৬০ বর্ষ ৭ সংখ্যা / ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ / ৬ আশ্বিন, ১৪২৯
পলিট ব্যুরোর ঘোষণা
ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দলগুলিকে সমবেত করবে সিপিআই(এম)
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দলগুলিকে সমবেত করার কাজ করবে সিপিআই(এম)। গত ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সিপিআই(এম) পার্টির পলিট ব্যুরোর বৈঠকের পরে ২০ সেপ্টেম্বর এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, পলিট ব্যুরো সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পার্টির স্বাধীন শক্তি বৃদ্ধি, জোরদার বামপন্থী ঐক্য এবং বাম ও গণতান্ত্রিক শক্তিগুলির ঐক্য গড়ে তোলার জন্য কাজ চালিয়ে যাবে সিপিআই(এম)। ভারতীয় সংবিধান, গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক অধিকার, জনগণের নাগরিক অধিকার এবং ভারতীয় সাধারণতন্ত্রের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক চরিত্র রক্ষায় ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দলগুলিকে একসঙ্গে আনার প্রক্রিয়ায় যুক্ত হবে সিপিআই(এম)।
পলিট ব্যুরো বলেছে, মোদি সরকারের প্রচারের ঢক্কানিনাদ সত্ত্বেও ভারতীয় অর্থনীতির অধোগতি অব্যাহত রয়েছে। আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থা ফিচ আর্থিক বছর ২৩’র জন্য ভারতের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস ৭.৮ থেকে ৭ শতাংশে নামিয়ে দিয়েছে। বিশ্ব ব্যাঙ্কের তথ্যেও ২০২০, ২০২১ এবং ২০২২’এ ভারতের বার্ষিক বৃদ্ধির হার প্রকৃত অর্থে মাত্র ০.৮ শতাংশ দেখানো হয়েছে।
মূলত খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধিজনিত কারণে দ্রুতগামী মুদ্রাস্ফীতি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ৬ শতাংশ ঊর্ধ্বসীমা পরপর আট মাস অতিক্রম করে চলেছে। আগস্টে খুচরো মুদ্রাস্ফীতি পৌঁছেছে ৭ শতাংশে। খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি ৭.৬২ শতাংশের সীমা পেরিয়ে গিয়েছে। গ্রাম-ভারতের পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ, সেখানে মুদ্রাস্ফীতি পৌঁছেছে ৭.১৫ শতাংশে।
এই সময়েই, শিল্পে উৎপাদন বৃদ্ধির হার জুনের ১২.৭ শতাংশ থেকে নেমে জুলাইয়ে হয়েছে ২.৪ শতাংশ। ভোগ্যপণ্য উৎপাদনের হারও জুন মাসের তুলনায় ৩ শতাংশ কম ছিল।
এর সঙ্গেই বেকারত্বের হার বেড়ে দেশে কর্মসংস্থানের ভয়াবহ পরিস্থিতি আরও জটিল আকার নিয়েছে। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, ২০২১সালে সবেচেয়ে বেশি আত্মঘাতী হয়েছেন দিন-মজুরির শ্রমিকরাই।
জনগণের জীবন-জীবিকার ওপর ক্রমাগত বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক অধিকার, ধর্মনিরপেক্ষতা ও ভারতীয় সংবিধানের সুরক্ষায় ১৪-২৪ সেপ্টেম্বর সর্বভারতীয় প্রচার আন্দোলনের ডাক দিয়েছে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি। সারা দেশেই বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে এই প্রচার চালানো হবে এবং চূড়ান্ত পর্বে রাজ্য পর্যায়ের জনসভা এবং সমাবেশ হবে।
