৫৮ বর্ষ ৪৯ সংখ্যা / ২৩ জুলাই, ২০২১ / ৬ শ্রাবণ, ১৪২৮
নজরবন্দি
বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়
‘নুন খাও কি, ঝাল খাও কি, টক মিষ্টি খাও, চায়ের কাপে ক’ চামচ চিনি তুমি দাও, পেট ভরে খাও কি থাকো, পেটেতে কিল মারিয়া, সব জানতে পারবে সিয়া’র কাছে, সিয়া সিয়া সিয়া’। এই গান প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে লেখা। ১৯৭৩ ধরে হিসেব করলে তাই হয়। তখনও বাজারে মোবাইল ফোনের শুভ আবির্ভাব ঘটেনি। মোটামুটি পাঁচ ইঞ্চি বাই তিন ইঞ্চির একটা গুপিযন্তরে মানুষকে বেঁধে ফেলার যুগ আসতে তখনও বহু দেরি। কিন্তু বাকি বিষয়গুলো যে তখনও বহাল তবিয়তেই ছিল তার প্রমাণ অবশ্যই ‘মারীচ সংবাদ’। নাটকের প্রেক্ষিত যদিও আলাদা, কিন্তু কিছু বিষয় আজও ভীষণভাবেই জলজ্যান্ত। চোখের সামনে হেঁটেচলে বেড়ায়। ‘একটা রাষ্ট্র যারা চালায় প্রতিটি নাগরিকের মনের গোপনতম চিন্তার হদিশও তাকে রাখতে হয়।’ এই সংলাপও তো অরুণ মুখোপাধ্যায়ের কালজয়ী সেই নাটকের।
ভণিতা থেকে এতক্ষণে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, এরপরে কী আসতে চলেছে। স্পষ্ট যদিও অনেক আগেই হয়েছে। বুঝেছি, বুঝিনি, বুঝতে চাইনি - এসব যাই ঘটুক না কেন, ঘটনা প্রবহমান। কী লিখবো, কেন লিখবো, কী বলবো, কেন বলবো, কোথায় কতটা বলবো, ‘কী করিতে হইবে’ যতদিন ভাবব, ততদিন আশেপাশের কেউ অপেক্ষা করবে না। বিজ্ঞান তো সেরকমই বলে বোধহয়। আমাদের বোঝা না বোঝার অপেক্ষায় থেকে ঘটনার নির্মাণ থেমে থাকেনা। সাধে কী আর মাঝেমাঝেই আমাদের ক্রোনোলজি বুঝে নেবার নির্দেশ দেওয়া হয়? আচ্ছে দিন, ডিমনিটাইজেশন, সরকারি সংস্থা বিক্রি, সরকারি ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা ভেঙে টুকরো টুকরো করে দেওয়া, শ্রম আইনের বারোটা বাজিয়ে দেওয়া, কর্পোরেটদের লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি টাকা ঋণ মকুব, সিএএ-এনআরসি অথবা হালের ঘরে ঢুকে নজরদারি - ক্রোনোলজি তো ভালোভাবেই বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। ‘আমরা’ না বুঝলে তার দায় কি ‘ওদের’?
এ রাজ্যে মাথায় অক্সিজেন না পৌঁছানোর ঘটনা বেশ কয়েক বছরের পুরোনো। এরপর রাজ্যের সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রচুর ‘শ্বাস আটকে যাওয়া’ মানুষ (!) আমরা দেখেছি। নির্বাচনের পরে আরও কিছু ‘শ্বাস আটকে যাওয়া’ মানুষ(!) ঘুরঘুর করছে চারপাশে। এতসব ভিন্ন প্রকৃতির শ্বাস আটকে যাওয়ার মাঝেই হইহই করে এসে পড়েছে পেগেসাস। যে কাণ্ড সামনে আসার পর আর সবকিছুকেই ‘বাল কাণ্ড’ বা ‘আদি কাণ্ড’ বলেই মনে হয়। রামায়ণের বাকি ছয় কাণ্ড এখনও বাকি। ‘আপ ক্রোনোলজি সমঝিয়ে’। আগামীদিনে এরকম ‘দেশভক্ত’ স্লোগান উঠলেও আশ্চর্য হবার কিছু নেই, যেখানে হয়তো বলা হবে - ‘এইটুকুতেই হাসফাঁস, আসছে এবার পেগেসাস’। এ দেশে ‘দেশপ্রেম’-এর নামে, ‘গো রক্ষা’র নামে হুমকি তো এখন জলভাত। মানুষের বাঁচা মরা অনেক পরের বিষয়। গোরুদের দয়া হলে তবে তো মানুষের বাঁচা!
