৫৮ বর্ষ ৪৯ সংখ্যা / ২৩ জুলাই, ২০২১ / ৬ শ্রাবণ, ১৪২৮
পূর্বাঞ্চলে সম্প্রীতি নষ্ট করতেই আসামে বিজেপি’র গোরক্ষা বিল
গৌতম রায়
উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, গুজরাটের সঙ্গেই আগামী বছরের গোড়ায় ত্রিপুরা বিধানসভার ভোট। পশ্চিমবঙ্গ দখল করতে না পারলেও আসামে ক্ষমতা ধরে রাখাকেই ত্রিপুরাতে ক্ষমতায় ফিরে আসার একটা বড়ো উপাদান হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে আরএসএস-বিজেপি। ভোটের আগে থেকেই আসামে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের ভিতর দিয়ে গোটা সামাজিক কাঠামোকে ভাঙতে এনআরসি, সিএএ নিয়ে সেখানে তৎপরতা শুরু করেছিল বিজেপি। আসামে বিজেপি সরকারের তৈরি কনসেনট্রেশন ক্যাম্প ঘিরে গোটা দেশে নিন্দার ঝড় বয়ে গিয়েছিল। সেই মেরুকরণের উপর ভিত্তি করেই আসামে বিজেপি ক্ষমতায় ফিরে এসেছে।
ক্ষমতায় ফিরে আসার পর এনআরসি নিয়ে তৎপরতার ভিতরেই সেখানকার বিধানসভার চলতি অধিবেশনের প্রথম দিনই ‘গোরক্ষা’ বিল পেশ করেছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। হিন্দু-শিখ-জৈন ধর্মাবলম্বী প্রধান এলাকায় গোমাংস কেনাবেচা নিষিদ্ধ করা হয়েছে এই বিলে। তাছাড়াও অমুসলমানদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পাঁচ কিলোমিটারের ভিতরে গোমাংস কেনাবেচা বন্ধ করার কথা এই বিলে বলা হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে তিন থেকে আট বছর পর্যন্ত জেল হবে এবং তিন থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা জরিমানার সংস্থান রাখা হয়েছে। কৃষি কাজের জন্য গোরু কেনাবেচা বা বহন করার প্রয়োজন হলেও সবসময়েই উপযুক্ত প্রমাণপত্র রাখতে হবে বলে প্রস্তাবিত বিলে বলা হয়েছে। যদি কেউ গোরু কেনাবেচা সংক্রান্ত প্রমাণপত্র না দেখাতে পারেন, তাহলে তার দুই বছরের জেল এবং জরিমানা - দুটিই হবে।
আসাম সরকারের এই বিল ঘিরে ইতিমধ্যেই পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির প্রশাসকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। মেঘালয়ের অর্থনীতিতে গোমাংসের ব্যবসার একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বাইরের রাজ্য থেকে গোরু আসে মেঘালয়ে। আর সেটা আসে আসামের ভিতর দিয়ে। এই আইন কার্যকর হলে বাইরের রাজ্য থেকে মেঘালয়ে গোরু আসার বিষয়টি ঘিরে বড়ো রকমের সমস্যা তৈরি হবে। সাধারণ মানুষ, গরিব ব্যবসায়ী, যাঁরা গোরু আনার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন, তাঁরা চরম সমস্যার ভিতরে পড়বেন। মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা ইতিমধ্যেই বলেছেন, প্রস্তাবিত এই আইনটি নিয়ে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কথা বলবেন।
