E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ১১শ সংখ্যা / ২৩ অক্টোবর ২০২০ / ৬ কার্ত্তিক ১৪২৭

ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সংবিধান রক্ষায় রাজনৈতিক শক্তি ভারসাম্যের পরিবর্তন ঘটাতে হবে

পার্টি প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ পূর্তি সভায় নেতৃবৃন্দ


পার্টি প্রতিষ্ঠা দিবস ১৭ অক্টোবর কলকাতার প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে পার্টির রাজ্য কমিটির বৈঠকের আগে
রক্ত পতাকা উত্তোলন করছেন সূর্য মিশ্র।

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ উন্নততর ভারত গড়ে তুলতে হবে সমাজতন্ত্রে পৌছনোর লক্ষ্যে। ঐক্যবদ্ধভাবে রক্ষা করতে হবে দেশকে, দেশের সংবিধানকে। রক্ষা করতে হবে ধর্মনিরপেক্ষতার ঐতিহ্যকে। রুখতে হবে সাম্প্রদায়িকতাকে। পুঁজিবাদ তার সঙ্কটের বোঝা সাধারণ মানুষের ঘাড়ে চাপাচ্ছে। সঙ্কটের শিকার সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ ক্ষুব্ধ। বর্তমানে আমাদের দেশে ও রাজ্যে যে রাজনৈতিক ভারসাম্য আছে তা পরিবর্তনের জন্য এই ক্ষোভকে ব্যবহার করে আমাদের আন্দোলন সংগ্রামে রূপ দিতে হবে। সামাজিক পরিবর্তনের জন্য ইনকিলাব স্লোগানের ভিত্তিতে আমাদের অগ্রসর হতে হবে। বহু ত্যাগ ও শহিদিবরণের মধ্য দিয়ে আমাদের দেশে কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে উঠেছে ১০০ বছর ধরে। এই শতবর্ষ পূর্তি পালন করার উদ্দেশ্য হলো আমাদের সংকল্পবদ্ধ হতে হবে। বিপ্লবের লক্ষ্যে শহিদদের বার্তা, লাল ঝান্ডার বার্তা এটাই। ১৭ অক্টোবর পার্টি প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠানে কলকাতার প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সভায় একথা বলেন সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ।

এই সভায় সভাপতিত্ব করেন পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য বিমান বসু। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিমান বসু, পার্টির রাজ্য সম্পাদক সূর্য মিশ্র এবং পলিট ব্যুরোর সদস্য মহম্মদ সেলিম সহ নেতৃবৃন্দ।

এদিনের সভায় ভার্চুয়াল ভাষণে পার্টির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, পার্টি প্রতিষ্ঠার ১০০ বছরের ইতিহাসের দিকে যদি আমরা পিছন ফিরে দেখি যেখানে কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে অনেক বড়ো বড়ো আন্দোলন-সংঘর্ষ হয়েছে। এবং শত কোটি মানুষ শহিদ হয়েছেন দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে। বহু বৃহৎ আত্মত্যাগ করেছেন অসংখ্য মানুষ। কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে আধুনিক ভারত গড়ার জন্য শোষনহীন ব্যবস্থা সমাজবাদী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়েছে। এমন বহু ঘটনা রয়েছে যা আমাদের ইতিহাসের মধ্যে শামিল। এই শতবর্ষ পূর্তি পালন করার উদ্দেশ্য হলো আমাদের সংকল্পবদ্ধ হয়ে ভারতকে রক্ষা করতে হবে। আগামী দিনে সমাজতান্ত্রিক ভারত নির্মাণের দিকে এগোনোর জন্য।

সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, রাশিয়ার বিপ্লব ১৯১৭ সালে যখন সফল হলো তার অত্যন্ত মহত্বপূর্ণ প্রভাব গোটা পৃথিবীতে পড়ে। এই মতাদর্শ বিচারধারা অন্যত্র পৌঁছানোর জন্য ১৯১৯ সালে কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল প্রতিষ্ঠিত হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন মুক্তিকামী দেশগুলির মানুষের মনে এই চিন্তা আসে যে রাশিয়ার শ্রমিক কৃষক মেহনতি জনতা যদি এই সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারে তাহলে আমরা পারব না কেন। দেশের ভেতরে বিপ্লবীরা যারা ছিলেন তাদের ব্রিটিশ সরকার দেশে থাকতে দিতো না। আর দেশের মধ্যে থাকলে তাদের উপর নিপীড়ন চালাত। বহু বিপ্লবীর প্রাণ গেছে এভাবে।