পেগেসাস নিয়ে হইচই শুরু হয়েছে গত রবিবার ১৮ জুলাই। যেদিন ডিজিট্যাল মিডিয়া ‘দ্য ওয়্যার’ ইজরায়েলি এক সংস্থার তৈরি করা নজরদারি অ্যাপ নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের পাশাপাশি বিদেশেও এই সংক্রান্ত একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। যার মধ্যে রয়টার্স, দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট, দ্য গার্ডিয়ান, আল জাজিরা, লা মঁদ সহ পৃথিবীর ১৬টা বিখ্যাত সংবাদমাধ্যম আছে।
চাপ নেবেন না প্লিজ। এখনও পর্যন্ত এরকম কিছু খবর প্রকাশিত হয়নি যে, পেগেসাস আপনার বাড়িতে ঢুকে ড্যাবড্যাবিয়ে তাকিয়ে আছে চারিদিকে। যদিও থাকলেও অবাক হবার কিছু নেই। সেখানে পেগেসাসের বদলে অন্য কোনো ‘সাস’ সাসপেক্টেড হতেই পারে। সংবাদমাধ্যমের দাবি অনুসারে লড়াইটা মোটামুটি রাজায় রাজায় স্তরেই আছে। প্রজাদের জন্য এত খরচ করে স্পাইওয়্যার কিনে নজরদারি চালানো যাবে না। ওদের গলায় পা তোলার জন্য পেট্রোল ডিজেল আছে, চাল ডালের দাম আছে, করোনা আছে, পরিকল্পনাহীন লকডাউন আছে, অক্সিজেনের অভাব আছে (এখানে একটা ক্ল্যারিফিকেশন দেওয়া দরকার - সরকার বলে দিয়েছে অক্সিজেনের অভাবে কোনো মৃত্যু হয়নি, কাজেই হয়নি - সরকারের সঙ্গে সহমত হওয়াই এখন সবথেকে নিরাপদ), আরও হাজারটা বিষয় থরে থরে সাজানো আছে। মাঝেমাঝে ডুগডুগি বাজিয়ে খেলাওয়ালা বলবে - ‘তুই নাচবি?’ ‘তুই বিয়ে করবি?’, ‘তুই বিড়ি খাবি?’ - আর সবেতেই জামাকাপড়, সানগ্লাস পরে টুলে বসে থাকা মাকড়া হয়ে মাথা নেড়ে ‘হ্যাঁ’ বলা ছাড়া গতি থাকবে না।
এদিক ওদিক না ঘুরে বেড়িয়ে একটু পেগেসাসে কনসেনট্রেট করা যাক। পেগেসাস এক সামরিক গ্রেডের স্পাইওয়্যার, যা এক লাইসেন্সপ্রাপ্ত ইজরায়েলি সংস্থা যে কোনো দেশের সরকারকে সন্ত্রাসবাদী ও অপরাধীদের সন্ধানের জন্য সরবরাহ করে (পড়ুন বিক্রি করে)। এই স্পাইওয়্যার ব্যবহার করেই সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, ব্যবসায়ী এবং নিহত সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগির ঘনিষ্ঠ দুই মহিলা সহ ৩৭ জনের স্মার্টফোন সফলভাবে হ্যাক ব্যবহার করা হয়েছিল। এই দাবি করেছে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট।
ওয়াশিংটন পোস্ট তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে যে, তালিকার প্রকৃত সংখ্যা না জানা গেলেও চারটি মহাদেশের প্রায় ৫০টি দেশের ১০০০-এর বেশি ব্যক্তির নাম শনাক্ত করা গেছে। তালিকায় ছিল প্রায় ৫০ হাজার ফোন নাম্বার। এই তালিকায় বেশ কয়েকজন আরব রাজপরিবারের সদস্য, কমপক্ষে ৬৫ জন ব্যবসায়িক কর্মকর্তা, ৮৫ জন মানবাধিকার কর্মী, ১৮৯ জন সাংবাদিক এবং ৬০০-রও বেশি রাজনীতিবিদ এবং সরকারি আধিকারিক - যার মধ্যে মন্ত্রী, কূটনীতিক এবং সামরিক ও সুরক্ষা কর্মকর্তারা ছিলেন। বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও প্রধানমন্ত্রীর ফোন নাম্বারও এই তালিকায় ছিল।
পেগেসাস স্পাইওয়্যার যে কোনও ডিভাইসের যে কোনও কিছু পড়তে পারে এবং ব্যবহারকারীর ছবি, রেকর্ডিং, লোকেশন ট্র্যাক, যোগাযোগ, পাসওয়ার্ড, কল লগ এবং সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টগুলি চুরি করতে পারে। এছাড়াও পেগাসাস স্পাইওয়্যার নিজের ইচ্ছেমতো ফোনের মাইক্রোফোন এবং ক্যামেরা চালু করে নজরদারি চালাতে সক্ষম। এমনকী নজরদারি শুরু করার জন্য ব্যবহারকারীদের তাদের ফোন চালু করারও দরকার পড়ে না।
