৫৯ বর্ষ ৪৫ সংখ্যা / ২৪ জুন, ২০২২ / ৯ আষাঢ়, ১৪২৯
সেনাবাহিনীর গুরুত্ব ও মর্যাদা ক্ষুণ্ণ
কেন্দ্রের অগ্নিপথ প্রকল্পে দেশব্যাপী প্রতিবাদের ঝড়
অগ্নিপথের নামে ঠিকা সেনা নিয়োগের প্রতিবাদে এসএফআই-ডিওয়াইএফআই।
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ সেনাবাহিনীতে ঠিকা সেনা নিয়োগের জন্য কেন্দ্রের ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্প বাতিলের দাবিতে যুব সমাজের বিক্ষোভ ঝরে পড়ছে দেশের উত্তর থেকে দক্ষিণ,পূর্ব থেকে পশ্চিম - প্রতিটি প্রান্তে। এই বিক্ষোভের অঙ্গ হিসেবে রেল-সড়ক অবরোধ হয়েছে, পুড়েছে বাস, ট্রেন, পুলিশের গাড়ি, সরকারি সম্পত্তি। সেই সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের খণ্ডযুদ্ধ বেধেছে নানা জায়গায়। এই ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পকে ঘিরে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের আঁচ টের পেয়ে বেগতিক বুঝে বিক্ষোভকে ধামাচাপা দিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রক থেকে ‘অগ্নিবীর’দের জন্য নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেবার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু তাতে বিক্ষোভ কোনোভাবেই স্তিমিত হয়নি। যুবসমাজের ক্ষতে প্রলেপ দেবার কেন্দ্রীয় সরকারের এই সমস্ত ঘোষণাকে টোপ হিসেবেই মনে করছে কোনো কোনো মহল। ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে শেষ পর্যন্ত কৃষি আইনের মতো এই প্রকল্পও কি তুলে নিতে বাধ্য হবে কেন্দ্রীয় সরকার?
কেন্দ্রের এই ঠিকা-প্রথায় সেনা নিয়োগের প্রকল্প বাতিলের দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসার থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন এই প্রকল্প বাতিলের দাবি তুলেছেন।
অগ্নিপথ বিরোধী রোষে জ্বলছে ট্রেন।
সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো এক বিবৃতিতে বলেছে, এই প্রকল্প দেশের স্বার্থের পক্ষে ক্ষতিকর। একারণেই প্রকল্পটি বাতিল করে সশস্ত্র বাহিনীতে অবিলম্বে স্থায়ী নিয়োগের দাবি করেছে পলিট ব্যুরো। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পেনশনের অর্থ বাঁচানোর জন্যই এই প্রকল্প চালু করা হচ্ছে দেশের পেশাদার সশস্ত্র বাহিনীর মান এবং দক্ষতার সঙ্গে ভয়ানক রকমের আপস করে। গত দু’বছরে এমনিতেই ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কোনো নিয়োগ হয়নি। সশস্ত্র বাহিনীতে স্থায়ী সেনা নিয়োগের বদলে এই প্রকল্পের মধ্যদিয়ে ঠিকা-সেনা নিয়োগের ব্যবস্থা করা হচ্ছে যাঁদের আবার চার বছরের পর কর্মসংস্থানের কোনো ভবিষ্যতই নেই। ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি হতে পারে যদি এরা চার বছর পর ভাড়াটে সেনা হিসাবে কাজ আরম্ভ করে। আমাদের সামাজিক কাঠামো বা বুননের ওপর এর মারাত্মক প্রভাব পড়বে যা ইতিমধ্যেই যথেষ্ট টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে।
পলিট ব্যুরো প্রকল্পের স্বল্প মেয়াদি নিয়োগের কথা উল্লেখ করে বলেছে, চাকরির নিরাপত্তার ন্যূনতম সুরক্ষার ব্যবস্থা ছাড়াই যুবকদের দেশের জন্য চূড়ান্ত আত্মত্যাগের আহ্বান জানানো অপরাধ ছাড়া কিছু নয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে তাঁদের ক্ষোভই প্রতিফলিত হচ্ছে। একারণেই এই প্রকল্প বাতিল করে অবিলম্বে স্থায়ী সেনা নিয়োগের দাবি জানিয়েছে সিপিআই(এম)।
সিপিআই’র সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা এক ট্যুইট বার্তায় বলেছেন, মোদির আমলে চাকরির সন্ধান করা বস্তুত ‘আগুনের ওপর দিয়ে হাঁটা’ ছাড়া আর কিছুই নয়। তিনি বলেছেন, অগ্নিপথ প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার যুব সমাজের সঙ্গে কার্যত প্রতারণা করছে। এছাড়াও এই প্রকল্পের বিরোধিতা করেছে কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি, আরজেডি, ডিএমকে, আম আদমি পার্টি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।
