৬০ বর্ষ ৪৫ সংখ্যা / ২৩ জুন, ২০২৩ / ৭ আষাঢ়, ১৪৩০
মানুষের পঞ্চায়েত গড়ে তুলুন
অমল হালদার
শ্রদ্ধেয় সত্যব্রত সেনের মতো বিখ্যাত অর্থনীতিবিদরা যখন পঞ্চায়েত পরিচালনা সম্পর্কে পরামর্শ দিতেন সেই সময় বারংবার বলার চেষ্টা করতেন যে, পঞ্চায়েত পরিচালনায় দাতা ও গ্রহীতার সম্পর্ক যেন তৈরি না হয়। এই সম্পর্ক কখনও বেশিদিন স্থায়ী হয় না। উদারহণ দিতে গিয়ে বলতেন যে, ১৯৭৮ সালে বিধ্বংসী বন্যায় সারা রাজ্যে লক্ষ লক্ষ ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার একটাও বাড়ি তৈরি করে দেননি। বাড়ি তৈরির জন্য বাঁশ, খড়, কাঁড়ি, দড়ি সহ সমস্ত উপকরণ দেওয়া হয়েছিল। সঙ্গে দেওয়া হয়েছিল বাড়ি তৈরির জন্য পর্যাপ্ত মজুরি ও কয়েক মাসের খাবার। এই সব দেখে তৎকালীন কোনো কোনো বিরোধী নেতা মন্তব্য করেছিলেন, বামফ্রন্ট সরকার ৭৮-এর বন্যায় ভেসে যাবে। ইতিহাস এই কথা বলে - এর ফলে বামফ্রন্টের ক্ষমতা তো কমেনি বরং গ্রামের পঞ্চায়েতের প্রতি আস্থা অনেক বেশি বেড়ে গিয়েছিল। অতীতের এই কথাগুলি উল্লেখ করা হলো এই কারণে যে, বর্তমান রাজ্য সরকার যেভাবে কিছু তথাকথিত জনকল্যাণ কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে দাতা-গ্রহীতার সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করছেন এই মোহ কাটতে বাধ্য। সারা রাজ্যে মোহ কাটার মতো পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। এরপর যখন আমাদের কর্মীরা বাড়ি বাড়ি প্রচারে স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করছেন যে, কোনো জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের পরিবর্তন হবে না, যে টাকা দিচ্ছেন তা কারও বাপুত্তি সম্পত্তি নয়, এটা সরকারি টাকা, টাকা তছনছ করে প্রকল্পের টাকা নিয়ে যে লুঠ চলছে তা বন্ধ হবে। অনেক বেশি জনমুখী প্রকল্ল গ্রহণ করা হবে যাতে কৃষক, খেতমজুর সহ সমাজের অন্যান্য মানুষ উপকৃত হবেন। সরকারি টাকা প্রকল্পের নামে লুঠ করে এই রাজ্যটাকে ঋণের সাগরে ডুবিয়ে ধ্বংস করার চেষ্টা বন্ধ করতে হবে, পঞ্চায়েত নির্বাচন রাজ্যটাকে বাঁচানোর চেষ্টার একটা বড়ো ধাপ, এই পরীক্ষায় আমাদের উত্তীর্ণ হতেই হবে।
এবার নাটকীয়ভাবে পঞ্চায়েত নির্বাচনের তারিখ ঘোষিত হলো। জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে চাষিরা যখন বীজ ফেলা বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ধান রোয়ার কাজে ব্যস্ত তখনই ক্ষণ তিথি বিচার করে ভোটগ্রহণ পর্বের দিন ঠিক হলো। কি কঠিন গোপনীয়তায় রাজ্য সরকার ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনের অতি সক্রিয়তার সাথে নির্বাচনী নির্ঘণ্ট প্রকাশ করলেন ভাবখানা এমন যে, বিরোধীদের অপ্রস্তুত রেখে যুদ্ধজয়ের কৌশলে বাজিমাত করতে হবে। ময়দানে নেমে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র, সন্ত্রাসকে উপেক্ষা করে মনোনয়ন জমা দিলেন বিরোধীরা, তাঁদের ক্ষেত্রে কত নিয়ম! খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে সার্টিফিকেট সহ অন্যান্য কাগজ। শাসকদলের কি বেহাল অবস্থা, সমস্ত নিয়ম কানুন নস্যাৎ করে শাসকদলের গোছা গোছা মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া ও গ্রহণ করার আর এক নতুন খেলা দেখল পশ্চিমবঙ্গ। প্রত্যক্ষদর্শীদের কারও কারও অভিমত - যদি ঠিকমতো স্ক্রুটিনি হতো তাহলে শাসকদলের কটা মনোনয়নপত্র টিকে থাকত সে সম্পর্কে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ আছে। গোপনে বাজিমাত করতে গিয়ে শাসকদের ল্যাজেগোবরের এই চেহারা আমাদের কর্মীদের মনোবল বা আত্মবিশ্বাস যেন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
