৫৮ বর্ষ ৪৯ সংখ্যা / ২৩ জুলাই, ২০২১ / ৬ শ্রাবণ, ১৪২৮
কেন্দ্রের কালা কৃষি আইন বাতিল এবং ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের দাবিতে দিল্লিতে কিষান সংসদ
দিল্লির যন্তর মন্তরে সংযুক্ত কিষান মোর্চার জমায়েতের একাংশ।
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ কেন্দ্রীয় সরকারের তিন কালা কৃষি আইন বাতিল এবং ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের দাবিতে কিষান সংসদ শুরু হয়েছে দিল্লিতে। যেদিন যেদিন সংসদের বাদল অধিবেশন বসবে সেদিনই যন্তর মন্তরে কৃষকদেরও সংসদ বসার ঘোষণা করে আন্দোলন কর্মসূচি শুরু করেছে সংযুক্ত কিষান মোর্চা। এই কর্মসূচি যাতে অনুষ্ঠিত হতে না পারে সেজন্য নানাভাবে চেষ্টা চালিয়েছিল অমিত শাহ-র পুলিশ। শেষ পর্যন্ত প্রবল চাপের মুখে তারা অনুমতি দিতে বাধ্য হয়েছে। দিল্লির কেজরিওয়াল সরকার আগেই যন্তর মন্তরে কৃষক সংসদের অনুমোদন দিয়েছিল।
গত ১৪ জুলাই সিঙ্ঘু সীমান্তে সংযুক্ত কিষান মোর্চা সভা করে এই কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ঠিক হয়েছে সংসদের অধিবেশন চলার সময়ে প্রতিদিন সংযুক্ত মোর্চার নেতৃবৃন্দ সহ ২০০ জন কৃষক প্রতিনিধি শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে এই কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। সিঙ্ঘু, টিকরি সহ দিল্লির সীমান্তবর্তী অঞ্চলে আন্দোলনরত কৃষকদের ক্যাম্পগুলি থেকে এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কৃষক প্রতিনিধিরা এই কর্মসূচিতে অংশ নেবেন।
সংযুক্ত মোর্চা সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগামী ২৬ জুলাই কৃষক আন্দোলনের ৮ মাস পূর্তি উপলক্ষে এবং ৯ আগস্ট ঐতিহাসিক ভারত ছাড়ো আন্দোলনের বিশেষ দিনকে স্মরণে রেখে কৃষক আন্দোলনের মহিলা নেতৃবৃন্দ এবং মহিলা স্বেচ্ছাসেবকদের বিশেষ কর্মসূচি উদ্যাপিত হবে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির সাথে আলোচনা মর্মে ৯ আগস্ট দেশব্যাপী যৌথ প্রতিবাদ কর্মসূচি সংগঠিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সংযুক্ত কিষান মোর্চা শিখস্ ফর জাস্টিস নামে একটি বর্হিভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী ও কৃষক আন্দোলনবিরোধী সংস্থা সম্পর্কে আন্দোলনকারীদের সতর্ক করে দিয়েছে। সংযুক্ত কিষান মোর্চার নেতৃত্ব বলেছেন, দেশের সমস্ত কৃষক সমাজ দেশের কৃষি ও কৃষকদের স্বার্থে তিনটি কৃষকবিরোধী বিলের বিরুদ্ধে, ১৪০ কোটি ভারতবাসীর খাদ্য নিরাপত্তা সুরক্ষা ও কৃষকদের উর্পাজন সুনিশ্চিত করার স্বার্থে শান্তিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক আন্দোলন পরিচালিত করছে। এই ধরনের বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি তাকে বিপথগামী করতে চাইছে। এ সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।
