E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ২৮ সংখ্যা / ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ / ১১ ফাল্গুন, ১৪২৯

সিএএ ২০১৯

রাজভোগ খাওয়াব বলে এখন কাঁচকলা দেখাচ্ছে

অলকেশ দাস


দরকার ছিল না সিএএ ২০১৯

এনআরসি ইজ ব্যাক। নতুন করে এনআরসি'’র ইস্যু তোলা শুরু হয়েছে। এ’বছর গুজরাটে ভোটের আগে গুজরাটের দুই জেলাশাসককে নাগরিকত্ব প্রদানের নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দপ্তর। তখনই চেঁচামেচি শুরু হয় যে, তাহলে কি পিছনের দরজা দিয়ে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ২০১৯-এর প্রয়োগ শুরু হয়ে গেল? তারপর দেখা গেল যে, স্বরাষ্ট্র দপ্তর বলছে এটা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ২০১৯-এর প্রয়োগ নয়। গুজরাটে এই নাগরিকত্ব প্রদান হবে নাগরিকত্ব আইন ১৯৫৫-এর ১৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী। এই ১৬ নম্বর ধারাতে লেখা আছে যে, কেন্দ্রীয় সরকার তার ক্ষমতার প্রয়োগ ঘটাতে পারে নাগরিকত্ব সংক্রান্ত বিষয়ে, সেকশন ১০ এবং ১৮ ছাড়া নাগরিকত্ব আইনের মূল মর্মবস্তুকে তুলে ধরার জন্য। এর থেকে বোঝা গেল যে, কেন্দ্রীয় সরকার প্রয়োজনে নাগরিকত্ব দিতে পারত বা পারে। ১৯৫৫-এর নাগরিকত্ব আইনেই তার ব্যবস্থা আছে। তাহলে এত ভয়, আশঙ্কা তৈরি করে সারা ভারতকে উথাল-পাথাল করে সিএএ ২০১৯ কেন? কেন কুখ্যাত এনআরসি, এনপিআর’র মারণযজ্ঞের আয়োজন? ভোট কুড়োনোর জন্য? হিন্দু রাষ্ট্রের জন্য? সংখ্যালঘুর উপর ভয় তৈরির জন্য? সারাদেশে অস্থিরতার জন্য?

রং দে মোহে গেরুয়া

ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়ির বড়োমা বীণাপানি দেবী যখন বেঁচে ছিলেন তখন প্রধানমন্ত্রী গিয়ে তাঁর পা ছুঁয়ে বলেছিলেন - কেউ যা পারেনি আমি তা করে দেব। অর্থাৎ মতুয়া, উদ্বাস্তুদের তিনি নাগরিকত্ব দেবেন। লক্ষ্য ছিল ভোট। রং দে মোহে গেরুয়া। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে তা ম্যাজিকের মতো কাজ করল নিম্নবর্গ, উদ্বাস্ত মানুষের উপর। এইসব অধ্যুষিত এলাকাগুলি থেকে প্রতিনিধিত্ব বেড়ে লোকসভায় গৈরিকের আধিক্য হলো। লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ২০১৯ পাশ করানো হলো। ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯-এ সংসদে অনুমোদনের পর রাষ্ট্রপতি সই করে তাকে আইন করে দিলেন। চারিদিকে ‘গণেশের দুধ খাওয়ার’ ঢঙে প্রচার করিয়ে দেওয়া হলো - ব্যস, আর কোনো চিন্তা নেই - উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্বের সুরাহা হয়ে গেল। কিন্তু আইনকে প্রয়োগ করতে গেলে তার জন্য তো রুল তৈরি করতে হয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রিত্বের দপ্তরকে রাষ্ট্রপতি বিলে সই করবার পর ছয় মাস সময় দেওয়া হয় এই রুল তৈরি করবার জন্য। এই ছয় মাসের রুল তৈরি না হলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে আবার সময় চাইতে হয় পার্লামেন্টের স্ট্যান্ডিং কমিটি অন সাব-অর্ডিনেট লেজিসলেশনের কাছে। ৬ বার সময় চাওয়া হয়ে গেছে। সরকার, অমিত শাহরা রুল তৈরি করতে পারছেন না। আসলে গোটা মিথ্যার ওপরে সত্যি নির্মাণ করতে ভয় পাচ্ছেন। যদি ব্যুমেরাং হয়! ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের আগে অমিত শাহরা এ রাজ্যে বলে গেছেন কোভিড, অতিমারী, প্যান্ডেমিকই নাকি দীর্ঘসূত্রিতার যত দোষের মূলে। ভোট মিটলেই নাগরিকত্ব আইনের প্রয়োগ হবে এবং সকলে নাগরিকত্ব পাবেন (মুসলমান ছাড়া)। তাতেও যে কাজ হয়নি তা না। উদ্বাস্তু, যাদের মধ্যে সিংহভাগ তফশিলি বিজেপি-তে সমর্পিত হয়েছিল। বিধানসভা ভোটের পরেও দু’বছর চলে গেছে। এখনো রুল হয়নি। নাগরিকত্ব সাত বাঁও জলে। রাজ্যের মতুয়া বাহিনী ফুঁসছে। তার চাপে মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরেরও নাকি গোঁসা হয়েছিল। মন্ত্রিত্বের ললিপপ মুখে গুঁজে আবার চুপ করে গেছেন। আবার ৬ মাসের জন্য রুল তৈরি করবার সময় নিয়েছে স্বরাষ্ট্র দপ্তর। আবার নাগরিকত্বের আশায় বুক বেঁধে সময় গোনার প্রহর। ধন্য আশা কুহকিনী।

