৫৯ বর্ষ ৪৫ সংখ্যা / ২৪ জুন, ২০২২ / ৯ আষাঢ়, ১৪২৯
সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী সপ্তাহে বিভাজন বিরোধী মিছিল রাজ্যজুড়েই
তমলুক শহরে শান্তি সম্প্রীতির মহামিছিল।
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ বামপন্থী ও সহযোগী ১৬টি দলের ডাকে রাজ্যে শ্রমজীবী জনগণের ঐক্য প্রতিষ্ঠা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচিতে জেলায় জেলায় শামিল হলেন হাজারো মানুষ। ১৩ জুন কলকাতায় মুজফ্ফর আহ্মদ ভবনে অনুষ্ঠিত ১৬টি বামপন্থী ও সহযোগী দলের বৈঠক থেকে ১৫ থেকে ২১ জুন রাজ্যজুড়ে শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষায় সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী সপ্তাহ পালনের ডাক দেওয়া হয়। ওই বৈঠকের পর ১৬টি বামপন্থী ও সহযোগী দলের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে রাজ্যজুড়ে শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষার্থে সচেতন থেকেই শ্রমজীবী জনগণের ঐক্য প্রতিষ্ঠা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগী ভূমিকা পালনের কথা ঘোষণা করা হয়।
১৬ জুন কলকাতায় আয়োজিত একটি সভায় সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, বাজারে জিনিসপত্রের আগুন দাম। পেট্রোলে হাত দেওয়া যাচ্ছে না। তবুও সেগুলো নিয়ে বিতর্ক করা যাবে না। দিদিভাই এবং মোদি ভাই চায় কেবলমাত্র বেদ কোরান হাদিস নিয়ে বিতর্ক হোক, তাজমহল কুতুব মিনার নিয়ে বিতর্ক চলুক। তিনি বলেন,... এই ধরনের লোকেরা দেশ চালাচ্ছে বলে সমস্ত স্তরের ভাগাভাগি রাজনীতি মাথা তুলেছে।
কোচবিহার জলপাইগুড়ি থেকে দক্ষিণের সব জেলাতেই কর্মসূচি পালিত হয়। বর্ধমানের পূর্বস্থলীতে ১৫ জুন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা সহ ১০০ দিনের কাজ, মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব দুর্নীতি, নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে বাম গণ সংগঠনগুলির যৌথ উদ্যোগে নাদন ঘাট বাজার এলাকায় মিছিল পরিক্রমা করে, এরপর বাজারে আয়োজিত সভায় বক্তব্য রাখেন নেতৃবৃন্দ।
পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামেও সম্প্রীতি মিছিল আয়োজিত হয় ১৫ জুন। বামফ্রন্টের ডাকে নন্দীগ্রাম বাজারে সিপিআই(এম) কার্যালয়ের সামনে থেকে মিছিল নন্দীগ্রাম বাজার এলাকা পরিক্রমা করে। মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সভায় বক্তব্য রাখেন নেতৃবৃন্দ। উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এম) নেতা পরিতোষ পট্টনায়ক, রামহরি পাত্র, শেখ শহীদুল্লাহ প্রমুখ।
১৬ জুন সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে জলপাইগুড়ি জেলা জুড়ে পথে নামে বামপন্থী দলগুলি। রাজগঞ্জ হাটে মিছিল ও সভা হয়। বক্তব্য রাখেন আরএসপি নেতা পরিতোষ রায়, সিপিআই(এম) নেতা মজিদুল হক, রতন রায় প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন পার্টির জেলা সম্পাদক সলিল আচার্য, মুক্তার হোসেন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। প্ররোচনা রুখে দিয়ে সম্প্রদায় সম্প্রীতির বাতাবরণ তৈরির উপর জোর দেওয়া হয় সভা থেকে।
