৬০ বর্ষ ৭ সংখ্যা / ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ / ৬ আশ্বিন, ১৪২৯
দুর্গাপূজায় সরকারি অনুদান - পূজার সর্বজনীনতাকে ধ্বংস করারই এক হীন প্রয়াস
কৌশিক মুখোপাধ্যায়
দুর্গাপুজো এবং তাকে কেন্দ্র করে আয়োজিত উৎসব বাঙালির চিরন্তন ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারাতেই বিগত প্রায় ছ-সাতশো’ বছর এ সমাজে অঙ্গীভূত হয়েছে। বাড়িতে বাড়িতে দুর্গাপুজোর প্রথম শুরুর তেমন প্রামাণ্য নথি না পাওয়া গেলেও বৈদিক সাহিত্যে দেবী দুর্গার উপস্থিতির সুনির্দিষ্ট পরিচয় পাওয়া যায়। এ পুজোর সূচনা হয়েছিল বহু প্রাচীনকালে। ঐতিহাসিক তথ্য বলছে, সামাজিকভাবে দুর্গাপুজো সম্ভবত ১৫০০ শতকের শেষ দিকে মোঘল আমল থেকে মূলত সম্ভ্রান্ত, ধনী পরিবারগুলোতে শুরু হয়। একটি সূত্র মতে দিনাজপুর-মালদার কোনো এক জমিদার প্রথম পারিবারিক দুর্গাপুজোর সূচনা করেন। আবার অন্য সূত্রানুসারে, তাহেরপুরের রাজা কংসনারায়ণ বা নদীয়ার ভবানন্দ মজুমদার বাংলায় প্রথম শারদীয়া দুর্গাপুজো সংগঠিত করেন। এরপর রাজশাহির রাজা এবং বিভিন্ন গ্রামের হিন্দু রাজা বা জমিদারেরা বাড়িতে এ পুজো আরম্ভ করেন। ১৬১০ সালে কলকাতার বড়িশার রায়চৌধুরী পরিবার প্রথম দুর্গাপুজো শুরু করেন। আর ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে জয়যুক্ত হবার পর লর্ড ক্লাইভের সম্মানে শোভাবাজার রাজবাড়ির রাজা নবকৃষ্ণদেব দুর্গাপুজো আয়োজনের মাধ্যমে বিজয় উৎসব আয়োজন করেছিলেন। কলকাতা সহ বাংলার নানা স্থানে সমাজের ধনিক সম্প্রদায়দের দ্বারা আয়োজিত এই দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে গ্রামের মানুষদের সার্বিক অংশগ্রহণ অত্যন্ত স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু সবার উদ্যোগে বা এককথায় সর্বজনীন দুর্গাপুজোর আয়োজন কিন্তু অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষার্ধে। হুগলি জেলার গুপ্তিপাড়ার এক ধনী পরিবারের পুজোয় সমাজের কিছু মানুষের অংশগ্রহণ বন্ধ হয়। এদের মধ্যেই ১২ জন একত্রিত হয়ে প্রতিবেশীদের থেকে চাঁদা সংগ্রহ করে পুজোর আয়োজন করেন, যা বাংলায় প্রথম ‘বারোয়ারি’ পুজো বলে স্বীকৃতি লাভ করে। বারোজন ‘ইয়ার’ বা বন্ধুদের সম্মিলিত উদ্যোগে আয়োজিত হয় বলেই তা ‘বারোয়ারি’ পুজো বলে লোকমুখে প্রচলিত হয়ে ওঠে। ১৭৯০ সালে (কারো কারো মতে ১৭৬১ সালে) গুপ্তিপাড়ায় আয়োজিত এই পুজোর হাত ধরে বাংলায় বারোয়ারি বা সর্বজনীন দুর্গাপুজোর সূচনা ঘটে। ১৯১০ সালে ভবানীপুরের বলরাম বসু ঘাট রোডে ভবানীপুর সনাতন ধর্মোৎসাহিনী সভার পক্ষ থেকে কলকাতার প্রথম বারোয়ারি বা সর্বজনীন দুর্গাপুজোর সুচনা। পরবর্তী সময়ে ১৯১১ সালে শ্যামপুকুর আদি সর্বজনীন, ১৯১৩-তে শ্যামবাজারের শিকদার বাগান, ১৯১৯ সালে বাগবাজার সর্বজনীন এবং ১৯২৬ সালে সিমলা ব্যায়াম সমিতির বারোয়ারি দুর্গাপুজো শুরু হয়।
