৬০ বর্ষ ৭ সংখ্যা / ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ / ৬ আশ্বিন, ১৪২৯
‘অলীক কুনাট্য’ ছেড়ে ‘উঠ ত্যজ ঘুম ঘোর’
বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়
‘অলীক কুনাট্য রঙ্গে, মজে লোক রাঢ়ে বঙ্গে, নিরখিয়া প্রাণে নাহি সয়’। এটা মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘প্রস্তাবনা’। সদ্য সদ্য ‘ঘণ্টাখানেক’ যাঁরা দেখেছেন তাঁদের কেউ কেউ বিষয়টা জানলেও অনেকেরই অজানা। ‘খেলা হবে’টা যেমন বেমালুম রবীন্দ্রনাথের সহজপাঠ থেকে টুকলি করে তৃণমূলের স্লোগান হয়ে গেছে। ঠিক বললাম কিনা কে জানে। কিছুদিন থেকে বর্ণপরিচয় আর সহজপাঠে বড়ো গুলিয়ে যায়। বাঙলায় একে বলে কনফিউশন। আর পাঁচটা বাঙালির মতো আমিও তাই কনফিউজড। কোনটা বিদ্যাসাগরের আর কোনটা রবীন্দ্রনাথের সে তো জানেন একমাত্র ‘ঘোষমশাই’। আমরা নিমিত্ত মাত্র। সুবচনীর নিরীহ শ্রোতা ছাড়া আর কিছু নয়। রসদ, উপাদান, গোলা, বারুদ, ব্রহ্মাস্ত্র, মাস্টার স্ট্রোক - সবই তাঁদের ঝুলিতে। আমরা দিনভর শুনি। আর দিনের শেষে চোঁয়া ঢেঁকুর তুলে অ্যান্টাসিড খেয়ে শুতে যাই পরের দিনের সুবচনীর অপেক্ষা সঙ্গী করে।
কথা ছোঁড়াছুঁড়ি, কথা লোফালুফি, কথা চালাচালি - এই ধরনের অনেকগুলো শব্দবন্ধের সঙ্গে আমরা বেশ পরিচিত। তবে সেগুলো নিছকই কথা ছিল। তর্ক ছিল। তরজা ছিল। সুস্থ আলোচনা ছিল। সুস্থ সংস্কৃতির অঙ্গ ছিল। ‘ছিল’ শব্দের ব্যবহার সচেতনভাবেই। এখন আর এগুলো প্রায় নেই বলেই মনে হয়। এর বদলে একটা বড়ো অংশই এখন মেতে উঠেছে কে কাকে কত নোংরাভাবে আক্রমণ করতে পারে, কত মিথ্যা বলতে পারে তা নিয়ে। সেই তালিকায় অধ্যাপক থেকে শুরু করে মন্ত্রী, সান্ত্রি, বড়ো নেতা, খুচরো নেতা, উঠতি কর্মী - সকলেই আছেন। বিষয়টা এমন দাঁড়িয়েছে, মাঝে মাঝে মনে হয়, যে যত কুকথা বলতে পারবে তার তত দ্রুত উত্তরণ। তাই যেন এক অঘোষিত প্রতিযোগিতা। রায় বলে আমায় দেখ, তো ব্যানার্জিদের দল বলে আমায় দেখ। মল্লিক বলে আমিই বা কম যাই কীসে। আর অধিকারী বলে, ওরে আমায় তোরা বাদ দিস না। সব দেখেশুনে ঘোষ বলে, আমিই বা ছাড়ি কেন? বিগত বেশ কিছুদিন ধরে এসব শুনে শুনে ‘আমাদিগের কর্ণযুগল ইদানীং বেশ পাকিয়া উঠিয়াছে’ বটে।
