৬০ বর্ষ ৪৫ সংখ্যা / ২৩ জুন, ২০২৩ / ৭ আষাঢ়, ১৪৩০
প্রসঙ্গঃ ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচন
বিকল্পের সন্ধান দিয়েছিল বামফ্রন্ট সরকার
দীপক মিত্র
রাজ্যের ত্রিস্তর পঞ্চায়েত দখল করতে রাজ্যের শাসকদল, রাজ্যের সরকার ও সহযোগী শক্তি, নির্বাচন কমিশন, সঙ্গে প্রশাসন ও পুলিশ ঝাঁপিয়া পড়েছে। বাজার গরম করতেই মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো সেজেগুজে রাজকীয় ব্যবস্থাপনায় মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়ে নির্বাচনী প্রচারে নেমেছেন। গ্রামীণ মানুষ ভোট দেওয়ার অধিকার পেলেই শাসকদল ক্ষমতাচ্যুত হবে - এই ভয় থেকে মুখ্যমন্ত্রীও প্রচারে নেমে দেদার সুযোগ-সুবিধার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলেছেন। পাশাপাশি ভোট লুট করার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত শাসকদল। ২০১৮ সালের ভোট লুট অভিযানের অভিজ্ঞতা থেকেই প্রস্তুত এবং ঐক্যবদ্ধ গ্রামের মানুষ। এই নির্বাচনের প্রাক্কালে মানুষের সামনে বামফ্রন্ট সরকারের সাফল্যগুলি তথ্যের ভিত্তিতে সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হয়েছে।
।। এক ।।
১৯৭৭ সালে পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকার গড়ে ওঠার পরই মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর ঘোষণা অনুসারে একের পর এক কর্মসূচি কার্যকর করার মধ্য দিয়ে রাজ্যের গ্রাম ও শহরের মানুষ ফিরে পেয়েছিলেন অধিকারবোধ ও নানাবিধ সুবিধা। কর্মসূচিগুলির মধ্যে ছিল ভূমিসংস্কার, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, কৃষি উন্নয়ন, সেচ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ, ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো, দারিদ্র্য দূরীকরণ, বিভিন্ন প্রকল্প সহ স্বনিযুক্তি প্রকল্প, মহিলাদের স্বনির্ভরতা, সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প, সংখ্যালঘু ও অনগ্রসর মানুষের কল্যাণ কর্মসূচি, মৎস্য চাষে উৎসাহদান, সুন্দরবন উন্নয়ন, অরণ্যের অধিকার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জনস্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, আবাসন পরিবহণ ও অন্যান্য ক্ষেত্র সহ মানব উন্নয়নের নানা কর্মসুচি। ওই নীতি ও কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সারা দেশের সামনে এই রাজ্যের বামফ্রন্ট সরকার বিকল্পের সন্ধান দিয়েছিল।
।। দুই ।।
বামফ্রন্ট সরকার গড়ে ওঠার পরই গৃহীত ভূমিসংস্কার সংশোধনী আইন দ্রুত রূপায়ণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ভূমিসংস্কারের তিনটি মূল বৈশিষ্ট্য হলো - (এক) বেনামি ও সীমাবহির্ভূত জমি উদ্ধার, (দুই) উদ্ধার করা জমি দরিদ্র ও ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে বণ্টন, (তিন) অপারেশন বর্গা কর্মসূচির মাধ্যমে বর্গাদারদের মেয়াদি স্বত্ব সুনিশ্চিত করা। এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ২০১০ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত মোট ১১ লক্ষ ৩০ হাজার ৮৭৬ একর জমি রাজ্যের দরিদ্র ভূমিহীন কৃষকদের হাতে বিনামুল্যে তুলে দেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগের ফলে উপকৃত হয়েছিলেন ৩০ লক্ষ ২৮ হাজার দরিদ্র কৃষক। ১৫ লক্ষ ১৩ হাজার নথিভুক্ত বর্গাদারের আইনি অধিকার সুরক্ষিত হয়েছে। এদের মধ্যে ৫৫ শতাংশই তফশিলি ও আদিবাসী পরিবার। পুরুষ ও মহিলা মিলিয়ে ৬ লক্ষ ১৫ হাজার পাট্টা দেওয়া হয়েছে। ভূমি সংস্কারের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের কৃষিজমির ৮৪ শতাংশই ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। খেতমজুর, গ্রামীণ কারিগর ও মৎস্যজীবীদের বিনামূল্যে ৫ কাঠা জমি দেওয়া হয়। প্রায় ২ লক্ষ পরিবার ওই প্রকল্পে উপকৃত হয়েছেন। সরকারি তথ্যের ভিত্তিতে সারা দেশের বিচারে ভূমিসংস্কার থেকে উপকৃত গ্রামীণ পরিবারের মধ্যে ৫৩.