৫৯ বর্ষ ৪৫ সংখ্যা / ২৪ জুন, ২০২২ / ৯ আষাঢ়, ১৪২৯
বামপন্থী ও সহযোগী দলগুলির আহ্বানে শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষার মিছিল থেকে বিদ্বেষের রাজনীতিকে ‘না’ বললো বাংলা
কলকাতায় মহামিছিলঃ ২১ জুন ১৬টি বামপন্থী ও সহযোগী দলের ডাকে শান্তি-সম্প্রীতির মহামিছিলে পা মেলালেন হাজার-অযুত মানুষ।
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ উসকানিদাতা সাম্প্রদায়িক শক্তিকে দেশ থেকে সমূলে উৎখাত করার আহ্বান উচ্চারিত হলো ২১ জুন কলকাতার সম্প্রীতি রক্ষার মহামিছিল থেকে। আরও একবার বিভাজনের রাজনীতিকে হাজারো কণ্ঠে ‘না’ বলল বাংলা। ১৬টি বামপন্থী ও সহযোগী দলের ডাকে শান্তি ও সম্প্রীতির কেন্দ্রীয় মিছিলে এদিন হাজারো মানুষ শামিল হয়ে পা মিলিয়েছেন কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলি থেকে। তাঁরা সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী স্লোগানে গলা মিলিয়ে বলেছেন, সাম্প্রদায়িকতা নিপাত যাক। বলেছেন, সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে আপস করে সাম্প্রদায়িকতাকে রোখা যায় না।
প্রসঙ্গত, বিজেপি মুখপাত্র নূপুর শর্মার সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ও উসকানিমূলক বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গেও বেশ কিছু জায়গায় বিক্ষোভ দেখা দেয়। তীব্র মেরুকরণের লক্ষ্যে বিজেপি’র এই ভূমিকার দোসর হিসেবে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস এবং মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে কিছু জেলায়। হাওড়া সহ বেশ কয়েকটি জেলায় হিংসাত্মক ঘটনা ঘটে যা রাজ্যের সম্প্রীতির ঐতিহ্যকে বিনষ্ট করেছে। এই প্রেক্ষিতকে রুখতেই বামফ্রন্ট এবং বামপন্থী ও সহযোগী দলগুলির ডাকে এদিন পথে নামেন মানুষ।
মধ্য কলকাতার রামলীলা পার্ক থেকে এদিন বিকেলে মিছিল শুরু হয়। মৌলালি হয়ে শিয়ালদহমুখী কবি বিদ্যাপতি সেতু ধরে এগিয়ে বাঁ দিকে মহাত্মা গান্ধী রোড ধরে মিছিল এগোতে থাকে। সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী স্লোগান মুখর এই মিছিল যত এগিয়েছে ততই ধর্ম জাতি ভাষা নির্বিশেষে আরও বেশি মানুষ শামিল হয়েছেন এই প্রতিবাদী জনস্রোতে।
এরপর বাঁদিকে এগিয়ে রামমোহন রায় রোড ক্রসিং, কলেজ স্ট্রিট-বিধান সরণি মোড় পেরিয়ে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউতে যখন এই দীর্ঘ মিছিল পড়েছে, তার শেষাংশ তখনও ছুঁয়ে ছিল শিয়ালদহ উড়ালপুলকে। এরপর মহাজাতি সদনের সামনে শ্রমজীবী মানুষের ঐক্য বজায় রাখার আবেদন মুখরিত স্লোগানের দৃপ্ত উচ্চারণে শেষ হয় এই ঐতিহাসিক মিছিল। রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলাতেও এদিন শান্তি ও সম্প্রীতির আহ্বানে মিছিল হয়েছে বামপন্থীদের উদ্যোগে। সেখানেও মানুষের দৈনন্দিন জীবনের জ্বলন্ত সমস্যা থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিতে প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতার লক্ষ্যে বিজেপি-তৃণমূলের এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের শপথ এবং মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদকে নষ্ট করতে সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ও বিদ্বেষের প্রচারের ফাঁদে পা না দেওয়ার আবেদন উচ্চারিত হয় মিছিল থেকে। এর পাশাপাশি সেনাবাহিনীতে চার বছরের ঠিকা নিয়োগের অগ্নিপথ প্রকল্পকেও অবিলম্বে বাতিলের দাবি উঠে আসে এ দিনের মিছিলে।
সিপিআই(এম), সিপিআই, এআইএফবি, আরএসপি, সিপিআই(এমএল) লিবারেশন, এসইউসিআই(সি), আরসিপিআই, এমএফবি, ওয়ার্কার্স পার্টি, বলশেভিক পার্টি, সিআরএলআই, সিপিবি, পিডিএস, আরজেডি, এনসিপি, জেডি(ইউ) এই ১৬টি বামপন্থী ও সহযোগী দলের ডাকা এই মিছিলে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিআই(এম)’র পলিট ব্যুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র, সিপিআই’র রাজ্য সম্পাদক স্বপন ব্যানার্জি, আরএসপি’র সাধারণ সম্পাদক মনোজ ভট্টাচার্য, ফরওয়ার্ড ব্লকের বাংলা কমিটির সম্পাদক নরেন চ্যাটার্জি, সিপিআই(এমএল) লিবারেশন’র পলিট ব্যুরো সদস্য কার্তিক পাল, এসইউসিআই(সি) রাজ্য সম্পাদক চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য প্রমুখ অংশ নেন এদিন।
মিছিল শেষে বিমান বসুকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি জানান বিজেপি সরকার যেভাবে দেশের শ্রমজীবী জনগণের ঐক্য ভাঙতে নানা আঘাত হানছে এবং দুর্ভাগ্যের হলেও সত্য পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় কিছু কিছু এলাকায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী যেসব ঘটনা ঘটে তার মোকাবিলায় রাজ্যের মানুষকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আবেদন করা হচ্ছে। এসবই হচ্ছে জনগণের জ্বলন্ত সমস্যা থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেবার লক্ষ্যে। বামপন্থী ও সহযোগী দলগুলির পক্ষ থেকে আমরা জনগণের ঐক্য ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার আবেদন জানাচ্ছি।