কুকথার সঙ্গে মিথ্যার সেরকম কোনো স্পষ্ট সম্পর্ক আছে বলে শোনা যায় না। সব কুকথাই মিথ্যা অথবা সব মিথ্যাই কুকথা - এরকম কোনো তুলনামূলক আলোচনা বোধহয় কোনোদিন হয়নি। হয়তো ভবিষ্যতে কখনও হবে। তবে, সেও এক জটিল বিষয় এবং তা নিয়ে পারলে কোনো অস্তিত্বহীন জর্জিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে একটা পিএইচডি করে নামের আগে ডক্টরেট লেখা যেতেই পারে। অথবা কোনো সুযোগসন্ধানী, দুর্নীতিগ্রস্ত প্রভাবশালীর সুপারিশে ডি লিট-ও পাওয়া যেতেই পারে। তবে ‘পড়ে পাওয়া চোদ্দো আনা’র ডি লিট পেলেও বাঙলা ভাষার প্রবাদ মেনেই বলতে হয়, ইল্লত যায় না ধুলে, স্বভাব যায় না মলে। তাই আড়াই পা ডিঙোলেই ফের জিভের ডগায় বর্ষার মেঘের মতো থোকা থোকা মিথ্যের দলের ভিড়। উদাহরণ হিসেবে কয়েকটা তো বলাই যায়। সেই মিথ্যের জালেই তো সিঙ্গুরে সর্ষে বীজ ছড়িয়ে ধানের ফলন হয়, চকলেট খেয়ে ২৬ দিনের অনশন হয়, নৃশংস ধর্ষণ ‘সাজানো ঘটনা’ ‘ছোটো ঘটনা’ হয়ে যায়, নন্দীগ্রামে সিপিএম হাজার হাজার মহিলার স্তন কেটে নেয়, কয়েকশো শিশুর পা চিরে তালপাটি খালে ফেলে দেয়। কখনও আদবানি খারাপ বাজপেয়ী ভালো হয়, কখনও আদবানি ভালো মোদি খারাপ হয়, কখনও মোদি ভালো অমিত শাহ খারাপ হয়। ঘটনা পরম্পরা বারবার প্রমাণ করে দেয় এই গোয়েবলসিনীর কাছে আসল গোয়েবলস নিতান্তই শিশু।
‘লোকে আমায় ভালোই বলে দিব্যি চলনসই, দোষের মধ্যে একটু নাকি মিথ্যে কথা কই।’ এটা শঙ্খ ঘোষের লেখা। প্রেক্ষিত যদিও আলাদা। আমি যদিও ‘ধর্ষণের প্রেক্ষিত’ খোঁজার মতো কবিতার প্রেক্ষিত খুঁজতে বসিনি। এ উদ্ধৃতি নিছকই উদাহরণ। আসলে কথা হচ্ছিল মিথ্যে নিয়ে। একটু বরং আগের থেকে শুরু করা যাক। তা নাহলে মিথ্যে টু মিথ্যের গতিপথ ঠিকমতো ধরা যাবে না। তাই আর কি!
