E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ১১শ সংখ্যা / ২৩ অক্টোবর ২০২০ / ৬ কার্ত্তিক ১৪২৭

বাচিক শিল্পী প্রদীপ ঘোষ-এর জীবনাবসান


১৬ অক্টোবর বিশিষ্ট আবৃত্তিকার প্রদীপ ঘোষের জীবনাবসান হয়েছে। কয়েক বছর ধরে তিনি অসুস্থ ছিলেন। বয়স হয়েছিল ৭৮। পরিবারে মেয়ে জামাই নাতনি বর্তমান। স্ত্রী রুবিচন্দ্রিমা ঘোষ এ’বছরেই ১ জানুয়ারি প্রয়াত হন।

১৯৪২-এর ১৫ আগস্ট অবিভক্ত ময়মনসিংহ জেলায় জন্ম। বিশিষ্ট অভিনেতা ও আবৃত্তিকার চিন্ময়জীবন ঘোষের পুত্র প্রদীপ ঘোষ। মা কণিকা ঘোষ। দেশভাগের আগেই বাবার চাকরির সূত্রে এপার বাংলায় চলে আসেন।

মৌলানা আজাদ কলেজ থেকে স্নাতক। স্নাতকোত্তর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৫সালে। একই সঙ্গে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতা নিয়ে স্নাতকোত্তর পাঠ।

আবৃত্তির পাশাপাশি আশ্চর্য সুন্দর হস্তাক্ষরে চলতো সাহিত্য চর্চা। ছাত্রাবস্থায় প্রদীপ ঘোষের কবিতা ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন কবি বিষ্ণু দে। দেশ বিদেশে সে কবিতা সমাদৃত হয়। বসুমতীতে থাকাকালীন কবি সাংবাদিক আবুল কাশেম রহিমুদ্দিনের মারফত বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে কবিপুত্র কাজী সব্যসাচীর সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কে আবদ্ধ হলেন এবং একসঙ্গে আবৃত্তি চর্চা ও পরিবেশনে সংস্কৃতি মহলে নতুন প্রাণের বার্তা দিলেন। গ্রন্থনা ভাষ্যপাঠ ও আবৃত্তি কাজী সব্যসাচীর প্রেরণায় প্রদীপের জীবনে নতুন দিগন্তের উন্মোচন হলো। ১৯৭০-এ দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রথম আবৃত্তির রেকর্ড প্রকাশিত হয় এইচএমভি থেকে। তারপর ক্রমান্বয়ে প্রায় একশ’ রেকর্ড, ক্যাসেট, সিডি তাঁর ললিতকন্ঠে এদেশে এবং নিউইয়র্ক, জার্মানি, কানাডা থেকে প্রকাশিত হয়। রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের কবিতার বাইরে সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, জীবনানন্দ, জসিমুদ্দিন, সুকান্ত, বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বিষ্ণু দে সহ আধুনিক কবিতা পাঠ আবৃত্তি তাঁর কন্ঠে শ্রোতাদের মনে স্থায়ী আসন করে নেয়। ১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট কলকাতা দূরদর্শনের সূচনালগ্নের প্রথম আবৃত্তি শিল্পী ছিলেন।

আবৃত্তিকে জনপ্রিয় ও সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে যেতে বেশ কিছু গ্রন্থ রচনা করেন। বন্যাত্রাণ, খরাত্রাণে পথে নেমে মানুষের কাছ থেকে অর্থসংগ্রহ করে দুর্গত মানুষের কল্যাণে তুলে দিয়েছেন।

প্রদীপ ঘোষ পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ সরকার কবিতা আকাদেমি প্রতিষ্ঠার প্রথম বছরেই কাজী সব্যসাচী সম্মান, রবীন্দ্র জীবনকৃতি সম্মান, দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় জীবনকৃতি সম্মান, চট্টগ্রাম ‘কর্ণম’ প্রদত্ত কাজী সব্যসাচী সম্মান, রবীন্দ্রভারতী সোসাইটির লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট, দিশারি পুরস্কার, জওহর শিশু ভবনের সম্মান সহ অসংখ্য পুরস্কার।

প্রদীপ ঘোষ রবীন্দ্রকবিতা সহ আধুনিক কবিতা পরিবেশনায় অন্য মাত্রা এনেছিলেন। বামমনস্ক এই মানুষটি ছিলেন একজন প্রতিবাদী মানুষ। তাঁর জীবনাবসানে শোকজ্ঞাপন করেছেন বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী এবং পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক রজত বন্দ্যোপাধ্যায়।