সামাজিক মেরুকরণকে তীব্র করে দেশের গোটা পূর্বাঞ্চলে তীব্র সাম্প্রদায়িক বিভাজন আনবার লক্ষ্যেই আসামে বিজেপি সরকার এই গোরক্ষা আইন আনতে চলেছে। এই বিল আইনে পরিণত হলে তার সুযোগ নিয়ে গোরু পাচারকারী বলে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে তারা প্রশাসনকে হাতিয়ার করে মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষদের উপর অত্যাচার চালাতে চায়, যেমনটা বিজেপি চালাচ্ছে উত্তর প্রদেশে, মধ্যপ্রদেশে, গুজরাটে। আসামে গোরক্ষা ঘিরে মুসলমানদের উপর অত্যাচার চালিয়ে এই ভয়াবহকতাকে বাঙালি আর উপজাতিদের ভিতরে সংঘাতে পরিণত করতে সঙ্ঘ-বিজেপি তৎপর হবে ত্রিপুরাতে। সেই তৎপরতাকে ত্রিপুরা বিধানসভার ভোটে জিতবার অন্যতম কৌশল হিসেবেও গোটা হিন্দুত্ববাদী শিবির ব্যবহার করবে।
আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা দখল করতে না পারলেও সত্তরের উপরে তাদের বিধায়ক সংখ্যা। বিজেপি’ই এই রাজ্যে প্রধান বিরোধী দল। আগামী পৌরসভা, পঞ্চায়েত ভোটকে লক্ষ্য হিসেবে ধরে পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণকে কিছুতেই ঝিমিয়ে পড়তে দেবেনা বিজেপি। তারা এই সাম্প্রদায়িক উত্তেজনাকে আগামী ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের নিরিখে ক্রমশ তীব্র থেকে তীব্রতর করে তুলবে। সেই ভাবনা থেকেই কৃষির স্বার্থে গোরু আদানপ্রদান ঘিরে এই আইনের সুযোগ নিয়ে আসামে মুসলমান নিধন ঘটিয়ে তার একটা প্রভাব পশ্চিমবঙ্গে ফেরাতে চাইবে। আসামে গোরু ব্যবসায়ীদের কাছে বৈধ কাগজপত্র থাকলেও যেসব ব্যবসায়ী জন্মসূত্রে মুসলমান, তাঁদের উপর ছলছুতোয় অত্যাচার চালাবে সেখানকার বিজেপি সরকার। আর সেই অত্যাচারের নিরিখে পশ্চিমবঙ্গে প্রচার চালাতে তৎপর হবে - ‘আসামে মুসলমানের হাতে হিন্দু আক্রান্ত’। সেই প্রচারকে অবলম্বন করে পশ্চিমবঙ্গ সহ গোটা পূর্বাঞ্চল এমনকী প্রতিবেশী বাংলাদেশেরও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশ নষ্ট করা বিজেপি’র আসামে গোরক্ষা বিল আনার রাজনৈতিক তাৎপর্য।
সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা ভোটের প্রচারে বিজেপি’র একমাত্র সম্বল ছিল সাম্প্রদায়িকতা। নিজেদের পরিচালিত সরকারের বিগত পাঁচ বছরের তথাকথিত সাফল্যের খতিয়ানও সেভাবে ভোট প্রচারে বিজেপি তুলে ধরেনি, যতোখানি তুলে ধরেছিল সাম্প্রদায়িক বিভাজনের ইতিবৃত্ত । বিগত পাঁচ বছর আসামে ক্ষমতায় থাকাকালীন যে সাম্প্রদায়িক দাপট হিন্দুত্ববাদীরা দেখিয়েছে তার জেরে দেশের পূর্বাঞ্চলে হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তির পালে বাতাস আনবার সবরকম প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। সেই চেষ্টাকেই বিজেপি গত বিধানসভা ভোটের আগে নিজেদের অন্যতম ভোট কৌশল হিসেবে ব্যবহার করেছে। এনআরসি’র ইস্যুর ভিতর দিয়ে সাম্প্রদায়িক কৌশল আর সাধারণ মানুষের কাছে বিগত পাঁচ বছর সরকার পরিচালনার সাফল্য, বস্তুত জনবাদী ভাবনার সাফল্যকেই তারা তুলে ধরেছিল।
