E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ৩২ সংখ্যা / ২৪ মার্চ, ২০২৩ / ৯ চৈত্র, ১৪২৯

১০ মার্চ ২০২৩

বগটুইয়ের মৌন মিছিল হয়ে উঠল প্রতিবাদের মূর্তরূপ


বগটুইয়ে মৌন মিছিল শেষে বক্তব্য রাখছেন রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ মৌন মিছিলও যে দৃপ্ত প্রতিবাদের মূর্ত রূপ হতে পারে তারই আভাস মিললো ২১ মার্চ বগটুইয়ে। এদিন শাসকদল তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে অগ্নিদগ্ধ ১০ জন গ্রামবাসীর স্মৃতিতে মৌন মিছিলে পা মেলান দুই হাজারেরও বেশি মানুষ। বগটুই ছাড়াও এদিন এসেছিলেন কুমাড্ডা, চন্দনকুণ্ঠা, পাবরোখিয়া সহ সংলগ্ন গ্রামগুলির মানুষ। গ্রামের মানুষ এখন তৃণমূলের দৌরাত্ম্য বন্ধ করে চাইছেন শান্তি ও উন্নয়ন।

রাজ্যবাসীর স্মৃতিতে আজও সজীব রয়েছে, ২০২২ সালের ২১ মার্চ শাসকদলের দুই গোষ্ঠীর অন্তর্দ্বন্দ্বে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় মহিলা-শিশু সহ ১০ জনকে। সেদিন তৃণমূলের এই পাশবিক হত্যালীলায় চমকে উঠেছিল গোটা রাজ্য। এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে অভিযোগ উঠেছিল, পাথর খাদান থেকে বেআইনি রোজগারের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে তা নিয়ে জেলা তৃণমূলের দুই প্রভাবশালী নেতার মধ্যেকার দ্বন্দ্বের জেরেই এই নারকীয় ঘটনা ঘটেছিল বগটুইয়ে। তাদেরই একজনের অনুগত ভাদু শেখকে গুলি করে খুন করা হয়। সেই খুনেরই প্রতিশোধ নিতে অপর গোষ্ঠীর বাড়ির লোকজনকে মেরে হাত-পা ভেঙে বাড়ি-ঘরে আগুন লাগিয়ে জীবন্ত দগ্ধ করা হয়। লক্ষণীয় বিষয় হলো, স্থানীয় পুলিশকেও নিয়ন্ত্রণে রেখে চলতো পাথরের অবৈধ কারবার। তাতে লক্ষ লক্ষ টাকার কারবারে তৃণমূল নেতা-কর্মী থেকে পুলিশ প্রশাসনের বখরা মিলত। তখন বীরভূম জেলায় একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল অনুব্রত মণ্ডলের। তাকে সঙ্গে নিয়ে সে সময় চেক বিলি করতে এসেছিলেন স্বয়ং মমতা ব্যানার্জি। কী নিষ্ঠুর পরিহাস! আজ সেই অনুব্রত মণ্ডলের ঠাঁই হয়েছে তিহার জেলে।

বগটুইয়ের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড শাসকদলের এই বেআইনি কারবারটিকেও সামনে নিয়ে আসে। এবছর ২১ মার্চ দিনটিতে বগটুইয়ে নৃশংসভাবে খুন হওয়া নিরীহ গ্রামবাসীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মৌন মিছিলে পা মেলান অগণিত মানুষ। মৌন মিছিলে অংশ নেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক নরেন চ্যাটার্জি, কংগ্রেস নেতা মিলটন রশিদ সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

এদিন মহম্মদ সেলিম বলেছেন, রাজ্যজুড়েই আমরা দেখছি যখনই তৃণমূলের মধ্যে কোনো খুন খারাপি, হানাহানি হয়েছে তখনই বিজেপি গিয়ে এক গোষ্ঠীকে মদত দিয়েছে। এখনও বগটুইয়ের ঘটনায় সব অপরাধী গ্রেপ্তার হয়নি। যে বালি, পাথর, কয়লার তোলাবাজি নিয়ে বিবাদের পরিণতিতে বগটুইয়ের ঘটনা ঘটেছে, সেই সমস্ত রাঘব বোয়ালের গ্রেপ্তারের দাবি আমরা প্রথম থেকেই করে আসছি। সেই দাবি নিয়ে আমরা লড়াইয়ের শেষ দেখে ছাড়ব।

এদিন বগটুই মোড়ে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম) বীরভূম জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ।

এখন গোটা গ্রামেরই একটাই মত - লুট বন্ধ না হলে খুন বন্ধ হবে না। তৃণমূল-বিজেপি পরাস্ত হলেই পঞ্চায়েতে লুট, খুন জখম বন্ধ হবে।

এদিকে এদিন তৃণমূল এবং বিজেপি উভয় দলই বগটুইয়ের যেখানে হত্যালীলা ঘটেছিল, তার অদূরে শহিদ বেদি তৈরি করে রাজনৈতিক ফয়দা তুলতে চেয়েছিল। কিন্তু গ্রামবাসী এদের দু’দলকেই বি‍‌শেষ গুরুত্ব দেয়নি। বিশেষ করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড বিরক্তি ও ঘৃণা উগড়ে দিয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো, শাসকদলের ডাকসাইটে নেতা আশিস ব্যানার্জি শহিদ পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে তারা তাঁকে ঢুকতেই দেননি। এর মধ্য দিয়েই প্রতিভাত হয়েছে তৃণমূলের প্রতি গ্রামবাসীদের আক্রোশ ও ঘৃণা আজ কোন্‌ পর্যায়ে পৌঁছেছে।