব।