৫৮ বর্ষ ৪৯ সংখ্যা / ২৩ জুলাই, ২০২১ / ৬ শ্রাবণ, ১৪২৮
ডাক পাঠায় সুন্দরবন
সৌরভ চক্রবর্তী
(গত সংখ্যার পর)
ইটভাটার সমস্যা
নদী বাঁধের গায়ে ইটভাটা বাঁধের ক্ষতি করে, এরা নদীর মূল্যবান পলি সংগ্রহ করে একটা বড়ো জায়গা জুড়ে, ফলে তারা বাঁধ কেটে জল ঢোকায় পলি সংগ্রহের জন্য, জল জমে বাঁধের গায়, তারা গাছ কাটে এই ব্যবস্থার জন্য, এই ব্যবস্থা নদীবাঁধকে ভঙ্গুর করে। তাই ইটভাটা নদী বাঁধের গায়ে হওয়া বাঁধের জন্য বিপজ্জনক, ইটভাটা করতে হবে নদী থেকে দূরে।
কতো উঁচু হবে নদীবাঁধ!
ইয়াস সাইক্লোন জলোচ্ছ্বাসের যে দৃষ্টান্ত দেখালো তাতে ভবিষ্যতে আরও ভয়ঙ্কর সাইক্লোন প্রতিহত করার প্রয়াসে যদি কংক্রিটের বাঁধই হয় তাহলে কত উঁচু হবে সেই বাঁধ? বর্তমান হিসেবে সমুদ্রের মুখে কংক্রিটের বাঁধের উচ্চতা হলো ৭.২ মিটার, ভেতরের নদীতে ৬.৫ মিটার। এই ৬.৭ মিটার উঁচু কংক্রিটের বাঁধ নির্মাণ করতে গেলে ৫০ ফুটের ভূমি বা বেস থেকে নির্মাণ প্রয়োজন। এজন্য প্রয়োজন জমি অধিগ্রহণের, প্রয়োজন অর্থের, আরও উঁচু বাঁধ মানে তার ভূমি বা বেস আরও বাড়ানো, মানে আরও জমি অধিগ্রহণ! আর কতো উঁচু হবে নদীবাঁধ?
নদীবাঁধ রক্ষার ক্ষেত্রে নদীতে সমুদ্রে বাম্বু পরকুপাইন বা বাঁশের খাঁচা, স্পার ফেলা হচ্ছে। এতে ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে, বাঁধের গায়ে এই ব্যবস্থা পলি জমতেও সাহায্য করে।
নদীবাঁধে প্লাস্টিক ব্যাগ - চাদর
কিন্তু নদীবাঁধ বাঁধতে গিয়ে বা মেরামত করতে গিয়ে প্লাস্টিক ব্যাগ, প্লাস্টিক চাদর ব্যবহার করা হচ্ছে। এই প্রবণতা ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর, প্লাস্টিক বাঁধ এবং জমিকে ভঙ্গুরই করবে, নদীর জলে তৈরি করবে মাইক্রো প্লাস্টিকের দানা, যা মাছের পেট হয়ে মানুষের শরীরে চলে আসে। এক্ষেত্রে পরিবেশ বান্ধব বায়োডিগ্রেডেবল ব্যাগ, বস্তা, চাদর ব্যবহার করতে হবে। দ্বিতীয়ত,ইটের বাঁধ বা কংক্রিটের বাঁধের ক্ষেত্রে সাধারণ ইট এবং সিমেন্ট ব্যবহার না করে ফ্লাই অ্যাসের তৈরি ইট ব্যবহার করলে নদীবাঁধ পোক্ত হবে। কেন্দ্রীয় সরকার নোটিফিকেশন জারি করে বলেছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো তাদের ফ্লাই অ্যাশ নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে নিজ খরচায় দিয়ে আসবে। ফলে কাঁচামাল বিনে পয়সায় পাওয়া যাবে, এবার স্থানীয় মানুষজনকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে ফ্লাই অ্যাশ ইট নির্মাণ করা সম্ভব, এতে বিকল্প জীবিকার ক্ষেত্রে এক বড়ো পদক্ষেপ হওয়া সম্ভব।
একইভাবে সাধারণ সিমেন্ট ব্যবহার না করে গ্রিন সিমেন্ট ব্যবহার করলে তা হবে পরিবেশ বান্ধব এবং এক্ষেত্রেও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করা সম্ভব।
মীন ধরার সমস্যা