ফাঁস হওয়া তালিকা অনুসারে, সর্বাধিক সংখ্যা ছিল মেক্সিকোর। যেখানে রাজনীতিবিদ, ইউনিয়ন প্রতিনিধি, সাংবাদিক এবং সরকারি সমালোচকদের প্রায় ১৫ হাজার নাম্বার অন্তর্ভুক্ত ছিল। এছাড়াও কাতার, সংযুক্ত আরব আমির শাহি, বাহারিন এবং ইয়েমেন সহ মধ্য প্রাচ্যের একটি বড়ো অংশ ছিল। তালিকায় এক হাজারেরও বেশি ফরাসি নাম্বার ছিল। হাঙ্গেরিতে, কমপক্ষে দুটি মিডিয়া প্রধানের নাম্বার এই তালিকায় যুক্ত ছিল। এছাড়াও দু’জন কর্মরত সাংবাদিকের ফোনকে লক্ষ্যবস্তু করে সংক্রমিত করা হয় বলেও ফরেনসিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে।
পেগেসাস নজরদারির ঘটনায় বিদেশের প্রসঙ্গ না টানলেও হতো। কিন্তু টানতে হলো একটাই কারণে। দেশের সদ্য প্রাক্তন তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ এই প্রসঙ্গে খুব ভালো মন্তব্য করেছেন। তিনি জানিয়েছেন - ‘এনএসও জানিয়েছে ৪৫টি দেশ পেগেসাস ব্যবহার করে। তাদের মূল ক্লায়েন্ট পশ্চিমি দেশগুলো। তাহলে কেন ভারতকে এই বিষয়ে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে? এর পেছনে আসল গল্প কী?’ আর সংসদে বিরোধীদের পেগেসাস স্পাইওয়্যার আক্রমণ প্রসঙ্গে বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব এনএসও-কে উদ্ধৃত করে জানান, ‘এই ধরনের ঘটনা যে কোনো সময়, যে কোনো জায়গায় খোলাখুলি ঘটতে পারে। সাধারণত বিভিন্ন সরকারি সংস্থা এইসব ব্যবহার করে।’ ‘সংসদের বাদল অধিবেশন শুরুর একদিন আগে এই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। এটা কাকতালীয় হতে পারে না। তবে এই দাবিগুলোর সত্যতা নেই।’ কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে - ‘নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের ওপর সরকারি নজরদারির যে অভিযোগ আনা হচ্ছে তা ভিত্তিহীন। এর সাথে সত্যের কোনো সম্পর্ক নেই।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য অনুসারে - ‘সংসদের বাদল অধিবেশনে বাধা সৃষ্টি করতেই অধিবেশন শুরুর আগের দিন এই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। এর সঙ্গে একাধিক বিদেশি সংস্থা জড়িত, যারা ভারতের অগ্রগতি চায় না।... আপ ক্রোনোলজি সমঝিয়ে।’ আসামের মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা হিমন্ত বিশ্ব শর্মা পেগেসাস কেলেঙ্কারির কথা উল্লেখ করে ২০ জুলাই বলেছেন, “এটা সুপরিকল্পিত আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। এর পুরো পর্ব প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বদনাম করার জন্য রচিত হয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই তদন্তের অংশীদার। অ্যামনেস্টির ভূমিকা আমরা সবাই জানি। তারা ভারতে বামপন্থী সন্ত্রাসবাদকে উৎসাহিত করছে, দেশকে বদনাম করার জন্য রাতভর কাজ করছে। ভারতে অবিলম্বে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার দাবি করছি আমি। এই জাতীয় সংস্থা ভারতের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে বদনাম করার জন্য যে কোনো সীমা পর্যন্ত যেতে পারে।’ যদিও এত মন্তব্য পালটা মন্তব্যের পরেও এঁরা কেউ এখনও পর্যন্ত বলেননি যে পেগেসাস স্পাইওয়্যার ভারতীয়দের ওপর ব্যবহার করা হয়নি। অথচ ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’-তে একটা ছোট্ট উত্তর দিলেই সমস্যা মিটতে পারত। তা হলো, ভারত সরকার পেগেসাস কিনেছিল কী না - এর উত্তর সরকার এখনও দেয়নি।
