E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ২৮ সংখ্যা / ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ / ১১ ফাল্গুন, ১৪২৯

ভারতের আর্থিক সংকট

বাদল দত্ত


স্বাধীন হওয়ার পর আমাদের দেশ পুঁজিবাদী বিকাশের পথ গ্রহণ করে। পুঁজিবাদ একটি সংকটগ্রস্ত ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় বেকারি, দারিদ্র্য, বৈষম্য হাত ধরাধরি করে চলে। ফলে আমাদের দেশ গোড়া থেকেই সংকটের মধ্যে চলতে শুরু করে। আমূল ভূমি সংস্কার করে বিপুল সংখ্যক কৃষকদের ক্রয়ক্ষমতা যথেষ্ট না বাড়ানোর ফলে দেশে শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ বাজার গড়ে ওঠেনি। শিল্পোন্নত দেশের ভিত্তিও তৈরি হয়নি। বড়ো পুঁজির মালিকেরা চেয়েছে রাষ্ট্রের সহায়তায় পরিকাঠামো তৈরি হোক। অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের সহযোগিতায় কিছু ভারি শিল্প গড়ে তোলা, খনি, কয়লা,ব্যাঙ্ক-বিমার মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের মাধ্যমে রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্র গড়ে ওঠে। রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্র, সরকারের নীতি ও রাষ্ট্রের সুযোগ-সুবিধা পুরোমাত্রায় কাজে লাগিয়ে বড়োপুঁজির মালিকেরা তাদের সম্পদ বাড়িয়ে নেয়। জনগণের প্রতি শোষণ-বঞ্চনা বাড়ে। অর্থনৈতিক বদ্ধদশাও চলতে থাকে। শিল্পায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পুঁজির অভাব মেটাতে এবং রাষ্ট্রের ব্যয় নির্বাহ করতে বিদেশি পুঁজির উপর ক্রমবর্ধমান নির্ভরতা সংকটের গভীরে টেনে নিয়ে যায় দেশকে। সংকটের বোঝা চাপানো হয় জনগণের উপরই। জনগণের দুর্দশাও বেড়েই চলে।

অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের ভারে ক্রমশই জর্জরিত হয় দেশ। চরম আর্থিক সংকট কাটাতে দেশ আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শরণাপন্ন হয়। আন্তর্জাতিক লগ্নিপুঁজির স্বার্থবাহী আইএমএফ-বিশ্ব ব্যাংক-বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা এই সুযোগে চাপিয়ে দেয় কাঠামোগত পুনর্বিন্যাস কর্মসূচি। আমাদের দেশ চলতে শুরু করে নয়া উদারনীতির পথ ধরে।

এই নয়া উদারনীতি ভারতের আর্থিক সংকট দূর করতে সক্ষম নয়। নয়া উদারনীতির জন্ম বিশ্ব পুঁজির সংকট থেকেই। নয়া উদারনীতির মূল কথা ‘মুক্ত’বাজার। ‘মুক্ত’বাজার মানে নিয়ন্ত্রণহীন অর্থনীতি। অবাধ বাণিজ্য। দ্রুত মুনাফা অর্জনের জন্য আন্তর্জাতিক লগ্নি পুঁজি শেয়ার মার্কেটে, ফাটকা কারবারে খাটতে চেয়েছে। চেয়েছে এমন অবস্থা যেখানে এই পুঁজি দ্রুততার সাথে কোনো দেশে ঢুকতে পারে, আবার তেমনি দ্রুততার সাথে বেরিয়েও যেতে পারে। এর জন্য প্রয়োজন হয় এই নয়া উদার অর্থনীতি।

নয়া উদার অর্থনীতির পথ ধরে আন্তর্জাতিক লগ্নি পুঁজি ফুলে ফেঁপে ওঠে। ফাটকা কারবার প্রকৃত অর্থনীতিকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যায়। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংকট পরিণত হয় আর্থিক ব্যবস্থার সংকটে। আমেরিকার সংকট ২০০৮-এ বিশ্ব সংকটে পরিণত হয়। সেই সংকট থেকে বিশ্ব এখনও বেরিয়ে আসতে পারেনি। রাষ্ট্রপুঞ্জ প্রকাশিত ‘ইউনাইটেড নেশনস ওয়ার্ল্ড ইকনমিক সিচুয়েশন অ্যান্ড প্রসপেক্টস, ২০২৩’ রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘২০২২ সালে বিশ্বের জিডিপি ৩ শতাংশ বাড়লেও এ বছর তা নামতে পারে ১.৯ শতাংশে। গত কয়েক দশকে যা সবচেয়ে কম।’ বিশ্বজুড়ে কর্মী ছাঁটাই বাড়ছে। বেকারি বাড়ছে। ‘ইকনমিক পলিসি ইনস্টিটিউট’-এর হিসাব অনুযায়ী ১৯৭৯ সাল থেকে ২০২১ এর মধ্যে মার্কিন অর্থনীতিতে যেখানে উৎপাদনশীলতা বেড়েছে ৬২ শতাংশ, সেখানে মজুরি বেড়েছে মাত্র ১৫ শতাংশ। উৎপাদন ব্যয়ে মজুরির অংশ কমছে। ফলে বৈষম্য বাড়ছে। জীবন মান বাড়ছে না। সংকট গভীর থেকে গভীরতর হয়েছে। ৮২ কোটির বেশি মানুষ এখন রোজ রাতে ঘুমোতে যান অভুক্ত অবস্থায়। বিশ্বের প্রতি ১০ জন মানুষের মধ্যে একজনকে অভুক্ত অবস্থায় রাত কাটাতে হচ্ছে। প্রায় ৫ কোটি মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন দুর্ভিক্ষের খাদের কিনারে। অনুন্নত দেশগুলিতে খাদ্য সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে।