পলিট ব্যুরো ফের দাবি জানাচ্ছে, ধনীদের কর ছাড় এবং শাসক ঘনিষ্ঠদের বিপুল ঋণ মকুব এখন থেকেই বন্ধ করতে হবে। এই সম্পদ কাজে লাগিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টির উপযোগী ক্ষেত্রগুলিতে সরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
গভীর উদ্বেগের সঙ্গে পলিট ব্যুরো লক্ষ করেছে, দেশে মহিলাদের ওপর অত্যাচারের ঘটনা বিরাটভাবে বেড়ে গিয়েছে। ২০২১ সালে মহিলাদের ওপর অত্যাচারের ঘটনা ১৫ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে, অথচ দোষী সাব্যস্ত হওয়ার হার কম। মহিলাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা ব্যবস্থা কীভাবে ভেঙে পড়েছে তা উত্তর প্রদেশে দলবদ্ধ ধর্ষণের পর দুই দলিত নাবালিকাকে খুনের সাম্প্রতিক ভয়ঙ্কর ঘটনাই স্পষ্ট করে দিয়েছে।
হায়দরাবাদকে কেন্দ্র করে ইতিহাস বিকৃতি সম্পর্কে পলিট ব্যুরো বলেছে, ১৯৪৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর হায়দরাবাদের নিজাম আত্মসমর্পণ করেন এবং পূর্ববর্তী রাজ্য ভারতীয় ইউনিয়নের অঙ্গীভূত হয়ে যায়। নিজেদের ভাষ্য অনুযায়ী ‘মুক্তির দিন’ আখ্যা দিয়ে বিজেপি এই দিনটি এবং গোটা বছর উদ্যাপনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। মুসলিম শাসন থেকে ‘মুক্তির’ ভাষ্য হাজির করে স্পষ্টতই সাম্প্রদায়িক ভাবাবেগ জাগিয়ে তোলার লক্ষ্যে বিজেপি এই পরিকল্পনা নিয়েছে। ইচ্ছাকৃত বিকৃতির মাধ্যমে ইতিহাস পুনর্লিখনের লক্ষ্যেই ওদের এই পদক্ষেপ।
১৯৪৬ সালে হিংস্র অত্যাচারী জমিদারতন্ত্রের বিরুদ্ধে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বাধীন সশস্ত্র সংগ্রামের পরে নিজামের পক্ষে আর শাসন চালিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থাই ছিল না। এতেই নিজামের স্বৈরাচারী শাসন যথেষ্ট দুর্বল হয়ে পড়েছিল। এর মধ্যেই ১৯৪৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া পুলিশি অভিযানই নিজাম শাসনের শেষ ঘনিয়ে আনে এবং ১৭ সেপ্টেম্বর আত্মসমর্পণের ঘটনা ঘটে।
ফলে তথাকথিত ‘মুক্তি’ তত্ত্ব ছড়িয়ে আরএসএস যে কৃতিত্ব দাবি করছে, তা খুবই হাস্যকর। গান্ধীজির হত্যার ঘটনার পরে আরএসএস’কে বেআইনি ঘোষণা করেছিলেন সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল। ১৯৪৮’র ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯৪৯ সালের ১১ জুলাই পর্যন্ত সেই নিষেধাজ্ঞা বহাল ছিল। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, নিজামকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করানোর ঘটনায় বিজেপি’র যে কোনও ভূমিকার দাবি নিতান্তই প্রহসন।
পলিট ব্যুরো জানিয়েছে, ওই বিশেষ দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে পালন করবে সিপিআই(এম)। সশস্ত্র সংগ্রামের গৌরবজনক ইতিহাস ও সেই লড়াইয়ের অসংখ্য শহিদকে স্মরণ করে এবং সামন্ততান্ত্রিক নিগড় থেকে লক্ষ লক্ষ কৃষকের মুক্তির ঘটনা মনে রেখেই দিনটি উদ্যাপন করবে সিপিআই(এম)। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ - পরবর্তী সময়ে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে কৃষক বিদ্রোহের মতো এই ঐতিহাসিক সশস্ত্র সংগ্রামও স্বাধীন ভারতে ভূমি সংস্কারের প্রশ্নটিকে কেন্দ্রীয় আলোচনায় তুলে এনেছিল।