৬০ বর্ষ ৩২ সংখ্যা / ২৪ মার্চ, ২০২৩ / ৯ চৈত্র, ১৪২৯
শিক্ষাক্ষেত্র শুধু নয় তৃণমূল কংগ্রেসের কালো থাবা রাজ্যের পুরসভাগুলির নিয়োগেও
নিয়োগ দুর্নীতির প্রতিবাদে দক্ষিণ দমদম পৌরসভার সামনে বক্তব্য রাখছেন পলাশ দাশ।
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ প্রায় প্রতি সপ্তাহেই তদন্তের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন মাধ্যমে তৃণমূলের চুরি জোচ্চুরির নানা খবর উঠে আসছে। নিয়োগকে কেন্দ্র করেই যাবতীয় ঘটনা ঘটেছে, ঘটছে নানা স্তরে, যা নিয়ে প্রতিবাদে সোচ্চার সাধারণ মানুষ থেকে একাংশের সংবাদ এবং সমাজ মাধ্যম। এই সরকারের জমানায় শিক্ষাক্ষেত্রে শুধু নয়, রাজ্যের পুরসভাগুলিতেও নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে বলে সম্প্রতি জানিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ইডি। ইডি সূত্রকে উদ্ধৃত করে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে জানা যাচ্ছে, দক্ষিণবঙ্গের ৬০টি পুরসভার সব স্তরের নিয়োগ হয়েছে টাকার বিনিময়ে। অভিযোগ, টাকার বিনিময়ে প্রায় ৫ হাজার নিয়োগ হয়েছে। ফিক্সড রেট ড্রাইভার - ৪ লক্ষ টাকা, টাইপিস্ট - ৭ লক্ষ টাকা, ক্লার্ক - ৭ লক্ষ টাকা, গ্রুপ ডি - ৪ লক্ষ টাকা, সাফাই কর্মী - ৪ লক্ষ টাকা।
২২ মার্চ রাজ্যের পুরসভাগুলিতে নিয়োগে দুর্নীতির প্রতিবাদে বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক সংখ্যক সাধারণ মানুষ বিক্ষোভে শামিল হলেন। সিপিআই(এম)’র নেতৃত্বে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে পথে নেমে স্বতঃস্ফূর্তভাবে পথ অবরোধ-বিক্ষোভও দেখালেন তাঁরা। চুরি দুর্নীতির জন্যই শিকেয় উঠেছে পৌর পরিষেবা, উন্নয়ন। রাজ্যের নিয়োগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভে শামিল নাগরিকদের পক্ষ থেকেই এই অভিযোগ উঠে আসছে।
দক্ষিণ দমদম পৌরসভার সামনে বিক্ষোভ জমায়েত থেকে দাবি করা হয়েছে অবিলম্বে পৌরসভায় বেআইনি নিয়োগের মূল চক্রীদের গ্রেপ্তার করতে হবে। অভিযোগ উঠেছে নাগরিকদের চাকরির সুযোগের সঙ্গে সঙ্গে লুট হয়ে যাচ্ছে পৌরএলাকার দামি জমি, জলাশয়ও।এদিন বামফ্রন্টের ডাকা বিক্ষোভ মিছিল নাগেরবাজারে সিপিআই(এম) দপ্তর থেকে মিছিল শুরু হয়ে সাতগাছি মোড় হয়ে শেষ হয় পৌরসভার গেটে। প্রায় দেড় ঘন্টা অবরুদ্ধ থাকে পৌরসভা। একটানা স্লোগান, অবরোধ এবং বিক্ষোভ সভা চলে। বিক্ষোভ জমায়েতে দীর্ঘ সময় দমদম রোড ও যশোর রোড অবরুদ্ধ থাকলেও মানুষ বিরক্তি প্রকাশ করেননি, বরং দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভকে সমর্থন জানিয়েছেন।
বিক্ষোভ সভায় সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য পলাশ দাশ বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ উঠেছে বেআইনি নিয়োগের। অবিলম্বে ইডি-সিবিআই’কে বেআইনী নিয়োগের আসল মাথাদের গ্রেপ্তার করতে হবে। যারা বেকারদের চাকরি বিক্রি করে টাকা কামিয়েছেন তাদের শাস্তি চাই। যে দুই মন্ত্রীর অঙ্গুলিহেলনে পৌরসভা চলে তাঁরা এই অপরাধের দায় এড়াতে পারে না। রাজ্যজুড়ে এই অপরাধের দায় এড়াতে পারে না কালিঘাটও। এছাড়াও তিনি বলেন, সমস্ত বেআইনী নির্মাণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, নয়ানজুলিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে হবে, দ্রুত দমদম রোডে ভেঙে পড়া ব্রিজের সংস্কার করতে হবে। না হলে এরপর আরো বড় আন্দোলন হবে।
