E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ৪৫ সংখ্যা / ২৩ জুন, ২০২৩ / ৭ আষাঢ়, ১৪৩০

রেড অ্যালার্ট দিচ্ছে মণিপুর

অর্ণব ভট্টাচার্য


গত ৩ মে থেকে মণিপুর জ্বলছে। স্বাধীনতা সংগ্রামী হিজাম ইরাবত সিং-এর মণিপুরে, বক্সার মেরি কমের মণিপুরে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ ঘরছাড়া হয়ে ৩৪৯ টি ক্যাম্পে কোনোমতে মাথা গুঁজে আছেন। ইতিমধ্যেই নিহত হয়েছে প্রায় দেড়শো জন, আহত হাজার খানেক। পুড়ে ছাই ৫ হাজারেরও বেশি বাড়ি, ধ্বংস হয়েছে ২০০টি গ্রাম। এই নজিরবিহীন বীভৎসতার পরেও যিনি নিজেকে দেশের ‘‘প্রধান সেবক’’ বলে আখ্যা দিতে পছন্দ করেন সেই প্রধানমন্ত্রীর মুখে কোনো কথা নেই। তিনি ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠান করেছেন, কিন্তু সেখানেও মণিপুরে চলতে থাকা ভয়াবহ জাতিগোষ্ঠীগত সংঘর্ষ নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য করা হয়নি। ক্ষোভে, রাগে, দুঃখে রাস্তায় রেডিয়ো আছড়ে ফেলে ভেঙেছে মণিপুরবাসী।

এক অদ্ভুত রাষ্ট্রে আমরা বাস করছি যেখানে একটি অঙ্গরাজ্যে ১৪৪ ধারা অগ্রাহ্য করে সশস্ত্র উন্মত্ত জনতা নির্বিচারে মানুষ খুন করছে, বাড়িঘর পোড়াচ্ছে। অথচ প্রশাসন নির্বিকার বসে রয়েছে। বিধায়ক, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ঘর পুড়ছে এমন এক রাজ্যে যেখানে ডাবল ইঞ্জিন সরকার চলছে বিজেপি’র। গত মে মাসে কুকি-মেইতেই সংঘর্ষ শুরুর দু’সপ্তাহ পর কিছু পরিবার প্রতিবেশী রাজ্য আসামের শরণার্থী ক্যাম্প থেকে বাড়ি ফিরেছিলেন এই আশায় যে, আবার সবকিছু ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হবে। কিন্তু সরকারের অপদার্থতার জন্য আবার ক্যাম্পের আশ্রয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হলেন অসংখ্য মানুষ। কেউ জানে না তারা কবে ঘরে ফিরতে পারবেন। কুকি বা মেইতেই কোনো জাতিগোষ্ঠীর নেতারাই বলতে পারছেন না কবে এই ফাটল জোড়া লাগবে। অনেকে আশঙ্কা করছেন, মণিপুরে জনবিন্যাসের একটা চিরস্থায়ী পরিবর্তন ঘটে গেল। অথচ এই ব্যাপক মানবিক বিপর্যয়ের পরেও মণিপুরের দশটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা দশ দিনেরও বেশি সময় নয়া দিল্লিতে থেকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি পেলেন না। তিনি বিদেশি হাওয়ার সুবাস নিতে আমেরিকায় চলে গেলেন। আমরা নাকি পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশের বাসিন্দা!

পুলিশ বা সেনার কি কোনো অভাব আছে মণিপুরে? কেবল সামরিক ও আধা সামরিক বাহিনীর ৩৫ হাজার সদস্য এখন সেই রাজ্যে। তার সাথে রয়েছে রাজ্য পুলিশ। তা সত্ত্বেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে, কেননা সরকারের কোনো রাজনৈতিক সদিচ্ছা নেই। সরকার চায় যে এই বিভাজন বজায় থাকুক, তাহলেই তাদের রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি হবে। ইম্ফল উপত্যকা ও পাহাড়ি এলাকার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে হিংসা ব্যাপক আকার নিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি, রাজভবন, পুলিশ হেডকোয়ার্টারের দেড়শ মিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে দাঙ্গাবাজরা। প্রশাসনের নীরব মদত না থাকলে এই ধরনের বিশৃঙ্খলা হওয়া সম্ভব?

