৫৭ বর্ষ ৪৮ সংখ্যা / ২৪ জুলাই ২০২০ / ৮ শ্রাবণ ১৪২৭
বিএসএনএল ধ্বংসে সরকারের নতুন পরিকল্পনা
প্রতিবাদে রাস্তায় কর্মচারীরা
ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেড (বিএসএনএল)-এর পুনরুজ্জীবনের জন্য ৪জি পরিষেবা প্রদান শুরু করা একটি অপরিহার্য শর্ত। সংস্থার সমস্ত ইউনিয়নই ঐক্যবদ্ধভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এই দাবি দীর্ঘ দিন ধরে করে আসছে। বিএসএনএল ৪-জি পরিষেবা প্রদানে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ক্রয়ে টেন্ডারের বিজ্ঞাপনও দিয়েছিল। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার সেই টেন্ডার বাতিল করেছে।
বিএসএনএল-কে পুনরুজ্জীবনের কথা বলে হাজার হাজার কর্মচারীকে একপ্রকার স্বেচ্ছা অবসর নিতে বাধ্য করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেখানে সংস্থার পুনরুজ্জীবনের অন্যতম উপায় ৪-জি পরিষেবা শুরু করার প্রশ্নে কেন্দ্রীয় সরকারের এহেন সিদ্ধান্ত স্বাভাবিকভাবেই কর্মচারীদের ব্যাপক ক্ষুব্ধ করেছে। অতিমারীজনিত বিশেষ পরিস্থিতির সুযোগ নিতে চেয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু সংস্থার অফিসার-কর্মচারীরা বিএসএনএল-কে ধ্বংস করার কেন্দ্রীয় সরকারের এই অসাধু পরিকল্পনার বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেই ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছে। গত ১৬ জুলাই দেশের সমস্ত জায়গায় সংস্থার দপ্তর-কারখানায় কালো ব্যাজ পরে তারা প্রতিবাদ-বিক্ষোভে অংশ নেন। ‘দ্য অল ইউনিয়নস্ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন অব বিএসএনএল’ (এইউএবি) এবং অন্যান্য অফিসারদের সংগঠন যৌথভাবে এই প্রতিবাদ সংগঠিত করে। অতিমারীজনিত পরিস্থিতির কারণে যে সকল নিয়ম-নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তা মান্য করেই পালিত হয়েছে এই কর্মসূচি।
বিএসএনএল-এ ৪-জি পরিষেবা শুরু করার জন্য ৫০ হাজার ৪-জি বেস ট্রান্সসিভার (বিটিএস) কেনার টেন্ডার ডাকা হয়েছিল। বর্তমানে বিএসএনএল-র হাতে আছে ৪৯ হাজার ৩০০টি বিটিএস। এগুলিকেও ৪-জি স্তরে উন্নীত করতে আধুনিকীকরণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। কোনো কারণ না দেখিয়েই এই টেন্ডার এবং আধুনিকীকরণের পরিকল্পনা বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।
এইউএবি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা দেশের সমস্ত সাংসদের সাথে দেখা করবে, এবং বিএসএনএল-কে ধ্বংস করার কেন্দ্রীয় সরকারের এই অসাধু পরিকল্পনার কথা স্মারকলিপির মাধ্যমে জানাবে। এছাড়াও, আগামী ৫ আগস্ট ট্যুইটারেও প্রচার চালানো হবে। কোভিড অতিমারীজনিত বিশেষ পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে মোদী সরকার একের পর এক দেশবিরোধী ও শ্রমিক স্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়ে চলেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, কয়লা খনি এবং ভারতীয় রেলের শতাধিক যাত্রীবাহী ট্রেনের বেসরকারিকরণ করার কথা ঘোষণা করেছে মোদী সরকার। আঘাত নামিয়ে আনা হয়েছে শ্রমঘণ্টা সহ শ্রমিকদের বহু কষ্টার্জিত শ্রমআইনগুলির উপরেও। বিএসএনএল সম্পর্কিত সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্ত তারই অঙ্গ। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের এই আক্রমণ দেশের শ্রমিক-কর্মচারীরা মুখ বুঝে মেনে নেননি। এর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। কয়লা শ্রমিকরা তিন দিনের সফল ধর্মঘট সংঘটিত করেছে। বিএসএনএল-এর কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে সংস্থাকে বাঁচানোর দাবিতে আন্দোলন-সংগ্রামের পথে রয়েছে। তাকেই আরও শক্তিশালী করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে তারা।