জাতীয় স্বার্থেই এই প্রকল্প বাতিলের দাবি জানিয়েছে সিআইটিইউ, সারা ভারত কৃষক সভা, এসএফআই, ডিওয়াইএফআই প্রভৃতি বিভিন্ন গণসংগঠন।
এদিকে কেন্দ্রের অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরুদ্ধে দেশজোড়া প্রতিবাদে সংহতি জানিয়েছে সংযুক্ত কিষান মোর্চা (এসকেএম)। ২৪ জুন এসকেএম দেশজুড়ে প্রতিবাদ দিবসের ডাক দিয়েছে।
সর্বাধিক ছয় মাসের ট্রেনিংয়ের পর মাসিক ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকায় মাত্র চার বছরের জন্য ঠিকা প্রথার মতো অস্থায়ী সেনা নিয়োগের লক্ষ্যে ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকে দক্ষিণের হায়দরাবাদ, সেকেন্দ্রাবাদ, যোগীর রাজ্য উত্তর প্রদেশ, মোদির কেন্দ্র বারাণসী, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা, জম্মু, পশ্চিমবঙ্গ সহ বিভিন্ন রাজ্য বিক্ষোভে উত্তাল হয়েছে। এই বিক্ষোভ প্রথম শুরু হয় বিহারে। সমস্তিপুর ও লক্ষ্মীসরাইয়ে দু’টি ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বিহারে এক বিজেপি বিধায়কের বাড়ি সহ রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী রেণু দেবীর বাসভবনে হামলা চলে। মাধেপুরা এবং সাসারামে বিক্ষোভকারীরা বিজেপি দপ্তরেই আগুন ধরিয়ে কেন্দ্রের নীতির প্রতিবাদ জানান।
দিল্লিতে অগ্নিপথ বিরোধী আন্দোলনে পুলিশি নিপীড়ন।
প্রধানমন্ত্রী মোদির নির্বাচনী কেন্দ্র বারাণসীতে হাজার হাজার যুবক রাস্তায় নেমে কেন্দ্রের নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন। এদিকে তেলেঙ্গানার সেকেন্দ্রাবাদে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন এক প্রতিবাদী যুবক। বিক্ষোভকারীরা সেকেন্দ্রাবাদ স্টেশনে ঢুকে রেলের সম্পত্তি ভাঙচুরের পাশাপাশি আসবাবপত্র ইত্যাদি বিভিন্ন জিনিসপত্রে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিক্ষোভকারীদের হঠাতে পুলিশ লাঠি চালায়, কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে। তাতেও কাজ না হওয়ায় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ করে গুলি চালায়। এতে প্রাণ হারান ১৯ বছর বয়সি এক যুবক। জখম হন অনেকে। বিক্ষোভকারীরা হায়দরাবাদ স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা দুটি ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দেয়।
রাজস্থানের সিকর, আলওয়ার, ভরতপুর, কোটা, চিতোরগড়, জয়পুর প্রভৃতি স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে। হরিয়ানার রোহটক, গুরগাঁও, নারনাল, ফতেহাবাদ, ঝজ্জরে বিক্ষোভে শামিল হন যুবসমাজ।
হিমাচল প্রদেশে যুবদের বিক্ষোভ চিন্তায় ফেলেছে বিজেপি-কে। সামনেই নির্বাচন সেখানে। সে রাজ্য থেকে অনেক তরুণ সেনাবাহিনীতে কাজ করেন। বিজেপি দাবি তুলেছিল সেনাবাহিনীতে ‘হিমাচল রেজিমেন্ট’ চালু করতে হবে। সেই রাজ্যে প্রধানমন্ত্রীর সফরের দিনেও বিক্ষোভ হয়েছে। কেন্দ্রের এই অগ্নিপথ প্রকল্পের মাধ্যমে ঠিকা প্রথার সেনা নিয়োগের হঠকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যুব সমাজের তীব্র ক্ষোভ সামনের ভোটে বিজেপি’র বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে চিন্তিত বিজেপি নেতারা।
একইভাবে উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন শহরে এবং বারাণসীতে বিক্ষোভ, ট্রেনে অগ্নিসংযোগ, পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ অস্বস্তিতে ফেলেছে বিজেপি-কে।
