৫৮ বর্ষ ১১শ সংখ্যা / ২৩ অক্টোবর ২০২০ / ৬ কার্ত্তিক ১৪২৭
ঐক্যবদ্ধ শ্রমিক আন্দোলনের জয়
অবশেষে ২৬ মাস পর খুলল গোন্দলপাড়া জুটমিল
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ চন্দননগরের গোন্দলপাড়া জুট মিল বন্ধ হয়েছিল ২০১৮ সালের ২৭ মে। দীর্ঘ ২৬ মাস বন্ধ থাকার পর ফের মিলটি খুলেছে গত ১৭ অক্টোবর। এই ২৬ মাস কেড়ে নিয়েছে মিলের ৫০-রও বেশি শ্রমিকের জীবন। শুধু অনাহার-অপুষ্টি-বিনা চিকিৎসায় এই শ্রমিকদের মৃত্যু হয়নি। দারিদ্র্যের দুঃখ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে প্রায় ১০জন শ্রমিক আত্মহত্যা করেছেন। ধারাবাহিকভাবে মিল খোলার দাবির আন্দোলনে পরিচালনার সাথেই এই কাজহারা শ্রমিকদের পাশে থেকেছে সিআইটিইউ অনুমোদিত বেঙ্গল চটকল মজদুর ইউনিয়ন (বিসিএমইউ) এবং সমগ্র সিআইটিইউ। তবে চন্দননগরের নাগরিক সমাজের ভূমিকা এক্ষেত্রে অনবদ্য। সমস্তরকমভাবে শ্রমিকদের পাশে থাকার সাথেই যাতে শ্রমিকরা আত্মহত্যার পথে না যায়, সে চেষ্টাও অক্লান্তভাবে চালিয়ে গেছে তারা।
প্রসঙ্গত, গত ১৪ সেপ্টেম্বর নব মহাকরণে শ্রমমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে মিল খোলার সিদ্ধান্ত হয়। এই কঠিন দিনগুলিতে রাজ্য সরকার, এলাকার তৃণমূল বিধায়ক ইন্দ্রনীল সেন, বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় - কাউকে শ্রমিকরা পাশে পান নি।
ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতি মাসে ৫৭ টাকা হিসাবে বকেয়া ২৬ মাসের মহার্ঘ্য ভাতা শ্রমিকরা পাবেন। এর মধ্যে ১৭ টাকা এখনই দিয়ে দেওয়া হবে। আর বাকি ৪০ টাকা চার কিস্তিতে দেওয়া হবে। চলতি হারে মহার্ঘ্য ভাতার টাকা নভেম্বর মাসের মজুরির সাথে শ্রমিকরা পাবেন। তবে মালিকপক্ষ এ দাবি মানতে চায় নি। বিসিএমইউ সহ ট্রেড ইউনিয়নগুলির অনড় অবস্থান গ্রহণে শেষপর্যন্ত মালিকপক্ষ এই দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়। বৈঠকে ঠিক হয়েছে, বদলি শ্রমিক বা স্পেশাল বদলি শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি হবে ৩৭০ টাকা। প্রসঙ্গত, এই মিলের শ্রমিক সংখ্যা ৪ হাজারেরও বেশি।
কোনো শ্রমিক অসন্তোষের জন্য এই মিল বন্ধ হয় নি। মিলটা অলাভজনকও ছিল না। বন্ধ হওয়ার সময়ে মিলে অর্ডার এতোটাই ছিল যে, তিন শিফটে উৎপাদন করেও তা সামাল দেওয়া যাচ্ছিল না। তবুও এই মিল বন্ধ হয়েছিল কোনো এক অজানা কারণে।
এই মিলের মালিক সঞ্জয় কাজারিয়া। এই মালিকের আরও দুটি জুট মিল আছে - হেস্টিংস ও ইন্ডিয়া জুট। এই সঞ্জয় কাজারিয়া মুখ্যমন্ত্রী সহ তৃণমূলের খুবই ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি। জার্মানি সফরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গী ছিলেন এই শিল্পপতি। এইসব কারণে মিল খোলা নিয়ে কোনো উদ্যোগও নেয় নি সরকারের শ্রমদপ্তর। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে লোকদেখানো মিলটা খোলা হয়েছিল। কিন্তু ভোটের পরই মিলে সাসপেনশন অব ওয়ার্কের নোটিশ ঝুলিয়ে দেয় মালিক। সরকারের ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণেই শ্রমিকদের পিএফ, ইএসআই, গ্র্যাচুইটির কোটি কোটি টাকা বকেয়া রেখেও নিশ্চিন্তে রয়েছেন এই মালিক।