গত ৬ মে সর্বদলীয় বৈঠকে হিংসা ঠেকানোর জন্য যে সমস্ত সিদ্ধান্ত হয়েছিল তার রূপায়ণ করেনি এন বীরেন সিংহের নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার। রাজ্যপাল দাবি করেছিলেন যে, রাজ্যে ৩৫৫ ধারা জারি করে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাকে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। অথচ রাজ্য সরকার সেই দাবি নস্যাৎ করছে। অর্থাৎ কেন্দ্র ও রাজ্য জনগণকে বোকা বানানোর খেলায় ব্যস্ত। অন্যদিকে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে চলেছে মানুষের। সরকারি উদাসীনতা এতটাই যে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিংসার ঘটনা শুরু হওয়ার ২৬ দিন বাদে মণিপুরে এসেছিলেন। সিপিআই(এম) মণিপুর রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানানো হয় যে, চুরাচাঁদপুর ও মোরে শহরে উন্মত্ত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য একটিও গুলি ছোঁড়া হয়নি এবং নানা জায়গায় বিনাবাধায় লুট, খুন-জখম অগ্নিসংযোগ চলেছে। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের পরেও সন্ত্রাসে কোনো লাগামটানা গেল না! অমিত শাহের গড়ে দেওয়া শান্তি কমিটি কী করছে কেউ জানে না।

৪০ বছর ধরে ভারতীয় সেনার বিভিন্ন উচ্চপদে থাকা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিশিকান্ত সিং টুইট করে সন্ত্রাস বিধ্বস্ত মণিপুরের সাথে যুদ্ধবিধ্বস্ত লিবিয়া, লেবানন, নাইজেরিয়া ও সিরিয়ার তুলনা করেছেন। অত্যন্ত খেদের সাথে তিনি বলেছেন যে, মণিপুরবাসী এখন ‘‘রাষ্ট্রহীন’’। দেশের প্রাক্তন সেনাপ্রধান ভি পি মালিক এই বক্তব্য সমর্থন করে তার টুইটে প্রধানমন্ত্রী,স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকে ট্যাগ করেছেন। কিন্তু সরকারের টনক নড়ছে কই?

একদিকে যেমন সশস্ত্র কুকিগোষ্ঠী মেইতেই জনগোষ্ঠীভুক্ত ব্যক্তিদের ওপর নৃশংস আক্রমণ চালাচ্ছে, অন্যদিকে সমগ্র কুকি জনগোষ্ঠীকেই ‘‘নার্কো-টেররিস্ট’’ এবং অনুপ্রবেশকারী বলে আক্রমণের নিশানা করছে সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন সংগঠনের সমন্বয়কারী সংস্থা ‘‘দ্য কো-অর্ডিনেটিং কমিটি অন মণিপুর ইন্টিগ্রিটি’’। নির্দ্বিধায় মণিপুরে শত শত বছর ধরে বসবাসকারী একটি জনগোষ্ঠীকে বহিরাগত আখ্যা দিয়ে বিভাজনের রাজনীতিকে গভীরতর করার প্রয়াস চলছে। পারস্পরিক অবিশ্বাস, বিদ্বেষ ও ঘৃণার পরিবেশে কুকিরা দাবি করেছে আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় আলাদা প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। এখন পরিস্থিতি এমনই যে ইম্ফল উপত্যকায় কোনো আদিবাসী নেই, আর পাহাড়ে কোনো মেইতেই নেই। এ কথা ঠিক যে - মণিপুরে মেইতেই, কুকি, নাগা ইত্যাদি জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ ও মতবিরোধের পুরনো ইতিহাস আছে। স্বায়ত্তশাসন, জাতিগোষ্ঠীর স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখা ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে মতপার্থক্য নানা সময় হিংসাত্মক আকার নিয়েছে। আবার শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানও তো বিরল নয়। কিন্তু বিজেপি এই বিরোধকে প্রশমিত না করে বিবদমান পক্ষগুলিকে বিভিন্ন সময় মদত দিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের ঘৃণ্য খেলায় ব্যস্ত রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে বিজেপি সরকার কোনো ভূমিকা পালন করতে যে পারবে না তা মণিপুরের অন্যান্য বিজেপি-বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি উপলব্ধি করেছে এবং মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছে। সশস্ত্র কুকি জনগোষ্ঠীর নেতারা দাবি করেছেন যে, ২০১৭ সালের নির্বাচনে তাদের বিজেপি’র পক্ষে প্রচারের জন্য কাজে লাগানো হয়েছিল। অন্যদিকে এটা মনে হওয়া স্বাভাবিক যে, মেইতেই জনগোষ্ঠীর সশস্ত্র বাহিনীগুলির প্রতি পূর্ণ রাষ্ট্রীয় সমর্থন না থাকলে ইম্ফল উপত্যকায় আদিবাসীদের ওপর এরকম মারাত্মক আক্রমণ ঘটা সম্ভব ছিল না। আক্রমণকারীরা এতটাই নৃশংস যে, অ্যাম্বুলেন্সের উপর হামলা করে মা সহ বাচ্চাকে পুড়িয়ে মারতেও তারা দ্বিধা করেনি।