২ শতাংশই পশ্চিমবঙ্গে। ১৯৭৭-৭৮ সালে এই রাজ্যে কৃষিজমির ক্ষেত্রে সেচসেবিত জমির অনুপাত ছিল ৩২ শতাংশ। বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালে অর্থাৎ ২০১০-১১ সালে ধারাবাহিকভাবে তা বেড়ে ৭২ শতাংশ অতিক্রম করেছে। গুরুত্বপূর্ণ সেচ প্রকল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য - দামোদর, ময়ূরাক্ষী, কংসাবতী সেচ প্রকল্প এবং তিস্তা বাঁধ প্রকল্প। তা ছাড়া ছোটো নদী ও বৃহৎ নালার ওপর বাঁধ নির্মাণ, জলাধার সৃজন এবং চাষের জন্য জল সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছিল বামফ্রন্ট সরকার। ৩৪ বছর সময়কালে কৃষিক্ষেত্রের বিপুল সাফল্য সারা দেশে ও বিদেশে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
।। তিন ।।
ভূমি সংস্কারের সাফল্যের ভিত্তিতে রাজ্যের পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হয়েছিল। গড়ে তোলা হয়েছিল ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থা। ১৯৭৭ সালের আগে দীর্ঘ ১৫ বছর পঞ্চায়েতের নির্বাচন করা হয়নি। বামফ্রন্ট সরকার ১৯৭৮ সালের জুন মাসে রাজ্যের সাধারণ পঞ্চায়েত নির্বাচন করেছিল। নির্বাচন-পরবর্তী সময়ের এক সমীক্ষা থেকে জানা যায়, ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে নির্বাচিতদের শতকরা ৮৫ ভাগই গ্রামের কৃষক, ভূমিহীন খেতমজুর, বর্গাদার, প্রান্তিক ছোটো চাষি, দোকানদার, শিক্ষক ও কৃষক পরিবারের মহিলা। বামফ্রন্ট সরকারই মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণ আইন চালু করেছিল। পরবর্তী সময়ে ওই সংরক্ষণ ৫০ শতাংশ করা হয়। এভাবেই গ্রামের গরিব পশ্চাৎপদ মানুষের আত্মমর্যাদা, সচেতনতা, আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পেয়েছিল। ১৯৯৪ সালে সংবিধানের ৭৩তম সংশোধনীর মধ্য দিয়ে পঞ্চায়েত ভাবনা সারা দেশে স্বীকৃতি লাভ করে।
১৯৭৬-৭৭ সালে এই রাজ্যে চালের মোট উৎপাদন ছিল ৫৯ লক্ষ মেট্রিক টন। বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালে ২০১০-১১ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৪০ লক্ষ মেট্রিক টনের বেশি। সারা দেশের মধ্যে প্রথম। পাট উৎপাদনে প্রথম স্থানে। আলু উৎপাদন ১৭ লক্ষ মেট্রিক টন থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ১০০ মেট্রিক টনের বেশি। সারা দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে। মৎস্য চাষে প্রথম। মৎস্য চাষ ও গবেষণার প্রয়োজনে গড়ে তোলা হয়েছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি বিশ্ববিদ্যালয়। ফুল উৎপাদনে তৃতীয় স্থানে। এই উদ্যোগের ফলে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থার বিপুল সাফল্যের মধ্য দিয়ে তৎকালীন সময়ে প্রতি বছর ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি মূল্যের শিল্পজাত পণ্য বিক্রি হয়েছে গ্রামের বাজারে। কৃষিক্ষেত্রে ভূমি সম্পর্কের মধ্য দিয়ে যে পরিবর্তন ঘটানো হয়েছে, তা ভারতে বামপন্থীদের পরিচালিত (কেরালা,ত্রিপুরা) রাজ্য ছাড়া আর কোথাও হয়নি। পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব ও দক্ষিণ প্রান্ত বরাবর উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ১৯টি পঞ্চায়েত সমিতি এলাকা নিয়ে সুন্দরবন অঞ্চল। বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালে সুন্দরবনের মূল ভূখণ্ড ও দ্বীপাঞ্চলের বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে। ওই অঞ্চলের তপশিলি জাতি, উপজাতি সম্প্রদায় ও অন্যান্য অংশের মানুষের স্বার্থ রক্ষায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে গতিশীল করতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য খালগুলির সংস্কার, পিচ ও কংক্রিটের রাস্তা নির্মাণ, শতাধিক জেটি ও বড়ো সেতু নির্মাণ, পানীয় জল সরবরাহ, অপ্রচলিত বিদ্যুৎ সংযোগ কর্মসূচির পাশাপাশি বনসৃজনে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। এই ব্যবস্থার ফলে ভূমিক্ষয় ও নদী বাঁধ ভাঙন রোধ ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। সুন্দরবন উন্নয়নের পাশাপাশি রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, বীরভূম ও বর্ধমান জেলার ১৩টি মহকুমার ৭৪টি ব্লকের উন্নয়নের জন্য গড়ে তোলা হয়েছিল পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ। পাশাপাশি রাজ্যের ১২ হাজার বর্গ কিলোমিটার বনাঞ্চলের অরণ্যবাসীকে অরণ্যের অধিকার দেওয়া হয়েছিল এবং বন সংরক্ষণ ও উন্নয়নমূলক নানা কাজের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছিল।