২০ জানুয়ারি, ২০১৮। জি টিভি’র এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনি যখন ক্ষমতায় এসেছিলেন তখন আপনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এক কোটি মানুষের রোজগার দেবেন। আজ যখন ১৩৩৪ দিন পেরিয়ে গেছে এবং আপনি আপনার রিপোর্ট কার্ড দেখেন তখন মনে হয় কি যে আপনি মানুষের জীবনধারা বদলাতে পেরেছেন। এই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, যদি আপনাদের স্টুডিয়োর বাইরে বসে কোনো ব্যক্তি চপ বিক্রি করে দিনে ২০০ টাকা রোজগার করে সেটাকে আপনি রোজগার বলবেন নাকি বলবেন না? এরপর ২১ জুলাই, ২০১৮। সংসদে রাহুল গান্ধী প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, দেশের যুবকরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওপর ভরসা করেছিল। প্রতিটি ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলতেন প্রতি বছর দু'কোটি বেকারের চাকরি দেবেন। আর সত্যি হচ্ছে এখনও পর্যন্ত মাত্র ৪ লাখ যুবকের চাকরি হয়েছে। যে প্রশ্নের উত্তরে নরেন্দ্র মোদি বলেন, এই ধরণের প্রশ্ন করে দেশের যুবকদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। কোনোবারেই তিনি দু’কোটি চাকরির বিষয়ে মুখ খোলেননি নাকি প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে পাঠককেই। ২২ নভেম্বর ২০১৩-র ইকনমিক টাইমস’র ডিজিটাল সংস্করণের এক প্রতিবেদনে পিটিআই-কে উদ্ধৃত করে জানানো হয়, আগ্রার সভায় নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ‘যদি বিজেপি ক্ষমতায় আসে তাহলে এক কোটি চাকরি দেওয়া হবে, যে প্রতিশ্রুতি ইউপিএ সরকার ক্ষমতায় আসার আগে দিয়েছিল তা পূরণ করা হবে। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইস্তাহারে বিজেপি'র পক্ষ থেকে ১৩ বার কর্মসংস্থান-এর কথা বলা হয়েছিল। যদিও ২০১৪ থেকে ২০২২ - দেশের যুবদের কত চাকরি দিয়েছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার - সেই প্রসঙ্গে একবারও মুখ খোলা হয়নি।
শুধু প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনলে তো চলবে না। একটু তো মুখ্যমন্ত্রীর কথাও শুনতে হবে। আসুন দেখি তিনি কী কী বলেছেন সাম্প্রতিক সময়ে। ৭ জুলাই ২০২২। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এক অনুষ্ঠানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ‘৩০ হাজার চাকরি রেডি, যে কোনো দিন নিয়োগপত্র দিয়ে দেব।’ ‘আমরা আইটিআই, পলিটেকনিকে স্কিল ট্রেনিং দিচ্ছি। ৩০ হাজার ছেলেমেয়েকে চাকরি দেওয়া হবে। রাজ্য সরকার জব ফেয়ার করছে। শিল্প সংস্থা আর চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে এই জব ফেয়ার সেতুবন্ধনের কাজ করছে। এবার দ্রুত নিয়োগের পর্ব শুরু হয়ে যাবে। আরও ১৪ হাজারের অর্থাৎ, আইটিআই পাস করা কর্মদক্ষরাই চাকরির নিয়োগ পাবেন বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।’ (ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাঙলা, ৭ জুলাই, ২০২২)। ওইদিনই মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, ২০১১ সালের পর মাত্র ১০ বছরে রাজ্যে ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয়, ৫১টি নতুন কলেজ, ১৪টি মেডিক্যাল কলেজ, ২৭২টি আইটিআই, ১৭৬টি পলিটেকনিক, ৭ হাজার নতুন স্কুল, ২ লক্ষের বেশি অতিরিক্ত ক্লাস তৈরি হয়েছে।