।। দুই ।।
১৯৭৮ সালে বাস্তুঘুঘুদের হটিয়ে গ্রাম গ্রামে মানুষের পঞ্চায়েত প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার। সেদিন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে উন্নয়নের অংশীদার হয়েছিলেন এই বাংলার মানুষ। একটির পর একটি পঞ্চায়েত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে শুধু বামপন্থীরা জয়লাভ করেনি বিরোধীরাও জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি বা গ্রাম পঞ্চায়েতে জয়লাভ করেছেন। পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্র ছিল তাই পঞ্চায়েতে পরাজিত হলেও বিরোধীদের পঞ্চায়েত পরিচালনায় কোনো অসুবিধা হয়নি। ৩৪ বৎসর পর বামফ্রন্ট সরকারের পতনের পর গণতন্ত্রের নিধন যজ্ঞ শুরুর সময় ২০১৩, ২০১৮ সালে শাসকদলের সোচ্চার ঘোষণা ছিল - বিরোধী শূন্য পঞ্চায়েত গঠন তাঁদের আবশ্যিক কর্তব্য। ‘বদলা নয়, বদল চাই’ - এই স্লোগানের আড়ালে হাড়হিম করা সন্ত্রাস দেখেছেন এই বঙ্গের মানুষ। খুন, বাড়ি-ঘর আগুন, লুঠপাট, জরিমানা, মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার, অসংখ্য কর্মী ঘরছাড়া, চাকুরি স্থলে যেতে বাধা দেওয়া, নিজ জমিতে চাষাবাদ বন্ধ, লুঠের সময় বাড়ির শিশুরা পর্যন্ত আক্রমণ থেকে রেহাই পায়নি। এই সমস্ত ঘটনা মানুষ প্রত্যক্ষ করেছেন। সন্ত্রাসের কারণে মুখ খুলতে পারেননি। খুবই সন্তর্পণে একান্ত আলোচনায় নিন্দা করেছেন। কেউ কেউ সেই সময় বলতে শুরু করেন যে, একটু মুখটা পাল্টাতে গেলাম কিন্তু এ কি হলো! দইয়ের পরিবর্তে যে চুন খেয়ে ফেললাম, গলার জ্বালা যত বেড়েছে তত মানুষ খুব ধীরে হলেও প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেছেন। এখন প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে মানুষ অনেকটাই সোচ্চার, তাঁরা বলছেন ১৩ বৎসরে জনগণের কোনো উন্নতি হোলো না। ঋণের দায়ে রাজ্যটা ডুবতে বসেছে, উন্নতি হয়েছে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের। ১ ছটাক থেকে ৪ ছটাক তৃণমুল কর্মী সবাই তোলাবাজ। ফুলে ফেঁপে ঢোল হয়ে গেছে পঞ্চায়েত প্রধান, সভাপতিসহ অন্যান্য অংশের কর্মীরা। গাড়ি-বাড়িসহ বিপুল সম্পদের মালিক। চাকুরিকে কেন্দ্র করে নেতা-মন্ত্রীদের জেলে যাওয়া থেকে বোঝা যায় কি বীভৎস লুঠ চলেছে এই বাংলায়। জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে মানুষ বুঝতে পেরেছেন যে, পশ্চিমবঙ্গের চোর-জোচ্চররা ক্ষমতায় আসীন। এই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী কবে শেষ সত্যি কথাটা বলেছেন তা নিয়ে হয়তো আগামীদিনে গবেষণা চলতে পারে, কিন্তু এটা তো ঠিক এই মুখ্যমন্ত্রীর কথা বিশ্বাস করেই এই বাংলার মানুষ আজ পথে বসেছেন।
।। তিন ।।