যেহেতু বিজেপি মতাদর্শগতভাবে সংখ্যাগুরুর আধিপত্যবাদে বিশ্বাসী তাই যুক্তরাষ্ট্রীয় ভাবাদর্শে এই দল বিশ্বাস করে না। যদিও নানা সময় এরা খণ্ডিত জাতীয়তাবাদী আবেগকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের স্বার্থে। মণিপুরের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। অন্যদিকে বরাবর ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার প্রতিভূ বিজেপি মণিপুরেও ধর্মীয় বিভাজনের তাস খেলছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই’রা বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী হিন্দু। কুকি ও নাগারা মূলত খ্রিস্টান। এক্ষেত্রে জাতিগোষ্ঠীগত সংঘর্ষকে ধর্মীয় সংঘাতের রূপ দিতে ২০০টিরও বেশি চার্চ পোড়ানো হয়েছে। আবার মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং এরই মধ্যে কুকি-মেইতেই সংঘাতকে সন্ত্রাসবাদীদের সাথে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষ বলে চালাতে চাইলেও এই ধরনের বয়ানের বিরোধিতা করেছেন দেশের সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল অনিল চৌহান। খুব সম্প্রতি খবর পাওয়া গেছে, নাগা জনগোষ্ঠীও মণিপুরে আক্রান্ত হচ্ছে। অর্থাৎ বিভাজন আরও প্রসারিত হচ্ছে। নিজেদের উগ্র আধিপত্যবাদী রাজনীতিকে প্রতিষ্ঠা করবার জন্য বিজেপি যে কতটা নিচে নামতে পারে তা মণিপুর প্রমাণ করে দিচ্ছে। আক্রান্ত মানুষের চোখের জল মোছানোর বদলে আগুনে ঘি ঢালার কাজ করছে সেই রাজ্যের সরকার, আর নীরব থেকে সমর্থন জোগাচ্ছে কেন্দ্রের মোদি প্রশাসন। ডাবল ইঞ্জিনের সরকার মণিপুরের মানুষের বিপদকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

মণিপুর যখন জ্বলছে তখন দেশের বাকি অংশ কি নিরাপদ? আমাদের মতো দেশে যেখানে ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতির ব্যাপক বৈচিত্র্য রয়েছে সেখানে বিজেপি’র মতো উগ্র সাম্প্রদায়িক এবং সংখ্যাগুরুর আধিপত্যে বিশ্বাসী দল কেন্দ্রে তথা বিভিন্ন রাজ্যে ক্ষমতায় আসীন থাকায় সবসময়ই বিপদের আশঙ্কা আছে। বিজেপি’র মতো দল কখনোই এমন কোনো ব্যবস্থা কায়েম করতে পারে না যেখানে আধিপত্যের বদলে সহযোগিতার নীতি প্রাধান্য পাবে এবং সমাজের কোনো অংশের মানুষই নিজেদের বঞ্চিত বলে মনে করবে না। বরং বিজেপি ‘‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’’ নীতি চালু করে আরও বেশি বিভেদ ও বিদ্বেষ বাড়িয়ে দেওয়াতেই সিদ্ধহস্ত। আমাদের রাজ্যে এবং পার্শ্ববর্তী ঝাড়খণ্ড রাজ্যে কুর্মি জনগোষ্ঠীর তপশিলি উপজাতি হিসেবে অন্তর্ভুক্তির দাবিকে কেন্দ্র করে কুর্মি বনাম আদিবাসী বিভেদের পারদ যেভাবে চড়ছে তা যথেষ্ট চিন্তার কারণ। মণিপুরেও মেইতেই জনগোষ্ঠীর তপশিলি জাতিভুক্ত হওয়ার দাবিতে হাইকোর্টের সিলমোহর সাম্প্রতিক হিংসার প্রধানতম উৎস।

