৫৭ বর্ষ ৪৮ সংখ্যা / ২৪ জুলাই ২০২০ / ৮ শ্রাবণ ১৪২৭
করোনা মহামারীর মোকাবিলায় রাজ্যজুড়ে বামপন্থী ও সহযোগী দলের সচেতনতা কর্মসূচি
বাঁকুড়ায় করোনা মোকাবিলায় সচেতনতার প্রচারে বামকর্মীরা।
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ রাজ্যে করোনা সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় মহামারী মোকাবিলায় ১৮ ও ১৯ জুলাই সচেতনতা কর্মসূচি পালন করল বামপন্থী ও সহযোগী দলগুলি। এই দু’দিন রাজ্যজুড়ে ১৬টি বামপন্থী ও সহযোগী দলের কর্মীরা পথে নেমে পোস্টার গলায় ঝুলিয়ে, লিফলেট বিলি করেছেন, অটো রিকশা বা টোটোয় মাইক লাগিয়ে প্রচার করেছেন এবং মিছিল ও সমাবেশ সংগঠিত করেছেন। এছাড়াও নানা জায়গায় মাস্ক ও স্যানিটাইজার বিলি করেছেন।
রাজ্য সরকারের উদাসীনতা ও অপদার্থতার ফলে রাজ্যে করোনা সংক্রমণের হার দ্রুতগতিতে বাড়ছে। অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রীকে সন্তুষ্ট করতে রাজ্যের মুখ্যসচিব দাবি করেছেন, করোনা যে গতিতে বাড়ছে, রাজ্য সরকার নাকি তার চেয়েও বেশি গতিতে ছুটছে। কিন্তু উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবার বদলে এই ধরনের অবিমৃশ্যকারি মন্তব্যে যে করোনা সংক্রমণকে প্রতিরোধ করা যায় না, তা রাজ্যের ভয়াবহ অবস্থাতেই প্রকট হচ্ছে। অথচ রাজ্য সরকার নানা কায়দায় বোঝানোর চেষ্টা করছে যে, অবস্থা স্বাভাবিক রয়েছে। শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসও রাজ্য সরকারের সুরে সুর মিলিয়ে প্রচার করছে, অন্য রাজ্যের তুলনায় এ রাজ্যের অবস্থা নাকি অনেক ভাল। কিন্তু বাস্তব অবস্থা হলো দেশে করোনা আক্রান্ত রাজ্যগুলির মধ্যে অন্যতম এরাজ্য।
এই অবস্থায় সরকার ও শাসকদলের দায়িত্বজ্ঞানহীন ও সঙ্কীর্ণ রাজনীতির বদলে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিয়ে এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মোকাবিলায় মানুষকে সচেতন করতে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করছে বামপন্থী ও সহযোগী রাজনৈতিক দলগুলি। গত ১৬ জুলাই রাজ্যের ১৬টি বামপন্থী ও সহযোগী দলের বৈঠক শেষে ১৮ এবং ১৯ জুলাই দু’দিনের এই কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেছিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু।
দু’দিনের এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে হুগলি জেলার নানা প্রান্তে বামফ্রন্ট ও সহযোগী দলের উদ্যোগে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি পালিত হয়। চুঁচুড়া ঘড়ির মোড়ে এই উপলক্ষে একটি সভায় বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম) নেতা মনোদীপ ঘোষ, অরিন্দম ঘোষ, আরএসপি’র কিশোর সিং, সিপিআই(এমএল) নেতা ভিয়েত ব্যানার্জি, ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা সুনীল সাহা প্রমুখ।
এদিন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাট মহকুমার বিভিন্ন স্থানে প্রচার কর্মসূচি হয়েছে। প্রশাসনকে করোনা সংক্রমণ রুখতে আরও সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া, অন্যান্য রোগের চিকিৎসা চালু রেখে বসিরহাট জেলা হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা কেন্দ্র চালু রাখা, ধাপে ধাপে ব্লকস্তরেও করোনা চিকিৎসা কেন্দ্র চালু রাখা, থার্মাল স্কিনিং সহ করোনার পরীক্ষা সংখ্যা বাড়ানোর দাবি জানিয়ে পথে নামেন ছাত্র-যুবরা। বসিরহাট মহকুমার টাকি বাজার, বসিরহাট টাউন হল মোড়ে ইটিন্ডা রোড, দণ্ডিরহাট বাজার, বসিরহাট ২নং ব্লকের রাজেন্দ্রপুর হাট, মিনাখাঁর বামনপুকুর ও থানার সামনে, হাসনাবাদের হাবাসপুর, মাখালগাছা, রামেশ্বরপুর, স্বরূপনগরের ভাদুরিয়ায় সচেতনতা কর্মসূচি হয়।