এই অবস্থায় দেশের বাইরে ছাড়া দেশের ভেতরে কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব ছিল না। এই পরিস্থিতিতে তাসখন্দে ১৯২০ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি গঠিত হয়। গঠিত হবার ঠিক পরেই এই সময়ে দেশে চালু থাকা স্বাধীনতা আন্দোলনের গতি প্রকৃতি কেমন হওয়া উচিত রাষ্ট্রীয় আন্দোলনের কর্মসূচি কী হওয়া উচিত, কোন বিষয়গুলিকে মানুষকে মানুষের সামনে আনা দরকার তার দিক নির্দেশ করার জন্য ১৯২০, ১৯২১ সাল থেকে কমিউনিস্টদের তরফে দিকনির্দেশ পেশ করা হতে থাকে। ১৯২১ সালে কংগ্রেসের আহমেদাবাদ অধিবেশনে কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়ার তরফে একটি প্রস্তাব পেশ করা হয়। কমরেড মৌলানা হসরত মোহানি এবং কমরেড কুমারানন্দ পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি পেশ করেন। মহাত্মা গান্ধী সে সময়ে তা স্বীকার করেননি, মেনে নেন নি। ১৯২৯ সালের লাহোর অধিবেশনে তা স্বীকৃত হয়। তবে দেশের মধ্যে সবচেয়ে প্রথম এই প্রস্তাব এনেছিল কমিউনিস্ট আন্দোলন। ১৯২১ সালের পরবর্তী বছরগুলোতে কংগ্রেসের অধিবেশনে একটি ইশতিহার দেওয়া হতো কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া’র তরফে।

তিনি বলেন, বিভিন্ন ধরনের শোষণের শিকার যে সমস্ত মানুষ তাদের বিভিন্ন সংগঠনে শামিল করে কমিউনিস্টরা তাদের স্বাধীনতা আন্দোলনে যুক্ত করে। স্বাধীনতা আন্দোলন আরো মজবুত হয়। এটা কমিউনিস্টদের অবদান। জমিদারি প্রথা রদ আন্দোলন বা ভূমি সংস্কারের প্রশ্ন এই সমস্ত বিষয়গুলি মানুষের সামনে তুলে ধরেছিল কমিউনিস্ট পার্টি। স্বাধীন ভারতে যা একটা কর্মসূচি হিসেবে উঠে আসে। আজকের সংবিধানের আত্মনির্ভরতার স্তম্ভগুলির একটি এভাবেই রচিত হয়েছিল।

তিনি বলেন, ভারত স্বাধীন হওয়ার পরেও রাজনৈতিক কাঠামো কেমন হবে তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। কীভাবে রাজ্যগুলির নির্মাণ হবে সে বিষয়ে বহু মতভেদ ছিল। শুধু ধর্মের ক্ষেত্রে নয় ভাষার ক্ষেত্রেও ছিল। আমাদের দেশে প্রধানত ধর্মের ক্ষেত্রে নয়, ভাষার ক্ষেত্রেও বৈচিত্র্য রয়েছে। আমরা বলেছিলাম রাজ্যের নির্মাণ ভাষার ভিত্তিতে হবে। তখন আন্দোলন শুরু হয়েছিল কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে। কমরেড সুন্দরাইয়ার নেতৃত্বে বিশালান্ধ্রের আন্দোলন,আই কে কে আন্দোলন কমরেড ইএমএস, কমরেড গোপালন এবং কৃষ্ণ আইয়ারের নেতৃত্বে হয়েছিল। আবার সংযুক্ত মহারাষ্ট্রের আন্দোলন হয়েছিল কমরেড ডাঙ্গে সহ অন্যান্য কমরেডদের নেতৃত্বে। এই সমস্ত আন্দোলন প্রায় এক দশক ধরে চলার পর ভাষার ভিত্তিতে রাজ্যগুলি গঠিত হয়। লিঙ্গুইস্টিক রিঅর্গানাইজেশন অব স্টেটস সংক্রান্ত বিষয়গুলো সামনে আসার পরে মুখ্য যে প্রশ্ন দেশের সামনে উঠে আসে তা হল কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক এবং দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিষয়টি।