●  ●  ●  ●

গত এপ্রিল এবং মে মাসে কুর্মিদের ডাকা রেল ও সড়ক অবরোধকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডে। কুর্মিরা দাবি করেছেন - ১৯৫০ সালের আগে তাদের সম্প্রদায়কে আদিবাসী বলে গণ্য করা হতো। কিন্তু স্বাধীন ভারতের সংবিধান প্রবর্তনের পর তপশিলি উপজাতির তালিকায় কুর্মিদের নাম রাখা হয়নি যা বর্তমানে সংশোধন করা প্রয়োজন বলে এই জনজাতির মানুষেরা সোচ্চার হয়েছেন। অন্যদিকে সাঁওতালসহ বিভিন্ন আদিবাসী জনজাতি তপশিলি উপজাতির তালিকায় কুর্মিদের অন্তর্ভুক্তির জন্য আন্দোলনের বিরোধিতা করেছে। তারা আশঙ্কিত যে, কুর্মিরা তপশিলি জাতি হিসেবে গণ্য হলে বর্তমানে যারা আদিবাসী হিসেবে চিহ্নিত তাদের অধিকার খর্ব হবে।

এ কথা ঠিক ১৯২১ সালের জনগণনাতে কুর্মিদের আদিবাসী হিসেবেই গণ্য করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে এই তালিকা থেকে তাদের নাম বাদ দেয় ব্রিটিশ সরকার। স্বাধীন ভারতে কুর্মিরা ওবিসি হিসেবে গণ্য হচ্ছেন। এদিকে একজন গবেষক উল্লেখ করেছেন যে, ব্রিটিশ ভারতে অখিল ভারতীয় কুর্মি ক্ষত্রিয় মহাসভা বলে একটি সংগঠনেরও অস্তিত্ব ছিল। জাতিসত্তাগত পরিচিতির এই বিবর্তনকে সংবেদনশীল ও বস্তুনিষ্ঠভাবে দেখার কোনো মনোভাব বিজেপি কিংবা তৃণমূল দলের নেই। কখনো কুর্মি, কখনো আদিবাসীদের পক্ষে থাকার কথা বলছে এই দুই দল। কিন্তু অতীতের ক্রিয়াকলাপ বিশ্লেষণ করলেই পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীগুলির জন্য এই দুই দলের ফাঁপা দরদ বুঝতে অসুবিধা হয় না। এখন এরা ঘোলা জলে মাছ ধরবার চেষ্টা করছে রাজনৈতিক ক্ষমতা বৃদ্ধির স্বার্থে। ফলে আমাদের রাজ্যে ভবিষ্যতে যে পরিস্থিতি মণিপুরের মতো হবে না এমনটা হলফ করে বলা যায় না। বিশেষত, বিগত ১২ বছরে আমাদের রাজ্যের বুকে ঘটে যাওয়া নানারকম সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের সময় প্রশাসন যেভাবে অকর্মণ্য ভূমিকা পালন করেছে এবং রাজ্যের শাসকদল ও কেন্দ্রের শাসকদল সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বৃদ্ধিতে যেভাবে মদত দিয়েছে তাতে আগামী দিনে রাজ্যবাসী হিসেবে উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে।

মণিপুরের ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের জন্য এক অশনিসংকেত। আমাদের রাজ্যে একদিকে স্বৈরাচারী ও দুর্নীতিগ্রস্ত তৃণমূল, অন্যদিকে সাম্প্রদায়িক ও আগ্রাসী বিজেপি বিভিন্ন অংশের মানুষের মধ্যে সামাজিক-সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে পার্থক্য রয়েছে তাকে সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে মানুষের ঐক্যকে দুর্বল করতে সচেষ্ট। তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপি ক্ষমতা দখলের জন্য যে নোংরা খেলায় অভ্যস্ত তা বাংলার সামাজিক পরিবেশকে ইতিমধ্যেই কলুষিত করেছে। রাজ্যের বৈচিত্র্যপূর্ণ, বহুত্ববাদী চরিত্রকে বজায় রাখতে, জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ও জীবনের নিরাপত্তা রক্ষা করতে হলে মণিপুরের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই বিভেদকামী ও ধ্বংসাত্মক শক্তিকে সর্বতোভাবে পরাস্ত করতে হবে।