৫৯ বর্ষ ১৯ সংখ্যা / ২৪ ডিসেম্বর, ২০২১ / ৮ পৌষ, ১৪২৮
প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির আক্রমণ প্রতিরোধে সক্ষম ঐক্যবদ্ধ শক্তিশালী পার্টি গড়ে তোলার প্রত্যয়
সিপিআই(এম) হুগলি জেলা সম্মেলনে
শংকর মুখার্জি
জেলা সম্মেলন উদ্বোধন করে বক্তব্য রাখছেন সুজন চক্রবর্তী।
ছবিঃ অনন্ত সাঁতরা
প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির সমস্ত রকমের চক্রান্ত আক্রমণকে প্রতিরোধে সক্ষম শক্তিশালী ঐক্যবদ্ধ গণলাইন সম্পন্ন বিপ্লবী পার্টি গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে সমাপ্ত হলো সিপিআই(এম) হুগলি জেলা ২৪ তম সম্মেলন। গত ১৯-২১ ডিসেম্বর আরামবাগ শহরের রবীন্দ্র ভবনে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলন উপলক্ষে আরামবাগ শহরের নামকরণ করা হয় কমরেড সুদর্শন রায়চৌধুরী নগর। প্রতিনিধি অধিবেশন হয়েছে কমরেড বিনয় দত্ত - বলাই সাবুই - দিলীপ চ্যাটার্জি - আসরফ হোসেন - অসিত মুখার্জি মঞ্চে। সম্মেলন উদ্বোধন করেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। সম্মেলনে প্রতিনিধি ও দর্শক মিলিয়ে মোট ৩৮৫ জন উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলনে ২২ দফা আগামী কাজ নির্ধারিত হয়েছে। আগামী কাজে বলা হয়েছেঃ আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে সর্বশক্তি নিয়ে এখনই ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। গড়ে ফেলতে হবে সর্বত্র বুথ সংগঠন। নিষ্ক্রিয় সদস্য মুক্ত পার্টি গড়ে তোলার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। পার্টির স্বাধীন বিকাশের সাথেই বাম-ঐক্যকে শক্তিশালী করতে হবে। রেড ভলান্টিয়ারদের কাজে পার্টির ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। অনেক নতুন ছাত্রযুবর সাথে পার্টির সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। একাজকে সংহত ও প্রসারিত করতে হবে। জোর দিতে হবে স্থানীয় আদায়যোগ্য দাবির আন্দোলনে। ধারাবাহিকতায় আনতে হবে সর্বস্তরে পার্টিশিক্ষা ও মতাদর্শগত চর্চাকে। সর্বোপরি শ্রেণি ও গণআন্দোলন গড়ে তোলা এবং প্লেনামের সিদ্ধান্তগুলিকে কার্যকর করতে হবে।
পার্টির রক্তপতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে সম্মেলন শুরু হয়। পতাকা উত্তোলন করেন জেলায় পার্টির প্রবীণ সদস্য মণীন্দ্র জানা। মণীন্দ্র জানা সহ পার্টির কেন্দ্রীয়, রাজ্য ও জেলা নেতৃত্ব শহিদ বেদিতে মাল্যদান করেন। এই তিনদিনের সম্মেলন পরিচালনা করেন মিতালী কুমার, পরিতোষ ঘোষ, গণেশ মান্ডি, মোজাম্মেল হোসেন, রামকৃষ্ণ রায়চৌধুরীকে নিয়ে গঠিত সভাপতিমণ্ডলী।
কমিউনিস্টরাই একমাত্র আপসহীন লড়াই চালাতে পারে