বিজেপি-বিরোধী যে জোট সদ্যসমাপ্ত বিধানসভার ভোটে লড়েছিল, তার নেতৃত্বে ছিল কংগ্রেস। মহাজোট নামে পরিচিত সেই জোটে সিপিআই(এম), সিপিআই, সিপিআই(এমএল), ছাড়াও আঞ্চলিক দল ‘আঞ্চলিক গণ মোর্চা’ ছিল। এই সংগঠনটি ভোটের অল্প আগেই তৈরি হয়েছিল। তাছাড়াও ভোটের মাত্র মাস খানেক আগে তৈরি হওয়া ‘বোরোল্যান্ড পিপলস ফ্রন্ট’ও এই জোটে ছিল।
অপরপক্ষে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোটের বাইরেও ছিল আরও দুটি আঞ্চলিক দল। একটি হলো অসম জাতীয় পরিষদ। এই আঞ্চলিক দলটি তৈরি করেছেন প্রাক্তন সারা আসাম স্টুডেন্ট ইউনিয়ন, যা ‘আসু’ নামেই বিশেষ পরিচিত ছিল, সেই সংগঠনের প্রাক্তন নেতা লুরিনজ্যোতি গগৈ । অপর আঞ্চলিক সংগঠনটি হলো ‘রাইজর দল’। এটি তৈরি করেছেন কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতির নেতা অখিল গগৈ। এই দুটি আঞ্চলিক দল বিগত ২০১৯-২০ নাগাদ সিএএ বিরোধী যে আন্দোলন বিশাল আকার নিয়েছিল, সেই আন্দোলনের বিরোধিতার উদ্দেশ্য নিয়েই তৈরি হয়েছিল। সিএএ বিরোধী আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করতে জাতিসত্তা, আঞ্চলিকতার প্রশ্নগুলিকে ভোটের আগে সাধারণ মানুষের কাছে আবার চাগিয়ে দেওয়া একান্ত জরুরি ছিল হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তির কাছে। সেই উদ্দেশ্য নিয়েই পর্দার আড়াল থেকে ভিন্নমাত্রার এই দুই আঞ্চলিক দল বিজেপি এবং আরএসএস তৈরি করায় বলে শোনা গেছে। যদিও এই সংগঠন দু’টি তৈরির পিছনে তাদের পরোক্ষ ভূমিকার কথা কখনোই হিন্দুত্ববাদীরা স্বীকার করে না। আর ভোটের ঠিক আগে এই আঞ্চলিক দল দু’টিকে বিজেপি নিজেদের নিয়ন্ত্রিত এনডিএ জোটের ভিতর থেকেই কার্যত নিয়ন্ত্রণ করেছিল।
ভোটে বিজেপি’কে হারাতে কংগ্রেস - বাম সমন্বিত মহাজোট সিএএ বিরোধী আন্দোলনের উত্তাপকেই সবথেকে বেশি ব্যবহার করেছিল। রাজনীতির মূলধারায় এই নাগরিকত্বের প্রশ্নটিকেই সবথেকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে ভোট প্রচারে তুলে ধরার বিরোধীদের এই কৌশলের পালটা চাল হিসেবে বিজেপি কিন্তু ব্যবহার করে পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি, যা আজ জনবাদী নীতি নামক এক পোশাকি বিশেষণ প্রাপ্ত হয়েছে। বিজেপি কিন্তু বিরোধী মহাজোটের সিএএ বিরোধী প্রচারের জেরে নিজেদের সরকারের সাফল্যকে সবথেকে গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছে। আর তাদের সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির প্রশ্নগুলি সম্পর্কে অত্যন্ত সহনশীল মানসিকতার পরিচয় রেখেছে। দুর্নীতির প্রশ্ন বা অভিযোগগুলি