ব্যক্তিগত উদ্যোগে রাজা, জমিদার বা ধনী শ্রেণির হাত ধরে দুর্গাপুজোর সূচনা ঘটলেও ধীরে ধীরে শহর থেকে গ্রামে, জেলার নানা প্রান্তেই বারোয়ারি পুজোর হাত ধরেই দুর্গাপুজো গণ উৎসবে পরিণত হয়। বর্তমানে শুধু এ বাংলাতেই প্রায় ৫০ হাজার সর্বজনীন দুর্গাপুজোর আয়োজন হয়। সমাজের সকল শ্রেণির মানসিক, আর্থিক এবং আপন সক্রিয় অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়েই দুর্গাপুজোকেন্দ্রিক উৎসব সামগ্রিকতায় উপনীত হয়েছে। কালের সরণি বেয়ে দুর্গাপুজোর আঙ্গিকের যে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে তাও অনস্বীকার্য। সমাজের সকল শ্রেণির ব্যক্তিগত অংশগ্রহণ ছাড়াও দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে ধীরে ধীরে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর পৃষ্ঠপোষকতাও নিজস্ব অর্থনৈতিক স্বার্থেই উত্তরোত্তর বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়েছে। বিশেষত, বিশ্বায়ন-উদারীকরণ- পরবর্তী সময়ে দুর্গাপুজোকেন্দ্রিক এই ব্যাপ্তি নানাভাবে আরও বেশি মাত্রায় প্রসারিত হয়েছে। ফলে সামাজিক প্রভাবের পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবেও দুর্গাপুজো ও তাকে কেন্দ্র করে সংগঠিত উৎসবের এক সুবিশাল প্রভাব লক্ষণীয়। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২০ সালের জানুয়ারি - এই সময়কালের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ট্যুরিজম দপ্তর অনুমোদিত ও ব্রিটিশ কাউন্সিল কর্তৃক সংগঠিত দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে তিন সপ্তাহ ব্যাপী পুঙ্খনাপুঙ্খ সমীক্ষার ভিত্তিতে ‘ম্যাপিং দ্য ক্রিয়েটিভ ইকনমি অ্যারাউন্ড-২০১৯’ শীর্ষক একটি রিপোর্ট গত বছর প্রকাশিত হয়। এই রিপোর্টের ভিত্তিতে দেখা যাচ্ছে দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে সৃজনশীল নানা ক্ষেত্রে মোট অর্থনৈতিক বিনিয়োগের পরিমাণ ৩২,৩৭৭ কোটি টাকা এবং যা পশ্চিমবঙ্গের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ২.৫ শতাংশ। প্যান্ডেল ও পারিপার্শ্বিক ক্ষেত্র, প্রতিমা, আলোকসজ্জা, জামাকাপড় ও খুচরো পণ্য, প্রকাশনা, বিজ্ঞাপন, খাদ্যপণ্য সহ দশটি ক্ষেত্রের সাপেক্ষে এই সমীক্ষাকার্য সম্পাদন করা হয়। মণ্ডপ সজ্জা ও আনুষঙ্গিক ক্ষেত্রে ৮৬০ কোটি, প্রতিমায় ২৬০-২৮০ কোটি, জামাকাপড় ও খুচরো পণ্যে ২৭,৩৬৪ কোটি, প্রকাশনা ক্ষেত্রে ২৬০-২৭০ কোটি, খাদ্যপণ্যে ২,৮৫৪ কোটি এবং চলচ্চিত্র ও বিনোদন জগতে ৫৩.২ কোটি টাকা - দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে এমনই বিপুল আর্থিক বিনিয়োগের চিত্র পরিলক্ষিত হয়। কার্যত পাবলিক আর্টস উৎসবের নিরিখে দুর্গাপুজোই আজ বিশ্বের সর্ববৃহৎ উৎসব।
দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে বিপুলায়তনের এই সার্বিক সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবের সাথে কালপ্রবাহে রাজনৈতিক সংযোগ দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হয়েছে। রাজনৈতিক প্রভাব, প্রতিপত্তি বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে স্বাধীনোত্তর সময়ে মূলত ৬০-৭০-এর দশক থেকে দক্ষিণপন্থী দল হিসাবে কংগ্রেসের নানা স্তরের দলীয় নেতারা দুর্গাপুজো আয়োজনে সংযুক্ত হতেন। ধীরে ধীরে অনেক জায়গাতেই নেতাদের নামেই পাড়ার পুজোর নামকরণের রেওয়াজ চালু হয়ে যায়। পাশাপাশি বামপন্থীরা আবার নিজস্ব আঙ্গিকে জনসংযোগের হাতিয়ার রূপে মূলত প্রকাশনার উদ্যোগের মধ্যেদিয়ে এই উৎসবের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতেন। কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে কংগ্রেসের একাধিক নেতারাই হয়ে ওঠেন এক একটি দুর্গাপুজোর প্রধান পৃষ্ঠপোষক। আর আজকের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের বহু নেতাদের রাজনৈতিক উত্থান তো কার্যত বড়ো বড়ো পুজো আয়োজনের সাফল্যে ভর করেই। তবে সময়ের সাথে সাথে পুজো আয়োজনের উদ্যোগের সাথে সম্পূর্ণ দলীয় রাজনীতির এই আত্মীকরণ যত বেড়েছে উৎসবের সার্বিক মেজাজ থেকে সে পুজো তত বেশি শিকড় বিচ্ছিন্ন হয়েছে। শাসকের রাজনৈতিক প্রভাব, প্রতিপত্তি আর অর্থনৈতিক আস্ফালন যে আয়োজনে যত প্রগাঢ় হয়েছে স্বাভাবিক নিয়মেই সাধারণ মানুষের আবেগের সংযোগও সেখানে তত বিযুক্ত হয়েছে। সর্বজনীনতার বিচারে সে উৎসবের উৎকর্ষতার মাত্রাও তখন ম্রিয়মান হতে বাধ্য। রবীন্দ্রনাথের কথায় - ‘‘প্রতিদিন মানুষ ক্ষুদ্র, দীন, একাকী-কিন্তু উৎসবের দিনে মানুষ বৃহৎ, সে দিন সে সমস্ত মনুষ্যত্বের শক্তি অনুভব করে মহৎ’’ মনুষ্যত্বের শক্তি অনুভব করে মহত্বের পথে যাত্রায় উৎসবের যে পূর্ণতা প্রাপ্তি ঘটে তা কিন্তু তখনই সম্ভব যখন নিঃস্বার্থ নিবেদনে মানুষ আপন স্বতঃস্ফূর্ত আবেগে সবার সাথে মিলিত হয়ে উৎসবে অংশগ্রহণ করে। ভিড় বা বৈভবের নিরিখে আয়োজনের উৎকর্ষতার মাত্রাকে বিচার চলে না, বরং আত্মীয়তার অনুভব বিযুক্ত সে উৎসব কৃত্রিমতার দোষে দুষ্ট হতে বাধ্য হয়।
রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তি বৃদ্ধির লক্ষ্যে জনসংযোগের সহজ পথ হিসাবেই দুর্গাপুজোয় দক্ষিণপন্থী রাজনীতির সরাসরি অনুপ্রবেশ। প্রকৃতপক্ষে উৎসবের সর্বজনীনতার প্রশ্নে আপাদমস্তক রাজনৈতিক সে অনুপ্রবেশ কাঙ্ক্ষিত না হলেও তার সাথে অর্থনৈতিকভাবে সরাসরি সরকারি উদ্যোগ সংযুক্ত থাকতো না। যতদিন এরাজ্যে বামপন্থী, প্রগতিশীল শক্তির রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিক প্রতিপত্তি অক্ষুণ্ণ ছিল ততদিন পর্যন্ত অন্তত ধর্মীয় কোনো উৎসবেই আর্থিকভাবে প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতার কথা কল্পনাতীত ছিল। এমনকী দক্ষিণপন্থী উগ্র ধর্মীয় রাজনীতিকে মোকাবিলা করার হাতিয়ার রূপেও সরকারি ক্ষমতার এমন চরম অপব্যবহারের বিষয়ও ভাবা যেত না। ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ রাষ্ট্র কাঠামোয় বিশেষত পশ্চিমবঙ্গের মতো তথাকথিত সংস্কৃতি সচেতন ও প্রগতিশীল ভূমিতে এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের ধৃষ্টতা দেখানোর চূড়ান্ত অনৈতিক দুঃসাহস অর্জন নীতিগতভাবে চরম অধঃপতিত আজকের শাসকের মৌলিক চরিত্রের সাথেই যেন সাজুয্যপূর্ণ। তাই আজ যখন জনগণের করের টাকায় অর্জিত সম্পদ থেকে ২৫৮ কোটি টাকা দুর্গাপুজো আয়োজনের জন্য সরকারি দান রূপে সাড়ম্বরে, ঢাক পিটিয়ে ঘোষণা করা হয় তখন ন্যূনতম শিক্ষিত, রুচিশীল, আত্মমর্যাদা সম্পন্ন বিবেককে তা আলোড়িত করতে বাধ্য। প্রকৃতপক্ষে বাঙালি আবেগের সাথে সম্পৃক্ত এই ঐতিহ্যমণ্ডিত উৎসবকে রাজনৈতিকভাবে কবজা করার পাশাপাশি প্রশাসনিক উপায়ে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দখলদারির এ নিকৃষ্ট প্রচেষ্টা নিতান্তই নিন্দার যোগ্য। আপন রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যকে চরিতার্থ করার হাতিয়ার রূপে আপাদমস্তক অনৈতিকতা ও অসততার ভাবমূর্তিকে প্রশমিত করার হীন কৌশল রূপেই যে আত্মপ্রচারমত্ত এক মুখ্যমন্ত্রীর এহেন পদক্ষেপ গ্রহণ তা বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না। যথারীতি এমন সিদ্ধান্তের সপক্ষেও এক শ্রেণির স্তাবকের যুক্তি, অনুদান ও বিদ্যুৎ বা পৌরকরের ছাড়ের মাধ্যমে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা সরকারি কোষাগার থেকে ব্যয়ের এ পরিকল্পনা নাকি প্রকৃতপক্ষে দুর্গাপুজোকেন্দ্রিক অর্থনীতিকেই শক্তিশালী করবে। ইতিমধ্যেই এই নিবন্ধে উল্লেখিত পশ্চিমবঙ্গ সরকারেরই ট্যুরিজম দপ্তরের অনুমোদিত ব্রিটিশ কাউন্সিলের সমীক্ষায় ২০১৯ সালের ভিত্তিতে দেখা যাচ্ছে, দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে এ বাংলায় প্রায় সাড়ে বত্রিশ হাজার কোটি টাকার অথনৈতিক কর্মকাণ্ড সংগঠিত হয়। এই বিপুল অর্থনৈতিক বিনিয়োগের সাথে বাড়তি সরকারি অনুদান বা এমন অনাবশ্যক কর ছাড়ের