গণতন্ত্র, জনমুখী অর্থনীতির জন্য কিংবা করপোরেটমুখী নীতির বিরুদ্ধে লড়াই - সবক্ষেত্রে কমিউনিস্টদেরই সামনে থাকতে হবে। কেন না কমিউনিস্টরাই একমাত্র আপসহীন লড়াই চালাতে পারে। স্বাধীনতার আগের মতোই আজও তা সমানভাবেই প্রাসঙ্গিক। সম্মেলন উদ্বোধন করতে গিয়ে এই কথাই বললেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, কৃষক আন্দোলন, শ্রমজীবী মানুষের দেশব্যাপী অভূতপূর্ব ধর্মঘট প্রতিটি ক্ষেত্রেই কমিউনিস্টরা, বামপন্থীরা সামনে থেকেছেন। তাদের ছাড়া এসব আন্দোলন ভাবাই যায় না।
গণতন্ত্রের ওপর আঘাত, বিরোধীশূন্য রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা, প্রতারণা,প্রলোভন, নৈতিকতাহীন সংস্কৃতির যে পরিবেশ সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বিজেপি গড়ে তুলেছে এরাজ্যেও ঠিক একইপথে চলছে তৃণমূল। এই প্রসঙ্গের অবতারণা করে সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, রাজ্যের মানুষ তৃণমূল, বিজেপি কারুর ওপরই ভরসা রাখতে চাইছে না। তাঁরা এর বিকল্প খুঁজছে। মানুষের আকাঙ্ক্ষিত বিকল্পের যোগ্য হয়ে উঠতে হবে বামপন্থীদের। যাঁরা মনে করতেন, তৃণমূল বিজেপি-বিরোধী - ত্রিপুরা, মেঘালয়, গোয়াতে তৃণমলের কার্যকলাপ এবং প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পরেই আদানির সঙ্গে মমতার বৈঠক তাঁদের সেই বিশ্বাসে আঘাত করেছে। আসলে এঁরা দুজনেই যে পুঁজির সেবাদাস সে সত্য মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে বামপন্থীদেরই। পার্টিকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমাদের পরিচিত বৃত্তের বইরে বেরোতে হবে। পার্টিকর্মীর পরিচয়ের সাথেই সমাজজীবনে পাড়ার ছেলে,পাশের বাড়ির ছেলে হয়ে উঠতে পারছি কীনা তা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
রাজনৈতিক-সাংগঠনিক প্রতিবেদন
সম্মেলনে রাজনৈতিক-সাংগঠনিক খসড়া প্রতিবেদন পেশ করেন বিদায়ী জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ। প্রতিবেদনে সংগঠন প্রসঙ্গে বলা হয়েছেঃ ২৩ তম জেলা সম্মেলনের পরবর্তী সময়ে পার্টিকে নিষ্ক্রিয় সদস্য মুক্ত করা এবং পার্টিতে নতুন অন্তর্ভুক্তির প্রশ্নে সামান্য হলেও কিছু অগ্রগতি ঘটেছে। গত চার বছরে সামান্য হলেও বেড়েছে পার্টি সদস্য। বর্তমানে জেলায় পার্টি সদস্য ৯,৫২৭। এদের মধ্যে ৪৭ শতাংশই এসেছেন ২০১১ সালের পরবর্তী সময়ে। আর গত সম্মেলনের পরবর্তী সময়ে সদস্য হয়েছেন ৩,৩৯২ জন। জেলায় ৪২ টি এরিয়া কমিটিতে এবং কেন্দ্রীয়ভাবে মোট ৮৩০ টি শাখা আছে। এর মধ্যে ৭১ শতাংশ শাখায় সহায়ক গ্রুপ রয়েছে। গণলাইন বাস্তবায়িত করার বিষয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছেঃ সফল কর্মসূচিতেও দেখা গেছে ৭৫ শতাংশ বুথে মাত্র ৫০ শতাংশ বাড়িতে পৌঁছনো গেছে।।জনগণের মধ্যে কাজই হলো কমিউনিস্টদের প্রকৃত রাজনৈতিক-সাংগঠনিক কাজ। বিগত সময়ে সে কাজে ঘাটতি রয়ে গেছে। প্রতিবেদনের মতেঃ দৃষ্টিভঙ্গি হওয়া উচিত - জনগণের কাছ থেকে শিক্ষাগ্রহণ করা এবং তারপর এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কর্মসূচি স্থির করে তাদের কাছে ফিরে যাওয়া।