সংযুক্ত কিষান মোর্চা দেশের সমস্ত অংশের কৃষকদের পক্ষ থেকে লোকসভা ও রাজ্যসভার সাংসদদের কাছে এক হুইপ জারি করে দেশের নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার বিষয়ে কেন্দ্রের সরকারের রূপায়ণ করার ক্ষেত্রে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট কাজগুলিকে সংসদে তুলে ধরার কথা বলেছে। যারা সাংসদদের নির্বাচিত করেছে তাদের প্রতি দায়বদ্ধতায় এই উদ্যোগ নিতে হবে। সংযুক্ত কিষান মোর্চা সাংসদদের নির্দেশ দিয়েছে কৃষক আন্দোলনের দাবিগুলিকে সংসদে তুলে ধরতে হবে। কোভিড পরিস্থিতিতে কেন্দ্র যে তিন কালা কৃষি আইন এনেছে তা বাতিল করা এবং ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আইনি স্বীকৃতির দাবি সংসদের দু’টি কক্ষেই তুলে ধরতে হবে। এই হুইপ জারি করে বলা হয়েছে, যদি সাংসদরা এই হুইপ মেনে না নেন, তাহলে প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের বিরোধিতা করতে বাধ্য হবে কৃষকেরা।
এদিকে হরিয়ানায় বিজেপি সরকার কৃষকদের উপর যে দমনপীড়ন চালাচ্ছে তার তীব্র নিন্দা করেছে সংযুক্ত কিষান মোর্চা। সম্প্রতি হরিয়ানা বিধানসভার উপাধ্যক্ষের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখানোয় পাঁচ কৃষককে গ্রেপ্তার করা হয়। সংযুক্ত কিষান মোর্চার তরফে গ্রেপ্তার হওয়া কৃষকদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানানো হয়েছে। ১১ জুলাই এই দাবিতে বিক্ষোভের ঘটনায় রাজ্যের বিজেপি সরকারের পুলিশ শতাধিক কৃষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে। কৃষকদের মুক্তির দাবিতে সিরসায় কৃষকনেতা বলদেও সিং-এর অনশন চলছে। সংযুক্ত কিষান মোর্চা কৃষক বিরোধী হরিয়ানা সরকারের মিথ্যা ভিত্তিহীন অভিযোগে কৃষকদের গ্রেপ্তারের নিন্দা করে অবিলম্বে তাঁদের মুক্তির দাবি জানিয়েছে।
মহারাষ্ট্রের মহাবিকাশ আঘাদি সরকার বিধানসভায় কেন্দ্রের তিন কৃষি আইনের কিছু সংশোধনী এনেছে এবং এর উপর সাধারণ মানুষের মতামত প্রদানের জন্য দু’মাস সময় দেওয়া হয়েছে। অল ইন্ডিয়া কিষান সংঘর্ষ কো-অর্ডিনেশন কমিটির পক্ষে গত ২৯ জুন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, উপমুখ্যমন্ত্রী এবং অন্যান্য বরিষ্ঠ বিধায়কদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দাবি জানানো হয়েছে যে, কেরালা ও অন্যান্য কয়েকটি রাজ্যের মতো মহারাষ্ট্র বিধানসভায়ও কেন্দ্রের কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক।
এদিকে দিল্লিতে কৃষকদের সংসদের সমর্থনে ২২ জুলাই সারা ভারত কৃষক সভার ডাকে কেরালার সমস্ত জেলা সদরে কেন্দ্রীয় সরকারি দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ সংগঠিত হয়েছে। রাজ্যের ১৫টি জেলা সদর সহ সমস্ত ব্লক স্তরেও এই কর্মসূচি সংগঠিত হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গেও সমস্ত ব্লক অফিসের সামনে ধরনা-বিক্ষোভ কর্মসূচিতে শামিল হয়েছেন শ্রমিক-কৃষক-খেতমজুররা। কেন্দ্রের কৃষি আইনের বিরুদ্ধে, শ্রম কোড, বিদ্যুৎ বিল, পেট্রোল-ডিজেল-রান্নার গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে এবং রেগার মজুরি বৃদ্ধি ও কর্মদিবস ২০০ দিন করা ইত্যাদি বিভিন্ন দাবিতে ২৫ জুলাই থেকে গ্রামে গ্রামে বিভিন্ন ধরনের আন্দোলন, প্রচার চলবে। ৯ আগস্ট চূড়ান্ত পর্যায়ে জমায়েত সংগঠিত হবে।