বারাকপুরে যুবকদের অগ্নিপথ বিরোধী বিক্ষোভ প্রদর্শন।
এদিকে অগ্নিপথ প্রকল্প বাতিলের দাবিতে ১৮ থেকে ২০ জুন দেশজুড়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিল এসএফআই, ডিওয়াইএফআই। ১৯ জুন দিল্লিতে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হন এই দুই সংগঠনের কর্মী-সমর্থকরা। এদিন তাদের ‘সংসদ অভিযান’ আটকে দিয়ে পুলিশ তাদের ওপর নিমর্মভাবে লাঠি চালায়, আটক করে। মহারাষ্ট্র, তেলেঙ্গানা, তামিলনাডু, আসাম প্রভৃতি বিভিন্ন রাজ্যে বিক্ষোভ দেখায় ছাত্র-যুবরা।
কেন্দ্রের ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্প বাতিলের দাবিতে দেশজোড়া প্রতিবাদ-বিক্ষোভের জেরে পশ্চিমবঙ্গেও রেলপথ, সড়ক অবরোধ হয়েছে। এসএফআই, ডিওয়াইএফআই’র ডাকে বাঁকুড়া, উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, জলপাইগুড়ি, পশ্চিম মেদিনীপুর, দার্জিলিং, দক্ষিণ দিনাজপুর, পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুর শহর সহ বিভিন্ন জেলায় প্রতিবাদ বিক্ষোভ, অবরোধ ইত্যাদি সংগঠিত হয়েছে। এই বিক্ষোভ-অবরোধের জেরে অসংখ্য দূরপাল্লার ট্রেন বাতিল হয়। দেশের অন্যান্য রাজ্যেও কয়েকশো ট্রেন অবরোধ-বিক্ষোভের জন্য বাতিল করতে বাধ্য হয় রেল কর্তৃপক্ষ।
আগামী দেড় বছরের মধ্যে লোকসভার নির্বাচন। একথা মাথায় রেখেই কেন্দ্র ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্প ঘোষণা করেছে বলে রাজনৈতিক মহলের একাংশের অভিমত। তবে এই চুক্তি মেয়াদি সেনা নিয়োগের পদ্ধতি যে সেনা বাহিনীতে স্থায়ী নিয়োগের পথ স্তব্ধ করে দেবার এক কৌশল, তা টের পেয়েই বিক্ষোভে পথে নেমেছে যুব সমাজ। এই বিক্ষোভ ক্রমেই বাড়ছে।
বিক্ষোভকারীরা এটা বুঝেছেন যে, এই ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পটি প্রতারণারই কৌশল, এছাড়া সেনাবাহিনীর মধ্যে সুকৌশলে শাসকদলের বিভেদের রাজনীতির বীজ প্রোথিত করার পদক্ষেপ। কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা করেছিল নিয়োগ হওয়া ৪৫ থেকে ৫০ হাজার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেনার মধ্যে মাত্র ২৫ শতাংশ রেখে দেওয়া হবে। অবশিষ্ট ৭৫ শতাংশের কর্মচ্যুতি ঘটবে। মাত্র ৪ বছর কাজের পর এদের কারও প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে চিকিৎসা ভাতা কিছুই মিলবে না। কেন্দ্রীয় সরকার থেকে প্রাথমিকভাবে বলা হয়েছিল বেকার হয়ে যাওয়া সেনা কর্মীরা কোনো কাজ পাওয়ার নিশ্চয়তা ছাড়াই সিএপিএফ, রাজ্য ও রেল পুলিশ, নিরাপত্তা কর্মী, ব্যাঙ্ক বা বিমা সংস্থায় আবেদন করতে পারবেন। কিন্তু বর্তমান ও প্রাক্তন সেনা অফিসারদের অনেকেই বলছেন, এতদিন অধিকাংশ সেনা ৩৭ বছরে অবসরের পর যখন এই আবেদন করতেন, বহু ক্ষেত্রেই কোনো সুরাহা মিলত না। পুরনোদের ক্ষেত্রেই যা করা যায়নি, নতুন নিযুক্তির ক্ষেত্রে তা সম্ভব হবে কী করে? ক্ষোভের পরিমাণ দেখে সরকার পিছু হটে আধা সেনা বাহিনী ও আসাম রাইফেলসে অগ্নিবীরদের জন্য দশ শতাংশ আসন সংরক্ষণের কথা ঘোষণা করেছে।
এদিকে কৃষি আইনের মতো এই প্রকল্প প্রত্যাহার না করার জন্য সরকার অনড় হয়ে রয়েছে। অন্যদিকে তিন সামরিক বাহিনীর মুখপাত্রদের দিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে সরকারের তরফে দাবি জানানো হয়েছে, বহু ভেবে চিন্তেই নাকি এই প্রকল্প চালু করা হয়েছে। ভারতীয় সেনাদের বয়সের গড় কমাতে তরুণদের নেবার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যদিও কেন তা শুধুমাত্র চার বছরের জন্য এবং কেন নিয়মিত এবং প্রথাগত নিয়োগের নিয়মে তা করা হচ্ছে না, ও সেনাবাহিনীতেও কেন লক্ষাধিক শূন্যপদ পড়ে রয়েছে, তার কোনো উত্তর মেলেনি।