২০০৩: অন্ধকারের দলিল

কিন্তু ২০০৩ সালে প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ীর বিজেপি সরকার সংবিধান সংশোধনী আইন ২০০৩ (সিএএ ২০০৩)-এ নাগরিকত্বের মোড় পুরো ঘুরিয়ে দেন। সেখানে বলা হয় যে, যদি কারো এদেশে বসবাসের বৈধ পাসপোর্ট বা অন্যান্য কোনো বৈধ কাগজপত্র না থাকে তাহলে তিনি ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ - Illegal migrant। ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ কথাটির এই প্রথম প্রবেশ ঘটলো। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ২০০৩-এ বিজেপি প্রথম আনলো ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার (NPR) এবং ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেন্সের (NRC) কথা। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ২০১৯ এখনো কার্যকর হয়নি। তারমানে ২০০৩-এর নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন এখনো ক্রিয়াশীল। তাই যদি হয় তাহলে এদেশ এবং রাজ্যের উদ্বাস্তুদের সিংহভাগ নাগরিক নন। কিন্তু এটা শুধু উদ্বাস্তু মানুষের প্রশ্ন নয়, সাধারণ মানুষ উচ্চ জাতি বা নিম্ন জাতি বিশেষ করে গরিব, সাধারণ মানুষ, তারা কী করে নাগরিকত্ব প্রমাণের বৈধ কাগজ দেখাবে? কারণ, ১৯৪৮ সালের ১৯ জুলাইয়ের পরে যাঁরা এসেছেন তাঁদের খুব স্বল্প সংখ্যকের হাতে পাসপোর্ট বা অন্যান্য বৈধ কাগজপত্র আছে, যাতে তিনি প্রমাণ করতে পারেন যে, তিনি এদেশের ভূখণ্ডে বসবাস করতেন। কোন কাগজ দেখাবেন? সেই সময় ক’টা লোকের রেশন কার্ড ছিল? কতজন জমির মালিক ছিলেন যে, জমির দলিল দেখাবেন? ক’টা লোকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ছিল? অনেক লোকই ভাড়াবাড়িতে থাকতেন। কিন্তু কবে থেকে ভাড়ার রসিদ দেওয়া চালু হয়েছিল? বিমায়, পোস্ট অফিসে ক’টা লোকের টাকা জমানোর অভ্যাস ছিল? কেউ কি গ্যারান্টি দিতে পারেন যে দাঙ্গায়, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে, অর্থনৈতিক পরিস্থিতির চাপে, পেশার স্থানান্তরণ বা বাসস্থানের পরিবর্তনে মানুষের গচ্ছিত কাগজ, প্রমাণপত্র নষ্ট হয়ে যায়নি? আরএসএস যাদের মাথায় তুলে নেচেছে সেই বাজপেয়ী এবং আদবানিরা এদেশের উদ্বাস্তু সহ গরিব সাধারণ মানুষের সর্বনাশ করে গেছে। তাদের নাগরিকত্ব হরণ করেছে। যারা এদেশে দীর্ঘদিন বসবাস করেছে, এদেশকে তিল তিল করে তৈরি করেছে, এদেশের মাটির ঘ্রাণে যারা বড়ো হয়েছে তাদেরকে এক লহমায় রাষ্ট্রহীন করার ব্যবস্থা বিজেপি করেছে ২০০৩ সালে। ইতিহাসের এই দগদগে ঘা ভুলিয়ে দিতে চায় বিজেপি। বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাসকে মুছে বিজয় গাঁথা তৈরি করার জন্যই সিএএ ২০১৯ অর্থাৎ নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ২০১৯-এর উদ্ভাবনা।