ভারতের ক্ষেত্রে দ্য ওয়্যারের রিপোর্ট অনুসারে, দেশের প্রায় ৪০ জন সাংবাদিক, একাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সমাজকর্মী, ব্যবসায়ী সহ ৩০০-র বেশি মোবাইল নাম্বার হ্যাক করেছে পেগাসাস স্পাইওয়্যার। যেখানে দেশের ৩ প্রধান বিরোধী দলনেতা, সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারপতি, ৪০ জনের বেশি সাংবাদিক, নিরাপত্তা কর্মী, ব্যবসায়ী, বিজ্ঞানী, মানবাধিকার কর্মী এবং বেশ কিছু সরকারি আধিকারিক আছেন। অদ্ভুতভাবে বিজেপি’র বেশ কিছু নেতা মন্ত্রীর নামও এই তালিকায় আছে বলে দাবি করা হয়েছে। রিপোর্ট অনুসারে, লোকসভা নির্বাচনকে নজরে রেখে ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর ফোন হ্যাক করা হয়েছিল। গান্ধীর ব্যবহার করা দুটি ফোনই হ্যাক করা হয়েছিল। তালিকায় মোদী সরকারের মন্ত্রীসভায় নতুন তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের নামও রয়েছে। ২০১৭ সালে তাঁর ফোন নজরদারিতে ছিল বলে জানা গেছে। তখন তিনি সাংসদ বা মন্ত্রী কিছুই ছিলেন না। এছাড়াও প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনার অশোক লাভাসা, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ প্রশান্ত কিশোর সহ আরও বেশকিছু নাম আছে। কর্ণাটকের কংগ্রেস-জেডি(এস) জোট সরকারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের ফোন নম্বর এই স্পাইওয়্যারের সম্ভাব্য টার্গেটে ছিল বলে দাবি করা হয়েছে রিপোর্টে। এর মধ্যে রয়েছেন রাজ্যের তৎকালীন উপ-মুখ্যমন্ত্রী জি পরমেশ্বর, তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামী এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার ব্যক্তিগত সচিবরা। এই খবর প্রথম প্রকাশ্যে আনে এক ফরাসি অলাভজনক সংস্থা ফরবিডেন স্টোরিজ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছিলেন শীর্ষ আদালতের এক মহিলা কর্মী। অবসরের পর গগৈ এখন দাক্ষিণ্য পেয়ে রাজ্যসভার সাংসদ। দ্য ওয়্যার জানাচ্ছে, গগৈয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা মহিলার তিনটি নম্বর ছাড়াও তাঁর পরিবারের মোট ৮টি নাম্বার হ্যাক করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৫টি নাম্বার তাঁর স্বামীর এবং বাকি ৩টি নাম্বার তাঁর দুই দেওর ব্যবহার করেন।
ঢিল মৌচাকে পড়েছে নাকি কাঁচের ঘরে তা জানিনা। তবে ঢিল পড়েছে বটেই। আগে ঘর সারাই করা হবে অথবা পালটা পাটকেল ছোঁড়া হবে তা ভালোভাবে বুঝতে আরও ক’দিন অপেক্ষা করতে হবে। কারণ পেগেসাস নিয়ে বিরোধীরা যেমন সরব হয়ে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছে তেমনই আক্রমণ এসেছে বিজেপি’র ঘর থেকেও। সেই তালিকায় আছেন বিজেপি সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী, জোটসঙ্গী নীতীশ কুমাররা। এই কেলেঙ্কারি ‘ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি’র মতো হতে পারে ইঙ্গিত দিয়ে স্বামী প্রশ্ন করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে। তিনি স্পষ্টই ট্যুইট করেছেন - ‘যে ইজরায়েলি সংস্থা আমাদের টেলিফোন ট্যাপ এবং রেকর্ড করেছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে যদি বলেন যে মোদী সরকারের সঙ্গে সেই ইজরায়েলি সংস্থার কোনো যোগাযোগ নেই, সেটাই ঠিক পদক্ষেপ হবে। অন্যথায় ওয়াটারগেটের মতোই সত্য বিজেপি’কে আঘাত করবে এবং ক্ষতি করবে।’ আর নীতীশকুমার বলেছেন, “যা হয়েছে তা অত্যন্ত নোংরা। ফালতু কাজ। কাউকে এভাবে বিরক্ত করা ভালো নয়। নতুন প্রযুক্তি আসার সাথে সাথে তার অপব্যবহারও আসছে।’
সত্যিই এ বড়ো চাপ। বেঁচে থাকার চাপের সঙ্গে নজরদারির চাপ সামলানো। যে ‘মারীচ সংবাদ’ দিয়ে শুরু করেছিলাম সেখানেই আছে চাপের গুণকীর্তন। বলা আছে ‘দেশপ্রেমের চাপে শুধু গরিব মানুষ মরে,’। ‘দুর্বল মানুষের মনে ভয় বাঁধে বাসা, সেইখানেতে চাপ দিয়ে চাল চালা যায় খাসা’। এখন চলছে সহ্যক্ষমতার পরীক্ষা। কতদিন, কতক্ষণ, কতখানি চাপ এরা নিতে পারে তার পরীক্ষা। ‘মেরিবাবা’দের এখানে ওখানে থাবা বসানোর দিন শেষ তো হবে অবশ্যই। একদিন না হয় একদিন। আজ নয়, কাল নয়, পরশু।