নয়া উদারনীতি অনুসরণ করার ফলে ভারতের জনজীবনে সংকট এক ভয়াবহ চেহারা নিয়েছে। কৃষি ও কৃষক বিপন্ন। ক্ষুধা ও অভাবের তাড়নায়, ঋণের দায়ে কৃষক আত্মহত্যা করছেন। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ক্ষুধাতুর মানুষ ভারতে। ২০২২-এর বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ১২১টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১০৭তম। রাষ্ট্রসঙ্ঘের মানব উন্নয়ন সূচক অনুযায়ী ভারতের স্থান ক্রমশ নিচে নামছে। ২০২২-এ মানব উন্নয়ন সূচকে ভারতের স্থান ১৩২তম।

বিভিন্ন সরকারি সমীক্ষা ও রিপোর্ট থেকে দেখা যাচ্ছে, ২০১৬-১৭ থেকে ২০২০-২১-এর মধ্যে কৃষকদের আয় কমেছে বার্ষিক ১.৫ শতাংশ হারে। ৫০ লক্ষ মানুষের ঘর নেই। ১৩ কোটি মানুষ বাস করেন বস্তিতে। গ্রাম-শহর মিলিয়ে মাত্র ৫৬ শতাংশ পরিবার এলপিজি ব্যবহার করেন। ১৯.৪ শতাংশ পরিবারের কোনো শৌচাগার ব্যবহারের সুযোগ নেই। ৯ লক্ষ পরিবারে জল পৌঁছায়নি।

বেকারির হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে প্রতিদিন। কেন্দ্রীয় সরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় শূন্য পদের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৯ লক্ষ ৭৯ হাজার। যা নিয়োগ হয়েছে তার থেকে দ্বিগুণ হারে বেড়েছে শূন্য পদের সংখ্যা।

‘ওয়াশিংটন পোস্ট’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, গত বছরের নভেম্বর থেকে মার্কিন তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে প্রায় ২ লক্ষ কর্মী ও আধিকারিক কাজ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ডিসেম্বরেই কর্মচ্যুত হয়েছেন প্রায় ৫০ হাজার। এদের মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশই ভারতীয়। শ্রমজীবী মানুষের আয় কমছে। ২০২১-২২-এ খেতমজুরদের দৈনিক মজুরি গোটা দেশে ৩২৩ টাকা ২০ পয়সা। নির্মাণ শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৩৭৩ টাকা ৩০ পয়সা। জাতীয় ক্রাইমব্যুরো’র রিপোর্ট অনুযায়ী দেশে দিনমজুরের আত্মহত্যা বেড়েই চলেছে। দিনমজুরদের আত্মহত্যা ২০১৪-র ১৫ হাজার ৭৩৫ জন থেকে বেড়ে ২০২১-এ হয়েছে ৪২ হাজার ৪ জন। ২০২১ সালে মোট আত্মহত্যার সংখ্যা ১ লক্ষ ৬৪ হাজার ৩৩ জন। প্রতিদিনই আয়ের সমস্ত রাস্তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে দিন আনি দিন খাই মানুষের। জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। মূল্যবৃদ্ধির হার রিজার্ভ ব্যাংকের সহনসীমা হার (৪-৬ শতাংশ) থেকে অনেক উপরে। গত বছর জানুয়ারিতে খুচরোপণ্যে মূল্য বৃদ্ধির হার ছিল ৬.০১ শতাংশ। এ বছর জানুয়ারিতে তা বেড়ে হয়েছে ৬.৫২ শতাংশ।