এসবের বিরুদ্ধে ভাষণ দেন সিপিআই(এম)’র জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দেবশংকর রায় চৌধুরী, সিপিআই নেতা কুমারেশ কুন্ডু, আরএসপি নেতা মিহির পাল, সিপিআই(এম) জেলা কমিটির সদস্য শুভজিৎ দাশগুপ্ত, গোপা দাশশর্মা, পশ্চিমবঙ্গ পৌর কর্মচারী ইউনিয়নের রাজ্য সম্পাদক দীপক মিত্র প্রমুখ।
পৌরসভার চাকরি দুর্নীতির বিরুদ্ধে এদিন পানিহাটি পৌরসভার সামনেও বিক্ষোভ হয়েছে বামফ্রন্টের নেতৃত্বে। সোদপুর স্টেশন চত্বর থেকে মিছিল শুরু করে সরকারি আবাসন হয়ে পানিহাটি পৌরসভার সামনে বিটি রোডে মিছিল শেষে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয় এবং সংক্ষিপ্ত বিক্ষোভ সভা হয়। সভায় ছিলেন পানিহাটি বামফ্রন্টের আহ্বায়ক দুলাল চক্রবর্তী, গার্গী চ্যাটার্জি, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, প্রমুখ বামফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ।
২২ মার্চ রাতে বরানগর পৌরসভায় নিয়োগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘চোর ধরো - জেল ভরো’ দাবিতে ভারতের গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশন ও ভারতের ছাত্র ফেডারেশনের বরানগর আঞ্চলিক কমিটি বিক্ষোভ দেখিয়েছে। ন’পাড়া থেকে প্রতিবাদ মিছিল শুরু করে জিএলটি রোডে এসে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন তাঁরা। মুখ্যমন্ত্রীর কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়। রাস্তা অবরোধ চলে দীর্ঘক্ষণ। এদিন সন্ধ্যায় কামারহাটি পুরসভা এলাকার আড়িয়াদহে হয় প্রতিবাদ মিছিল।
এদিকে তৃণমূল বিধায়কের লেটারহেডে চাকরির সুপারিশ ফাঁস হওয়ার পর বর্ধমান উত্তর বিধানসভা এলাকার যুবরা ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। বুধবার তাঁরা বর্ধমান-কালনা রোড অবরোধ করেন। পুলিশ ও র্যা ফ নামিয়েও আন্দোলন থেকে তাঁদের বিরত করা যায়নি। এদিন ডিওয়াইএফআই বর্ধমান সদর ১ ও ২ আঞ্চলিক কমিটির উদ্যোগে নবস্থা পঞ্চায়েত মোড় আউশাতে বিক্ষোভ মিছিল ও সভা হয়। একঘন্টা পথ অবরোধ করে বিধায়কের কুশপুতুল দাহ করেন বিক্ষোভকারীরা।
এদিকে হাইকোর্টের নির্দেশে নতুন একটি এফআইআর দায়ের করেছে সিবিআই। ২ মার্চ হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন মামলা রুজু করে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অ্যাড হক বা অস্থায়ী কমিটির সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। সেই নির্দেশ অনুসারে ওই কমিটিকে প্রশ্ন করার জন্যই আলিপুরের বিশেষ আদালতের নতুন মামলা রুজু করা হয়েছে।
নিয়োগ দুর্নীতির বিচার চলাকালীন হাইকোর্টের নির্দেশ যথাযথ ভাবে পালন করছে না এসএসসি উঠেছে এমন অভিযোগও। কিছুদিন আগেই উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নে ভুল থাকার কারণে মামলাকারীদের নম্বর দেবার নির্দেশ দিয়েছিল আদালন এ প্রসঙ্গে গত ১৭ মার্চ হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থা মন্তব্য করেছেন, এসএসসি’র নিয়োগ দুর্নীতির কারণে একটা প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নষ্ট হতে চলেছে। এদিন আদালত স্কুল সার্ভিস কমিশনকে চরম ভর্ৎসনা করে চেয়ারম্যানকে আদালতে হাজির হবার নির্দেশ দিয়েছে। শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় বিচারপতি মন্তব্য করেছেন আদালতের নির্দেশের ওপর কোনো খবরদারি করবেন না। আপনারা আদালতের নির্দেশ অমান্য করার খেলা খেলছেন। আপনাদের আচরণের জন্য জনমানসে কমিশনের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। বিচারপতি মান্থা মন্তব্য করেন,‘‘ আমার বলতে কোনো দ্বিধা নেই এসএসসি একটা প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নিয়ে খেলছে।’’