৫৭ বর্ষ ৪৮ সংখ্যা / ২৪ জুলাই ২০২০ / ৮ শ্রাবণ ১৪২৭
গ্রাহকদের তীব্র প্রতিবাদে অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিল ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হলো সিইএসসি কর্তৃপক্ষ
সিইএসসি’র সদর দপ্তর ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে পশ্চিমবঙ্গ বস্তি উন্নয়ন সমিতির বিক্ষোভ।
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ বর্ধিত ও অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিলের প্রতিবাদে সিইএসসি এবং রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভে শামিল হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এই সমস্ত প্রতিবাদ-বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে আওয়াজ উঠছে বর্ধিত বিদ্যুৎ বিল স্থগিত নয়, বাতিল করতে হবে। করোনার ভয়াবহ সংক্রমণ ও লকডাউনের ফলে সাধারণ মানুষের রোজগার তলানিতে ঠেকেছে। অনেকেরই আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তীব্র অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। এমনই একটি পরিস্থিতিতে সিইএসসি এলাকায় গ্রাহকদের তিন-চারগুণ বিদ্যুতের বিল আসায় বিপদের মুখে পড়েছেন মানুষ।
কেবল সিইএসসি-ই নয়, চড়া হারে বিদ্যুৎ মাশুল বাড়িয়েছে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানি। লকডাউনের ফলে প্রবল অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে আমফান ঝড়ের বিপর্যয়ে দীর্ঘদিন বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিলেন দক্ষিণবঙ্গের বিস্তৃীর্ণ এলাকার মানুষ। বিশেষ করে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার মানুষই এই সময়কালে বেশ কিছুদিন বিদ্যুৎ সমস্যায় ভুগেছেন। তারপরেও রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির এলাকায় গ্রাহকরা চড়া হারে বিদ্যুৎ বিল হাতে পেয়েছেন। কীভাবে এত চড়া বিল হতে পারে তার কোনো ব্যাখ্যা মিলছে না। ফলে সর্বত্র মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। এদিকে সিইএসসি-র দিকে নজর ঘুরিয়ে দিয়ে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির চড়া মাশুলকে আড়াল করতে চাইছে রাজ্য সরকার। এরই প্রতিবাদে বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ বিক্ষোভ সংগঠিত করছে বামপন্থী দল ও গণসংগঠন।
অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিলের প্রতিবাদে বহরমপুরে যুবদের মিছিল।
এই পরিপ্রেক্ষিতে বামপরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, সিইএসসি হোক বা রাজ্য বিদ্যুৎ কোম্পানি, ভূতুড়ে বিল কারোরই মানা হবে না। মানুষ একারণেই বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। তিনি বলেছেন, ভারতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ মাশুল নেওয়া হচ্ছে এ রাজ্যে। অনুপ্রেরণার খরচও এর মধ্যে যুক্ত আছে। মানুষের দাবি হলো, ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারে ছাড় অন্তত লকটাউন পর্বের জন্য দিতেই হবে।
এই অবস্থার মধ্যে রাজ্য সরকার ও শাসকদল ‘নিষ্পত্তি হয়ে গেছে’ বলে প্রচার করছে। বিদ্যুৎ মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় এবং তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জয় হয়ে গেছে বলে দেখানোর চেষ্টা করেছেন। বিদ্যুৎ মন্ত্রী ২০ জুলাই বিদ্যুৎ ভবনে সিইএসসি’র আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করে জানিয়ে দেন, এপ্রিল ও মে মাসের বিল আপাতত দিতে হবে না। জুন মাসের বিল দিতে হবে। কোনো বিদ্যুৎ সংযোগ কাটা যাবে না। কিন্তু সিইএসসি-র ঘোষণায় ভরসা না করে সিইএসসি-র সদর দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ দেখায় পশ্চিমবঙ্গ বস্তি উন্নয়ন সমিতির সদস্য ও কর্মীরা। বস্তিবাসীদেরও এই সময়ে কয়েকগুণ বেশি বিল এসেছে। যার ফলে তাঁরা খুবই অসুবিধার মধ্যে পড়েছেন। এই সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়েছে, লকডাউনপর্ব শুরু হওয়ার সময় থেকে ৬ মাসের জন্য ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারে ছাড় দিতে হবে। সিইএসসি কর্তৃপক্ষ বস্তি সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনায় বসার আশ্বাস দিয়েছে।
একইভাবে হুগলি জেলায় সিপিআই(এম)’র উত্তরপাড়া এবং কোতরং-হিন্দমোটর এরিয়া কমিটির উদ্যোগে উত্তরপাড়ায় সিইএসসি ক্যাশ অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখানো হয়। এই কর্মসূচিতে কংগ্রেস দলের কর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন। উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগরের গাড়ুলিয়া এলাকায় সিইএসসি-র বিল জমা নেওয়া দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ হয়েছে।
এদিকে ২০ জুলাই মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে ডিওয়াইএফআই-র কর্মীরা বর্ধিত বিদ্যুৎ বিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির চড়া হারে মাশুল বৃদ্ধির প্রতিবাদে দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে শুরু করে উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি - সর্বত্র বামপন্থীদের উদ্যোগে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ এবং প্রশাসনের কাছে ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিদ্যুতের চড়াহারে মাশুল বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ থেকে দাবি উঠছে এমন অস্বাভাবিক, ভুতুড়ে বিল বাতিল করতে হবে।