তিন বাহিনীর মুখপাত্রই দাবি করেছেন, ‘অগ্নিবীর’ নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। আগস্টের প্রথমার্ধে সেনাবাহিনীতে নিয়োগের জন্য পরীক্ষা শুরু হবে, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই প্রথম ‘অগ্নিবীর’রা কাজে যোগ দেবেন। তাঁরা জানিয়েছেন, দেশজুড়ে ৮৩টা নিয়োগের র্যা লি হবে এবং ‘সব গ্রামকে স্পর্শ করা হবে’।
তবে নিয়োগ সংক্রান্ত এমন নানা আশ্বাসের পাশাপাশি কেন্দ্রের তরফে কড়া হুমকিও দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, যারা এইসব প্রতিবাদে রয়েছে, তারা কেউ চাকরি পাবে না। ১০০ শতাংশ পুলিশের সার্টিফিকেট দেখে কাজ দেওয়া হবে। এফআইআর-এ নাম থাকলে সেনা বাহিনীতে যোগ দেওয়া যাবে না। দেশজুড়ে প্রতিবাদ-আন্দোলনকে স্তব্ধ করতেই যে এই ধরনের হুমকি তা স্পষ্ট হয়েছে এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে।
তিন সামরিক বাহিনীর মুখপাত্রদের দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার যখন নিজেদের বক্তব্য ও অভিমত তুলে ধরেছে, তখন বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনা উঠেছে চার বছর মেয়াদের নিয়োগ সেনা বাহিনীর মূল ভাবধারার বিরোধী ও যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ।
কেন্দ্রের ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্প নিয়ে দেশজুড়ে যখন বিক্ষোভ শুরু হয়েছে, সেনাবাহিনীর প্রাক্তন অফিসার থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহল তখন কেন্দ্রের এই অপরিণামদর্শী প্রকল্প দেশের নিরাপত্তা, সেনাবাহিনীর গোপনীয়তার পক্ষে বিপজ্জনক বলে মন্তব্য করেছে। তাঁদের অভিমত, সেনাবাহিনীতে নিয়োগের পথ রুদ্ধ করে দেওয়া হবে ও সামরিক বাহিনীতে আরএসএস, সংঘ পরিবারের নিজস্ব বাহিনী প্রোথিত করা, সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে নিজেদের স্বার্থে এই ‘অগ্নিবীর’দেরই কাজে লাগানোর সুদূর প্রসারী পরিকল্পনারই অঙ্গ এই ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্প।
এই অভিযোগেরই সত্যতা প্রকট হয়েছে বিজেপি নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়’র সাম্প্রতিক একটি মন্তব্যে। তিনি ১৯ জুন এই প্রকল্পের গুণকীর্তন করতে গিয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, ‘সেনা প্রশিক্ষণে প্রথম কথা হলো শৃঙ্খলা, দ্বিতীয় কথা হলো আদেশ পালন। চার বছর বাদে যখন অগ্নিবীররা সেনা থেকে বেরিয়ে আসবেন, তখন তাদের হাতে ১১ লক্ষ টাকা থাকবে। বুকে থাকবে অগ্নিবীর লেখা ব্যাজ। যদি এই বিজেপি অফিসে নিরাপত্তা রক্ষী নিয়োগ করতে হয়, আমি অগ্নিবীরদেরই অগ্রাধিকার দেব।’
বিজয়বর্গীয়’র এই মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে বিভিন্ন মহলে। বিরোধীদলের নেতা সহ বিভিন্ন মহল থেকে বলা হয়েছে, বিজেপি নেতার এই মন্তব্যে সামরিক বাহিনীকে অপমান করা হয়েছে। আসলে অগ্নিবীরের মাধ্যমে যে শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তা রক্ষীর চাকরির প্রশিক্ষণ হচ্ছে, সে কথাই এই মন্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে বলে সমালোচনা উঠেছে।
বিজয়বর্গীয়’র পর কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী কিষান রেড্ডিও বলেছেন, ওই চার বছরে গাড়ি চালক, ক্ষৌরকর্মী, রজকের কাজ শিখবে অগ্নিবীররা। পরে সেই কাজই করতে পারবে। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন, মন্ত্রী নিজেই যখন এমন কথা মনে করেন, তখন যুবকরা বিক্ষোভ না দেখিয়ে কী করবেন। প্রকৃতপক্ষে এই প্রকল্পের পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে কেন্দ্র যেভাবে প্রচারে নেমেছে তা সরাসরি সেনাবাহিনীর মর্যাদাকেই ক্ষুণ্ণ করছে।