ধনী ও দরিদ্রের বৈষম্য বাড়ছে অশ্লীলভাবে। ‘অক্সফ্যাম’-এর ‘সারভাইবাল অব দ্য রিচেস্ট’ রিপোর্ট অনুযায়ী, সবচেয়ে ধনী ১ শতাংশ দেশের মোট সম্পদের ৪১ শতাংশের মালিক। নিচের তলার ৫০ শতাংশের হাতে মোট সম্পদের মাত্র ৩ শতাংশ। ২০২২ সালে ভারতের সর্বাধিক ধনী ১০০ জনের মোট সম্পদের পরিমাণ ৫৪.২২ লক্ষ কোটি টাকা। সবচেয়ে ধনী ১০ জনের মোট সম্পদের পরিমাণ ২৭.৫২ লক্ষ কোটি টাকা। এই এক বছরে আদানির একার সম্পদ বেড়েছে ৪৬ শতাংশ। মোদি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় আদানি আজ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ধনী। হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ রিপোর্টে সেই আদানি সাম্রাজ্য এখন বিপর্যস্ত। বিশ্বের বিভিন্ন করমুক্ত অঞ্চলে শিখণ্ডী কোম্পানি খুলে তাদের মাধ্যমে আদানি গোষ্ঠী বিনিয়োগ করেছে। কর ফাঁকি দিয়েছে। নিজেদের শিখণ্ডী সংস্থাকে দিয়ে শেয়ার কেনাবেচা করে শেয়ার মূল্য বাড়িয়েছে। আর এই কাজে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও বিমা সংস্থাকে ব্যবহার করেছে। আদানিদের জালিয়াতি ব্যবসায় পুঁজি জোগাতে গিয়ে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও বিমা সংস্থা। অন্যদিকে দেশে দারিদ্র্য সীমার নিচে মানুষের সংখ্যা ২২ কোটি ৮৯ লক্ষ, যা গোটা বিশ্বে সর্বাধিক। বিশ্বের অপুষ্টিতে আক্রান্ত জনসংখ্যার প্রায় ২৫ শতাংশ বাস করেন ভারতে। ধনীদের তুলনায় অনেক বেশি করের বোঝা বইতে হচ্ছে গরিব ও মধ্যবিত্তকে। সবচেয়ে ধনী ১০ শতাংশ দিয়েছেন জিএসটি’র ৪ শতাংশ। ২০১৭-১৮ থেকে ২০২১-২২ এই পাঁচ বছরে করপোরেটকে মোট ৯.৯১ লক্ষ কোটি টাকা অনাদায়ী ঋণ মকুব করা হয়েছে। ‘দি ইকনমিস্ট’-এর তথ্য অনুযায়ী ২০১৬ থেকে ২০২০-র মধ্যে আম্বানির মোট সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ৩৫০ শতাংশ। একই সময়ে আদানির মোট সম্পদ বেড়েছে ৭৫০ শতাংশ। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নীকরণ ও জাতীয় সম্পদ বিক্রির ঢালাও কর্মসূচি নিয়েছে সরকার। সরকারি জমি, রেললাইন, স্টেশন, বন্দর, বিমানবন্দর ও অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের সম্পদ বিক্রির উদ্দেশ্যে ‘জাতীয় নগদিকরণ পাইপলাইন’ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আর এইসব সম্পদ কিনে নিচ্ছে একটি নির্দিষ্ট অংশের বড়ো পুঁজির মালিকেরা। ক্রমশই স্পষ্ট হচ্ছে রাষ্ট্র ও করপোরেটের আঁতাত। ফলে ভারতে আর্থিক অসাম্য বেড়েই চলেছে। তফশিলি জাতি, উপজাতি, মুসলিম, মহিলা এবং অসংগঠিত ক্ষেত্রের মানুষের অবস্থা খুবই শোচনীয়। তাছাড়া রয়েছে গ্রাম ও শহরের বৈষম্য। দেশের শাসকের কাছে উন্নয়ন হলো মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি) বৃদ্ধি। দেশের উন্নয়নের জন্য জিডিপি বৃদ্ধি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তবে শুধুমাত্র জিডিপি বৃদ্ধিতেই মানুষের উন্নয়নের নিশ্চয়তা তৈরি হয় না। দেশের মানুষের সামগ্রিক জীবন মানের উন্নয়নকে বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়নের প্রশ্ন অবান্তর। আজকের বিশ্বে ভারতের মতো দেশে মানুষকে বাদ দিয়ে জিডিপি বৃদ্ধির কাজটিও মোটেই সহজ নয়। ‘ফ্রন্টলাইন’ (২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩)-এর তথ্য অনুযায়ী যেখানে আমেরিকার জিডিপি ২৫.০৩ ট্রিলিয়ন ডলার ও চিনের জিডিপি ১৮.৩২ ট্রিলিয়ন ডলার, সেখানে ভারতের জিডিপি মাত্র ৩.৪৬ ট্রিলিয়ন ডলার।