করোনা মহামারীর সময়ে লকডাউন পরিস্থিতিতে পার্টির উদ্যোগে ত্রাণকার্য পরিচালনা প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়েছেঃ প্রতিটা এরিয়া কমিটি এব্যাপারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছে। জনতার ক্যান্টিনে রান্না করা খাবার, শুকনো খাবার জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া; ওষুধ পৌঁছে দেবার মতো কাজগুলিতে পার্টি ও গণফ্রন্টগুলির ভূমিকা পার্টির মর্যাদাকে বৃদ্ধি করেছে। এই সময়কালে সর্বমোট প্রায় ৫ কোটি টাকার ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দেওয়ার কাজে পার্টি, ট্রেড ইউনিয়ন ও অন্যান্য গণফ্রন্টের ভূমিকাও উল্লেখযোগ্য। ছাত্রযুব ফ্রন্টের উদ্যোগে এই সময়কালে ১ হাজারেরও বেশি ইউনিট রক্তদান করা হয়েছে। এবং রেড ভলান্টিয়ারের কাজে ১ হাজারেরও বেশি কর্মী যুক্ত হয়েছিল।
বিগত সময়ে পার্টি ও বামদলগুলির উদ্যোগে বেশ কয়েকটি সফল সমাবেশ, ধারাবাহিক প্রচার আন্দোলনের কর্মসূচি সংগঠিত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ ২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর চুঁচুড়ার অমরপুর মাঠে সমাবেশ, ৩০ ডিসেম্বর চুঁচুড়ায় সমাবেশ, এবছরের নভেম্বর মাস জুড়ে শতাধিক স্থানে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে মিছিল-সভা-অবস্থান বিক্ষোভ প্রভৃতি।
বামপন্থীদের পরিসরটা বাড়াতে হবে
দক্ষিণপন্থীদের কৌশলই হলো কমিউনিস্টদের-বামপন্থীদের অপ্রাসঙ্গিক করে তোলো। যেকোনোভাবে বামপন্থীদের গতিকে রুদ্ধ করো। এই লক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল যা করে, ত্রিপুরাতে বিজেপি’র কাজও একই। ঠিক আয়নার প্রতিবিম্বের মতো। একে প্রতিহত করতে বামেদের পরিসরটাকে বাড়াতে হবে। সম্মেলনকে অভিনন্দন জানাতে গিয়ে একথাই বললেন পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেন, দক্ষিণপন্থীদের কৌশলকে পরাস্ত করতে হলে বামফ্রন্টকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ করতে হবে বামফ্রন্টের বাইরে বামদল, বামগোষ্ঠীগুলিকে। বিজেপি-তৃণমূলের বিরুদ্ধে যে শক্তিগুলি আছে তাদের এক জায়গায় নিয়ে আসতে হবে। তবে মূল অভিমুখ থাকে যেন মেহনতি-গরিব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রতি।দক্ষিণপন্থী দর্শনের স্বরূপ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সেলিম বলেন, এরা সবসময়ে অতীতমুখী। ইতিহাসকে খাঁচায় বন্দি করে রখতে চায়। এর বিপরীতে প্রগতিবাদীরা ভবিষ্যৎমুখী। তারা ইতিহাস থেকে রসদ সংগ্রহ করে।