কিন্তু হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তি কখনোই অস্বীকার করেনি। বরং এবারের নির্বাচনে দেখা গিয়েছে যে, দুর্নীতির মতো বিষয়গুলিকে অনেকটা সেফটি ভালভের মতো বিজেপি ব্যবহার করেছে। অর্থাৎ, দুর্নীতির বিষয়টি যতো ভোটের প্রচারে আসবে ততো মানুষের মনে জমে থাকা ক্ষোভটা প্রকাশ্যে চলে আসবে, যাতে আখেরে লাভ হবে বিজেপি’র - এটাই ছিল বিজেপি’র ভোট প্রচারের অন্যতম উল্লেখযোগ্য কৌশল। পশ্চিমবঙ্গে ২০১৬-র ভোটের সময়কালে একদিকে যখন নারদের ভিডিয়ো ফুটেজে চরম অস্বস্তিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেস, তখন কলকাতার ভোটের আগে মমতা যেভাবে বাড়িতে গিয়ে বাসন মেজে দিয়ে আসার কথা বলে এই ক্ষোভ থেকে নির্গমনের একটা জায়গা তৈরি করে ভোটে সুবিধা করে নিয়েছিলেন, অনেকটা ঠিক সেই পথেই আসামে এইবারের বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপি হেঁটেছে।
ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের পরামর্শে বিধানসভা ভোটের মাত্র কয়েকমাস আগে মমতা যেভাবে ‘স্বাস্থ্যসাথি’ ইত্যাদি জনমোহিনী কর্মসূচি নিয়েছিলেন, আসামে বিজেপি ঠিক সেই পথ ধরে হেঁটেছিল। ভোটের পরে যে ছাত্র ক্রেডিট কার্ডের পথে মমতা হাঁটছেন, তেমন চিন্তাভাবনা কিন্তু ভোটের আগে আসামে বিজেপি শুরু করে দিয়েছিল। ‘কন্যাশ্রী’ ইত্যাদি কর্মসূচির ভিতর দিয়ে শিক্ষা উপকরণ পৌঁছে দেওয়া, ছাত্রীদের হাতে নগদ টাকা পৌঁছে দেওয়ার মতো কর্মসূচি মমতা নিয়েছিলেন, ঠিক সেই পথেই আসামে বিজেপি-ও এগিয়েছিল। অর্থের সংস্থান আসবে কোথা থেকে? প্রকল্পগুলির ধারাবাহিকতা বজায় রাখা যাবে কি না? বাজেটে অর্থের অনুমোদন আছে কি না? এই স্বল্পমেয়াদী সুযোগ পাইয়ে দিলে দীর্ঘমেয়াদী সুযোগ হাতছাড়া হবে কি না? সাময়িক সুযোগ অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতের সৃষ্টি করবে কি না - জনবাদী রাজনীতি যেমন এইসব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলিকে ভোঁতা করে দেয়, ঠিক তেমনটাই ঘটেছিল ভোটের আগে আসামে। ভোটের আগে আসাম সরকারের নেওয়া এই জনবাদী কর্মসূচির দরুন ১৭ লক্ষ পরিবার উপকৃত হয়েছে বলে সরকারি তথ্যই বলছে (Assam Orunodoi Scheme, httpp://assam.gov.in/scheme-page/153) এই ধরনের কর্মসূচি যে আসামে বিজেপি-কে অনেকখানি মাইলেজ দিয়েছে বলে সমাজবিজ্ঞানী কঙ্গন কলিতা এবং অরুণাভ শইকিয়া উল্লেখ করেছেন তাঁদের গবেষণায় (টাইমস অফ ইন্ডিয়া - ২রা মে, ২০২০)। এই জনবাদী রাজনীতি সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করবার ক্ষেত্রে অ-বিজেপি রাজনীতিকরা আসামে কতোখানি সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পেরেছেন - তা ঘিরে জোরদার বিতর্ক আছে।