বেকারি-দারিদ্র্য-বৈষম্য-মূল্যবৃদ্ধি এই মূল সমস্যাগুলি নিরসন করার কোনো প্রচেষ্টা সরকারি নীতি ও কর্মসূচিতে নেই। বাজেটেও নেই। দেশ এখন চাহিদার অভাবজনিত সংকটে রয়েছে। এই সংকট কাটানোর জন্য প্রয়োজন সরকারি ব্যয় এমনভাবে বাড়ানো যাতে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে। করা হয়েছে উলটোটা। একের পর এক বাজেটে তা প্রতিফলিত হচ্ছে। ২০২২-২৩ সংশোধিত হিসাবে সরকারি ব্যয়ের পরিমাণ যেখানে ছিল জিডিপি’র ১৫.৩ শতাংশ, সেখানে ২০২৩-২৪ বাজেটে সেই অনুপাত কমে দাঁড়িয়েছে ১৪.৯ শতাংশে। একশো দিনের কাজে বরাদ্দ কমেছে ৩৩ শতাংশ। রান্নার গ্যাসে ভরতুকি কমেছে ৭৫ শতাংশ। সারে ভরতুকি কমেছে ২২ শতাংশ। সুসংগঠিত কৃষক আন্দোলনের চাপে ২০২১-এর তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছিল মোদি সরকার। এ আন্দোলনের মূল বিষয় ছিল ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিশ্চিত করা এবং ফসল কেনার সরকারি ব্যবস্থা সম্প্রসারিত করা। বাজেটে এ প্রসঙ্গে কোনো উল্লেখই নেই। বরং খাদ্যে ভরতুকি কমানো হয়েছে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা। ফলে ফসল কেনার সরকারি ব্যবস্থা আরও সংকুচিত হবে। অথচ কৃষি ও কৃষককে বাঁচানোর জন্য এটা ছিল অত্যন্ত জরুরি কাজ। আয়করের ওপর সারচার্জের হার কমানোয় অতি ধনীদের সর্বোচ্চ করের হার ৪৩ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ৩৯ শতাংশ। অতি ধনীদের ওপর করের বোঝা কমালে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়বে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এই বাজেটে আয়করে ছাড় দেওয়া হয়েছে। অন্তত একজন আয়কর দেন এমন পরিবার দেশে মাত্র দশ শতাংশ। দেশের ৯০ শতাংশ পরিবারের কাছে এই আয়কর ছাড়ের কোনো প্রত্যক্ষ গুরুত্ব নেই। অন্যান্য প্রত্যক্ষ কর অপরিবর্তিত থাকলে রাজস্ব ঘাটতি মেটানোর জন্য পরোক্ষ কর বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই। পরোক্ষ করের বোঝা চাপে সাধারণ মানুষের ওপর। সাধারণ মানুষের প্রকৃত আয় কমে। ধনীর আয় বাড়লে তা বহু ক্ষেত্রে সঞ্চয়ে গচ্ছিত থাকে। ভোগব্যয় বাড়ে না। বাজারে ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে না। আর গরিব মানুষের হাতে টাকা এলে তা মূলত ভোগব্যয়ে খরচ হয়। বাজারে ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বাড়ে। বাজারের চাহিদার অভাবজনিত সংকট কাটাতে সাহায্য করে। বাস্তবে ধনী আরও ধনী হচ্ছে। গরিব হচ্ছে আরও গরিব। আর্থিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসার কোনো লক্ষণ নেই। বরং নয়া উদার অর্থনীতি আমাদের দেশের সংকটকে গভীরতর করেছে। এই সংকট কাটানোর জন্য প্রয়োজন সরকারি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ যা বাজারে চাহিদা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। প্রয়োজন শ্রমজীবী মানুষের আয় বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, কর্মচ্যুতি রোধ, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের সুরক্ষা, শ্রম নিবিড় শিল্পে ঋণ প্রদান, পরিকাঠামো উন্নয়ন, খাদ্যশস্যে বরাদ্দ বৃদ্ধি, জনকল্যাণ খাতে ব্যয় বৃদ্ধি, কৃষিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বিনিয়োগ বৃদ্ধি। সব মিলিয়ে বিপুল সংখ্যক জনসাধারণের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ানোর সর্বাত্মক প্রয়াস। পৌনঃপুনিক আর্থিক সংকট থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য দরকার ফাটকা কারবারকে নিয়ন্ত্রণে আনা, লুটেরা পুঁজির বেপরোয়া অভিযান আটকে দেওয়া ও রাষ্ট্র-করপোরেট আঁতাতকে ধ্বংস করা।