আন্দোলন-সংগ্রাম প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, আন্দোলনের অর্থ হলো গতিশীলতা। মিছিল,মিটিং, ডেপুটেশন এসব আন্দোলনের প্রস্তুতি। ধাপে ধাপে এইসব কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে এগোতে হবে। সামাজিক গোষ্ঠীগুলির মধ্যে যে আন্দোলন গড়ে উঠছে পার্টিকে তার সাথে সেতুবন্ধন রচনা করতে হবে। এই আন্দোলনগুলির মধ্যে থেকে গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ উপাদানগুলিকে নিতে হবে। ছকভাঙা আন্দোলনের জন্য দরকার শক্তিশালী সংগঠন। এরজন্য পার্টিকে উপযুক্তভাবে গড়ে তুলতে হবে। বৌদ্ধিক ও মতাদর্শগতভাবে পার্টি একমুখীন আছে কীনা সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সামাজিক বিন্যাসকে প্রতিফলিত করতে হবে পার্টি কমিটিতে।
সেলিম বলেন সাম্প্রদায়িক-করপোরেট আতাঁত চায় বামপন্থীদের নিকেশ। এইজন্যই তাদের প্রয়োজন তৃণমূলকে। মমতা বিজেপি-বিরোধী কথা বলবে। কিন্তু কখনই আরএসএস বিরোধিতা করবে না। ২০১৮ থেকে একটা মত তৈরি করার প্রকল্প নেওয়া হয়। যাতে বলা হয়, তৃণমূলকে আটকাতে আরও প্রবল শক্তিধর বিজেপি’র প্রয়োজন। রাজ্যে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের রাজনীতিকে তীব্র করা হয় এই প্রকল্পকে সফল করতেই।
জনগণের জীবনযন্ত্রণার কথাই উঠে এলো
রাজনৈতিক-সাংগঠনিক প্রতিবেদনের ওপর আলোচনায় ৬২ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। রাজ্য সরকারের জনবিরোধী নীতি, উদাসীনতা এবং দুর্নীতিতে গ্রাম-শহরের মানুষের দুর্বিষহ অবস্থার কথা প্রতিনিধিদের বক্তব্যে প্রতিফলিত হয়েছে। জেলার শিল্পাঞ্চলে ডানলপ, হিন্দমোটর, কেশোরাম রেয়ন, মাদুরাই কোটস, দুটি চটকল সহ অসংখ্য কলকারখানা বন্ধ। অন্যদিকে নতুন শিল্পে বিনিয়োগও নেই। বেকারদের কর্মসংস্থান এবং কর্মচ্যুতদের কাজের দাবিতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনাভিত্তিক আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তার কথা প্রতিনিধিদের বক্তব্যে বারবার উঠে এসেছে। এ প্রসঙ্গে গোন্দলপাড়া জুট মিল খোলার দাবিতে সফল আন্দোলন পরিচালনা এবং বন্ধ থাকার সময়ে শ্রমিকদের পাশে থাকার বিষয়ের অবতারণা করেছেন তাঁরা। সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টিতে আলুচাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে কৃষকদের। আবার নতুন করে বীজ বুনতে হচ্ছে। প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, কৃষকদের এই অসহায় অবস্থায় রাজ্য সরকার ও পঞ্চায়েত নির্বিকার। একদিকে গ্রামাঞ্চলে ফি বছর বন্যার সমস্যা, শহরাঞ্চলে জলজমা আর নিকাশির সমস্যার কথাও বলেছেন প্রতিনিধিরা। প্রতিনিধিদের অভিমত হলো, বন্যানিয়ন্ত্রণ ও নদীভাঙন প্রতিরোধ,সুষ্ঠু নিকাশি ব্যবস্থা এবং নিম্ন দামোদর পরিকল্পনার সঠিক রূপায়ণের দাবিতে জেলাজুড়ে আন্দোলন গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিতে হবে। এছাড়াও প্রতিনিধিরা মহামারীর সময়ে ত্রাণকার্য পরিচালনার অভিজ্ঞতা এবং একাজে জনগণের কাছ থেকে যে সাহায্য সহযোগিতা পেয়েছেন তার বর্ণনা দিয়েছেন। সন্ত্রাসের মধ্যে সাংগঠনিক কাজ পরিচালনা এবং নির্বাচনী সংগ্রামের অভিজ্ঞতার কথা প্রকাশ পেয়েছে প্রতিনিধিদের বক্তব্যে। পৌরনির্বাচনের সাংগঠনিক কাজ এখন থেকেই শুরু করা, বামফ্রন্টকে শক্তিশালী করা এবং স্থানীয় দাবিতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলা জরুরি বলে প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।