কেন্দ্র এবং রাজ্যের ক্ষেত্রে রাজ্যগুলির অধিকার কি হবে এবং পারস্পরিক সম্পর্ক কেমন হবে সে সংক্রান্ত আন্দোলন এবং ভাবনা চালু থাকার সময় সংবিধানের প্রথম যে ধারাটি রচিত হয় তা হলঃ ভারত, ইউনিয়ন অফ স্টেটস। অর্থাৎ ভারত কোনো রাজ্য ছাড় গঠিত হবে না। রাজ্যের অধিকার ঠিক ততটা গুরুত্ব দিয়েই দেখতে হবে যতটা কেন্দ্রের গুরুত্ব রয়েছে। এই ফেডারেলিজম প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কমিউনিস্টদের অবদান রয়েছে। এটা তৃতীয় বুনিয়াদি স্তম্ভ।সামাজিক ন্যায় সংক্রান্ত যে সমস্ত আন্দোলন পশ্চিমবঙ্গে হয়েছে এবং কেরালায় মন্দির এবং দলিতদের অধিকার এবং প্রবেশ সংক্রান্ত বড়ো আন্দোলন হয়েছে তা পরিচালিত করেছেন ই এম এস নাম্বুদিরিপাদ, গোপালনের মতো কমিউনিস্ট নেতারা। এই সমস্ত আন্দোলন চলাকালীন সামাজিক ন্যায় অর্থাৎ দলিতদের অধিকার এর জন্য সংরক্ষণ হলেও তাদের আর্থিক অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়টি নিয়ে কমিউনিস্টরা লড়াই করেছে। সামাজিক ন্যায়ের পাশাপাশি মহিলাদের ওপর অত্যাচারের বিষয়টি নিয়েও আন্দোলনের ক্ষেত্রে কমিউনিস্টরা দেশের মধ্যে মুখ্য ভূমিকা নেয়। এই বিষয়গুলো সংবিধানের ক্ষেত্রে চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে গড়ে ওঠে।

তিনি স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের কথা উল্লেখ করে বলেন, ভারত ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক প্রজাতান্ত্রিক সার্বভৌম দেশ হবে - আমরা সেখানেই থেমে থাকিনি আমরা রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে অর্থনৈতিক স্বাধীনতায় বদলে দেবার কথা বলেছি। আমরা বলেছি, যদি আমরা সমাজবাদের দিকে না যাই তাহলে এই ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র অস্থিরতায় আটকে যাবে এবং আজকে সেটাই হয়েছে।

তিনি বাবাসাহেব আম্বেদকরের কথা উল্লেখ করে বলেন, বাবাসাহেব আম্বেদকরের সঙ্গে বেশ কয়েকটি বিষয়ে কমিউনিস্টদের সে সময় মতপার্থক্য হয়েছিল, কিন্তু বেশ কিছু বিষয়ে তাদের মতামতের নৈকট্য ছিল। তিনি সংবিধানের খসড়া পেশ করার সময় গণপরিষদে বলেছিলেন ব্যক্তি পিছু একটি ভোটের কথা, যা সে সময় অত্যন্ত বিপ্লবী বার্তা ছিল পৃথিবীতে। প্রত্যেক মানুষের ভোটের মূল্য সমান এ কথা তিনি বলার পাশাপাশি উল্লেখ করেছিলেন আর্থিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রে ন্যায় প্রতিষ্ঠা না হলে, মানুষে মানুষের যে সমানাধিকার, যার ভিত্তিতে এই রাজনৈতিক কাঠামো গড়ে উঠেছে তা বিপদগ্রস্ত হবে। বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মসূচি থেকে অত্যন্ত নৃশংসভাবে এই বক্তব্যের সারবত্তা আমাদের সামনে চলে এসেছে।

আরএসএস’র ভুমিকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র এবং কমিউনিস্টদের সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথার পাশাপাশি তৃতীয় একটা চরিত্র ছিল, যারা বলেছিল যে ধর্মের ভিত্তিতে দেশ তৈরি হবে। মহম্মদ আলি জিন্নাহ ইসলামিক দেশের কথা বলেন আর তার দু'বছর আগে সাভারকার বলেন টু নেশন থিওরি সংক্রান্ত হিন্দু রাষ্ট্রের কথা। এরফলেই দেশ ভাগ হয়। আজ পর্যন্ত আমরা সেই ক্ষত বহন করে চলেছি। সাম্প্রদায়িকতার যে বিষ তখন ছড়ানো হয়েছিল আজও আমরা তার শিকার হয়ে চলেছি।