নদী বাঁধের সাথে যুক্ত রয়েছে আরও এক সমস্যা, তা হলো নদীবাঁধে মীন ধরার সমস্যা। বাগদা চিংড়ির সরু সুতোর মতো উত্তর লার্ভা স্তর যাকে মীন বলা হয়। বাঁধের গা বেয়ে নদীর জলে ধরা হয় মীন। ১০০০ মীন ধরলে ১০০ টাকা পাওয়া যায় এই সময়, আবার বছরের কখনো দিনে ২০ থেকে ৫০ টাকাও আয় হয়। জাল টানতে হয় বাঁধের গায় নদীতে বুক জলে। তাদের চলাফেরার ফলে সেখানে ম্যানগ্রোভ জন্মাতে পারে না তাতে ক্ষতি হয় বাঁধের। এর সাথে আছে আরও এক গভীর সমস্যা। মীন ধরতে গিয়ে শুধু তো আর বাগদার মীন জালে ওঠে না, ওঠে নানা মাছের ছোট্ট পোনা। বাগদার মীন সহ অন্য মাছের ছোট্ট পোনাগুলোকে হাড়িতে রাখা হয়, তার থেকে বেছে বেছে শুধু বাগদার মীনগুলোকে তুলে নেওয়া হয়, অন্য মাছের ছোট্ট পোনাগুলো ফেলে দেওয়া হয়, তাদের মৃত্যু ঘটে রোজ সুন্দরবনের নানা প্রান্তে লাখে লাখে, কোটিতে কোটিতে। এই ভাবে হারিয়ে গেছে, হারিয়ে যাচ্ছে মাছের অসংখ্য প্রজাতি।
মীন ধরার জালে উঠে আসে ম্যানগ্রোভ বা লবণাম্বু উদ্ভিদের ফল, এগুলিকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয় ফলে অসংখ্য লবণাম্বু উদ্ভিদের বিস্তার সম্ভাবনা বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে, সাংঘাতিক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে জৈব বৈচিত্র্যের। মীন ধরাকে বন্ধ করতে হলে তাদের বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করতে হবে, দু’তিন জনের গ্রুপ করে নৌকো করে দিতে হবে নদীতে মাছ ধরার জন্য।
লবণাক্ততা বৃদ্ধির বিপদ
সুন্দরবনের নদীতে লবণাক্ততা বাড়ছে ফলে অতিরিক্ত নুন সহনশীল নয় এমন ম্যানগ্রোভের সংখ্যা কমছে, আর নুন সহনশীল ম্যানগ্রোভ বাড়ছে। কমছে সুন্দরী গাছ বাড়ছে গরান গেঁওয়া। লবণাক্ততা বৃদ্ধি এবং বিশ্ব উষ্ণায়ন মাছের অতিরিক্ত নুন অসহিষ্ণু মাছের প্রজাতিগুলোর ক্ষতি হচ্ছে, তারা হারিয়ে যাচ্ছে। সার্বিকভাবে মাছের উৎপাদন কমছে।
এই সমস্যা ভূ-প্রাকৃতিক। পাঁচ ছশো বছর আগে গঙ্গার ধার পালটে গিয়ে গঙ্গার জলের স্রোত পদ্মার দিকে ধাবিত হয়েছে, ফলে ভাগীরথী হয়ে হুগলি নদীতে মিঠে জল কমে যাচ্ছে, আরেকদিকে বাংলাদেশের সুন্দরবন পুবদিকে ভারতের সুন্দরবনের পশ্চিম দিকে ঢাল পশ্চিম দিকে হেলে আছে, ফলে ভারতের সুন্দরবনের লবণাক্ততা বাড়ছে, একইসাথে হুগলি নদীতে মিঠে জলের সাথে পলির পরিমাণ কমছে। এর প্রতিকার প্রায় অসম্ভব। ফরাক্কার জল চুক্তি খানিকটা প্রতিকার করতে পারে,আর গঙ্গা, ভাগীরথী, হুগলি নদীর নাব্যতা বৃদ্ধিতে খানিকটা প্রতিকার সম্ভব। এই কাজ ভারত সরকারের, কিন্তু বছরের পর বছর গঙ্গা দিয়ে জল বয়ে যায়, কিন্তু সে জল সরকারের কানে যায়না।
নুন-জল সহনশীল দেশীয় প্রজাতি ও অন্যান্য