৩১,৩১৩-এর বাইরে কেউ নাগরিকত্ব পাবে না

উদ্বাস্তুরা লাফাচ্ছেন বা তাদের লাফাতে বলা হচ্ছে। কোনো কাগজপত্র ছাড়াই নাগরিক হওয়ার এমন সুযোগ নাকি তাদের আর হবে না। তারা জানে না মধ্যবর্তী সময়ে আমাদের দেশের পাসপোর্ট আইন এবং ফরেনার্স অ্যাক্ট পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে যাদের পাসপোর্ট আইনে এবং বিদেশি আইনের নিয়ম প্রযুক্ত করে এদের অন্তর্ভুক্ত কোনো নিয়ম বা আদেশ জারি করে ছাড় দেওয়া হয়েছে তাদেরকে এই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ২০১৯ আইনের আওতায় অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসাবে গণ্য করা হবে না। এবং সেই ছাড় দেওয়া হয়ে গেছে। ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর অবধি। নতুন করে আর ছাড় দেওয়া হবে না। ছাড় মানে পাসপোর্ট বা যাতায়াতের বৈধ নথি না থাকলেও হবে। পাসপোর্ট বা যাতায়াতের বৈধ নথির সময়কাল অতিক্রান্ত হলেও কোনো অসুবিধা হবে না। তার মানে এখন আবেদন করতে গেলে আপনাকে বৈধ পাসপোর্ট, বৈধ কাগজ জমা দিতে হবে। কোথায় পাবেন? সেই জন্য সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল সংক্রান্ত বিষয়ে গঠিত জয়েন্ট পার্লামেন্টারি কমিটিকে হিসাব দিয়েছিল যে, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন চালু হলে কেবলমাত্র ৩১,৩১৩ জন নতুন করে নাগরিকত্ব পাবে। এদের মধ্যে ২৫,০৪৭ জন হিন্দু। কারণ এরাই ধর্মীয় অত্যাচারে নির্যাতিত হিসাবে আবেদন করে ভারত সরকারের দীর্ঘ মেয়াদি ভিসা পেয়েছিল এবং ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছিল। সুতরাং বাকিদের নাগরিকত্ব পাওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই।