তিনি বলেন, ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পর হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যে বাধা আসে তার পরিণতিতে মহাত্মা গান্ধীকে হত্যা করা হয়। তারপর ৭০ বছর ধরে দেশে ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতান্ত্রিক গণতন্ত্রকে সরিয়ে ফ্যাসিবাদী হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হচ্ছে। যা আরএসএস এর উদ্দেশ্য।বিজেপি আরএসএস-এর রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে সেই ভাবনাকেই রূপায়িত করার চেষ্টা করছে। এবং সরকারে আসার পর তার অপপ্রয়োগ করছে। এই সাংবিধানিক ব্যবস্থাকে শেষ করে ফেলাই লক্ষ্য এদের। সাম্প্রদায়িক মেরুকরণকে তীব্র করা হচ্ছে। বিভিন্ন বাহানায় হিন্দু এবং মুসলিমদের মধ্যে ঘৃণা তৈরি করা, হিংসা উস্কে দেওয়া এসব করা হচ্ছে।

তিনি দিল্লি দাঙ্গার ঘটনায় সরকারের ভূমিকার উল্লেখ করে বলেন, বিজেপির রাজনৈতিক ফায়দার জন্য সাম্প্রদায়িক মেরুকরণকে ব্যবহার করা হচ্ছে। দিল্লিতে যারা হিংসার শিকার হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। যারা হিংসা তৈরি করেছে তাদের সম্পর্কে কোনো তদন্ত করা হচ্ছে না। তারা বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দেশের একতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হচ্ছে। যারা দেশের বিভিন্ন অংশের শোষণবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন বা সেই আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতি দেখাচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ’র মতো আইন, দেশদ্রোহিতার আইন চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, আরএসএস-বিজেপি দেশে কট্টরপন্থী মনুবাদী ফ্যাসিবাদী হিন্দুরাষ্ট্র নির্মাণ করতে চাইছে। আমরা সংবিধানকে রক্ষা করে আরও উন্নত ভারত গড়ে সমাজবাদের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। আমাদের সামনে এটা হলো আজকের দিনের চ্যালেঞ্জ। এইজন্য সাম্প্রদায়িকতার পৃষ্ঠপোষকদের সবচেয়ে ব‍‌ড়ো নিশানা কমিউনিস্টরা। আমাদের দুর্বল করার চেষ্টা হচ্ছে। আমাদের শক্তি কমেছে নিঃসন্দেহে সংসদ এবং বিধানসভাগুলির নিরিখে।

কিন্তু নিজেদের শক্তিকে চেনার জন্য আমাদের কাছে অন্য মাপকাঠি আছে। তা হলো, জনসংঘর্ষ এবং গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশের এজেন্ডাকে প্রভাবিত করা। আজকের দিনে কমিউনিস্ট আন্দোলন - মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে বিরোধী যত শক্তি আছে তাদের ঐক্যবদ্ধ করার কাজ হচ্ছে। যেমন আপনারা দেখেছেন বিহারে মহাজোট তৈরি হয়েছে যেমন তামিলনাড়ুতে হয়েছে আগেই। বিজেপি এবং তার সাম্প্রদায়িক মতবাদকে শাসন ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে হবে। ভারতকে বাঁচাতে হবে এই বিপদ থেকে যাতে আগামী দিনে আরও উন্নততর ভারত নির্মাণ করা যায়।