গত ২৯ আগস্ট ধর্মতলায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমাবেশে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, তিনি গত ১১ বছরে স্কুল, কলেজ সহ বিভিন্ন সরকারি ক্ষেত্রে ১ লক্ষ ৬৩ হাজার ৯৭০টি চাকরি দিয়েছেন। ওইদিনই তিনি দাবি করেন তাঁর হাতে আরও ৮৯ হাজার ৩৫টি চাকরি আছে। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি অনুসারে ১৫ লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগ হয়েছে বিশ্ববাণিজ্য সম্মেলনে। এবং তাঁর অভিযোগ, রাজ্যে আরও চাকরি হতো। কিন্তু কিছু স্বার্থান্বেষীদের জন্য তা আটকে আছে। রাজ্যে এখন দেউচা পাঁচামি হচ্ছে, তাজপুর পোর্ট হচ্ছে। ডানকুনি, রঘুনাথপুর, জঙ্গলমহলে বিনিয়োগ হচ্ছে। এইসব হলে রাজ্যে আরও কর্মসংস্থানের সুযোগ খুলে যাবে।
এরপর ১২ সেপ্টেম্বর। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে উৎকর্ষ বাঙলা প্রকল্পের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন সেদিনই মঞ্চ থেকে ১১ হাজার নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে এবং ১৫ তারিখ আরও ৭ হাজার নিয়োগপত্র দেওয়া হবে। এরপর জেলা সফর থেকে মোট ৩০ হাজার নিয়োগ হবে। ওইদিনের সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "বাংলায় ৪৫ হাজার মেয়ে চাকরি পেয়েছে। ই-মেলে চাকরির নিয়োগপত্র চলে যাচ্ছে। ২০০টির বেশি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক তৈরি হচ্ছে। ক্ষুদ্র শিল্পে ১ কোটি ৩৬ লাখ মানুষ কাজ করছেন। রাজ্যের বাইরে যাওয়ার দরকার নেই। চাকরি আপনার দরজায় এসে আপনাকে ডাকবে” (এই সময় ডিজিটাল, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২২)। ১৫ সেপ্টেম্বরের এবিপি নিউজের প্রতিবেদন অনুসারে, খড়গপুরের সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "চা-বিস্কুট, ঘুগনি, তেলেভাজার ব্যবসা করুন, পুজো আসছে, দিয়ে কুলোতে পারবেন না। খেটে খেতে হবে, শরীরের নাম মহাশয়।... আপনি এক হাজার টাকা নিন, এক হাজার টাকা নিয়ে একটা কেটলি কিনুন আর কয়েকটা মাটির ভাঁড় নিন। সঙ্গে কিছু বিস্কুট নিন। আস্তে আস্তে বাড়বে। প্রথম সপ্তাহে বিস্কুট নিলেন, তারপরের সপ্তাহে মাকে বললেন, মা একটু ঘুগনি তৈরি করে দাও। তারপরের সপ্তাহে একটু তেলেভাজা করলেন। একটা টুল আরেকটা টেবিল নিয়ে বসবেন। এই তো পুজো আসছে সামনে, দেখবেন লোককে দিয়ে কুলোতে পারবেন না।” এরপর তাঁর দাবি অনুসারে, ‘আগামীদিনে ৮৯ হাজার শিক্ষক নেওয়া হবে।’ এছাড়াও, কচুরিপানা শুকিয়ে ব্যাগ, খাবার থালা, দুর্গাপুজোর সময় ফোটা কাশফুলগুলোকে এককাট্টা করে, তুলো মিশিয়ে লেপ, বালিশ তৈরি সহ হাজারো ব্যবসায়িক পরিকল্পনা। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, বিগত ১০ বছরে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ হাজার অধ্যাপক নেওয়া হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর এইসব দাবিতে চোখে ধাঁধা লাগবে নাকি কানে তালা তা জানিনা। তবে ১২ সেপ্টেম্বরের উৎকর্ষ বাঙলায় ঘটা করে যাদের নাকি নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছিল পরে শোনা গেছে সেগুলো জাল। গত ১৩ সেপ্টেম্বর হুগলির নোডাল অফিসে প্রায় ৩ হাজারের বেশি নিয়োগপত্র এসে পৌঁছায়। সারারাত ধরে সেগুলো বিলি করার পর জানা যায় সবকটিই ভুয়ো। একইভাবে ১২ সেপ্টেম্বর নেতাজি ইন্ডোর থেকে নিয়োগপত্র পাওয়া এক ছাত্রের অভিভাবক ১৩ সেপ্টেম্বর ফোন করেন গুজরাটের ফানফার্স্ট কোম্পানির সেন্টার ইনচার্জ বেদপ্রকাশ সিং-কে। বেদপ্রকাশবাবুকে অভিভাবক জানান, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কাছ থেকে তিনি অফার লেটার পেয়েছেন। নিয়োগপত্রে ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে বেদপ্রকাশের। তাঁর সাথে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে ১৪ সেপ্টেম্বর। এরপর বেদপ্রকাশবাবু স্পষ্টভাবে জানান, যে অফার লেটার দেওয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভুয়ো। গুজরাটে যারা আসে তাদের কাছে ইনচার্জের নামেই অফার লেটার যায়। সেখানে ইনচার্জের ফোন নম্বরও দেওয়া থাকে। কিন্তু এই অফার লেটারকে খুব সুষ্ঠুভাবে 'গলত তরিকা সে' ব্যবহার করা হয়েছে। গণশক্তি পত্রিকার এক সাংবাদিককে ফানফার্স্ট-র শীর্ষকর্তা সিদ্ধার্থ কক্কর জানান, যেভাবে আমাদের সংস্থার লেটারহেড ব্যবহার করে ভুয়ো ‘অফার লেটার’ তৈরি করা হয়েছে তা অত্যন্ত অন্যায়। আমরা যত দ্রুত সম্ভব আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছি।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, দাবি আর বাস্তব - কোনোটার সঙ্গে কোনোটার মিল নেই। বেসরকারি সংস্থায় অ্যাপ্রেন্টিসশিপের চুক্তি কবে থেকে নিয়োগপত্র হয়ে গেল সেটাও বোধহয় একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর বশংবদরাই ভালো বলতে পারবেন। নেতাজি ইন্ডোরে মুখ্যমন্ত্রী যখন জিজ্ঞেস করেন উপস্থিত সকলে নিয়োগপত্র পেয়েছেন কিনা, তখন অনেকেই না বলে দেন। অর্থাৎ উৎকর্ষ বাঙলার নামে যাদের নিয়োগপত্র দেওয়া হবে বলে ডেকে এনে নেতাজি ইন্ডোর ভরানো হয়েছিল তাদের বড়ো অংশই নিয়োগপত্র পাননি। একইভাবে খড়গপুরের সভাতেও ১০ হাজার জন উপস্থিত থাকলেও নিয়োগপত্র পেয়েছেন ১০ জন। মুখ্যমন্ত্রী সত্য বলছেন নাকি অসত্য সে প্রশ্ন তো এবার ওঠাই স্বাভাবিক।
বাঙলায় যেদিন থেকে সিঙ্গুর হাত গুটিয়েছে তারপর থেকে শিল্প হিসেবে গড়ে উঠেছে সিন্ডিকেট, তোলাবাজি শিল্প। বছর কয়েক আগে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চপ শিল্প। রাজ্যে এখনও পর্যন্ত যে কটা বাণিজ্য সম্মেলন হয়েছে তাতে প্রায় ১৫ লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে বলে জানানো হলেও এখনও পর্যন্ত কত টাকা প্রকৃত বিনিয়োগ হয়েছে তার কোনো তথ্য কোথাও নেই। সুতরাং মুখ্যমন্ত্রীর দাবি সত্যি অথবা মিথ্যে তা স্পষ্ট করে বলা সম্ভব। বিগত দশ এগারো বছরের অভিজ্ঞতা আমাদের কিন্তু অন্যরকমই ভাবতে শিখিয়েছে। ১৯৮৪-র নির্বাচনী হলফনামা থেকে যে ভুয়ো তথ্য দেবার শুরু আজও তা একইভাবে চলছে। অতএব, এবার বোধহয় জাগবার পালা। মাইকেলকে ধার করে বলা যায় ‘কত নিদ্রা যাবে তুমি, আর নিদ্রা উচিৎ না হয়। উঠ ত্যজ ঘুম ঘোর, হইল, হইল ভোর, দিনকর প্রাচীতে উদয়।’ ২০ সেপ্টেম্বর আমাদের সেই শিক্ষাই বোধহয় দিয়েছে।