এই রাজ্যের কোনো মানুষ আজ ভাল নেই। বাংলার অন্নদাতা কৃষকদের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। কোনো ফসলের দাম নেই। গ্রামে গ্রামে তৃণমূল আশ্রিত ফড়েরা কৃষকের ফসল লুঠ করছে। গ্রামাঞ্চলে তৈরি হয়েছে নব্য ধনী, যাঁরা গ্রামের অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। গ্রামের সন্ত্রাস সৃষ্টির মদতদাতা এই সব লোকজন। একদিকে ফসলের দাম নেই, অপরদিক বীজ, সার, ডিজেল, বিদ্যুৎ, কীটনাশক সহ সমস্ত উৎপাদনের উপকরণের দাম চড়চড় করে প্রতিদিনই বাড়ছে। এর সাথে সারে ভেজাল, বীজে ভেজাল তো আছেই। কৃষিতে অলাভজনক চেহারা প্রতিদিনই প্রকট হচ্ছে, কৃষকের সন্তান আর কৃষক হতে চায় না। ভিন্ন জীবিকার সন্ধানে অন্য ক্ষেত্রে ছুটে বেড়াচ্ছে। বামফ্রন্টের আমলে সমবায় ব্যবস্থার যে প্রসার ঘটেছিল, তাকে লাটে তুলে দেওয়া হচ্ছে। এই ফাঁকে ঢুকছে মাইক্রো ফিনান্স। চড়া সুদে টাকা ধার দিয়ে গ্রামবাংলার গরিবদের জীবনে বিপদ ডেকে এনেছে। কর্মসংস্থানহীন এই বাংলার যৌবন এখন ভিন রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিক। লটারিসহ ব্যাপক নেশার দ্রব্য গ্রামকে গ্রাম ছেয়ে গেছে। দ্রুত ক্ষয় পাচ্ছে গ্রামীণ সামাজিক সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ।
আত্মহত্যার সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। সরকারি রিপোর্টেই প্রকাশ, একটি জেলায় মাত্র এক বৎসরে ১২২ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। শস্যভাণ্ডার বলে এই সময়ে কথিত পূর্ব বর্ধমান জেলায় এক মাসে ১৪৭ জন দেনার দায়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। এক্ষেত্রে পুরানো কথা একটু ভাবা দরকার, বামফ্রন্টের আমলে খাস ও বেনামি জমি উদ্ধার করে ৩০ লক্ষ মানুষকে শুধু পাট্টা দেওয়া হয়নি, শুধুমাত্র বর্গা রেকর্ড করা হয়নি, কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি, ফসলের ন্যায্য মূল্য, সমবায়ের মাধ্যমে ঋণ ইত্যাদি ব্যবস্থার মাধ্যমে ধান, আলুসহ সবজি উৎপাদনে সারা দেশে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল এই বাংলা। আজ কার্যত সব ধ্বংস। ইতিমধ্যে শালিজমির পরিমাণ কমছে, রাস্তা-ঘাট, ভিটে-মাটি ইত্যাদির কারণে এই সমস্যা প্রবল হচ্ছে। এই অবস্থায় প্রয়োজন উৎপাদন বৃদ্ধি, তা তো হচ্ছেই না,বরং বর্তমানে কৃষক নিজ জমিতে চাষ-আবাদে ইচ্ছুক নয়। গ্রামে গতর খাটিয়ে পরিশ্রম করতে পারে, এমন মানুষকে কয়েক বস্তা ধানের বিনিময়ে বিনা কাগজে জমি চাষ করতে দিচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রীর কথায় যদি কৃষকের আয় তিনগুণ বৃদ্ধি হয়ে থাকে, তাহলে কৃষক কখনো নিজ জমি চাষ করা ছেড়ে দিত না। কৃষকের অবস্থা যত খারাপ হচ্ছে, খেতমজুরদের জীবনেও নেমে আসছে অন্ধকার।
১০০ দিনের কাজ বন্ধ, চুরি করল তৃণমূলের পঞ্চায়েত, আর টাকা বন্ধ করল কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। সঠিক তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দিয়ে ১০০ দিনের কাজটা শুরু হোক না - সেক্ষেত্রে বিজেপি সরকার নীরব। গ্রামে কৃষি কাজে ঢুকছে নতুন নতুন যন্ত্র। কৃষি কাজে লোক কমে যাচ্ছে। কী হবে খেতমজুরদের পরিবারগুলির। কেন্দ্র-রাজ্য উভয় সরকারের কোনো পরিকল্পনা নেই। এবারে কেন্দ্রীয় বাজেটে ১০০ দিনের কাজের টাকার বরাদ্দ কমানো হলো - কী কৈফিয়ৎ দেবেন বিজেপি’র নেতারা। কৃষকদের কাছ থেকে খাদ্যশস্য কেনার বরাদ্দ ছাঁটাই করা হলো, আগামীদিনে রেশন ব্যবস্থা টিকে থাকবে কীনা - সেই প্রশ্ন জোড়ালো হচ্ছে। রাজ্যে বিএলএলআরও অফিসগুলি দুর্নীতির আখড়া। কত জমির রেকর্ড ঠিক থাকবে তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিচ্ছে।
।। চার ।।