লবণাক্ততার প্রভাব পড়ছে সুন্দরবনের জৈব বৈচিত্র্য এবং সুন্দরবনের মানুষের জীবিকায়। বিশ্ব উষ্ণায়নজনিত আবহাওয়া পরিবর্তনে একের পর এক সাইক্লোন অভিঘাতে সমুদ্র নদীর জলোচ্ছ্বাসে নদী বাঁধ ভেঙে ভেতরে কৃষিজমি নোনা জলে ভাসিয়ে দিচ্ছে, অনেকটা দিন ধরে নোনা জল জমে থাকলে সেই জমিতে এক দু'বছর ধান চাষ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে মানুষ নোনা জলে মেছো ঘেরি বা ফিশারির দিকে চলে যাচ্ছে। আগেই এই সমস্যার কথা আলোচিত হয়েছে। এ সমস্যার সম্ভাব্য প্রতিকার হলো সুন্দরবন জুড়ে হারিয়ে যাওয়া দেশীয় প্রজাতিগুলি, যেগুলি নুন সহনশীল, ডোবা জলে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে, এমন দেশীয় প্রজাতির এবং কৃষি গবেষণা থেকে উদ্ভূত ডাঙা জমি, নিচু জমি, নোনা জমির উপযোগী ধানের প্রজাতি, শস্য বীজ সবজির বীজ, সরকারের পক্ষ থেকে চাষিদের বিনামূল্যে সরবরাহ করা, সেইসাথে আনুষঙ্গিক সুবিধা প্রদান করতে হবে। সচেতনতামূলক প্রচার করে জনপ্রিয় করতে হবে। এই উদ্যোগকে না নেওয়া গেলে গুরুতরভাবে নষ্ট হয়ে যাবে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য।
মানুষ-বন্যপ্রাণ সংঘাত
সুন্দরবনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। পেটের তাগিদে জীবিকার প্রয়োজনে সুন্দরবনের মানুষকে গভীর জঙ্গলে যেতে হয় মধু আহরণে, গোলপাতা সংগ্রহ বা মাছ শিকার করতে, সেখানে বাঘ-কুমিরের আক্রমণে তাদের মৃত্যুমুখে পতিত হতে হয়। প্রাক্ ব্রিটিশ আমল থেকেই এরা এ কাজ করে আসছে। এই জীবিকা তাদের অধিকার। প্রথম সুন্দরবন টাইগার রিজার্ভ এদের মাছধরা, গোলপাতা সংগ্রহের অধিকার দিয়েছিল। বিগত কয়েক দশকে কোর এরিয়া ২০ শতাংশ বেড়েছে, ফলে এদের মাছ ধরার এলাকা কমে গেছে। একটা তথ্যে পাওয়া যাচ্ছে আগে মাছ ধরার এলাকা ছিল ৮৯৩. ৩৮ বর্গ কিলোমিটার যা এখন হয়েছে ৫২৩ বর্গ কিলোমিটার। মাছের পরিমাণ কমেছে ফলে তাদের আরও গভীর জঙ্গলে যেতে হচ্ছে। ঘটছে মৃত্যুর ঘটনা। এইসব মানুষের বিধবা পত্নীদের বলা হয় বাঘ বিধবা বা টাইগার উইডো। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের ২০১৯ সালের ২৮শে জুন সংখ্যায় বলা হয়, এই সুন্দরবনে এই বিধবাদের সংখ্যা ৩০০০ জন। এদের দাবি হলো সরকারকে প্রতি মৃত ব্যক্তি পিছু ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং মাসে ৩০০০ টাকার পেনশনের ব্যবস্থা করতে হবে। তারা চেষ্টা করছে তাদের কথা সরকারের কাছে পৌঁছে দিতে, কিন্তু সে কথা কেউ শোনে না। এই সমস্যার প্রতিকার সরকার ছাড়া আর কে করবে!
পরিবেশ উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন
বিশ্ব উষ্ণায়নের পরিপ্রেক্ষিতে সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধিজনিত কারণে সুন্দরবনের দ্বীপগুলোর ডুবে যাওয়া, ভূমিক্ষয়, এছাড়া সুন্দরবনের প্রিম্যাচিওর সেটেলমেন্টের কারণে অবনমন ইত্যাদি সমস্যা শুরুতে আলোচিত হয়েছে এই সমস্যার সমাধানে সরকারের সুনির্দিষ্ট পুনর্বাসন প্রকল্প ঘোষণা করা উচিত। ঘোড়ামারা দ্বীপ ডুবে যাওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষায়, আছে মৌসুনি দ্বীপ, এছাড়াও অন্যান্য দ্বীপগুলিতে হচ্ছে ভূমিক্ষয়, হঠাৎ করে বড়ো কিছু ঘটনা ঘটলে মানুষগুলো যাবে কোথায়? এর মধ্যেই লোহাচড়া, সুপারিডাঙা, কাবাসগাদি, দক্ষিণ তালপট্টি ডুবে গেছে। ৩০০০ মানুষ পরিবেশ উদ্বাস্তু হয়েছেন, বাকিদের কী হবে?