জেলার কামারহাটিতে করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলায় ১০ দফা দাবিতে সিপিআই(এম) টেক্সম্যাকো-দেশপ্রিয়নগর এরিয়া কমিটি এবং সিপিআইএমএল (লিবারেশন) যৌথভাবে প্রচার কর্মসূচি পালন করে। কামারহাটি পৌরসভার গেটের সামনে এই উপলক্ষে বিক্ষোভ ও ডেপুটেশন কর্মসূচিতে দাবি করা হয়েছে: সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনা এবং সাধারণ রোগে আক্রান্ত মানুষের চিকিৎসার জন্য পৌর প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে হবে। করোনা আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যাবার জন্য অন্ততপক্ষে দু’টি অ্যাম্বুলেন্স রাখতে হবে। কামারহাটি পৌর প্রশাসনের তরফে একজন নোডাল অফিসার নিয়োগ করে ও সর্বসাধারণের জন্য যোগাযোগ নম্বর জানিয়ে করোনা মোকাবিলার কাজে সাহায্য করতে হবে। করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলায় প্রয়োজনে সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সমাজকর্মী ও পৌর আধিকারিকদের রেখে একটি কমিটি তৈরি করতে হবে।
করোনা আক্রান্ত মানুষের চিকিৎসায় রাজ্য সরকারের চরম ব্যর্থতার প্রতিবাদে ১৮ জুলাই জেলার বিভিন্ন স্থানে এসএফআই বিক্ষোভ দেখায়। ছাত্রদের অভিযোগ: রাজ্য সরকারের ব্যর্থতায় অকালে প্রাণ দিতে হয় ইছাপুরের ছাত্র শুভ্রজিৎ চ্যাটার্জি, সন্তোষপুরের মনীষা দাস, জয়নগরের অশোক রুইদাসসহ আরও অনেককে। এদিন ছাত্ররা দমদম পৌর হাসপাতাল, সাগরদত্ত হাসপাতাল, রাজারহাটে দেশবন্ধুনগর হাসপাতাল, বাদুড়িয়ার রুদ্রপুর হাসপাতাল, বারাসত কলোনি মোড়, শ্যামনগরে সরকার সুইটস মোড়, কাউগাছি নতুন গ্রাম মোড়, কাঁচড়াপাড়ায় বিক্ষোভ দেখায়।
এদিন এবিটিএ উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটির উদ্যোগে ইছাপুর আনন্দমঠ নেতাজি মূর্তির পাদদেশে বেহাল স্বাস্থ্যব্যবস্থায় চিকিৎসা না পেয়ে অসংখ্য মানুষের মৃত্যুর প্রতিবাদে ধিক্কার সভা হয়।
১৯ জুলাইও কলকাতার পাশাপাশি পুরুলিয়া, হুগলি, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি প্রভৃতি জেলায় সচেতনতা কর্মসূচি হয়েছে। এই কর্মসূচিতে বামপন্থী দলগুলি ছাড়াও বিভিন্ন বামপন্থী গণসংগঠনও শামিল হয়েছে। এদিন হাওড়া জেলায় সিপিআই(এম) বি গার্ডেন ও দক্ষিণ হাওড়া এরিয়া কমিটির উদ্যোগে বিভিন্ন বাজার, রাস্তার মোড় ও বাসস্ট্যান্ডে টোটো ও মাইক লাগিয়ে প্রচার করা হয়। বালি ও বেলুড় এলাকায়, হাওড়া পুরসভার বিভিন্ন এলাকায় প্রচার চলে। সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির দক্ষিণ হাওড়া আঞ্চলিক কমিটির উদ্যোগে সমিতির অফিসে স্বাস্থ্য শিবির হয়েছে।
এদিন পুরুলিয়া শহর উত্তর এরিয়া কমিটির উদ্যোগে শহরের বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতা এবং পথচলতি মানুষের মাঝে সচেতনতার প্রচার চালানো হয়। এদিন সকালে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাঁতন ১নং ব্লকের সিপিআই(এম) দাঁতন এরিয়া কমিটির উদ্যোগে প্রচার চলে। জলপাইগুড়ি শহরের রায়কতপাড়া মোড়ে অবস্থান কর্মসূচিতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে পোস্টার গলায় ঝুলিয়ে বামপন্থী কর্মীরা মানুষকে সচেতন করার উদ্যোগ নেন। এরপর একটি মিছিল সংগঠিত হয়েছে। এদিন নাগরাকাটাতে সচেতনতা মিছিল হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়ায় বিজ্ঞান মঞ্চের কর্মীরাও এদিন প্রচার করেছেন। এদিন হুগলি জেলার চন্দননগর, পাণ্ডুয়া, কোন্নগর, চণ্ডীতলা মশাট ও কৃষ্ণরামপুর এলাকাজুড়ে জনসচেতনতামূলক প্রচারাভিযান চলে।
ভাঙড়ে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত সতর্কতা অবলম্বনের জন্য মাস্ক বিলি করছেন বামফ্রন্ট কর্মীরা।
এদিন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় সিপিআই(এম)’র বিভিন্ন এরিয়া কমিটির উদ্যোগে প্রচারাভিযান চলে। ভাঙড়ের ভোজেরহাটে করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্য সচেতনতার কর্মসূচি পালিত হয়। এদিন মাস্কবিহীন পথচলতি তিনশোজনকে মাস্ক ও সাবান বিলি করা হয়েছে। উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এম) নেতা তুষার ঘোষ সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। এদিন যাদবপুরের বিভিন্ন অঞ্চলেও স্বাস্থ্য সচেতনতার প্রচার চলে।