কেন্দ্রের বিজেপি সরকার করপোরেটদের স্বার্থ রক্ষা করতে ব্যস্ত, যতই দেশের প্রচারমাধ্যম আড়াল করার চেষ্টা করুক, সারা দেশের মানুষ ক্রমশ বুঝতে পারছেন, দেশে করপোরেটদের স্বার্থে কৃষি আইন পাশ করা হয়েছিল। কোভিড মহামারীর মধ্যেও লক্ষ লক্ষ কৃষক দিল্লির উপকণ্ঠে ৩৭৮ দিন অবস্থান করলেন। অবস্থান চলাকালীন ৭০০ মানুষের মৃত্যু হলো। আন্দোলনে মোদি সরকার পিছু হটতে বাধ্য হলেন। কৃষি আইন প্রত্যাহার হলো, কিন্তু তিনি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা একটাও রক্ষা করা হলো না। অন্নদাতা কৃষকদের সঙ্গে এই বিশ্বাসঘাতকতা দেশের কৃষক মেনে নিতে পারেনি। তাই নতুন উদ্যমে আবার দ্বিতীয় পর্যায়ে লড়াই শুরু হচ্ছে। সারা দেশে ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিয়ে শুরু হচ্ছে বিক্ষোভ। আগামীদিনে এই বিক্ষোভে প্রবলভাবে সংগঠিত হতে হবে। আমাদের রাজ্যেও আদানিরা প্রবেশ করেছেন। অন্যদিকের কথা তুলছি না। রাইসমিল কেনা শুরু হয়েছে। চালের একচেটিয়া কারবারের দিকে তাঁদের মনোযোগ বাড়ছে। আগামীদিনে চালের দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা প্রবল। যাঁরা উৎপাদন করেন, তাঁরা দাম পাবেন না। কিন্তু যাঁরা চাল কিনে খান, তাঁদের অবস্থা শোচনীয় হবে।
আরএসএস পরিচালিত বিজেপি’র প্রচার কৌশল অনেকেই আমরা বুঝতে পারি না। বর্তমান রাজ্য সরকারের আনুকূল্যে আরএসএস-এর প্রচুর শাখা তৈরি হয়েছে। নিত্যনতুন কৌশলে তাঁদের বিভাজন প্রক্রিয়া ক্রমশ বাড়ছে। ওরা জানে ধর্ম, জাতপাতের বিভাজন ছাড়া ওরা টিকতে পারবে না। মণিপুর আজ জ্বলছে। সেখানে বিভেদের যে বীজ পোঁতা হয়েছিল, আজ তা সর্বগ্রাসী চেহারা নিয়েছে।
আমাদের রাজ্যেও চলছে ব্যাপক ষড়যন্ত্র। জঙ্গলমহলগুলিতে যখন অরণ্যের ঘুম ভাঙতে শুরু করল, তখন সেখানে শুরু হলো আর এক ষড়যন্ত্র, আসলে ভাত-কাপড়, চাকরি ইত্যাদি সমস্যাগুলি যাতে মাথায় না আসে তার জন্যে এই খেলা। কোথাও রাজবংশী, কোথাও মতুয়া সম্প্রদায়, কোথাও আদিবাসী, কুর্মী বিরোধ, এগুলি আগে তো ছিল না, তাহলে বাড়ছে কেন? সমাজের শিক্ষিত অংশের মানুষদের গভীরভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করতে হবে।
এইসব দেখে আমরা ভুলতে বসেছি - জিনিসপত্রের দাম কীভাবে বাড়ছে, বাড়ছে গ্যাসের দাম, শিক্ষক, কর্মচারীদের মহার্ঘ্য ভাতার প্রাপ্য অধিকার নিয়ে আন্দোলন প্রতিদিন নজরে থাকছে না। যোগ্য প্রার্থীরা যাঁরা শিক্ষকের কাজ থেকে বঞ্চিত, তা আর মনে পড়ছে না। এই রাজ্যে মহিলাদের উপর আক্রমণ প্রতিদিনই বাড়ছে। একটি সূত্র জানাচ্ছে, এই বাংলা থেকে দেড় লক্ষ মহিলা নিখোঁজ। প্রশাসন নির্বিকার, কোনো বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। সত্যি কথা বলতে কি এই ঘটনাগুলি আমরা ভুলতে বসেছি। জীবনের এই সমস্যাকে ভুলিয়ে দেওয়ার জন্যই অপ্রাসঙ্গিক বিষয়গুলিকে সামনে আনা হচ্ছে। সেই কারণে আমাদের নির্দিষ্ট লক্ষ্যের প্রতি অবিচল আস্থা রাখতে হবে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে সাফল্য একটা ধাপ। এর ফলে সব সমস্যার সমাধান হবে না। এই নির্বাচনে বামপন্থী ও সহযোগী শক্তির জয়লাভের অর্থ - যাঁরা রাস্তায় বসে আছেন, যাঁরা প্রতিদিন দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছেন, যাঁরা জীবন-জীবিকার জন্য লড়াই করছেন, তাঁদের প্রেরণা জোগাবে। তাই, আসুন দিকে দিকে আওয়াজ তুলি চোরেদের পঞ্চায়েত থেকে হটাও, আবার মানুষের পঞ্চয়েত গড়ে তোলো।