।। চার ।।
গ্রামীণ জনগণের স্বার্থরক্ষায় দারিদ্র্য দূরীকরণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। ওই প্রকল্পের মধ্য দিয়ে রাজ্যের ২ কোটি ৬৪ লক্ষ গরিব মানুষকে ২ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়া হয়। শুধুমাত্র বিপিএল নয়, এপিএল ভুক্ত দরিদ্র মানুষদের এই সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। রাজ্যের গ্রামীণ শ্রমজীবী মানুষের জন্য ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প চালু করা হয়েছিল। দারিদ্র্য দূরীকরণে গড়ে তোলা হয়েছিল স্বনির্ভর কর্মসংস্থান প্রকল্প। এই প্রকল্পে ১৪ লক্ষাধিক স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ১ কোটি ৪০ লক্ষ সদস্য স্বনিযুক্তি ও স্বনির্ভর প্রকল্পের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের সুযোগ পেয়েছিল। তার মধ্যে ৯০ শতাংশই ছিলেন মহিলা। রাজ্যের গ্রাম উন্নয়ন সমিতির মাধ্যমে ঋণদান প্রকল্প চালু করা হয়েছিল।
চালু করা হয়েছিল শারীরিকভাবে অক্ষম, প্রবীণ নাগরিক, আদিবাসী, প্রতিবন্ধী, মৎস্যজীবী, বিধবা ও তাঁতশিল্পীদের জন্য প্রতি মাসে ১ হাজার টাকা পেনশন। দরিদ্র মানুষদের জন্য বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালে সংখ্যালঘু ও অনগ্রসর সম্প্রদায়ের স্বার্থরক্ষায় বিপুল কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। গড়ে তোলা হয়েছিল সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম। এই নিগমের মাধ্যমে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দরিদ্রতম মানুষদের নানা ধরনের সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। তৈরি করা হয়েছিল হিন্দি, উর্দু আকাদেমি ও ওয়াকফ বোর্ড। গড়ে তোলা হয়েছে দুটি হজ হাউস। বামফ্রন্ট সরকার অনগ্রসর সম্প্রদায়ের মানুষদের জন্য নানাবিধ কর্মসূচি নিয়েছিল। সাঁওতালি ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশে গড়ে তোলা হয়েছিল সাঁওতালি আকাদেমি। বহুত্ববাদ পশ্চিমবঙ্গের গর্ব। এই গর্ববোধ থেকে বামফ্রন্ট সরকার সংখ্যালঘু ও অনগ্রসর সম্প্রদায়ের স্বার্থ রক্ষায় অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করেছে।
।। পাঁচ ।।
বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালে রাজ্যের স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য দেশ-বিদেশের শিল্পপতিরা এই রাজ্যে শিল্প স্থাপনে এগিয়ে আসায় শিল্পস্থাপনের উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলতে সড়ক যোগযোগ, বিদ্যুৎ, জল ইত্যাদির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। যার মধ্য দিয়েই গড়ে উঠেছিল ইস্পাত, সার, পেট্রোকেমিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স প্রকল্প ও তথ্য-প্রযুক্তি শিল্প। সরকারি ক্ষেত্রের ৫টি ও বেসরকারি ক্ষেত্রের ৭১টি শিল্প-সংস্থা পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছিল। একইভাবে প্রসার ঘটেছিল ক্ষুদ্র শিল্পের। পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদনে অভূতপূর্ব সাফল্য সৃষ্টি হয়েছিল। গড়ে ওঠে একের পর এক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। যেমন বক্রেশ্বর, সাগরদিঘি, সাঁওতালডিহি, কোলাঘাট ও ব্যান্ডেল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। তা ছাড়া দুর্গাপুর পাওয়ার প্ল্যান্ট, পুরুলিয়া পাম্পড স্টোরেজ প্রকল্প। এই উদ্যোগের ফলেই পশ্চিমবঙ্গ চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেকর্ড করেছে।
