৫৮ বর্ষ ৪৯ সংখ্যা / ২৩ জুলাই, ২০২১ / ৬ শ্রাবণ, ১৪২৮
পেট্রোপণ্য সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি
ক্ষুব্ধ মানুষ পথে বামফ্রন্ট
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ পেট্রোপণ্য সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার বিরুদ্ধে বামফ্রন্টের ডাকে গ্রাম-শহরের সর্বস্তরে ১৫ দিনব্যাপী বিক্ষোভ আন্দোলনে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ প্রতিদিনই বাড়ছে। পেট্রোল ডিজেল কেরোসিন রান্নার গ্যাসের দাম কমানো সহ মোট ৭ দফা দাবিতে ১৯ জুলাই থেকে গ্রাম গঞ্জের হাট-বাজার থেকে পৌর স্তরে ওয়ার্ড ভিত্তিক এলাকায় অনুষ্ঠিত প্রতিবাদসভাগুলিতে প্রতিদিনই বাড়ছে ক্ষুব্ধ মানুষের ভিড়। এই কর্মসূচি চলবে আগামী ৩ আগস্ট পর্যন্ত। মূল্যবৃদ্ধি রোধের পাশাপাশি বামফ্রন্টের অন্যান্য দাবি-দাওয়ার মধ্যে রয়েছে পেট্রোপণ্যের উপর কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের আদায়কৃত করের পরিমাণ কমিয়ে পরিবহণ ব্যবস্থা সচল করতে হবে, স্বচ্ছতা বজায় রেখে সর্বজনীন টিকা দিতে হবে, শাসকদলের টোকেন দেখিয়ে টিকা দেওয়ার অগণতান্ত্রিক পদ্ধতি ব্যবস্থাপনা চলবে না, কোভিড সংক্রমণ শিথিল হলেই মেয়াদ উত্তীর্ণ পৌরসভাগুলিতে নির্বাচন করতে হবে, জনস্বার্থে বামপন্থীদের আন্দোলনে পুলিশের বাধা-গ্রেফতার আর উল্টোদিকে শাসকদলের জমায়েতে সহযোগিতা - পুলিশ প্রশাসনের এই দ্বিমুখী নীতি চলবে না।
বামফ্রন্টের ডাকে আন্দোলনে লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ধারাবাহিকভাবে প্রতিবাদে মুখর হচ্ছেন বিভিন্ন জেলার মানুষ। এই কর্মসূচি উপলক্ষে ২২ জুলাই মিছিল সংগঠিত হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার কামারহাটি, নদীয়ার তাহেরপুর সহ বিভিন্ন জায়গায়। ২০ জুলাই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন অংশে প্রতিবাদ কর্মসূচি নেওয়া হয়। ঐদিন দুপুরে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে শামিল ছাত্র যুব এবং শ্রমিকরা পেট্রোল পাম্পের সামনে থাকা বড়ো বড়ো হোর্ডিংয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাসিমুখে আলকাতরা লেপে দিয়ে বিক্ষোভ দেখান। সব ধরনের জ্বালানি সহ পেট্রোলের উপর কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সেস কমিয়ে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের দাবিতে খড়গপুর শহর, গোপালি বাজার, মেদিনীপুর শহর ও ঘাটাল শহরেও প্রতিবাদ সভা হয়। অন্যদিকে সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির নিমতা দক্ষিণ আঞ্চলিক কমিটির উদ্যোগে আলিপুর মোড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়। সেখানে সকলের জন্য ভ্যাকসিন, কোভিড বিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে বক্তব্য রাখেন নেতৃবৃন্দ।
রাজ্যের মেয়াদ উত্তীর্ণ পৌরসভা এবং পৌরনিগমগুলিতে অবিলম্বে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে গত ১৩ জুলাই ইতিমধ্যেই পৌর ও নগর উন্নয়নমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে স্মারকলিপি দিয়েছে রাজ্য বামফ্রন্টের এক প্রতিনিধি দল। বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে রাজ্যের ১২৫ পৌরসংস্থার মধ্যে ৬টি পৌরনিগম, দুটি প্রজ্ঞাপিত অঞ্চলসহ ১১২ টি পৌরসভার নির্বাচন পরবর্তী মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে। এরমধ্যে হাওড়া পৌরনিগম ১৭ টি পৌরসভার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে ২০১৮ সালে। ২০২০ সালে কলকাতা শিলিগুড়ি চন্দননগর বিধান নগর ও আসানসোল পৌর নিগম ৯৫ পৌরসভার মেয়াদ শেষ হয়েছে। নির্বাচন না হওয়ায় সাংবিধানিক অধিকার এবং যথাযথ নাগরিক পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন মানুষ।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়েছে, কেবলমাত্র পশ্চিমবঙ্গে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলিতে প্রতি বছর অন্তর দেশের সাংবিধানিক এবং পশ্চিমবঙ্গ পুর নির্বাচনী আইনের নির্দেশ অনুসারে ২০১১ সাল পর্যন্ত নিয়মিত নির্বাচনে জয়ী ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের যে, ধারাবাহিকতা ছিল তা লঙ্ঘন করা হয়েছে।
বারাসাতের ১২ নম্বর রেল গেটের সামনে ২১ জুলাই পথ হকারদের একটি প্রতিবাদসভা অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্র ও রাজ্য দুই সরকারই পেট্রোলের কর থেকে প্রচুর টাকা আয় করছে। ফলে বিপদ বাড়ছে দেশ ও রাজ্যের জনসাধারণের বক্তাদের বক্তব্যে উঠে আসে এ কথা। এখানে বক্তাদের মধ্যে ছিলেন দেবব্রত ভট্টাচার্য, রামপদ দাস, দীপক দাস প্রমুখ।
১৯ জুলাই সারা ভারত কৃষক সভা ডাকে ধুবুলিয়া পেট্রোল পাম্পের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচি হয়। কৃষক নেতা নূর মহম্মদ খানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন অশোক ব্যানার্জি, বাসুদেব আচার্য, রামচন্দ্র দাস ছাত্রনেতা প্রিয়ম ভট্টাচার্য প্রমুখ।