এ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে সরকারকে। ঘোষণা করতে হবে সুনির্দিষ্ট পুনর্বাসন প্যাকেজ।
সুন্দরবনের দূষণ
আছে প্লাস্টিক দূষণ। ভেসেল, ভুটভুটি, লঞ্চের তেল দূষণ, শব্দদূষণ, আছে নানা যানবাহনে কাটা তেল বা নিম্নমানের জ্বালানি তেলজনিত দূষণ। সুন্দরবনের মাটি সুস্থিত নয়, এ অবস্থায় জমিতে এবং নদী বাঁধে প্লাস্টিক দূষণ ভয়ঙ্কর, ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক ব্যাগ, বস্তা, প্লাস্টিক চাদর নিকাশি ব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করে দেয়। ফলে জল জমতে সাহায্য করে। ট্যুরিস্টরা শৃঙ্খলা মানে না।নদীসহ যত্রতত্র প্লাস্টিক ফেলে, সাধারণ মানুষও এর বাইরে নয়। নদীতে জলস্রোতে দীর্ঘদিন প্লাস্টিক পড়ে থাকলে তা ক্ষুদ্র দানায় পরিণত হয়,যাকে বলা হয় মাইক্রোপ্লাস্টিক। এই মাইক্রোপ্লাস্টিক মাছের শরীরে যায়, সেখান থেকে মানুষের শরীরে আসে। ভেসেল, ভুটভুটি, লঞ্চের তেলে নদীতে যে দূষণ তৈরি করে তাতে মাছেদের ক্ষতি হয়।জঙ্গলের ভিতরে ট্যুরিস্টরা ডিজে বাজায়, শব্দ দূষণ করে। এতে প্রাণীদের ভয়ঙ্কর ক্ষতি হয়। এ বিষয়ে সরকারি নজরদারি জরুরি।
ম্যানগ্রোভ নিধন - চোরাশিকার
মেছো ঘেরির জন্য এবং কাঠ বিক্রির পয়সার লোভে ম্যানগ্রোভ জঙ্গল সাফ করছে মানুষ, আছে চোরাশিকার, হরিণ, বুনো শুকর থেকে বাঘ, কচ্ছপ, গৃহপালিত পশুদের চালান করা। ২০১৯ সালের ১০ই এপ্রিল টাইমস অফ ইন্ডিয়া এক রিপোর্টে বলছে, ২০১১-২০১৯ সাল পর্যন্ত ১০টি বাঘকে হত্যা করা হয়েছে, এর মধ্যে ২০১৪ সালের হিসেব নেই। সরকারকে ১৯৭২ সালের ওয়াইল্ড লাইফ প্রোটেকশন আইনকে আরও জোরদারভাবে প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়াও রয়েছে নানান গুরুতর সমস্যা।
এখুনি চাই মাস্টারপ্ল্যান
এই সমস্যাগুলির সমাধানের দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। সুন্দরবনের সমস্যা মানে মানুষকে যুক্ত করে জীব বৈচিত্র্যের এবং মানুষের জীবন-জীবিকার সমস্যা। সমস্যা সুন্দরবনের অনন্যসাধারণ বাস্তুতন্ত্রের, উদ্ভিদ ও প্রাণীকুল যারা এক জটিল শৃঙ্খলের বিন্যাসে বিন্যস্ত। সুন্দরবনের সমস্যাগুলি তাই একের সাথে অন্যটি অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত, এই সমস্যাগুলির সমাধানে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের পক্ষে এক নিবিড় গবেষণাধর্মী সমীক্ষা এই মুহূর্তেই জরুরি এবং তার থেকে উঠে আসা এক সুসংহত মাস্টারপ্ল্যান যাকে অচিরেই কার্যকর করতে হবে এই দুই সরকারকে।
ঋণঃ
● সুন্দরবন উৎসে ফেরা, কমল চৌধুরী
● প্রত্নতত্ত্ব সুন্দরবন, ডঃ মঞ্জু ব্যানার্জি
● সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য, প্রণবেশ সান্যাল