স্বাস্থ্য পরিষেবা শহর থেকে গ্রামে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। যার ফলে সাধারণ মানুষ সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসার সুযোগ পেয়েছেন। শিক্ষাক্ষেত্রে অতীতের নৈরাজ দূর করে সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থার প্রসার ঘটানো হয়েছিল। সাধারণ শিক্ষার সঙ্গে জনশিক্ষা ও সাক্ষরতার প্রসারে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। শহর থেকে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে পরিশুদ্ধ পানীয় জল। গড়ে তোলা হয়েছে বিশ্বমানের শহর রাজারহাট নিউ টাউন।
পরিবহণ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ঘটানো হয়েছিল শহর থেকে গ্রামে। রাজ্যের গ্রামে ও শহরে কয়েকশো উড়ালপুল ও সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার বিপুল অগ্রগতি ঘটানো হয়েছে। ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের নীতি কার্যকর করার মধ্য দিয়ে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল। বিভিন্ন জাতি-উপজাতি, বিভিন্ন ভাষাভাষী ও জনগোষ্ঠীর মানুষের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য এবং পার্বত্য এলাকার নেপালি ভাষাভাষী মানুষের স্বার্থরক্ষায় অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বহুমুখী কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। রাজ্যে আইনের শাসন সুরক্ষিত হয়েছিল। রাজ্য প্রশাসনের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল দ্রুততা, দক্ষতা, সততা স্বচ্ছতা ও সংবেদনশীলতার ওপর। বামফ্রন্ট সরকারের বহুবিধ সাফল্যের পাশাপাশি রাজ্যের মানুষের মধ্যে ঐক্য ও সংহতির পরিবেশ গড়ে তোলা হয়েছিল। ৩৪ বছর সময়কালে নানা সীমাবদ্ধতা ও প্রতিকূলতার মধ্যেও উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে কাজ বামফ্রন্ট সরকার করেছে তা গোটা দেশের সামনে দৃষ্টান্তস্বরূপ। এই পথেই ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থা গ্রামের সরকারে রূপান্তরিত হয়েছিল।
।। ছয় ।।
বামফ্রন্ট সরকারের সাফল্য জনসমক্ষে এসেছে তৃতীয় পক্ষের মূল্যায়নে। যেমন, বিশ্বব্যাঙ্কের প্রতিবেদনে, রাষ্ট্রসংঘের প্রতিবেদনে, হলান্ডের আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাপত্রে, আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনেস্কোর পুরস্কারে, আন্তর্জাতিক সম্মান পল গেটি পদক প্রাপ্তিতে, বিশ্বখ্যাত গবেষক বিশেষজ্ঞ নোয়াম চমস্কির মন্তব্যে, ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রপ্রধান উগো সাভেজের বক্তৃতায়, নোবেলজয়ী বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের প্রতীচী ট্রাস্টের সমীক্ষা রিপোর্টে, পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ব্যবস্থা সম্পর্কে তদানীন্তন ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর শংসাপত্রে, ভারতের অন্যতম বণিকসভা অ্যাসোসিয়েটেড চেম্বার অব কমার্স-এর সমীক্ষা রিপোর্টে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অরুণ শৌরী কর্তৃক প্রকাশিত রিপোর্টে, বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার মৃণাল সেনের বক্তব্যে। বিশ্বব্যাঙ্ক বামফ্রন্ট সরকারের ভূমিকাকে প্রশংসা করে পশ্চিমবঙ্গকে Leader State হিসেবে অভিহিত করেছে।
।। সাত ।।
এসবের পরও রাজ্যের শাসকদল নিলজ্জতার সঙ্গে প্রচার করে বামফ্রন্ট সরকার কিছুই করেনি। এই মিথ্যাচারের জবাব দেবেন গ্রামাঞ্চলের মানুষ। রাজ্যের শাসকদল আসামীর কাঠগড়ায়। শাসকদলের নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক, মেয়র, পৌরপ্রধান, কাউন্সিলর, পঞ্চায়েত প্রধান ও সদস্যরা আর্থিক দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হয়েছে। তাই গ্রাম ও শহরে আওয়াজ উঠেছে - ‘চোর ধরো, জেল ভরো’। ‘গ্রাম বাঁচাও, রাজ্য বাঁচাও’। ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে পরাস্ত করতে হবে দুর্নীতিগ্রস্ত তৃণমূল কংগ্রেসকে। সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে সাম্প্রদায়িক শক্তি বিজেপি-কে। গড়ে তুলতে হবে গ্রামের মানুষের পঞ্চায়েত। তাই সর্বত্র বামফ্রন্ট ও সহযোগী প্রার্থীদের জয়ী করা প্রয়োজন।