পশ্চিম মেদিনীপুর দাসপুরের সম্প্রীতি মিছিল থেকে দাঙ্গা লাগানোর চক্রান্ত রুখে দেওয়ার ডাক দেওয়া হয় বামপন্থীদের পক্ষ থেকে। মিছিল শেষে সভা থেকে রুটি রুজির সংকট মোকাবিলা সংগ্রামে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। দাসপুর-২ ব্লক-এর সোনাখালীতে বামপন্থী গণসংগঠনসমূহের মিছিল আয়োজিত হয়। মিছিল থেকে স্লোগান ওঠে ‘রুখে দাও বিভাজনের রাজনীতি, রক্ষা করো শান্তি সম্প্রীতি ও সংহতি’। দীর্ঘ চার কিলোমিটার পথ পরিক্রমা করে সোনাখালি বাজারে সমাবেশ হয়। এ রাজ্যে পঞ্চায়েতের লুটপাটের ঘটনার মধ্য দিয়ে গরিব সাধারণ মানুষের কেড়ে নেওয়া অধিকার পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে শপথ নেওয়া হয় সমাবেশে। বক্তব্য রাখেন শ্রমিক নেতা শান্তনু চক্রবর্তী, রণজিত পাল, কৃষক নেতা মদন রাউত, শিক্ষক নেতা ধ্রুবশেখর মণ্ডল প্রমুখ।
১৭ জুন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার আহ্বান জানিয়ে দিনহাটা শহরে মিছিল করে বামফ্রন্ট ও সহযোগী। দলগুলি দিনহাটা শহরে এই মিছিলে পা মেলান সিপিআই(এম) নেতা তারাপদ বর্মণ, ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা আব্দুর রউফ মণ্ডল, সিপিআই নেতা প্রদীপ বর্মণ প্রমুখ। এদিনের এই মিছিলের উদ্দেশ্য সম্পর্কে নেতৃবৃন্দ বলেন, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার মানুষে মানুষে ভেদাভেদ সৃষ্টির জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। সাধারণ মানুষের ন্যূনতম চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ কেন্দ্রীয় সরকার ব্যর্থতা ঢাকতে দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করে চলেছে, এর বিরুদ্ধে একমাত্র বামপন্থীরাই সঠিকভাবে লড়াই করতে পারে।
১৮ জুন মিছিল হয় পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুকের মানিকতলা মোড় থেকে হসপিটাল মোড় পর্যন্ত, সহস্রাধিক মানুষকে শামিল করে। এরপর সংক্ষিপ্ত সভায় বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। এছাড়াও মিছিলে পা মেলান পার্টি নেতা অনাদি সাহু, অতনু সাহা, জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক নিরঞ্জন শী, হিমাংশু দাস, ইব্রাহিম আলি, জেলা সম্পাদক অমৃত মাইতি, সিপিআই নেতা নির্মল বেরা প্রমুখ।
১৯ জুন সম্প্রীতি রক্ষার আহ্বান জানিয়ে মেদিনীপুর শহরে বাম সহযোগী দলসমূহের ডাকে মিছিল ও সমাবেশ হয়। মেদিনীপুর কলেজ ময়দানে জমায়েতসহ মিছিল সংঘটিত হয়। শহরের ৪ কিলোমিটার পথ পরিক্রমা করে। এছাড়া জেলার জুড়ে ১৪টি স্থানে বাম গণসংগঠনগুলি যৌথভাবে মিছিল ও পথসভা করে। মেদিনীপুর শহরে মিছিলে অংশগ্রহণ করেন জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক সুশান্ত ঘোষ, তাপস সিনহা, অশোক সেন, দিলীপ নায়েক প্রমুখ।
১৮ জুন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য রক্ষার সপ্তাহব্যাপী প্রচার আন্দোলন কর্মসূচির অংশ হিসেবে নদীয়ার কৃষ্ণনগর পোস্ট অফিস মোড়ে সভা হয়। সিপিআইএম নেতা মেঘলাল শেখ-এর সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন বিভিন্ন সহযোগী নেতৃত্ব।
তাহেরপুর এরিয়া কমিটির ডাকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা এবং অগ্নিপথ বাতিলের দাবিতে একটি পদযাত্রা ১০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে। বাদকুল্লা ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে পদযাত্রাটির সূচনা হয় এরপর টাকশালী বাজারে পদযাত্রা শেষ করা হয়। চাকদহ শহরেও সম্প্রীতি মিছিলে হাঁটেন বামপন্থীরা।
হাওড়ার বীরশিবপুর সহ অন্যত্র সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার ডাক দিয়ে মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
তারকেশ্বর দু'নম্বর এরিয়া কমিটির উদ্যোগে চাপাডাঙ্গা বাজারে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা সহ অন্যান্য দাবিতে মিছিল হয় এবং পথ অবরোধের কর্মসূচি পালিত হয়। এদিন পুরশুড়া দক্ষিণ এরিয়া কমিটি ও সংগঠনের উদ্যোগে পুরশুড়া মোড়ে বিক্ষোভ সভা হয়।