প্রতিনিধিদের আলোচনার ওপর জবাবী ভাষণ দেন দেবব্রত ঘোষ। কিছু সংযোজনী-সংশোধনী সহ রাজনৈতিক-সাংগঠনিক প্রতিবেদনটি সর্বসম্মতিতে গৃহীত হয়।
রাজনৈতিক ভারসাম্যের পরিবর্তনে নতুন নতুন ক্ষেত্রে সংগঠনের প্রসার ঘটাতে হবে
উদারনীতির ফলে অসংগঠিত ক্ষেত্র প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্রামাঞ্চল এর বাইরে নয়। গ্রামে বৃদ্ধি পাচ্ছে অকৃষি ক্ষেত্রের সাথে যুক্ত মানুষের সংখ্যা। রাজনৈতিক শক্তির ভারসাম্যের পরিবর্তনে শ্রেণিআন্দোলনের মধ্য দিয়ে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে এই শ্রমজীবী শ্রেণিকে। গড়ে তুলতে হবে গ্রামীণ শ্রমিক ফেডারেশন। এটা আমরা করতে না পারলে সংগঠিত শ্রমিক আন্দোলন, গণআন্দোলনের বিরুদ্ধে এই শক্তিকে ব্যবহার করবে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি। সম্মেলনকে অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে একথা বলেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্য।
বর্তমান পরিস্থিতির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শ্রীদীপ ভট্টাচার্য বলেন, উদারনীতির ফলে সৃষ্ট মধ্যবিত্তের নতুন অংশ আন্দোলন-সংগ্রাম থেকে দূরে থাকছে। আগে মধ্যবিত্ত অংশ আন্দোলন-সংগ্রামে বিশেষ ভূমিকা নিতো। এখন তাদের সেই ভূমিকা নিতে দেখা যাচ্ছে না। এর পরিবর্তনে নাগরিক সমাজের মধ্যে নতুন নতুন সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। জনস্বাস্থ্য, সাক্ষরতা, জনবিজ্ঞান প্রভৃতি অপ্রচলিত গণসংগঠন গড়ে তোলার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। শহরাঞ্চলের গরিব মানুষের অন্যতম অংশ হলো বস্তিবাসী। শহরাঞ্চলের গরিব মানুষকে সংগঠিত করতে বস্তিবাসীদের সংগঠন একটা বড়ো হাতিয়ার হতে পারে - এটা আমাদের উপলব্ধিতে আনতে হবে। আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে স্তালিনের উক্তি স্মরণ করিয়ে দিয়ে শ্রীদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “ছোটো ছোটো কাজ সুনিপুণভাবে সম্পন্ন করতে না পারলে কখনই আন্দোলন গড়ে তোলা যাবে না।” এরসাথেই তাঁর পরামর্শ হলো, মতাদর্শ চর্চা ব্যতীত পরিস্থিতির ব্যাখ্যা করা যাবে না, এক-পাও সামনের দিকে এগনো যাবে না। তাই চলবে না মার্কসবাদ চর্চায় কোনো সংকীর্ণতা রাখা।
পতাকা উত্তোলন-শহিদ স্মরণের সময়ে এবং প্রতিনিধি অধিবেশনে সঙ্গীত পরিবেশন করেন রাজহাটি বৈতালিক শাখা এবং গণনাট্য সঙ্ঘের তারকেশ্বর গণ-মঞ্চ শাখার শিল্পীরা।