প্রচার মাধ্যমের একটা অংশ এই জনবাদী কর্মসূচির প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তবে সমাজবিজ্ঞানীরা কিন্তু এই পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি কোভিড ১৯-এর ভয়াবহ পরিস্থিতির ভিতরে কতোখানি দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সঙ্কট ডেকে আনতে শুরু করেছে - তা নিয়ে ইতিমধ্যেই সোচ্চার হতে শুরু করেছেন (পারভীন সুলতানার নিবন্ধ - ইপিডব্লিউ, ১২ই জুন, ২০২১, পৃষ্ঠা-১৯)। আসামের মতো রাজ্য, যেটি শিল্পের দিক থেকে বেশ পিছিয়ে পড়া রাজ্য, সেখানে এই ‘ডোল’ রাজনীতি পাবলিক সেক্টরের উপর কতোখানি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে ইতিমধ্যেই শুরু করেছে বোঝাতে আসামের কাগজকলগুলির সঙ্কট নিয়ে সমাজবিজ্ঞানীরা সোচ্চার হতে শুরু করেছেন।
মেরুকরণের রাজনীতি করবার ক্ষেত্রে ২০২১-এর ভোটে পশ্চিমবঙ্গে যেটুকু আবরণ হিন্দু সাম্প্রদায়িক শিবির রেখেছিল, তার বিন্দুবিসর্গও তারা রাখেনি আসামে। নিজেদের সাফল্যের পাশে বহিরাগত আর দেশের লোক - এই বিভাজন রেখাকে দগদগে করে, সেই ঘায়ের উপরে সেখানে ভোট করেছে বিজেপি। এই ধর্মীয় মেরুকরণের বিষয়টিকে আসামে বিজেপি আরও তীব্র করে তুলেছিল পশ্চিমবঙ্গে ভোটের দিকে লক্ষ্য রেখেও। তাছাড়া আসামের এই ধর্মীয় মেরুকরণের উত্তাপটাকে বিজেপি ত্রিপুরাতে আগামী ২০২২ সালের শুরুতে অনুষ্ঠিতব্য বিধানসভা ভোটের দিকে নজর রেখেও ছড়িয়ে দিতে তৎপর হয়েছিল (সমীর কর্মকারের প্রবন্ধ, ডেকান হেরাল্ড - ৮ই মার্চ এবং ২০শে মে, ২০২১)।
ভোট-উত্তর পরিস্থিতিতে জনবাদী ভাবনা, সরকারের সাফল্য - এইসব পথ থেকে সরে এসে সেখানে সরাসরি সাম্প্রদায়িক বিভাজনের পথকেই নিজেদের চলার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা হিসেবে তুলে ধরেছে বিজেপি। আসামে ক্ষমতায় ফিরে আসাকে কীভাবে দেশের গোটা পূর্বাঞ্চলে প্রভাবিত করতে পারা যায়, হিন্দু সাম্প্রদায়িক শিবিরে এখন সেটাই বড়ো রকমের চিন্তা ভাবনার বিষয়। আসামের জয়ের বিষয়টি কীভাবে আগামী বছরের শুরুতে ত্রিপুরা বিধানসভার ভোটে ব্যবহার করা যায় - সেটাই এখন আসামের তথা পূর্বাঞ্চলের আরএসএস এবং তাদের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি’র কাছে বড়ো প্রশ্ন হয়ে উঠেছে। গোরক্ষার নাম করে সাম্প্রদায়িক বিভাজন রেখাটিকে পূর্বাঞ্চলে যতো তীব্র করে তুলতে পারবে বিজেপি ততোই কেবল আসাম বা ত্রিপুরাতেই নয়, মিজোরাম, মণিপুর, অরুণাচলের মতো ছোটো ছোটো রাজ্যগুলিতে রাজনৈতিকভাবে বিজেপি’র লাভ। পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা দখল করতে না পারলেও আগামী ’২৪ সালের লোকসভা ভোটকে মাথায় রেখে হিন্দু-মুসলমানের বিভাজনকে তীব্র করবার লক্ষ্যে আসামের এই গোরক্ষা বিল আরএসএস এবং বিজেপি’কে হয়তো কিছুটা হলেও সুবিধা করে দেবে।