আরএসএস-বিজেপি চায় দেশকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যেতে। আমরা চাই দেশকে ভবিষ্যতের উজ্জ্বলতার দিকে নিয়ে যেতে। তিনি শহিদ ভগৎ সিংয়ের কথা উল্লেখ করে বলেন, ভগৎ সিং ইনকিলাব স্লোগান দিতেন আদালতে হাজিরা দেবার সময়। ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট ইনকিলাব মানে জিজ্ঞাসা করায় বলতেন, এর অর্থ বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক। বিপ্লব মানে হিংসা নয় বোমা-গুলি নয়, সামাজিক পরিবর্তন। ভগৎ সিং যিনি দেশের সেই সমস্ত মানুষের কাছে প্রেরণা, যারা ভারতকে রক্ষা করতে চান, ভারতকে বদলাতে চান সমাজতন্ত্রের দিকে । এই স্লোগানে ভিত্তিতেই আমাদের লক্ষ্য পূরণ করতে হবে। এটাই এই শতবর্ষ পূরণের সঠিক মানে। শহিদদের বার্তা, লাল ঝাণ্ডার বার্তা এটাই। আগামী দিনে এ রাজ্যে নির্বাচনের সময় এর ভিত্তিতেই আপনারা এগিয়ে যাবেন। এই ভরসা আমাদের আছে।

সভায় বিমান বসু বলেন, ১০০ বছর ধরে ভারতের বুকে কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলার কাজে যারা উদাহরণ তৈরি করেছেন, যে আদর্শ গড়ে তুলেছেন, ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে জনগণের মাঝে শ্রমিক শ্রেণীর মাঝে পার্টিকে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেছেন আমাদের সেই কাজের থেকে এবং তাঁদের জীবন থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। কোভিড ১৯জনিত পরিস্থিতিতে দেশের বিজেপি সরকার এবং রাজ্যের তৃণমূল সরকার মানুষের সেবার জন্য যে ভূমিকা পালন করা দরকার তা তারা পালন করছে না। আন্দোলন সংগ্রামের ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ আরোপ করছে।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি পালন করতে হবে, তার সঙ্গে মানুষের জীবন সংগ্রামে আমাদের থাকতে হবে। ২৬ নভেম্বরের ধর্মঘট সফল করতে হবে।

পার্টির রাজ্য সম্পাদক সূর্য কান্ত মিশ্র বলেন, আমাদের রাজ্যে সংক্রমণ পরিমাপ করার জন্য যে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করা দরকার তা হচ্ছে না। আমাদের এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে কোনো আতঙ্ক ছাড়াই। স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। পরিস্থিতিকে ব্যবহার করে মানুষের ঘাড়ে পুঁজিবাদ সঙ্কটের বোঝা চাপিয়ে দিতে চাইছে। বর্তমানে আমাদের দেশেও রাজ্যে যে রাজনৈতিক ভারসাম্য আছে তা পরিবর্তনের জন্য তার বিরুদ্ধে মানুষের যে ক্ষোভ তাকে আমাদের আন্দোলন সংগ্রামে রূপ দিতে হবে। এটা সম্পূর্ণ নতুন চ্যালেঞ্জ। কিন্তু পরিস্থিতি যতো কঠিনই হোক, কমিউনিস্ট পার্টির লড়াইয়ের ইতিহাসকে স্মরণে রেখে আমাদেরকেই পার্টির পতাকা তুলে ধরে লড়াইটা করতে হবে।

বাংলাকে সাম্প্রদায়িক শক্তির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আরএসএস’র ‘গোপন অনুমোদিত’ রাজনৈতিক দল তৃণমূলকেও পরাস্ত করার কথা বলেছেন সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ। এ প্রসঙ্গে মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ধর্ম জাত ভাষার নামে বিভাজন সৃষ্টির বিরুদ্ধে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে সব মানুষের সাধারণ বা কমন যে স্বার্থ সেই দাবিকে তুলে ধরে শ্রেণি আন্দোলন তীব্র করতে হবে। কর্পোরেট মিডিয়ার ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশজুড়ে কৃষকদের পথে নামার কথা, কর্পোরেট মিডিয়াতে খবর হয় না, কারণ মিডিয়া দখল করে এরা অন্য ভাষ্য প্রচারে ব্যস্ত। এরজন্যই তো আগামী ২৬ নভেম্বর দেশজুড়ে ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। আরএসএস অনুমোদিত ট্রেড ইউনিয়ন ছাড়া সব ট্রেড ইউনিয়ন সেই ধর্মঘটের পক্ষে। এরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও এই ধর্মঘটের বিরোধিতাই করবেন, কারণ আরএসএস’র গোপন অনুমোদন তৃণমূলের জন্যও রয়েছে। এটা বুঝেই তৃণমূল-বিজেপি’র বিরোধিতার মোকাবিলা করে ধর্মঘটকে সফল করতে হবে।