প্রয়োজনীয়তার ন্যূনতম চিহ্নও উল্লেখিত হয়নি এ সমীক্ষায়। বাস্তবত আর্থিকভাবে চরম দুর্বল এ রাজ্য আজ স্বাস্থ্য, শিক্ষা সহ নানা খাতে সাধারণ ব্যয় সামলাতেই হিমসিম। এমনকী আপন কর্মচারীদের সঠিকভাবে বেতন প্রদানেও প্রতিমুহূর্তে কালঘাম ছুটছে আজকের প্রশাসনের। স্বাভাবিকভাবেই এমন পরিস্থিতিতে যে প্রশাসন এভাবে অকাতরে কোষাগারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ের অযৌক্তিক ও অনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণে উৎসাহী হয়, তা যে কেবলমাত্র শাসকের রাজনৈতিক সুবিধাবাদেরই এক কলঙ্কজনক নিদর্শন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ ধরনের আর্থিক খয়রাতির কোনো সুদূরপ্রসারী দুরস্ত, এমনকি ন্যূনতম তাৎক্ষণিক কার্যকারিতাও সামাজিকভাবে নেই। আর্থ-সামাজিকভাবে বিপর্যস্ত আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে কোনো শাসকের এমনতর সিদ্ধান্ত গ্রহণ কার্যত অপরাধের শামিল।
এ রাজ্যের বর্তমান শাসককুল তাদের ক্ষমতার একেবারে প্রারম্ভিক লগ্ন থেকেই সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার সূত্রে আমাদের সমাজের অন্দরে লালিত নানা শুভবোধ এবং মানবিক চেতনাকেই দুর্বল করার এক হীন প্রয়াসে লিপ্ত। অনৈতিক উপায়ে অর্জিত অর্থ প্রাচুর্য এবং প্রশাসনিক ক্ষমতায় থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গ্রামে-গঞ্জে-পাড়ায় যেকোনো উৎসবের সর্বজনীনতাকে হরণ করে তার রাজনীতিকরণ এবং সেই আয়োজনের অন্তর্নিহিত সমস্ত মহৎ উদ্দেশ্যকে নিম্নগামী করাই আজকের শাসকের সাফল্য অর্জনের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকী রক্তদানের মতো মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন মহতী উদ্যোগও আজ বর্তমান শাসককুলের পৃষ্ঠপোষকতায় রক্তের বিনিময়ে নানা উপহার সামগ্রী লাভের কর্মসূচিতে পরিণত হয়েছে। গ্রাম-শহরে, পাড়ায় পাড়ায় সকলে মিলে উৎসব আয়োজনের যে স্বাভাবিকতা আমাদের সমাজ-সংস্কৃতির ধারায় প্রবহমান, দক্ষিণপন্থী শাসককুলের বদান্যতায় দলীয় রাজনৈতিক অংশগ্রহণ তাকে একটা স্তর পর্যন্ত কলুষিত করেছিল। আজকের দুর্বিনীত শাসকের দুর্গাপুজোয় সরকারি অনুদানের এমন উদ্যোগ সেই কলুষময়তাকেই প্রাতিষ্ঠানিক করে তুলতে চাইছে। পুজো হোক বা যেকোনো সর্বজনীন উৎসব, সাধারণ মানুষের অকৃত্রিম আবেগ, উদ্দীপনা আর সামগ্রিক অংশগ্রহণের স্বাভাবিকতাতেই তা উজ্জ্বল হয়। শাসকের এমন প্রচেষ্টা প্রকৃত অর্থে আমাদের উৎসবের সেই চিরন্তন সর্বজনীনতাকেই সমূলে উৎপাটন করতে উদ্যত। সমাজ-সংস্কৃতি ধ্বংসকারী এমন সমস্ত অপপ্রচেষ্টার বিরুদ্ধে তাই চাই সব অংশের মানুষের সংগঠিত প্রতিবাদ-প্রতিরোধ।