E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৭ বর্ষ ৪৮ সংখ্যা / ২৪ জুলাই ২০২০ / ৮ শ্রাবণ ১৪২৭

দেশে করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ আকার নিয়েছে


মুম্বাইয়ের ধারাভিতে নমুনা সংগ্রহ করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ দেশে করোনা সংক্রমণের ভয়াবহতা ক্রমেই তীব্র হয়ে উঠছে। এ পর্যন্ত (২২ জুলাই সকাল ৮টা পর্যন্ত) ৪,১১,১৩৩ জন মানুষ সক্রিয়ভাবে সংক্রমিত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ২৮,০৮৪ জনের। ২২ জুলাইয়ের সকাল ৮টা পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণ হয়েছে ৩৭,৭২৪ জনের। আর মৃত্যু হয়েছে ৬৪৮ জনের। সংক্রমণ ও মৃত্যুর হারের ক্ষেত্রে প্রতিদিন নতুন নতুন রেকর্ড তৈরি হচ্ছে।

দেশে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নেওয়া সত্ত্বেও উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবার বদলে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার উগ্র হিন্দুত্ববাদী কার্যকলাপ অব্যাহত রাখতে চাইছে, অন্যদিকে কর্পোরেট বান্ধব ও পুঁজিপতিদের স্বার্থে আগ্রাসী উপায়ে বেসরকারিকরণের পথে চলেছে। দেশের গরিব শ্রমজীবী মানুষ এই ভয়াবহ অবস্থার পরিণতিতে রুটি-রুজি হারিয়ে অসহায় বিপন্ন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। অন্যদিকে এমনই এক দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় কেন্দ্রের মদতে বিজেপি-সহ হিন্দুত্ববাদী সংগঠন মিলে রামমিন্দরের শিলান্যাসের প্রস্তুতি শুরু করেছে।

এদিকে কোভিড সংক্রমণ নিয়ে কেন্দ্রের সরকার বাস্তব অবস্থা অস্বীকার করার পথেই হাঁটছে। উল্টে সরকার দেখাতে চাইছে দেশে সংক্রমণের এই হার তেমন উদ্বেগজনক নয়। বরং বিশ্বের সংক্রমণের নিরিখে এই হার নাকি ভালোই। গোষ্ঠী সংক্রমণের স্পষ্ট প্রবণতার মধ্যেই ১৯ জুলাই কেন্দ্রের স্বাস্থ্য মন্ত্রক দাবি করে ভারতে মৃত্যুর হার কম। এই হার এই প্রথম ২.৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। এমন ২৯টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল রয়েছে যেখানে এই হার আরও কম। কেন্দ্রীয় সরকার দাবি করেছে, কেন্দ্রীয় সরকারের নেতৃত্বে রাজ্যগুলিতে জোরদার পরীক্ষা, হাসপাতালে পরিকাঠামোর উন্নতি, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের সমন্বয়ের ফলেই মৃত্যুহার নাকি কমানো সম্ভব হয়েছে। কেন্দ্র আরও দাবি করেছে, ভারত নাকি প্রশংসনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে।

কেন্দ্রীয় সরকার ও স্বাস্থ্যমন্ত্রক যাই দাবি করুক না কেন, দেশে সংক্রমণের হার মারাত্মক আকার নিয়েছে। এটা গুরুতর ইঙ্গিত বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। ইতিমধ্যেই ভারত সংক্রমিতের হিসেবে বিশ্বে তৃতীয় এবং মৃত্যুর বিচারে অষ্টম স্থানে পৌঁছেছে। পর্যবেক্ষকদের অভিমত হলো, যদি এখনই এই সংক্রমিতের হার থামানো না যায় তাহলে তা আগস্টের প্রথম সপ্তাহের শেষে ২০ লক্ষে পৌঁছে যেতে পারে।

এখনো কেন্দ্রীয় সরকার দেশে গোষ্ঠী সংক্রমণের কথা স্বীকার না করলেও চার মাস আগেই তাদের কাছে বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা ছিল। সেই সমীক্ষা কার্যত গোপন রাখা হয়েছিল। অথচ সেই সমীক্ষার উপরে দাঁড়িয়ে যে ব্যাপকতর পরীক্ষা চালানো উচিত ছিল বা পরিকল্পনা করা সম্ভব ছিল, তা করা হয়নি। এখন সেই সমীক্ষার কথা সামনে এসেছে। কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন আগেই ঘোষণা করেন যে, তিরুবনন্তপুরমের উপকূলবর্তী দু’টি এলাকায় গোষ্ঠী সংক্রমণ হচ্ছে। প্রকাশ্যে সে কথা জানাতে তিনি কোনো দ্বিধা করেননি। আসাম সরকারও সম্প্রতি জানিয়েছে, গুয়াহাটির কয়েকটি এলাকায় গোষ্ঠী সংক্রমণ হয়েছে। এমনকি সব সময় প্রকৃত তথ্য আড়াল করে আসা পশ্চিমবঙ্গ সরকারও ২০ জুলাই স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে যে, রাজ্যে গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এ পর্যন্ত গোষ্ঠী সংক্রমণের কথা স্বীকার করা হয়নি। সরকার স্বীকার না করলেও ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’ (আইএমএ) গত ১৮ জুলাই জানিয়ে দেয় যে, দেশে মহল্লা সংক্রমণ শুরু হয়ে গিয়েছে এবং পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ।

কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে গোষ্ঠী সংক্রমণের কথা দীর্ঘদিন ধরে অস্বীকার করার পিছনে সরকারি নীতি ‍‌ও পদক্ষেপের ব্যর্থতাই লুকিয়ে আছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।

এদিকে দেশজুড়ে সংক্রমণ ১১ লক্ষ পেরনোর পর ২০ জুলাই ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স’ (আইআইএসসি)-এর পরিসংখ্যান রিপোর্টে উঠে এসেছে এক মাসেরও কিছু বেশি সময়ের মধ্যেই দেশে আক্রান্ত পৌঁছাতে পারে ৩৫ লক্ষে। সেপ্টেম্বরের গোড়ায় দেশে করোনার জেরে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হতে পারে ১ লক্ষ ৪০ হাজার। নভেম্বরে এই সংখ্যা আরও বাড়বে। পরিস্থিতি এমন ভয়াবহ হয়ে ওঠা সত্ত্বেও দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নত করার দিকে কেন্দ্রীয় সরকার কোনো গুরুত্বই দিচ্ছে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

সংক্রমণের ক্রমবর্ধমান প্রবণতার উপর ভিত্তি করে আইআইএসসি রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ১ নভেম্বর দেশজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হতে পারে ১ কোটি ২০ লক্ষ। চিকিৎসাধীন থাকবেন ৩০ লক্ষ। জানুয়ারির ১ তারিখ দেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হতে পারে ৫ লক্ষ।

এই অবস্থায় দেশে এখন পর্যন্ত ভেন্টিলেটর এবং আইসোলেশন বেডের ব্যবস্থা নেই। পরিকাঠামোর এমন বিপজ্জনক ত্রুটি সত্ত্বে‍‌ও কেন্দ্রীয় সরকার দ্রুততার সঙ্গে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর যে উন্নয়ন করবে, তেমন কোনো সদর্থক ভূমিকা নিতেও দেখা যাচ্ছে না। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে। ফলে বিপদ বাড়ছে মানুষের।