E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ১১শ সংখ্যা / ২৩ অক্টোবর ২০২০ / ৬ কার্ত্তিক ১৪২৭

কাশ্মীরে বিশেষ মর্যাদা ফিরিয়ে আনতে তৈরি হলো লড়াইয়ের জোট


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে জোটবদ্ধ হলো সেখানকার মূল ধারার রাজনৈ‍‌তিক দলগুলো। সেখানে ২০১৯ সালের ৫ আগস্টের আগের অবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য ১৫ অক্টোবর শ্রীনগরে গুপকার রোডে ন্যাশনাল কনফারেন্সের সভাপতি ফারুক আবদুল্লাহ’র বাড়িতে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভা থেকে ‘পিপলস অ্যালায়েন্স ফর গুপকার ডিক্লারেশন’ নামে একটি জোট গঠিত হয়। এই জোট এই ইস্যু নিয়ে সমস্ত পক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালাবে বলে জানানো হয়েছে।

এদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সদ্য বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাওয়া মেহবুবা মুফতি, সিপিআই (এম) নেতা ইউসুফ তারিগামি, পিপলস কনফারেন্সের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ লোন, দলের সহসভাপতি ওমর আবদুল্লাহ, পিপলস মুভমেন্টের নেতা জাভেদ মীর প্রমুখ। প্রায় দু’ঘণ্টার বৈঠক শেষে ফারুক আবদুল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, সকলে মিলে বসে জোট গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং জোটের নাম ঠিক হয়েছে ‘পিপলস অ্যালায়েন্স ফর গুপকার ডিক্লারেশন’। তিনি জানিয়েছেন, ‘জম্মু-কাশ্মীর আর লাদাখ থেকে যা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে, তা ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের লড়াই চলবে। আমাদের এই লড়াই হলো সাংবিধানিক লড়াই। ৫ আগস্টের আগে জম্মু-কাশ্মীরের যে সাংবিধানিক মর্যাদা ছিল, তা পুনঃপ্রতিষ্ঠার লড়াই চলবে।’

এর আগে গত ২২ আগস্ট ফারুক আবদুল্লাহ’র বাড়িতেই মূল ধারার ৬টি রাজ‍‌নৈতিক দল একযোগে স্পষ্ট করে দিয়েছিল, সংবিধানের ৩৭০ ধারা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই চলবে। সেদিন প্রকাশিত গুপকার ঘোষণা-২ নামে একটি ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছিলেন ফারুক আবদুল্লাহ, পিডিপি প্রধান মেহবুবা মুফতি, সিপিআই (এম) নেতা ইউসুফ তারিগামি, কংগ্রেসের জি এ মীর, পিপলস কনফারেন্সের সাজ্জাদ লোন এবং আওয়ামি ন্যাশনাল কনফারেন্সের মুজফ্‌ফর শাহ। অবশ্য স্বাক্ষর থাকলেও বন্দি থাকার জন্য সেদিনের বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেননি মেহবুবা মুফতি।

‘গুপকার ঘোষণা-২’-এ রাজনৈতিক দলগুলি স্পষ্ট করেই বলেছিল, গতবছর মোদী সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলিকে চূড়ান্তভাবে অসাংবিধানিক বলে মন্তব্য করে গুপকার ঘোষণা-২ বলেছে, এগুলি ছিল জম্মু-কাশ্মীরের মানুষের মৌলিক পরিচিতির সামনে একটা বড়ো চ্যালেঞ্জ। সেই ঘোষণায় সকলেই গুপকার ঘোষণার বিষয়বস্তু সম্পূর্ণভাবে এবং কোনো বিচ্যুতি ছাড়াই মেনে চলতে বাধ্য থাকার কথা বলা হয়েছিল। ৩৭০ এবং ৩৫-এ ধারা, জম্মু-কাশ্মীরে সংবিধানের পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং রাজ্যের মর্যাদার পুনরুদ্ধারের জন্য লড়াই চালাতে তারা দায়বদ্ধ।

গতবছর ৩৭০ ধারা রদের আগের দিন ৪ আগস্ট এই রাজ‍‌নৈতিক নেতারা ফারুক আবদুল্লাহ’র বাড়িতে মিলিত হয়ে ‘গুপকার ঘোষণাপত্রে’ স্বাক্ষর করেছিলেন। মানুষকে শান্ত থাকার আরজি জানানোর পাশাপাশি মোদী সরকারের কাছে আরজি জানিয়েছিলেন যাতে সাবেক ওই রাজ্যের সাংবিধানিক মর্যাদার বদল না করা হয়। কিন্তু রাত পোহানোর আগে অবশ্য সেই নেতাদের হয় জেলে বন্দি করা হয়, নয়তো গৃহবন্দি করা হয়। কারও সঙ্গেই কোনো যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়নি।

বৈঠক শেষে ফারুক আবদুল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, জম্মু-কাশ্মীর সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের জন্য জোট সকল পক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালাবে, সেই মতোই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এর আগে এবছরের ৫ আগস্ট ৩৭০ ধারা রদের বর্ষপূর্তির দিনই এমন আন্দোলনের রূপরেখা স্থির করতে শ্রীনগরে ফারুক আবদুল্লাহ’র বাড়িতে মিলিত হবার কথা ছিল উপত্যকার রাজনৈতিক নেতাদের। কিন্তু বিরোধীদের কণ্ঠস্বর রদ করতে নরেন্দ্র মোদীর নীতিতেই সেদিন পুলিশ, সেনাবাহিনী সর্বদল বৈঠক বানচাল করতে সক্রিয় হয়ে উঠেছিল। বিভিন্ন জায়গায় নেতাদের আটক করা হয়েছিল, নাহ‍‌লে গৃহবন্দি করা হয়েছিল। একই কায়দায় সিপিআই (এম) নেতা ইউসুফ তারিগামির বাড়ির দরজায় তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যাতে তিনি ফারুক আবদুল্লাহ’র বাড়িতে ওই বৈঠকে যেতে না পারেন। সে দফায় সকলকে আটকাতে পারলেও এবার আর আটকানো যায়নি।