নাকের বদলে নরুন

তবু ধরে নিলাম এখনো মানুষ আবেদন করতে পারবে। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ২০১৯ অনুযায়ী একজন মানুষকে নাগরিকত্বের আবেদন করতে গেলে যে চারটি বিষয় তাকে স্পষ্ট করে প্রমাণ করতে হবে - ১) তিনি কোন ধর্মাবলম্বীর লোক? ২) তিনি কোন দেশ থেকে এ দেশে এসেছেন? ৩) তিনি ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগেই এদেশে ঢুকেছেন তার প্রমাণ ৪) যে দেশে তিনি ছিলেন সেই দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিসেবে ধর্মীয় সংখ্যাগুরুর দ্বারা অত্যাচারিত হয়েছেন বা অত্যাচারিত হতে পারেন এরকম আশঙ্কা করে এদেশে আসতে বাধ্য হয়েছেন - তার প্রমাণ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে তিনি ভারতে প্রবেশ করেছেন প্রমাণ করবেন কী করে? যে যে কাগজ এবং প্রমাণ তিনি দেখাবেন সেগুলো গ্রাহ্য হবেনা। গ্রাহ্য হলে তাকে নাগরিকত্বের প্রমাণ দেখাতে হতো না। যে দেশ থেকে এসেছেন সেই দেশের ধর্মীয় সংখ্যাগুরুদের অত্যাচার তিনি প্রমাণ করবেন কী করে? প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এখানে থানার এফআইআর কপি গ্রাহ্য হবে না। সরকারের শংসাপত্র চাই। ধরুন যিনি হিন্দু এবং বাংলাদেশ (বা পূর্ব পাকিস্তান) থেকে এসেছেন তাকে বাংলাদেশ সরকার কি শংসাপত্র দেবে যে, সেখানকার মুসলমানদের অত্যাচারের ফলে সে ভারতে আসতে বাধ্য হয়েছে? তাও ধরে নিলাম সব বাঁধা কাটিয়ে একজন মানুষ এইসব নথি জোগাড় করল। তাতেও কি তার নাগরিকত্ব জুটবে? এক কথায় উত্তর - না। কারণ নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ২০১৯-এ বলা হয়েছে, এইসব কাগজ জোগাড় করার পরে সে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হবে না। কিন্তু নাগরিক হবে সে কথা বলা হয়নি। যদি অবৈধ অনুপ্রবেশকারী না হয়, আবার নাগরিকও না হয় তাহলে সে কী হবে? শরণার্থী হবে। উদ্বাস্তু, মতুয়া, নমঃশূদ্র, গরিব মানুষ নাগরিকত্ব চেয়ে শরণার্থী হবে। বলা চলেই তাদের নাগরিকত্বের লোভ দেখিয়ে শরণার্থী বানানো হবে। নাকের বদলে নরুন। সবকিছু হারিয়ে রাস্তায় বসতে হবে। বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ যিনি নাগরিক নন কেবল শরণার্থী তার জমির মালিকানা থাকতে পারে না, এই দেশের চাকরিই বা তার থাকে কী করে? ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, পোস্ট অফিস অ্যাকাউন্ট, বিমা, মিউচুয়াল ফান্ড, বাস্তুভিটা কোনোটিতেই তার অধিকার নেই। কোন অন্ধকারের দিকে মানুষকে ঠেলে দিচ্ছে নাগরিক সংশোধনী আইন ২০১৯?

লড়াই করুন রাস্তায় নেমে

আর একজন বসে আছেন ফেনসিংয়ের ধারে। পা থেকে মাথা অবধি দুর্নীতিকে ঢাকতে আরএসএস-কে অবাধে বাড়তে এ রাজ্যে সুযোগ করে দিয়েছেন। তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েই বামেদের রাজ্য থেকে উৎখাত করবার জন্য ‘ভোটার লিস্টে বাংলাদেশি-এদের তাড়াও’ আন্দোলন শুরু করেছিলেন এরাজ্যে। ২০০৫ সালে। রাজ্যে এনপিআর করবেন বলেছিলেন। ডিটেনশন ক্যাম্পের জমি দিয়ে দিয়েছিলেন। ভবন করার প্রক্রিয়া বামেরা আটকে দিয়েছিল। আদানিতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল মোদি এবং মমতা। এখন মমতা হাত ধুয়ে ফেলতে চাইলেও মানুষ বুঝে গেছে ‘সবকা মালিক এক হ্যায়’। পুঁজির ভৃত্যরা বিভিন্ন কায়দায় সেবা করে চলেছে। স্বাধীনতার ঠিক পরপর হেমাঙ্গ বিশ্বাস সেই পরিস্থিতিতে গান গেয়েছিলেন - ‘‘হিন্দুস্তানে শ্বশুরবাড়ি, পাকিস্তানে ঘর/ মধ্যিখানে ভূতের ময়দান, বউ যে হইলো পর/ রাম রাজ্য চাইয়া পাইলাম, হনুমানের বংশ/ লেজের আগুন দিয়া, সোনার লঙ্কা করে ধ্বংস/ পকেটে বাড়ির নিমন্ত্রণ, বুঝিলাম অবেলা/ রাজভোগ খাওয়াইবা কইয়া, খাওয়াইলো কাঁচকলা।’’ ঠিক করুন রাস্তায় নেমে লড়াই করবেন না কাঁচকলা খাবেন!